অভিবাসী সংকটে ‘উদার নীতি' অবলম্বন করে নিজের দেশে বেকায়দায় পড়েছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শরণার্থী নিয়েছে জার্মানি৷ তবে ম্যার্কেল সরকার কোণঠাসা৷ তারপরেও শরণার্থীদের সেরা আকর্ষণ জার্মানি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ সেই প্রতিবেদন বলছে, জার্মানি অভিমুখে অভিবাসন প্রত্যাশীদের স্রোত গত বছর, অর্থাৎ ২০১৫ সালেই সবচেয়ে ব্যাপক ছিল৷ সদ্য শেষ হওয়া বছরটিতে রেকর্ড সংখ্যক শরণার্থী এসেছে৷ আগতদের মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে অভিবাসী হতে চেয়ে আবেদন করেছেন ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৪৯ জন৷ ২০১৪ সালে ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৮১৫টি আবেদন জমা পড়েছিল৷ তবে ২০১৫ সালে জার্মানিতে মোট অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছে ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার ৬৪৯-এর চেয়ে অনেক বেশি৷ ধারণা করা হচ্ছে, সিরিয়া ও ইরাক সংকটের কারণে সে বছর ১১ লাখ মানুষ জার্মানিতে এসেছিল৷ সবচেয়ে বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছে সিরিয়া থেকে৷ ১১ লাখের মধ্যে ৩৭ শতাংশই সিরীয়৷
শরণার্থীদের প্রিয় জার্মানি, আরো প্রিয় ম্যার্কেল
শরণার্থীদের নিয়ে একটা ছবি সবারই নজর কেড়েছে৷ প্ল্যাকার্ড হাতে এক শিশু, প্ল্যাকার্ডে লেখা, ‘‘উই ওয়ান্ট জার্মানি’’৷ অনেকেই এসে পৌঁছেছেন তাঁদের কাঙ্খিত ঠিকানা জার্মানিতে৷ পছন্দের মানুষ ম্যার্কেলের দেশে এসে খুশি তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Bernd von Jutrczenka
জার্মানিকে চাই...
সেই ছবি৷ বুদাপেস্টে তখন শরণার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে৷ অস্ট্রিয়া বা জার্মানির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে না পারায় তাঁরা ক্ষুব্ধ৷ সবাই ছুটছিলেন প্ল্যাটফর্মের দিকে৷ পুলিশ ফিরিয়ে দিলো৷ স্টেশনের বাইরে শুরু হলো বিক্ষোভ৷ কারো কারো হাতে তখন ট্রেনের টিকিট৷ কেউ ক্ষোভ জানালেন কোলের সন্তানকে নিয়ে৷ অনেক শিশুর হাতে দেখা গেল, ‘উই ওয়ান্ট জার্মানি’ লেখা কাগজ৷ ইউরোপে এত দেশ থাকতে কেন জার্মানি?
ছবি: Reuters/L. Foeger
আছে নব্য নাৎসি, পুড়েছে শরণার্থী শিবির, তবুও...
জার্মানির কোথাও কোথাও শরণার্থীবিরোধী বিক্ষোভ দেখা গেছে৷ অনেক জায়গায় রাতের অন্ধকারে আশ্রয় শিবিরে লেগেছে আগুন৷ তারপরও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জার্মানিকেই বেছে নিতে চায়৷
ছবি: Getty Images/M. Rietschel
বড় কারণ ম্যার্কেল এবং...
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ব্যাপারে শুরু থেকেই উদার জার্মানি৷ চ্যান্সেলর ম্যার্কেল সবসময়ই অভিবাসী এবং অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাশে ছিলেন৷ পেগিডা আন্দোলনের সময়ও সরকারের অভিবাসীদের পাশে থাকার কথা স্পষ্ট করেই বলেছেন ম্যার্কেল৷ পাশে থেকেছেও৷ জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষও ছিল তাঁর পাশে৷ এখনও আছে৷ এই বিষয়গুলোও মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মনে জার্মানির প্রতি আরো আস্থাশীল করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/NDR
তোমাদের স্বাগত
অভিবাসনপ্রত্যাশীরা জার্মানিতে পা রেখেই দেখেছে অবাক হওয়ার মতো দৃশ্য৷ এখানে তাঁরা অনাহূত নয়৷ নিজের দেশ থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসে জার্মানিতে পাচ্ছেন সাদর সম্ভাষণ!
