অভিবাসন বিষয়ে হোয়াইট হাউজের নতুন নীতি শিশুদের বিচ্ছিন্ন করছে তাদের পরিবার থেকে৷ দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় সুর মিলিয়েছেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও৷
বিজ্ঞাপন
রিপাবলিকানদের আইনপ্রণেতাদের সাথে নতুন অভিবাসন নীতি নিয়ে বৈঠকে বসার কথা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷
ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেক্সিকো সীমান্তেই অভিবাসী শিশুদের তাদের পরিবারের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, এই নীতির সমালোচনায় সরব হয়েছে জাতিসংঘও৷
সংস্থাটির মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান জাইদ রাআদ আল হুসেইন জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের এক বৈঠকে এমন নীতি থেকে সরে আসতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷
তিনি বলেন, ‘‘শিশুদের ওপর এমন নির্যাতন চালিয়ে বাবা-মাকে অভিবাসন থেকে নিরস্ত করার চিন্তাকে প্রশ্রয় দেয়া যায় না৷’’
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অবশ্য এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন ডেমোক্র্যাটদের৷ একটি অভিবাসন আইন পাসে তাদের সমর্থন পেলেই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলেও মন্তব্য তাঁর৷এক টুইটে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘নতুন আইন পাসে ডেমোক্র্যাটদের রিপাবলিকানদের সাথে কাজ করা উচিত৷ ... ডেমোক্র্যাটরা তিনটি কাজে পারদর্শী, উচ্চ কর, উচ্চ অপরাধের হার এবং বাধা দেয়া৷’’
মধ্য এপ্রিল থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত অন্তত দুই হাজার শিশুকে তাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে৷ তবে কিভাবে পরবর্তীতে তারা আবার তাদের পরিবারে ফিরবে, এ নিয়ে কারো নেই কোনো স্পষ্ট ধারণা৷
ফার্স্ট লেডির মন্তব্য
মেলানিয়া সাধারণত রাষ্ট্রীয় নীতি নিয়ে প্রকাশ্য মন্তব্য করেন না৷ তবে এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন তিনিও৷ তাঁর গণযোগাযোগ পরিচালক স্টিফানি গ্রিশাম সিএনএনকে জানিয়েছে, ‘‘মিসেস ট্রাম্প পরিবার থেকে শিশুদের আলাদা করে ফেলার বিরুদ্ধে৷ তিনি আশা করেন, শিগগিরই তারা এক হবে এবং একটি সফল অভিবাসন নীতি তৈরি হবে৷’’
গ্রিশাম বলেন, ‘‘মেলানিয়া বিশ্বাস করেন, আমাদের এমন একটা দেশ হতে হবে যেখানে সব আইন মেনে চলা হয়, কিন্তু দেশ পরিচালনা করা হয় হৃদয় দিয়ে৷’’
আইনপ্রণেতারাও এই নীতির সমালোচনায় মুখর হয়েছেন৷ তাঁদের মধ্যে আছেন কংগ্রেসের অনেক রিপাবলিকানও৷ মাইনের রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান সুজান কলিন্স মনে করেন, অভিবাসীদের ভুল বার্তা পাঠাচ্ছে প্রশাসন৷ ‘‘সন্তানদের নিয়ে সীমানা পাড়ি দিলে তাঁদের তোমার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হবে৷ কিন্তু এই নীতি নির্দোষ শিশুদের মানসিকভাবে আঘাত করছে, যা আমাদের চিন্তাভাবনার পরিপন্থি৷’’
ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করে প্রতিবাদ হয়েছে নিউ ইয়র্ক ও টেক্সাসে৷
এডিকে/এসিবি (এপি, রয়টার্স)
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ছবিঘরটি দেখুন...
