গ্রিস অভিযোগ করেছে তুরস্ক অভিবাসীদের এনে দেশটির জলসীমায় ছেড়ে দিচ্ছে। এই বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
বিজ্ঞাপন
গ্রিস একটা ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, রবারের ডিঙ্গি নৌকায় থাকা অভিবাসীদের গ্রিসের জলসীমায় প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে তুরস্কের কোস্ট গার্ডের একটি নৌযান। এর আগে গ্রিস বহুবার অভিযোগ করেছে, শরণার্থীদের নিয়ে আসা এজেন্টদের তুরস্ক আটকাচ্ছে না। তারা প্রচুর মানুষকে গ্রিসে নিয়ে আসছে। এটা ইইউ চুক্তির বিরোধী।
চুক্তি অনুযায়ী, তুরস্ক শরণার্থী স্রোত আটকাবে। বিনিময়ে তারা ইইউ-র কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার অর্থসাহায্য পাবে।
গ্রিসের দাবি
গ্রিস কোস্ট গার্ডের তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তুরস্কের কোস্ট গার্ডের নৌযান অভিবাসীদের নৌকগুলিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে আসছে। তারপর তারা গ্রিসের জলসীমায় তদের ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। গ্রিসের কোস্ট গার্ড তখন প্রতিবাদ করায় তুরস্কের কোস্ট গার্ড ও অভিবাসীদের নৌকা ফিরে যায়।
গ্রিসের সমুদ্র বিষয়ক মন্ত্রীর অভিযোগ, তুরস্ক জলদস্যু রাষ্ট্রের মতো আচরণ করছে। তারা ইইউ-র চুক্তিভঙ্গ করছে। ইইউ-র কাছে দেশটি আবেদন করেছে, তারা যেন তুরস্কের উপর চাপ দেয়, যাতে দেশটি আন্তর্জাতিক দায় মেনে চলে।
গ্রিস ও তুরস্ক একে অপরের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের চুক্তিভঙ্গেরঅভিযোগ এনেছে। তুরস্ক জানিয়েছে, গ্রিস কোনো সহযোগিতা করছে না। তারা শরণার্থীদের সঙ্গে অমানবিক ব্যবহার করছে।
অবৈধ উপায়ে ইউরোপে প্রবেশে বাধার দেয়াল
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে সীমান্তে দুর্ভেদ্য দেয়াল তুলছে তুরস্ক৷ প্রাচীর নির্মাণ শেষ করেছে গ্রিস৷ বেলারুশ হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ডও সীমান্তে দেয়াল তোলার উদ্যোগ নিয়েছে৷
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
ইরান সীমান্তে তুরস্কের প্রাচীর
পাহাড় ডিঙ্গিয়ে, বিপদসঙ্কুল পথ পেরিয়ে ইরান হয়ে তুরস্কে প্রবেশের চেষ্টা করেন এশিয়া থেকে আসা ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ তাদেরকে বাধা দিতে ইরানের সঙ্গে ৫৩৪ কিলোমিটার সীমান্তে তিন মিটার উঁচু দেয়াল তুলছে তুরস্ক৷ এরইমধ্যে শেষ হয়েছে ১৫৬ কিলোমিটারের নির্মাণ৷ আরো ৬৪ কিলোমিটার যোগ হবে চলতি বছরের শেষ নাগাদ৷
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
আফগান শরণার্থী ঠেকাতে তোড়জোড়
এই পথে পায়ে হেঁটে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের একটি বড় অংশ আফগানিস্তানের নাগরিক৷ সরকারি হিসাবে এক লাখ ৮২ হাজার আফগান রয়েছেন তুরস্কে৷ অনিবন্ধিতের সংখ্যা আরো প্রায় এক লাখ ২০ হাজার৷ তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর অনিয়মিত এই অভিবাসন আরো বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷ সেক্ষেত্রে দেয়াল তুলেই তাদের বাধা দেয়ার পরিকল্পনা তুরস্কের।
ছবি: Mesut Varol/AA/picture alliance
দুর্ভেদ্য সীমান্ত!