ছবি: Getty Images/A. Beier
জার্মানির নেতৃত্বে ম্যার্কেল, ইউরোপের নেতৃত্বে জার্মানি
বৃহস্পতিবার আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, শরণার্থীদের বিষয়ে জার্মানির ভূমিকা হতে হবে অনুসরণীয়, দৃষ্টান্তমূলক৷ জার্মানির সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে বক্তব্য রাখার সময় তিনি আরো বলেন, অভিবাসন সংকট মোকাবেলায় ইউরোপকেও সফল হতে হবে৷
দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটিকে শরণার্থীরা নিজেদের একজন হিসেবেই বরণ করে নিয়েছিলেন৷ শরণার্থীদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই সময় কাটিয়েছেন ম্যার্কেল৷ কয়েকজন শরণার্থী তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে চেয়েছিলেন৷ সানন্দে তাঁদের আশা পূরণ করেছেন ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Michael Sohn
7 ছবি1 | 7
তবে ২০১৪ সালে সবেচেয়ে বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছিল জার্মানিতে৷ হিসেব বলছে, সে বছর মোট ১৪ লাখ ৬০ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছিল৷ ১৯৯২ সালের পর থেকে সেটাই ছিল এক বছরে শরণার্থী আগমনের সর্বোচ্চ রেকর্ড৷
আরেকটি বিষয় বেরিয়ে এসেছে, জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিবেদন থেকে৷ ২০১৫ সালে শরণার্থীদের স্রোত শুরুর পর জার্মানিতে বেকারত্বও কমেছে৷ প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার বেকার কমেছে ১ বছরে৷ অর্থাৎ রাজনৈতিক কারণে জনসংখ্যা বাড়ার ফলে কর্মজীবীর সংখ্যা বেড়েছে জার্মানিতে!
এভাবে জনসংখ্যা বাড়লেও অবশ্য অদূর ভবিষ্যতে দ্রুত জনসংখ্যা কমার আশঙ্কা কমেনি৷ এতকিছুর পরও নাকি ২০৬০ সালে জার্মানির জনসংখ্যা কমে ৭৩ লক্ষ ১০ হাজার হয়ে যেতে পারে! জার্মানির বর্তমান জনসংখ্যা ৮২ লক্ষ৷
বন্ধু, আপনিও কি সুযোগ পেলে জার্মানিতে আসতে চান? উত্তরটি ‘হ্যাঁ’ হলে জানান আপনার নিজস্ব কারণ, নীচে মন্তব্যের ঘরে৷
জার্মানিতে আসার আগে আপনার যা জানা প্রয়োজন
জার্মানিতে শরণার্থী হিসেবে আসার সময় বেশ কিছু বিষয় আপনার মাথায় রাখতে হবে৷ এখানে সবকিছু যত সহজ মনে হয়, আসলে তত নয়৷ এখানে সেরকম দশটি বিষয় উল্লেখ করা হলো৷
ছবি: picture alliance
কাজের অনুমতি ছাড়া কাজ নয়
মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় এটা বৈধ হলেও জার্মানিতে কাজের অনুমতি ছাড়া কাজ করা আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ৷ কেউ যদি অবৈধভাবে কাজ করা অবস্থায় ধরা পড়ে, তাহলে তার জরিমানা, এমনকি জেলও হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/ZB
কর অবশ্যই প্রদান করতে হবে
জার্মানিতে কর প্রদানের নিয়মকানুন বেশ জটিল৷ তাসত্ত্বেও কর প্রদান না করা এখানে অবৈধ৷ আইন অনুযায়ী, এটা সমাজের বিপরীতে এক ধরনের চুরি৷ কর প্রদান এক ধরনের দায়িত্ব, যেমনটা ট্যাক্স প্রদান৷
ছবি: Fotolia/Joachim B. Albers
শিশুদের প্রতি জোর খাটানো যাবে না
শিশুদের আঘাত করা জার্মানিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ বাড়ি কিংবা স্কুল কোথাও শারীরিক শাস্তি গ্রহণযোগ্য নয়৷
ছবি: DW/R. Azizi
শিশুদের অবশ্যই স্কুলে যেতে হবে
স্কুল বয়সি শিশুরা শুধু বাসায় বসে থাকতে পারবে না, পারবে না কাজে যেতে৷ তাদের যেতে হবে স্কুলে৷ শিশুর বয়স ছয় বছর হলে তাকে অবশ্যই কোনো না কোনো স্কুলে নিবন্ধিত হতে হবে এবং নিয়মিত ক্লাসে যেতে হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
বেশি শব্দ করা যাবে না!
