1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিবাসীদের সমাজে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ ‘কেয়ার মাইগ্রেশন’

১০ মে ২০১১

জার্মানিতে অভিবাসীদের সমাজের মূলধারায় সম্পৃক্ত করার জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে৷ ভাষা শেখার কোর্স থেকে শুরু করে কর্মসংস্থান প্রকল্প কোনো কিছুই বাদ নেই৷ কিন্তু চর্চার অভাবে ভাষার দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছেন তাঁরা৷

ছবি: Despina Kosmidou

জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশিদের অনেকেই বিভিন্ন প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করলেও ভাষাজ্ঞানের দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে আছেন৷ জার্মান ভাষা কোর্স শেষ করার পর চর্চা করার মত তেমন সুযোগ থাকেনা তাদের৷ দোকানপাট ও দাপ্তরিক কাজকর্ম ছাড়া জার্মানদের সঙ্গে অভিবাসীদের যোগাযোগ হয় খুব কমই৷ জার্মানির ডুসেলডর্ফের কাছে নয়েস শহরে জার্মান ও বিদেশিদের মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ‘কেয়ার মাইগ্রেশন' নামে বিশেষ এক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷

গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব

শনিবার সকালে নয়েস শহরে বড়সড় রান্নাঘরের এক দৃশ্য৷ নাস্তা খাচ্ছেন দুই বান্ধবী জার্মানির বির্গিট ও আজারবাইজানের তারানা৷ জার্মানদের প্রিয় বনরুটির মত গোল রুটি ব্রোয়েটশেন ও জেলি এবং আজারবাইজানের মজাদার রুটি বিস্কুট রয়েছে টেবিলে৷ দুই বান্ধবী চেখে চেখে দেখছেন সব খাবার৷ খেতে খেতে গল্প করছেন তাঁরা৷ আবহাওয়া, রাজনীতি, বাচ্চাকাচ্চা কিছুই বাদ যাচ্ছেনা৷ মনেই হবেনা যে, মাত্র বছর খানেক আগে তাদের পরিচয় হয়েছে৷

এ প্রসঙ্গে বির্গিট বলেন, ‘‘প্রকল্পের লক্ষ্যটা হল, বিদেশিদের সঙ্গে জার্মানদের পরিচয় করিয়ে দেয়া৷ কেউ কাউকে পছন্দ করলে পরস্পরের মধ্য বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে৷ একে অপরের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারেন, কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন, নেতিবাচক ধারণাটা দূর করতে পারেন৷''

শনিবার সকালে নয়েস শহরে বড়সড় রান্নাঘরের এক দৃশ্যছবি: Despina Kosmidou

৪৭ বছর বয়স্ক শিক্ষিকা বির্গিট প্যুন্ডার অন্যান্য সংস্কৃতি সম্পর্কে আগ্রহী সবসময়৷ তাই বছর খানেক আগে ‘কেয়ার মাইগ্রেশন' অংশগ্রহণকারী খুঁজছে জানতে পেরে যোগাযোগ করেন প্রকল্পটির সাথে৷ তাঁর নতুন বান্ধবী তারানা আল্লাইয়ারভা অন্য কারণে এই প্রকল্পে আসেন৷

তাঁর ভাষায়, ‘‘আমার কাছে জার্মান ভাষায় কথা বলাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমি ভাষা শেখার কোর্স করেছি৷ কিন্ত জার্মান ভাষায় কথা বলা আমার প্রায় একদমই হয়ে ওঠেনা৷ আমি শব্দগুলো ভুলে যাচ্ছি, এমনকি কী ভাবে কথা বলতে হয় তাও৷ ডাক্তারের কাছে গেলে তেমন কোনো কথাবার্তার প্রয়োজন হয়না৷ দুই তিন মিনিটেই শেষ৷ প্রতিবেশীদের মধ্যে জার্মান প্রায় নেই বললেই চলে৷ কথাবার্তাও হয় খুব কম৷ কেমন আছেন, ভাল আছি ছাড়া, তেমন আলাপ আলোচনা হয়না৷''

ভাষা চর্চার সুযোগ

তারানার মত অন্যান্য অভিবাসীদেরও ভাষা কোর্স শেষ করার পর জার্মান ভাষায় কথা বলার সুযোগ হয়না৷ আর এই ফাঁকটা পূরণেই এগিয়ে এসেছে ‘কেয়ার মাইগ্রেশন'৷