স্লোভেনিয়ার লাজুক কিশোরী থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি
ট্রাম্প তখন একটা করে জয় পাচ্ছেন, সেই সঙ্গে বাড়ছে স্লোভেনিয়া থেকে আসা এক নারীকে নতুন রূপে দেখার সম্ভাবনা৷ দরিদ্র দেশের সাধারণ কিশোরী থেকে মডেল, তারপর ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর ঘরণী৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফার্স্ট লেডি’ও হলেন৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
লাজুক মেয়ে
স্লোভেনিয়া তখনো যুগোস্লাভিয়ার অংশ, সেখানে তখনো চলছে ‘সমাজতান্ত্রিক শাসন’, সেই সময়েই সেভনিকা নামের ছোট্ট এক শহরে জন্ম মেলানিয়া নাভস-এর৷ ছোটবেলা থেকেই মেলানিয়া খুব লাজুক প্রকৃতির৷
ছবি: picture alliance/AP Images/A. Harnik
স্কুলের শান্ত, সুবোধ বালিকা
বাবা ভিক্টর নাভস ছিলেন গাড়ির ডিলার৷ মা আমালিয়া কাজ করতেন পোশাক কারখানায়৷ বাড়ির পাশেই ছিল মেলানিয়ার স্কুল৷ কর্মজীবী বাবা-মায়ের কাছে কোনোদিন স্কুল থেকে মেয়ের নামে নালিশ আসেনি৷ বার্তা সংস্থা এপি-র প্রতিবেদকের কাছে কয়েকদিন আগেও মেলানিয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সেই স্কুলের সাবেক শিক্ষিকা আর শিক্ষার্থীরা৷ সবার এক কথা, ‘‘বড় ভালো মেয়ে ছিল মেলানিয়া৷ খুব মৃদুভাষী আর ভদ্র মেয়ে৷’’
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
স্বপ্নের পথের সন্ধান
প্রাথমিক স্কুল পর্ব শেষে স্লোভেনিয়ার রাজধানী লুবিয়ানার এক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তে যায় মেলানিয়া৷ সেখানেই তাকে দেখে ফেলে ফটোগ্রাফার স্টেইন জেরকো৷ ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার আকর্ষণীয় ফিগারের অধিকারী কিশোরীটির ছবি তুলে নিতে ভুল করেননি স্টেইন৷ সেভনিকায় থাকতেই মডেল হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন মেলানিয়া৷ স্টেইনের চোখে পড়ায় স্বপ্ন পূরণে বেশি সময় লাগেনি৷
ছবি: imago/UPI Photo
সুপার মডেল
মাত্র ১৬ বছর বয়সে মডেল হিসেবে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু৷ প্রথমে স্লোভেনিয়ায়, তারপর ইটালির মিলান, ফ্রান্সের প্যারিস হয়ে ১৯৯৬ সালে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে৷ বড় বড় ফ্যাশন হাউসগুলোতে তখন তাঁর খুব চাহিদা৷ ইংরেজি, ইটালিয়ান, ফরাসি এবং জার্মান ভাষা শিখে প্রতিষ্ঠা সহজসাধ্য করার কাজও অনেকটাই সেরে নিয়েছেন ততদিনে৷ ওপরে ফিলাডেলফিয়া স্টাইল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে নিজের ছবির সামনে মেলানিয়া৷
ছবি: picture-alliance/Zuma Press/R. Fitchett
ট্রাম্পের সঙ্গে পরিচয় এবং পরিণয়
নিউইয়র্কে প্রথম সাক্ষাতেই মেলানিয়াকে ট্রাম্পের ভালো লেগে যায়৷ নিজের ফোন নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন, ‘ফোন করো৷’ মেলানিয়া পাত্তা দেননি৷ পরে ট্রাম্পই আবার ফোন করে দেখা করতে চান৷ সেই দেখার সুবাদেই ১৯৯৬ সালে ২৪ বছরের বড় ট্রাম্পকে বিয়ে করেন মেলানিয়া৷
ছবি: Reuters/J. Bourg
অমিল নিয়েই সুখি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী হলেও মেলানিয়ার কম এবং যৌক্তিক কথা বলার সুনাম রয়েছে৷ স্বামীর নির্বাচনি প্রচারে নেমেও নিজের কথা সুস্পষ্ট যুক্তিতেই বলেছেন৷ ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসন প্রত্যাশীদের ঢুকতে দেবেন না, মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সীমান্তেও দেয়াল দাঁড় করাবেন৷ মেলানিয়া বলেন, কেউ বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে চাইলে সে সুযোগ রাখা উচিত৷
ছবি: Getty Images/K. Winn
‘ফার্স্ট লেডি’
বিশ্লেষকদের ভুল প্রমাণ করে, নিন্দুকদের মুখে ছাই দিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন ট্রাম্প৷ মেলানিয়া হয়ে গেলেন ‘ফার্স্ট লেডি’৷