ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে ২০০০ সাল থেকে এখন অবধি ৩৩,০০০ মানুষ মারা গেছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে৷ বর্তমানে তুরস্ক এবং ইউরোপের দিকের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ইটালির উপর চাপ বেড়েছে৷
বিজ্ঞাপন
অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন আইওএম শুক্রবার জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগর এখনো বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত হিসেবে রয়ে গেছে৷ এই সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৩৩,০০০ মানুষ৷ নিহতদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশি নাগরিকও রয়েছে৷
২০১৪ থেকে ২০১৬ সাল অবধি এভাবে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক শরণার্থী ও অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করে৷ তবে সাম্প্রতিক সময়ে সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে মৃতের সংখ্যা কমে গেলেও ঝুঁকি আগের চেয়ে বেড়ে গেছে বলে মনে করছে আইওএম৷ জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংগঠনটি৷
রিফিউজিদের নিয়ে ১২ চলচ্চিত্র
বিশ্বে বাড়ছে শরণার্থী সংকট৷ এ নিয়ে বিভিন্ন দেশে নির্মিত হয়েছে বেশ কিছু চলচ্চিত্রও৷ শরণার্থীদের আনন্দ-বেদনার কাব্য সেলুলয়েডের পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন অনেক নবীন প্রবীণ পরিচালক৷
ছবি: 2017 Human Flow UG
‘হিউম্যান ফ্লো’
২৩টি দেশের ৪০টি শরণার্থী শিবিরের টুকরো ছবি নিয়ে এ বছর মুক্তি পায় ‘হিউম্যান ফ্লো’৷ শরণার্থীদের দুর্দশা তুলে ধরে বিশ্ববাসীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে এ তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেন চীনের শিল্পী আই ওয়েওয়ে৷ ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে এ তথ্যচিত্রের প্রিমিয়ার অনুষ্ঠিত হয়৷ ইতিমধ্যে জার্মানিতেও মুক্তি পেয়েছে তথ্যচিত্রটি৷
ছবি: 2017 Human Flow UG
‘দ্য বোট ইজ ফুল’
নাৎসিদের অত্যাচার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাওয়া ছ’জনের গল্প নিয়ে ১৯৮০ সালে নির্মিত হয় এ ছবি৷ অনেকটা অভিব্যক্তি নির্ভর এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন সুইস পরিচালক মার্কুস ইমহুফ৷
ছবি: picture-alliance/Everett Collection/Libra Films
‘হোটেল রুয়ান্ডা’
বিভিন্ন দেশ থেকে ইউরোপে পালিয়ে আসা মানুষদের নিয়ে যত চলচ্চিত্র তৈরি হয়, সে তুলনায় বিভিন্ন কারণে আফ্রিকার মানুষদের উদ্বাস্তু হয়ে পড়ার বিষয়টি ততটা উঠে আসে না৷ ২০০৪ সালে নির্মিত এ চলচ্চিত্রে পরিচালক টেরি জর্জ রুয়ান্ডার গণহত্যা ও সেখান থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের গল্প শুনিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Tobis Film
‘রিভারব্যাংক্স’
গ্রিক পরিচালক পানোস কারকানেভাতোসের এ চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায় দু’বছর আগে৷ সীমান্তবর্তী নদী এভরোস পার হয়ে তুরস্ক থেকে গ্রিসে পালাতে চাওয়া শরণার্থীরা কীভাবে পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়ে অথবা মাইনপোতা নদীতটের ভয়াবহতা – এ সব নিয়েই নির্মিত হয়েছে এ চলচ্চিত্রটি৷
ছবি: Real Fiction
‘ওয়েলকাম’
দেশ ছেড়ে ইরাকি-কুর্দিশ এক বালকের ব্রিটেনযাত্রা এ চলচ্চিত্রের উপজীব্য৷ দেশ পালানো এ কিশোর ও তার ফরাসি সাঁতার শিক্ষকের বন্ধুত্ব ও মানবিকতার গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফরাসি এই ছবিতে৷ ছবির পরিচালনা করেছেন ফিলিপে লিওরেট৷
ছবি: arsenalfilm.de
‘ল্য আভ্রে’
ফ্রান্স থেকে ব্রিটেন পালিয়ে আসা এক শরণার্থী বালক ও অসফল বৃদ্ধ লেখকের বন্ধুত্বের গল্প এটি৷ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ফিনিশ পরিচালক আকি কাউরিসমাকি৷
ছবি: Sputnik Oy/Marja-Leena Hukkanen
‘দ্য আদার সাইড অফ হোপ’
এ চলচ্চিত্রের নায়ক এক সিরিয়ান যুবক, যিনি ঘটনাচক্রে আটকা পড়েছে হেলসিঙ্কিতে৷ শরণার্থীদের মানবিক সমস্যা নিয়ে ফিনল্যান্ডের পরিচালক আকি কাউরিসমাকির আরেকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র এটি৷
ছবি: Sputnik Oy
‘ভিলকোমেন বাই ডেন হার্টমান্স’
জার্মান পরিচালক সিমোন ফেরহ্যোফেন এ চলচ্চিত্রে কৌতুকের মাধ্যমে করুণ এক ঘটনা তুলে ধরেছে দর্শকের কাছে৷ এতে জার্মান এক পরিবারের গল্প বলা হয়েছে, যারা একজন শরণার্থীকে নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দেয়৷ জার্মানির ক্রমবর্ধমান শরণার্থী সংকটের মুখে সিমোনের এ চলচ্চিত্রটি বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Warner Bros. Ent.
