সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, ৬০ শতাংশের বেশি জার্মান এখনো প্রতিবেশী হিসেবে অভিবাসীদের সঙ্গে জীবনযাপনকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন৷ পূর্বের চেয়ে পশ্চিম জার্মানিতে বাস করা জার্মানরা এক্ষেত্রে বেশি ইতিবাচক বলে জানা গেছে৷
ছবি: imago/Lem
বিজ্ঞাপন
‘এক্সপার্ট কাউন্সিল অফ জার্মান ফাউন্ডেশনস অন ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেশন' বা এসভিআর এই জরিপটি করেছে৷ এতে অংশ নিয়েছেন ৯,২৯৮ জন৷ গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷
২০১৫ সালে শরণার্থী সংকট শুরু হওয়ার পর এটিই এই ধরনের প্রথম জরিপ৷ এর ফলাফল ‘একটি ভালো লক্ষণ' বলে মন্তব্য করেছেন জার্মানির অভিবাসন বিষয়ক কমিশনার আনেটে ভিডমান-মাউৎস৷
জরিপে যা পাওয়া গেছে:
প্রায় ৬৩ দশমিক ৮ শতাংশ স্থানীয় জার্মান (যার বংশে অভিবাসনের উদাহরণ নেই) জার্মানির বর্তমান অভিবাসন পরিস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন৷ শেষবার ২০১৫ সালে করা এমন জরিপে সংখ্যাটি ছিল ৬৫ দশমিক ৪ শতাংশ৷ এদিকে, জরিপে অংশ নেয়াদের মধ্যে যাঁদের অভিবাসনের উদাহরণ আছে, তাঁদের প্রায় ৬৮ দশমিক ৯ শতাংশ অভিবাসন পরিস্থিতিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন৷
পশ্চিম জার্মানির ৬৬ শতাংশ উত্তরদাতা অভিবাসন পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট৷ পূর্ব জার্মানির ক্ষেত্রে সেই সংখ্যাটা ৫৫ শতাংশ৷
জার্মানির যে এলাকায় কম অভিবাসী বাস করেন, যেমন পূর্ব জার্মানির রাজ্যগুলোতে, সেখানকার মানুষ অভিবাসন ও ইন্টিগ্রেশন বিষয়ে বেশি আপত্তি জানিয়েছেন৷
নারীদের চেয়ে পুরুষরা জার্মানির ইন্টিগ্রেশন পরিস্থিতিকে বেশি নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন৷
প্রায় ৬০ শতাংশ স্থানীয় জার্মান আরো শরণার্থী নেওয়ার পক্ষে৷ তবে শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা সীমিত করার কথাও বলেছেন তাঁরা৷
জরিপের গবেষকরা বলছেন, অভিবাসন বিষয়ে যাঁরা সংশয়ে আছেন, তাঁরা যদি অভিবাসীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত পর্যায়ে মেলামেশা শুরু করেন, তাহলে সেই সংশয় দূর হতে পারে৷ ‘‘গণমাধ্যমে যা দেখানো হয় তার তুলনায় প্রতিদিনকার অভিজ্ঞতা বেশি ভালো,'' প্রতিবেদনে লিখেছেন গবেষকরা৷
অভিবাসীদের সমর্থনে জার্মানিতে বিক্ষোভ
জার্মানি জুড়ে বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার নাগরিক অংশ নিয়েছেন বিক্ষোভে৷ ভূমধ্যসাগরে ভাসতে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের উদ্ধারে যেসব এনজিও কাজ করছে, তাঁদের প্রতি তাঁরা জানিয়েছেন সমর্থন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carstensen
প্ল্যাকার্ড নয়, লাইফ জ্যাকেট
বার্লিনে লাইফ জ্যাকেট নিয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন বিক্ষোভকারীরা৷ তাঁদের বক্তব্য, যেসব উদ্ধারকারী ঝুঁকি নিয়ে গভীর সাগর থেকে শরণার্থীদের নিয়ে আসছেন, সমর্থন না করে উলটো তাদের অপরাধী বানিয়ে দেয়া হচ্ছে৷ আয়োজকদের দাবি, অন্তত ১২ হাজার প্রতিবাদকারী এতে যোগ দিয়েছেন৷ এছাড়াও প্রতিবাদ হয়েছে হামবুর্গ, হানোফার, ব্রেমেন, মিউনিখ এবং উলম শহরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carstensen
উদ্ধারকারীদের প্রতি সমানুভূতি
হামবুর্গের বিক্ষোভে সিব্রুক নামের সংগঠনের এক সদস্যকে দেখা যাচ্ছে দড়িতে কমলা কাপড় ঝোলাতে৷ উদ্ধারকর্মীদের কাজে সমর্থন জানাতেই এই আয়োজন৷ নিচে ব্যানারে লেখা আছে, ‘‘উদ্ধার করা কোনো অন্যায় নয়৷’’ সিব্রুক শব্দের অর্থ সাগরের সেতু৷ কিছুদিন আগেই দুই শতাধিক শরণার্থী বহনকারী এক জার্মান এনজিওর উদ্ধারকারী জাহাজ লাইফলাইনকে তীরে ভিড়তে বাধা দেয়ার পর গঠন করা হয় এই সংগঠন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Scholz
‘ওরা সাগরে, ভুলে যেও না’
বিক্ষোভকারীদের কণ্ঠে এমন স্লোগানই উচ্চারিত হয়েছে বারবার৷ জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা বলছে, গত কয়েক বছরের তুলনায় ধীরে ধীরে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়া মানুষের সংখ্যা কমে আসছে৷ কিন্তু তারপরও কমেনি ভয়াবহতা৷ আফ্রিকা থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ আসতে গিয়ে এ বছর এরই মধ্যে নৌকাডুবিতে ১৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, অথবা নিখোঁজ রয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carstensen
‘দুয়ার খুলে দাও’
গত কয়েক সপ্তাহে ইউরোপের রাজনীতিবিদদের রোষানলে পড়েছে ভূমধ্যসাগরে উদ্ধারকাজ চালানো এনজিওগুলো৷ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জাহাজগুলোকে তীরে ভেড়ার অনুমতি দেয়া হয়নি, দিলেও তা দেয়া হয়েছে দীর্ঘ সময় ব্যয় করে, অনেক হেনস্তার পর৷ রাজনীতিবিদদের দাবি, মানবপাচারকারীদের হাতের পুতুল হিসেবে কাজ করছে এনজিওগুলো৷ অন্যদিকে উদ্ধারকর্মীদের দাবি, তাঁরা না বাঁচালে প্রাণ হারাতে হতো অনেক শরণার্থীকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Carstensen
সরকারি নীতি নিয়ে ক্ষোভ
জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের ওপরও বেজায় চটেছেন বিক্ষোভকারীরা৷ সেহোফার এককভাবে চাপ প্রয়োগে জার্মান অভিবাসন নীতি কঠোর করার চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ এক পর্যায়ে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে তাঁর বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, অনেকে আশংকা করছিলেন জার্মান জোট সরকারই না ভেঙে পড়ে৷ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় এসে সেহোফারের বেশ কিছু দাবি মেনে নিতে হয় ম্যার্কেলকে৷