1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিবাসন : লিবিয়ায় ভেসে ওঠা মরদেহ শনাক্তের অপেক্ষা বাংলাদেশে

৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

২৪ জানুয়ারিও প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের৷ পরের দিন লিবিয়া থেকে ইটালি নেয়ার নৌকায় উঠতে না চাওয়ায় গুলিতে, অথবা ঝুঁকিপূর্ণ নৌকায় ওঠায় পানিতে ডুবে প্রাণ যায় তাদের৷

কাঠের নৌকায় থাকা অভিবাসীদের উদ্ধার করছে একটি মানবতাবাদী সংগঠন
আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ছাড়াও বাংলাদেশসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা লিবিয়া থেকে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালি আসার চেষ্টা করেনছবি: Joan Mateu/AP/picture alliance

নিহত ২১ বাংলাদেশির পরিবার এখন স্বজনের মরদেহের অপেক্ষায়৷

অবশ্য ভেসে ওঠা ২৩ মরদেহের ২১টিই বাংলাদেশিদের দাবি করা হলেও সে দাবির সত্যতা সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া এখনো সম্ভব হয়নি৷ বাংলাদেশিদের লাশ শনাক্ত করতে এখনো লিবিয়ার ঘটনাস্থলে যেতে পারেননি  সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। তবে লাশ শনাক্তের জন্য স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়েছে বলে ত্রিপোলিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন।

এদিকে লিবিয়ায় নিহতদের মধ্যে মাদারিপুর ও ফরিদপুরের অন্তত ১২ জন আছেন বলে পরিবার দাবি করেছে।পরিবারগুলোর দাবি অনুযায়ী, ফরিদপুরের আছেন দুইজন। ফরিদপুরের কুমারখালির হৃদয় হাওলাদারের(২৬) লাশ শনাক্তের দাবি করেছেন তার বাবা মিন্টু হাওলাদার। তিনি সোমবার রাতে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা ওই এলাকায় এক বাংলাদেশি দালালের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। আর মর্গের এক ডোমের সঙ্গে আরবিতে কথা হয়েছে। আমাদের ছবি পাঠিয়েছে। সব দেখে আমি আমার ছেলের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছি। আমার ছেলের ডেড বডির নম্বার- চার। আরো যে ছবি আমরা দেখেছি, তাতে তারাও বাংলাদেশি বলেই আমার কাছে মনে হয়েছে।”

"জানুয়ারির ২২ তারিখে আমার ছেলের সাথে আমরা সর্বশেষ কথা হয়েছে। ২৪ জানুয়ারি রাতে তাদের জাহাজে করে ইটালি নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ছোট বোটে করে নিতে চাইলে অনেকে বোটে উঠতে চায়নি। যারা উঠতে চায়নি, তাদের গুলি করে হত্যা করেছে। যারা উঠেছে, তারা ডুবে মারা গেছে। আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করেছে। আমি যে ছবি দেখেছি, তাতে আমার ছেলের গায়ের গেঞ্জিতে গুলির দাগ দেখেছি। আরো কয়েকজনকে গুলি করা হয়েছে। যারা ডুবে মারা গেছে, তাদের দেহ ভেসে ভেসে ভূমধ্যসাগরের তীরে এসেছে,” জানান তিনি। 

ভূমধ্যসাগরে অভিবাসন নিয়ে তথ্যচিত্র- ভূ'মৃত্যু'সাগরের ওপারে

31:43

This browser does not support the video element.

তিনি বলেন, "নভেম্বরের ২৩ তারিখ আমার ছেলে দেশ ছেড়ে যায়। তাদের প্রথমে দুবাই, তারপর সৌদি আরব, মিশর এবং সেখান থেকে লিবিয়া নেয়া হয়। কিন্তু তাদের সরাসরি ইটালি নেয়ার কথা ছিল। আমার ছেলের মোট ১৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আমার পরিচিত দালাল এই কাজ করেছে। এখন আমি লাশ ফেরত আনার চেষ্টা করছি।”

গত ২৫ জানুয়রি রাতে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে ৫৬ জন অভিবাসীকে নিয়ে ইটালির উদ্দেশ্যে রওনা হয় বোটটি। এরপর সেই রাতেই ডুবে যায় নৌকা। ২৮ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূল ব্রেগাতে একে একে ভেসে ওঠে ২৩টি লাশ। পচে যাওয়ার উপক্রম হলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তায় রেড ক্রিসেন্ট লাশগুলো দাফন করে।

