বিদেশির হাতে একজন জার্মান নাগরিক নিহতের পর এনিয়ে আন্দোলনের সময় দেশটির উগ্র ডানপন্থিরা অভিবাসীদের ‘চিহ্নিত' করার পরিকল্পনা করেছিলেন বলে পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মান দৈনিক স্যুডডয়চে সাইটুং এবং ডব্লিউডিআর ও এনডিআর সম্প্রচার কেন্দ্রের গবেষণা অনুযায়ী, স্যাক্সনি রাজ্যের ক্রিমিনাল পুলিশ অফিস কেমনিৎস শহরের ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত সদস্যদের চ্যাটিংয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই তথ্য জানায়৷ তবে প্রকৃতপক্ষে অভিবাসীদের চিহ্নিত করা হয়েছিল কিনা এনিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
২০১৮ সালের ২৬ আগস্ট কেমনিৎসে ছুরিকাঘাতে এক জার্মান নাগরিক নিহত হন৷ এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ওই সময় একজন বিদেশিকে সন্দেহ করা হয়েছিল৷ সম্প্রতি ২৩ বছর বয়সী এক সিরিয়ান নাগরিককে ওই হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷
এই হত্যাকাণ্ডের পর কেমনিৎস শহরে এক সপ্তাহ ধরে বিক্ষোভ হয়৷ এসময় উগ্র ডানপন্থিদের রাস্তায় অভিবাসী ও বিদেশিদের ধাওয়া করতে দেখা যায়৷
কেমনিৎসে বিক্ষোভের তদন্ত করে পুলিশ বলছে, ওই সময় চরম ডানপন্থি ব্যক্তিরা অভিবাসী এবং বিদেশিদের চিহ্নিত করার পরিকল্পনা করেছিলেন৷
দৈনিক স্যুডডয়চে সাইটুং এবং ডব্লিউডিআর ও ওনডিআর সম্প্রচার কেন্দ্রের গবেষণা অনুযায়ী, স্যাক্সনি রাজ্যের ক্রিমিনাল পুলিশ অফিস বিক্ষোভের সময় কেমনিৎসের ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত সদস্যদের মধ্যে ২৬ থেকে ২৮ আগস্টের চ্যাটিংয়ের তথ্য মূল্যায়ন করেছে৷
স্যুডডয়চে সাইটুং বলছে, স্যাক্সনির প্রতিবেদনের সারকথা হলো – বিক্ষোভকারীরা পুলিশ, অভিবাসী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছিল৷
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজেদের মধ্যে চ্যাটিংয়ে সময় তারা ‘হান্ট' শব্দটি বারবার ব্যবহার করেছেন এবং অভিবাসীদের হিংস্রভাবে আক্রমণ বা প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে আলাপ করেছেন৷
নথিতে আরও বলা হয়েছে, চ্যাটিংয়ে অংশগ্রহণকারীরা সফলভাবে অভিবাসীদের চিহ্নিত করা নিয়ে গর্ব করেন৷ চ্যাটিংগুলো ‘বিদেশিদের বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধমূলক কাজের প্রকৃত বাস্তবায়ন' নির্দেশ করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷
কেমনিৎসে ডানপন্থিদের সহিংসতার সময় বিদেশিদের বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়েছিল কি না এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার তৎকালীন প্রধান হান্স-জর্জ মাসেন এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে বিদেশিদের ধাওয়া করা হচ্ছে এমন ভিডিওর সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন৷
২০১৮ সালের আগস্টে চেমনিটজ বিক্ষোভ নিয়ে স্যাক্সনি পুলিশের প্রতিবেদনটি আরও মূল্যায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে পাঠানো হয়েছে৷
ইউরোপের কয়েকজন ডানপন্থি নেত্রী
ডানপন্থি পপুলিস্ট দলকে সমর্থন করার মতো নারীদের সংখ্যা ইউরোপে দিন দিন বাড়ছে৷ এক্ষেত্রে যে নারী নেত্রীরা ভূমিকা রাখছেন, তাঁদের কয়েকজনের কথা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/E. Gailard
ফ্রান্স: মারিন ল্য পেন