গ্রিসে জন্ম নেয়া ডেসপিনা কোসমিডোউ'এর উদ্যোগে গড়ে ওঠে এই প্রকল্প৷ জার্মানিতে বড় হয়ে উঠেছেন ডেসপিনা৷ নয়েস শহরের ক্যাথলিক সাহায্য সংস্থা কারিটাসে জার্মান শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করেছেন তিনি৷ ডেসপিনা জানান, ‘‘দুজন অপরিচিত মানুষের যদি দেখা হয়, তাহলে আলাপচারিতায় আসাটাই মুস্কিল, তারা দুজন জার্মান, রুশ বা পর্তুগিজ যাই হোন না কেন৷ আর অভিবাসী ও জার্মানদের ক্ষেত্রে তো সমস্যাটা আরো বেশি৷ ভাষার ভুল হওয়ার ভয় তো রয়েছেই৷ তার ওপর কোন্ বিষয় নিয়ে বা কোন জায়গায় কী কথা বলবেন তাও বুঝে উঠতে পারেননা বিদেশিরা৷ বাস স্টপে আবহাওয়া নিয়ে কথা বলবেন না অন্য কোথাও অন্য বিষয় নিয়ে৷''

ডেসপিনা মনে করেন, জার্মানদের সঙ্গে পরিচিত হতে অভিবাসীদের ইচ্ছার অভাব নেই৷ কিন্তু পরিচিত হওয়ার সুযোগ সুবিধাই খুব কম৷ এছাড়া সব জার্মানই অভিবাসীদের সঙ্গে বন্ধুত্বে যে আগ্রহী, তা বলা যায়না৷ তাই তিন বছর আগে ‘কেয়ার মাইগ্রেশন' প্রকল্প গড়ে তোলেন তিনি৷ তারপর থেকে বিভিন্ন দেশের লোকজন যোগাযোগ করছেন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে৷ পোল্যান্ড, রাশিয়া, ইরাক, মরক্কো ও শ্রীলংকা থেকে আসা অভিবাসীরা আগ্রহী হচ্ছেন এই প্রকল্পের ব্যাপারে৷ নতুন অংশগ্রহণকারীরা প্রস্তুতিমূলক এক কোর্সে মিলিত হন৷ দশ জন জার্মান ও দশ জন বিদেশি অংশ গ্রহণ করেন কোর্সে৷

সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর হয়

ডেসপিনা কসমিডোউ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আন্তঃসাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পরস্পরের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস দূর হয়৷ অনেকেরই হয়তো ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা থাকে৷ এই কোর্সে একজন অভিবাসীর সঙ্গে একজন জার্মানের পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে৷ এই কোর্সের আওতায় তাঁরা প্রতিমাসে দেখা সাক্ষাৎ করে চিন্তাভাবনার আদান প্রদান করতে পারেন৷''

বির্গিট ও তারানা আন্তঃসাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণ কোর্সে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হন এবং একে অন্যকে পছন্দ করেন৷ ৪৭ বছর বয়স্ক বির্গিট স্মরণ করে বলেন, ‘‘প্রথমে আমি ওর বাড়িতে বেড়াতে যাই৷ শিগগিরই আমরা বুঝতে পারি, আমাদের ধ্যানধারণা একই রকম, পারিবারিক অবস্থাও অনেকটা একই ধরনের৷ আমরা দুজনই প্রায় একই বয়সি৷ দুজনেই তিন সন্তানের মা৷ এরপর থেকে আমরা প্রতি সপ্তাহে দেখা সাক্ষাৎ করতে থাকি৷ গল্পগুজবের সাথে সাথে আজারবাইজানের মজার মজার খাবার চেখে দেখি৷ আমরা এদিক সেদিক বেড়াতেও গিয়েছি৷ গিয়েছি থিয়েটারে৷ তবে গল্পগুজবটাই আসল৷''

নয়েস'এর নগর কর্তৃপক্ষ কেয়ার মাইগ্রেশন প্রকল্পকে অভিবাসীদের জার্মান সমাজে সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন৷ আর একারণে গত বছরের হেমন্তে বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে প্রকল্পটিকে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