শিশু অবস্থায় অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অভিবাসীদের সুরক্ষা কার্যক্রম বন্ধ করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে এ জন্য ছয় মাসের সময় বেঁধে দেয়া হবে৷ মঙ্গলবারই আসতে পারে এ ঘোষণা৷
বিজ্ঞাপন
ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাইভালস – ডাকা চালু হয় ২০১২ সালে৷ এই কার্যক্রমের মাধ্যমে ওবামা প্রশাসন প্রায় ৮ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার দু'বছরের নবায়নযোগ্য অনুমতি দেয়৷ এই অনুমতির ফলে ১৬ বছরের কম বয়সে যাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন, তাঁরা দেশটিতে কাজ এবং পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন৷
নির্বাচনি প্রচারণায় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েই ভোটারদের আকর্ষণ করেছেন ট্রাম্প৷ তাঁর অন্যতম অঙ্গীকার ছিল এই ডাকা কার্যক্রম বাতিল করা৷ ডাকাকে ‘অবৈধ ক্ষমা' ঘোষণা করে ক্ষমতায় আসামাত্রই তা বাতিলের ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি৷
কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরপরই এই ইস্যু এড়িয়ে চলতে শুরু করেন ট্রাম্প৷ বরং সুর বদলে বার্তাসংস্থা এপিকে তিনি বলেন, এই প্রোগ্রামের অধীনে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা আপাতত ‘নিশ্চিন্ত' থাকতে পারেন৷ ফেব্রুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ইস্যুটিকে ‘সবচেয়ে জটিল সমস্যা' বলেও জানিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ এমনকি সবসময় অভিবাসীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে আসলেও অভিবাসী তরুণদের প্রতিভাকে ‘অসাধারণ, অবিশ্বাস্য' বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
এবার অবশ্য স্বেচ্ছায় নয়, অনেকটা রিপাবলিকান সহকর্মীদের চাপের মুখেই ‘ডাকা' ঘোষণা দিতে যাচ্ছে হোয়াইট হাউজ৷ তবে ট্রাম্প ‘ডাকা' নিয়ে যে সিদ্ধান্তেই আসুন না কেন, ব্যাপক ক্ষোভের মুখে তাঁকে পড়তেই হচ্ছে৷ আইওয়ার কট্টর রিপাবলিকান সিনেটর স্টিভ কিং ‘ডাকা' বাতিল না হলে তা রিপাবলিকানদের ‘আত্মহত্যার সামিল' হবে বলে মন্তব্য করেছেন৷
অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাট তো বটেই, খোদ নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির মধ্য থেকেই এ নিয়ে উঠেছে আপত্তি৷ সবচেয়ে সরব হাউজ স্পিকার পল রায়ান৷ একটি রেডিওকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘এখানে তাঁদের বাবা-মারা তাঁদের নিয়ে এসেছেন, এই বাচ্চাদের আর কোনো দেশ নেই, বাড়ি নেই৷ আমি সত্যিকার অর্থেই বিশ্বাস করি, এই সমস্যার একটা আইনি সমাধান দরকার৷''
ডেমোক্র্যাটরা এরই মধ্যে চরম আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে৷ ‘‘এমন খবর যদি সত্যি হয়, নাগরিক অধিকার নিয়ে লড়াই মোকাবেলার জন্যও ট্রাম্প প্রশাসনকে তৈরি হবে'', টুইট করেছেন নিউ জার্সির সিনেটর বব মেনেনডেজ৷
তবে কংগ্রেস যাতে বিকল্প আইনি সমাধান খুঁজে নিতে পারে, সে লক্ষ্যেই ছ'মাসের সময় দেয়া হচ্ছে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের৷ এই সময়ের মধ্যে কংগ্রেস বিকল্প কিছু করতে ব্যর্থ হলে কী হবে, তা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাম্পের ঘনিষ্ট কিছু কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এপি জানিয়েছে, ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত বলে ধরে নেয়া ঠিক হবে না৷ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অতীতের মতোই এবারও যে কোনো সময়ই সিদ্ধান্ত পালটে ফেলতে পারেন৷
এডিকে/ডিজি (এপি, এএফপি)
১০০ দিনে ট্রাম্প কথা রেখেছেন কি?