২০১১ সাল থেকে ফ্রান্সের চরম ডানপন্থি দল ‘ন্যাশনাল ব়্যালি’র প্রধান তিনি৷ দলটির নাম আগে ছিল ‘ন্যাশনাল ফ্রন্ট’৷ দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি দলের চরম ডানপন্থি ভাবমূর্তিতে কিছুটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছেন৷ এবং তা করতে নিজের বাবাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন মারিন ল্য পেন৷ দেশটির সবশেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমানুয়েল মাক্রোঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Reuters/E. Gailard
জার্মানি: ফ্রাউকে পেট্রি
মুসলমান ও অভিবাসীবিরোধী নীতি অনুসরণ করে চরম ডানপন্থি দল ‘জার্মানির জন্য বিকল্প’ বা এএফডিকে গত বছর জার্মান সংসদে নিয়ে যেতে সমর্থ হন এই নেত্রী৷ যদিও দলের কিছু নেতার উগ্র বিবৃতির প্রতিবাদ করে পরবর্তীতে দল থেকে পদত্যাগ করেন তিনি৷ পেট্রির অভিযোগ, এই ধরনের মন্তব্য ‘গঠনমূলক বিরোধিতা’র পরিপন্থি৷ বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সংসদে স্বতন্ত্র সাংসদ হিসেবে কাজ করছেন৷
ছবি: picture-alliance/Eventpress
জার্মানি: আলিস ভাইডেল
ফ্রাউকে পেট্রি দল থেকে চলে যাওয়ার পর এএফডি দলের অন্যতম প্রধান হিসেবে দায়িত্বে আছেন ভাইডেল৷ ২০১৩ সালে তাঁর একটি ইমেল প্রকাশিত হয়েছিল৷ ঐ ইমেলে তিনি বলেছিলেন, আরব, সিনটি ও রোমাদের মতো বিদেশিরা জার্মানিতে ভরে গেছে৷ এছাড়া ইমেলে তিনি তৎকালীন সরকারকে ‘শূকর’ ও ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার মিত্রদের হাতের পুতুল’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
পোল্যান্ড: বেয়াটা শিডওয়া
তিনি বর্তমানে দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং ডানপন্থি দল ল অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান৷ ইউরোপে প্রবেশ করা শরণার্থীদের গ্রহণে যে কোটা ব্যবস্থা চালুর প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল, তার বিরোধিতা করেছিল শিডওয়ার দল৷ ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সাবেক এক নাৎসি শিবিরে উপস্থিত হয়ে তিনি তাঁর অভিবাসন-বিরোধিতার বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন৷
ছবি: Getty Images
নরওয়ে: সিভ ইয়েনসেন
দেশটির বর্তমান মধ্য-ডানপন্থি সরকারি জোটের অংশ প্রোগ্রেস পার্টির নেতা ইয়েনসেন৷ তিনি ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক এবং নরওয়ের দূতাবাস তেল আভিভ থেকে জেরুসালেমে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব করেছেন৷ তাঁর রাজনৈতিক গুরুর মধ্যে একজন হলেন ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইটালি: জর্জা মেলোনি
রক্ষণশীল ‘ব্রাদার্স অফ ইটালি’ দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা৷ মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি নব্য ফ্যাসিবাদ দল ইটালিয়ান সোশ্যাল মুভমেন্টের যুব দল ইয়ুথ ফ্রন্টে যোগ দিয়েছিলেন তিনি৷ মেলোনির দল বর্তমানে ইটালির জোট সরকারের অংশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ডেনমার্ক: পিয়া কিয়ের্সগর্ট
১৯৯৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত চরম ডানপন্থি দল ড্যানিশ পিপলস পার্টির প্রধান ছিলেন তিনি৷ এই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাও তিনি৷ ডেনমার্কে অভিবাসীদের প্রবেশ বন্ধ তাঁর অন্যতম আগ্রহের বিষয়৷ বহুসংস্কৃতিবিরোধী ও অভিবাসনবিরোধিতার জন্য পরিচিত কিয়ের্সগর্ট৷