এমনকি নিজের ঘরের মধ্যেও বেশি শব্দ করা যাবে না, যা আপনার প্রতিবেশীদের বিরক্ত করতে পারে৷ বিশেষ করে রাতের বেলা জার্মানিতে এদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Pleul
সুপারমার্কেটে দরকষার সুযোগ নেই
বাজারে দরকষাকষি বিশ্বের অনেক দেশেই গ্রহণযোগ্য এবং মানুষ তা উপভোগও করে৷ তবে জার্মানিতে সুপারমার্কেট কিংবা অধিকাংশ দোকানপাটে দরদামের সুযোগ নেই৷ দরাদরি করতে চাইলে অনলাইনে চেষ্টা করতে পারেন৷
ছবি: Fotolia/G. Sanders
পশুপ্রাণিকে খেতে দেবেন না!
জার্মানিতে অধিকাংশ প্রাণির মালিক রয়েছে কিংবা তারা বিশেষ আইনের আওতায় পরিচালিত৷ তাই প্রতিবেশির বেড়ালকে তাঁর অনুমিত ছাড়া খাওয়ানো খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না৷ আর বেড়ালটা যদি মালিকের চেয়ে আপনার প্রতি বেশি অনুগত হয়ে যায় তাহলে মালিক আপনার বিরুদ্ধে মামলাও ঠুকতে পারে!
ছবি: imago/blickwinkel
সময়নিষ্ঠা – জার্মানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
কোনো অ্যাপয়েনমেন্ট থাকলে সেখানে সময়মত যাওয়া এবং সর্বোপরি সময়ের প্রতি সচেতনতা জার্মানিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ দেরি করে কোথাও যাওয়া ঠিক নয়৷ আর যদি একান্ত দেরি হয় তাহলে যার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা তাঁকে তা জানানোই নিয়ম৷
ছবি: picture alliance
নিজের দূরত্ব বজায় রাখুন
অনেক সংস্কৃতিতে অন্যের বাচ্চাকে জড়িয়ে ধরা, চুমু দেয়া কিংবা উপহার দেয়া স্বাভাবিক ব্যাপার৷ তবে জার্মানিতে বিষয়টি তেমন নয়৷ বাচ্চার অভিভাবকের উপর এটা নির্ভর করে৷ তাই শিশুটা যদি বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণও করে তবুও নিজের দূরত্ব বজায় রেখে তার সঙ্গে কথা বলুন৷
ছবি: picture alliance/Bildagentur-online
রাস্তায় গাড়ি পরিষ্কার নয়
অবশ্যই বাড়ির কাছে গাড়ি পরিষ্কার করাটা সাশ্রয়ী৷ তবে জার্মানিতে এটা নিষিদ্ধ৷ কারণ এতে পরিবেশের ক্ষতি হয়৷ তাই গাড়ি পরিষ্কার করতে চাইলে সেটি নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যান৷ কিছু জায়গায় নিজ হাতে পরিষ্কারের সুযোগ আছে, কোথাও আছে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা৷ তাই পছন্দ আপনার৷