‘নাইটশেপস’
জার্মানিতে তখনও শরণার্থী সমস্যা জেঁকে বসেনি, সেই ১৯৯৯ সালে জার্মান পরিচালক আন্দ্রেয়া ড্রেসেন এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন৷ অ্যাঙ্গোলা থেকে বার্লিনে আসা এক শরণার্থী কিশোরের সাথে এক জার্মান ব্যবসায়ীর অসম বন্ধুত্বের গল্প এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Peter Rommel Film
‘দিপান’
শ্রীলংকার এক শরণার্থী পরিবার ফ্রান্সে এসে কী করে নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে, তা নিয়েই নির্মিত হয় এই ফরাসি সিনেমাটি৷ ২০১৫ সালে কান উৎসবে ‘স্বর্ণপাম’ জয়ী এ চলচ্চিত্রের পরিচালক জাক উদিয়ার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Why Not Productions
‘মেডিটেরিনিয়া’
দুই আফ্রিকান যুবক দক্ষিণ ইটালিতে শরণার্থী হিসেবে প্রবেশের পর, কীভাবে প্রতিকূলতা ও সহিংসতার মুখোমুখি হয় – সেই গল্প নিয়েই বানানো হয় এ চলচ্চিত্র৷ ২০১৫ সালে ছবিটির পরিচালনা করেন জোনাস কারপিগনানো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/DCM
‘ফায়ার অ্যাট সি’
ইটালিয়ান পরিচালক জিয়ানফ্রাংকো রোজি নির্মিত এ তথ্যচিত্রটি বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘গোল্ডেন বেয়ার’ জেতে৷ সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছাতে শরণার্থীদের মরিয়া চেষ্টা ও বেঁচে থাকার আকুতিই তুলে ধরা হয়েছে এ তথ্যচিত্রে৷
ছবি: 21 Uno Film/Weltkino Filmverleih
12 ছবি1 | 12
জাতিসংঘের প্রতিবেদনটির অন্যতম লেখক ফিলিপ ফার্গুস বলেন, ‘‘তুরস্কের সঙ্গে এক বিতর্কিত অভিবাসী চুক্তি এবং লিবিয়ার উপকূলরক্ষীদের সক্রিয়তার কারণে শরণার্থীরা এখন আগের চেয়ে দীর্ঘ ও বিপজ্জনক সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে সরাসরি ইটালি চলে যাচ্ছে৷ আগের সংক্ষিপ্ত এবং কম বিপজ্জনক পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিচ্ছে তারা৷ আর তাতে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে৷''
প্রসঙ্গত, চলতি বছর ১৬১,০০০-এর বেশি শরণার্থী ও অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করেছে৷ এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই সমুদ্রপথে ইটালিতে এসেছে৷ ২০১৫ সালে ইউরোপে এভাবে ইউরোপে প্রবেশকারীর সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি৷ সেবছর যুদ্ধ এবং দরিদ্রতা থেকে বাঁচতে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং আফ্রিকার অনেক মানুষ সমুদ্রপথে ইউরোপে প্রবেশ করে৷ জার্মানি তখন প্রায় নয়লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে৷ তবে মূলত সিরিয়ার নাগরিকদের দীর্ঘ মেয়াদে থাকার অনুমতি দিলেও এশিয়ার শরণার্থীদের ইতোমধ্যে ফেরত পাঠাতে শুরু করেছে দেশটি৷
উল্লেখ্য, চলতি বছর এখন অবধি ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার৷ চলতি বছরের শেষের দিকে এই সংখ্যা বাড়তে পারে৷ তাসত্ত্বেও তা গতবছরের তুলনায় কম হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ কেননা, গতবছর সমুদ্রপাড়ি দিতে গিয়ে মারা গিয়েছিল ৪,৭৫৭ জন শরণার্থী৷
এআই/ডিজি (রয়টার্স, ডিপিএ, এএফপি)