নির্বাচনি প্রচারের সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প জনতার সঙ্গে ১০০ দিনের চুক্তির কথা বলেছিলেন৷ প্রেসিডেন্ট হবার পর তিনি সেই চুক্তি মেনে সব প্রতিশ্রুতি পালন করেছেন কি? এতগুলি নির্বাহী আদেশের পর সেই প্রশ্ন আরও জোরালো হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/Brendan Smialowski
‘ওবামাকেয়ার’ বাতিল, নতুন স্বাস্থ্য বিমা চালু
তীব্র বিদ্বেষ নিয়ে পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে চালু করা স্বাস্থ্য বিমা কাঠামো বাতিল করে আরও অনেক কার্যকর এক পালটা ব্যবস্থা চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজের রিপাবলিকান দলের মধ্যেই বিরোধিতার মুখে আপাতত পিছু হঠতে হয়েছে তাঁকে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. McNew
কর ব্যবস্থার সংস্কার
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই কর ব্যবস্থার সংস্কারের ঘোষিত লক্ষ্যে একের পর এক সময়সীমা স্থির করেও বারবার ব্যর্থ হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক বিশদ প্রস্তাবমালা প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প৷ তবে প্রথম ১০০ দিনে তিনি এ ক্ষেত্রে কিছু করে উঠতে পারেননি৷
ছবি: Getty Images/W. McNamee
কর্মসংস্থানে জোয়ার
ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, কর ব্যবস্থার সংস্কার ও ‘অপ্রয়োজনীয়’ সরকারি বিধিনিয়ম কমাতে পারলেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে জোয়ার আসবে৷ এখনো সে কাজে অগ্রগতি ঘটেনি৷ যেটুকু সাফল্য এসেছে, তার দাবিদার হবার নৈতিক অধিকার আছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters/A. P. Bernstein
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর
অনুপ্রবেশ রুখতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ট্রাম্প৷ বলেছিলেন, তার ব্যয়ভার মেক্সিকোকেই বহন করতে হবে৷ সেই প্রক্রিয়া শুরু করতে তিনি এক নির্বাহী আদেশও জারি করেছেন৷ এবার তার ব্যয়ভারের জন্য কংগ্রেসের দ্বারস্থ হচ্ছেন ট্রাম্প৷ বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দল প্রবল প্রতিরোধের হুমকি দিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/J.Sullivan
আইএস ধ্বংস করার অঙ্গীকার
ক্ষমতায় আসার ৩০ দিনের মধ্যে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেটকে পুরোপুরি নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ কিন্তু সমালোচকদের মতে, এখনো পর্যন্ত ওবামার আমলের নীতিই চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি৷ সার্বিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়লেও আইএস বহাল তবিয়তেই আছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Militant Website Turkistan Islamic Party
অভিবাসনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি
প্রচারের সময় ট্রাম্প সংবিধানের তোয়াক্কা না করে সব মুসলিমদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অঙ্গীকার করেছিলেন৷ তারপর সুর নরম করে কিছু মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণ কার্যত বন্ধ করার উদ্যোগ নিলেন৷ কিন্তু আদালতের হস্তক্ষেপে সেই উদ্যোগ থমকে গেছে৷ বেআইনি অভিবাসীদের তাড়ানোর ক্ষেত্রেও কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Huffaker
মুক্ত বাণিজ্যের বিরোধিতা
উত্তর অ্যামেরিকার মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ‘ন্যাফটা’র বর্তমান শর্তগুলির চরম বিরোধিতা করে নতুন করে সেটি সাজানোর উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ মেক্সিকো ও ক্যানাডার সঙ্গে এই নিয়ে কোন্দলও শুরু হয়েছে৷ তবে আপাতত কোনো রদবদল হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি৷