মঙ্গলবার অভিবাসী ও শরণার্থী নিয়ে মাস্টার প্ল্যান প্রকাশ করার কথা জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের৷ কিন্তু শেষ মুহূর্তে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সাথে দ্বিমত হওয়ায় তা স্থগিত করা হয়েছে৷
বাভারিয়ান অঞ্চলের খ্রিস্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন (সিএসইউ)-এর নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফারের একটি ৬৩ পয়েন্টের অভিবাসন নীতি অন্য দলগুলোর সামনে উত্থাপনের কথা ছিল৷
জার্মানির ডেইলি বিল্ড পত্রিকা বলছে, যেসব শরণার্থীর আশ্রয়প্রার্থনা এরই মধ্যে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বা যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য দেশগুলোতে আশ্রয় চেয়েছে, তাদের জার্মানি সীমান্তে আটকে দেয়া হবে কিনা, এ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে চ্যান্সেলর ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে৷
এই মতবিরোধ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে সরকারের জোটে থাকা তৃতীয় সামাজিক গণতন্ত্রী দল এসপিডি৷ দলটি জানিয়েছে, এবার তারা নিজেদের প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসবে৷ দলের উপনেতা রাল্ফ শ্টেগনার জানিয়েছেন, ‘‘শরণার্থী বিষয়ে যাঁরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দেখতে চান, তাঁদের সেহোফার বা সিএসইউর ওপর নির্ভর করা উচিত হবে না৷ এ কারণেই এসপিডি সামনে এগিয়ে এসেছে৷''
জার্মানিতে কয়েকজন শরণার্থীর জীবন
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷
8 ছবি1 | 8
সেহোফার বরাবরই ম্যার্কেলের অভিবাসননীতির কড়া সমালোচনা করে এসেছেন৷ ২০১৫ সাল থেকে অন্তত ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে জার্মানি৷ গত বছরের জাতীয় নির্বাচনে রক্ষণশীলদের আসন হারানো এবং ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)-র উত্থানের পেছনে ম্যার্কেলের এই উদারনীতিকেই দায়ী করা হয়৷
সেহোফার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সরকারকে রক্ষণশীল অভিবাসননীতির দিকে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন৷ এএফডির কাছে হারানো স্থান পুনরুদ্ধারও তাঁর অন্যতম লক্ষ্য৷