সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, প্রায় অর্ধেকের বেশি জার্মান নাগরিক এখন আর অভিবাসন-প্রত্যাশীদের ভালো নজরে দেখেন না৷ গত কয়েক বছরে শরণার্থী সংখ্যা কমলেও এই মনোভাব দেখা যাচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার জার্মানির বামপন্থি ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক' ফ্রেডরিক এবার্ট স্টিফটুং একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে যে, জার্মানিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্রমেই জাতিবিদ্বেষী চিন্তাভাবনা স্বাভাবিক হয়ে উঠছে৷
বিলেফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকদের নেতৃত্বে সম্পন্ন হওয়া এই গবেষণা জানাচ্ছে, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মোট ৫৪ দশমিক ১ শতাংশ মানুষই অভিবাসন-প্রত্যাশীদের প্রতি সদয় নন৷ বরং, তাঁদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাবই বেশি রয়েছে৷
শরণার্থীদের পাশে জার্মানির প্রখ্যাত তারকারা
শরণার্থীর যাতে কষ্ট না হয় সেদিকে জার্মান সরকার যতটা সম্ভব লক্ষ্য রাখছে৷ সংগীত ও অভিনয় জগতের তারকাও নানাভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করছেন মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে আসা শরণার্থীদের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Ujvari
‘শরণার্থী, স্বাগতম’
অনেক জার্মান তারকাই শরণার্থীদের সহায়তার জন্য নানা ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছেন৷ ইলেক্ট্রো হিপহপ ব্যান্ড ‘ডাইশকিন্ড’ গত মার্চ মাসে এক অনুষ্ঠানে ‘স্বাগতম, শরণার্থী’ লেখা কাপড় বিক্রি শুরু করেছিল৷ সে উদ্যোগের পরিসর আরো বেড়েছে৷ এখন অনলাইনে অর্ডার দিয়েও কেনা যায় ওই ধরনের কাপড়৷ কাপড় বিক্রির টাকাটা শরণার্থীদের কল্যাণ সংগঠন ‘প্রো আস্যুল’-কে দিয়ে দেয় ডাইশকিন্ড৷
ছবি: Reuters/Michael Sohn
গানই হাতিয়ার
এক সংগীত শিক্ষক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছেন৷ নিজের কার্যক্রমটির নাম দিয়েছেন, ‘আকৎসিওন আর্শলখ’ বা ‘ইনিশিয়েটিভ অ্যাসহোল’৷ গান শুনিয়েই উপার্জন করা হয় সেখানে৷ উপার্জনের টাকা ‘প্রো আস্যুল’-কেই দেয় তারা৷
ছবি: aktion-arschloch.de
এসো বন্ধু
জার্মান রকস্টার উডো লিন্ডেনব্যার্গ ২০০ জন শরণার্থীদের জন্য একটা অনুষ্ঠান করছেন৷ ব্রেমেনে হবে অনুষ্ঠানটি৷ সে অনুষ্ঠানে শরণার্থীদের নিয়ে লেখা একটি গানও গাইবেন৷ শরণার্থীদের উদ্দেশ্যে গানটিতে বলা হয়েছে, ‘‘এসো আমরা বন্ধু হয়ে যাই৷ তোমরা আমাদের বাড়িতে এসেছো৷ কেউ বের করে দেবে না তোমাদের৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/W. Kastl
শরণার্থীদের জন্য ফাউন্ডেশন
অভিনেতা এবং পরিচালক টিল শোয়াইগার শরণার্থীদের জন্য নিজের নামে একটি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ অনেক বড় বড় ব্যক্তিত্ব ফাউন্ডেশনে যোগ দিয়েছে শোয়াইগারের আহ্বানে৷ জার্মান ফুটবল দলের কোচ ল্যোভ, ব়্যাপার টোমাস ডি এবং অভিনেতা ইয়ান ইয়োসেফ লিফার্স-এর মতো সুপরিচিত তারকারাও আছেন সেই তালিকায়৷ টিল শোয়াইগার ফাউন্ডেশন তাদের বিভিন্ন কার্যক্রম থেকে যে আয় হয় তা একটি শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্রের পেছনে ব্যয় করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Kalaene
বাদ্যযন্ত্র দিয়ে সহায়তা
গীতিকার হাইৎস রুডল্ফ কুনসে নিয়েছেন অভিনব এক উদ্যোগ৷ শরণার্থীদের বাদ্যযন্ত্র দেবেন তিনি৷ তাঁর মতে, শরণার্থীদের শুধু খাবার আর কাপড় দিলেই হবে না, তাদের বিনোদনও দরকার৷ আর বিনোদনের সুযোগ করে দেয়ার জন্যই শরণার্থীদের জন্য বাদ্যযন্ত্র সংগ্রহে নেমেছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Weihs
অভিবাসন একটি অধিকার
জার্মানির সংগীত ভুবনের ২৪ জন তারকা ‘কাইন বক আউফ নাৎসিস’ নামের একটি সংগঠন গড়ে নব্য নাৎসিদের বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেছেন৷ সেখানে অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে সক্রিয় নব্য নাৎসিদের কঠোর সমালোচনা করছেন তাঁরা৷ ‘কাইন বক আউফ নাৎসিস’ মনে করে, ‘‘অভিবাসনের অধিকার আলোচনা সাপেক্ষ কোনো বিষয় নয়, এটি মানবাধিকার৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
6 ছবি1 | 6
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে রাজনৈতিক আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে জার্মানিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ এসেছেন৷ সেই সময় এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মোট ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ ছিলেন আশ্রয়-প্রত্যাশীদের প্রতি সন্দিহান ও নেতিবাচক৷ এই সংখ্যাই বর্তমানে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৪ দশমিক ১ শতাংশে৷
যদিও ২০১৪ বা ২০১৬ সালের তুলনায় জার্মানিতে শরণার্থী বা রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রত্যাশী মানুষের সংখ্যা বর্তমানে অনেকটাই কম, তবুও শরণার্থী-বিদ্বেষী মনোভাব তাতে কমেনি৷
শরণার্থী-বিদ্বেষ, না বিদেশি-বিদ্বেষ?
একই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে যে, প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন জার্মান (অংশগ্রহণকারীদের ১৯ শতাংশ) বিদেশি বা অ-জার্মান মানুষদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন৷
শুধু তাই নয়, এই সমীক্ষা বলছে, শরণার্থী বা অভিবাসন-প্রত্যাশীদের তুলনায় গৃহহীন বা সমকামী মানুষদের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে জার্মানদের৷