২৩টি মরদেহ ছাড়াও মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দুইজনকে। বাকি ৩১ জন এখনো নিখোঁজ। ঘটনাস্থলে যেতে লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করলেও বাংলাদেশের দূতাবাস এখনো অনুমতি পায়নি বলে জানান ত্রিপোলিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মজর জেনারেল (অব.) আবুল হাসনাত মুহাম্মদ খায়রুল বাশার । তিনি বলেন, "আমাদের তিন সদস্যের একটি টিম সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। আমরা এরই মধ্যে ওখানকার স্থানীয় ‘দারুল তাওহীদ' নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছি। তারা লাশ নিয়ে কাজ করে। তারা ঘটনাস্থলে আছে। তথ্য সংগ্রহ করছে। আমাদের ছবিও পাঠাচ্ছে। আমরা তা থেকে চেষ্টা করছি কতজন বাংলাদেশির লাশ সেখানে আছে তা জানতে। তবে আমরা সেখানে না যাওয়া পর্যন্ত ঠিক শনাক্ত করতে পারবো না।”

যারা ছোট বোটে উঠতে চায়নি, তাদের গুলি করে হত্যা করেছে: মিন্টু হাওলাদার

This browser does not support the audio element.

"দূতবাসে আমরা বাংলাদেশ থেকেও ফোন পাচ্ছি। তাদের দেয়া তথ্য ধরেও ওই এজেন্সির মাধ্যমে লাশ শনাক্তের চেষ্টা করছি,” বলেন তিনি। এছাড়া যে দুইজন জীবিত আছেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলে তথ্য জানার চেষ্টার কথা জানান তিনি।

তিনি জানান, "গত দেড় বছরে লিবিয়ার বিভিন্ন বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে চার হাজার ২০০ বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখনো হাজারের বেশি অবৈধ বাংলাদেশি আটকে আছে লিবিয়ায়।”

আর ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রলালয়ের আফ্রিকা ডেস্কের মহাপরিচালক বিএম জামাল হোসেন জানান, "জায়গাটি ত্রিপোলি থেকে এক হাজার মাইল দূরে। ওটা বেনগাজিতে। ওখানে আলাদা সরকার। ত্রিপোলির অনুমোদনে কাজ হয় না। আমরা বেনগাজিতেও আবেদন করেছি। কিন্তু এখনো অনুমতি পাইনি। ওই জায়গাটি অনেক দুর্গম। যাওয়াও কঠিন। তবুও আমাদের দূতাবাসের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।”

"তাদের লাশগুলো আগেই দাফন করা হয়েছে এবং অনেকটাই পচে গেছে। তারপরও আমরা আশা করছি শনাক্ত করতে পারবো। তবে ওখানকার রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, লাশগুলো বাংলাদেশিদের। তারা চেহারা এবং অন্যান্য আলামত দেখে বলছে,” জানান তিনি।

ব্র্যাকের অভিবাসন বিভাগের প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, "আমাদের কাছে যে তথ্য রয়েছে তাতে ওই লাশগুলো বাংলাদেশিদের। তবে লাশগুলো পচে গেছে।”

লাশগুলো আগেই দাফন করা হয়েছে এবং অনেকটাই পচে গেছে: বিএম জামাল হোসেন

This browser does not support the audio element.

"গত ১০ বছর ধরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে যারা ইউরোপে যায়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি। গত বছর কমপক্ষে ১৪ হাজার বাংলাদেশি এভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়েছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে,  ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৮৪ হাজার বাংলাদেশি এভাবে সমূদ্রপথে ইউরোপে গিয়েছে। প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১০০ বাংলাদেশি এভাবে মারা যায়।”

আর অভিবাসন বিষয়ক বিশ্লেষক আসিফ মুনির ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আসলে আগে এরা আকাশ পথে যেতেন। কিন্তু কড়াকড়ি হওয়ার পর এখন ভূমধ্যসাগর হয়ে যান। যারা যান, তারা নিজেরাও জানেন যে, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও যান। কারণ, কেউ কেউ তো শেষ পর্যন্ত যেতে পারেন।”

"তারা দালাল ধরে যান। এর সঙ্গে শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক চক্রও জড়িত। যারা যান, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলে দেখেছি, প্রতিজনের ১৬ থেকে ২০ লাখ টাকা লাগে। কিন্তু এই টাকা খরচের পর অনেকেই বিপদে পড়েন, মারা যান বন্দি হন, ক্যাম্পে আটক হন.” বলেন তিনি।

আসিফ মুনির মনে করেন, "এখানে সচেতনতার অভাব আছে। অনেকেই জানে না যে, ইউরোপে গেলেই যে সেখানে থাকা যায় না। আর এইসব পাচারকারীদের ধরতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক আইনও খুব বেশি কাজ করছে না। ফলে প্রলোভনে পড়ে, উন্নত জীবনের আশায় আর এই সময়ে পরিস্থিতির কারণে হয়তো অনেকে যে-কোনো উপায়ে ইউরোপে যেতে চাইছেন।”

তিনি বলেন, "ফরিদপুর, মাদারিপুর, নোয়াখালী ও সিলেটসহ কয়েকটি এলাকার মানুষের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি। বিশেষ করে ইটালিতে থাকা বাংলাদেশিদের একটি অংশ আবার তাদের স্পন্সরের কাগজ পাঠিয়ে সহায়তা করেন।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