তুরস্কের ইরান সীমান্তবর্তী ভ্যান প্রদেশের গভর্নর রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমরা গোটা পৃথিবীকে দেখাতে চাই যে আমাদের সীমান্ত অতিক্রম করা অসম্ভব৷’’ তালেবান আফগানিস্তান দখলের পর তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকর দেয়ালের কাজ পরিদর্শনে যান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা থার্মাল ইমেজিংসহ অন্ধকারে কাজ করতে সক্ষম এমন যন্ত্রপাতি সজ্জিত এক হাজার নজরদারি যান দিয়ে কাজ করছি৷’’
ছবি: Ozkan Bilgin/AA/picture alliance
৮০ দিনের পদযাত্রা
এরপরও কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ উপায়ে এই পথে তুরস্কে প্রবেশ করছেন৷ গত ২১ আগস্ট ভ্যান শহরে অভিযান চালিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তুরস্কের নিরাপত্তা বাহিনী৷ তাদের বেশিরভাগই আফগান নাগরিক। গ্রেপ্তারকৃতদের একজন ২০ বছর বয়সি জায়নুল্লাহ জানান, ৮০ দিন পায়ে হেঁটে তিনি তুরস্ক সীমান্তে পৌঁছান৷
ছবি: Mesut Varol/AA/picture alliance
গ্রিসের সীমান্ত প্রাচীর
তুরস্কের বাধা পেরিয়ে কেউ গ্রিস সীমান্তে এলে তাকে আরেক দেয়ালের মুখোমুখি হতে হবে৷ ৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই প্রাচীরের নির্মাণ কাজ সম্প্রতি সম্পন্ন করেছে গ্রিস সরকার৷ একে হাইটেক ওয়াল হিসেবে অভিহিত করে কর্তৃপক্ষ বলছে দেয়ালটিতে স্বয়ংক্রিয় ইলেকট্রনিক নজরদারি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি যুক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Sakis Mitrolidis/AFP
গ্রিসের নিরাপদ সীমান্ত!
দেয়াল নির্মাণে গ্রিসের তোড়জোড়েরও বড় কারণ আফগান শরণার্থী স্রোতের আশঙ্কা৷ ছয় বছর আগে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থী ঢলকে ইঙ্গিত করে দেশটির অভিবাসনমন্ত্রী নটিস মিটারাখি বলেছের, গ্রিসকে তারা ইউরোপের অনিয়মিত অভিবাসনের প্রবেশ দুয়ার হিসেবে আর ব্যবহার করতে দেবেন না৷ দেশটির নাগরিক সুরক্ষামন্ত্রী মিখালিস ক্রিসকোডিস আশা করছেন, দেয়াল নির্মাণের ফলে গ্রিস এখন ‘নিরাপদ ও অনতিক্রম্য৷
ছবি: Sakis Mitrolidis/AFP
দেয়াল তুলছে পোল্যান্ডও
পূর্ব ইউরোপ হয়ে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে উদ্যোগ নিচ্ছে পোল্যান্ড৷ ২৩ আগস্ট দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেলারুশ সীমান্ত জুড়ে দেয়াল তোলার ঘোষণা দেন, যার উচ্চতা হবে আড়াই মিটার বা আট দশমিক দুই ফুট। নজরদারি বাড়াতে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা হবে বলেও জানান তিনি৷ ছবিতে পোল্যান্ড-বেলারুশ সীমান্তে এখনকার কাঁটাতারের বেষ্টনী দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Kacper Pempel/REUTERS
লিথুয়ানিয়ার ৫০০ কিলোমিটার প্রাচীর
লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, তারাও বেলারুশ সীমান্তে ৫০৮ কিলোমিটার বিস্তৃত দেয়াল তুলবে৷ তিন মিটার বা দশ ফুট উচ্চতার এই বাধা নির্মাণে ব্যয় হবে ১৫ কোটি ইউরোর বেশি৷ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে৷ ছবিতে লিথুয়ানিয়ার একটি ক্যাম্পে অবস্থানরত শরণার্থীদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Mindaugas Kulbis/AP/picture alliance
লুকাশেঙ্কোর প্রতিশোধ!
লিথুয়ানিয়া জানিয়েছে, চলতি বছর ৪১৪১ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী বেলারুশ অতিক্রম করে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করেছেন, যেখানে আগের বছর এই সংখ্যা ছিল মাত্র ৭৪৷ একই পরিস্থিতি লাটভিয়া ও পোল্যান্ডেরও৷ তাদের অভিযোগ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে ঠেলে দিচ্ছে বেলারুশ৷ ইইউর অবরোধের জেরে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট লুকাশেঙ্কো নিজেও জানিয়েছেন তার দেশ আর ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সীমান্ত অতিক্রমে বাধা দেবে না।
ছবি: Sergei Grits/AP Photo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
গ্রিক প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা
মিডিয়া ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি শরণার্থীদের প্রতি গ্রিসের মনোভাবের সমালোচনা করেছে। সাংবাদিক সম্মেলনে গ্রিসের প্রধানমন্ত্রীকে ডাচ সাংবাদিক ইনগবর্গ বিউগেল বলেন, অভিবাসীদের নিয়ে তিনি যে সব কথা বলছেন তা মেনে নেয়া যায় না। অভিবাসীদের পুশব্যাক করা নিয়ে তিনি মিথ্যা কথা বলছেন। জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর আগে অভিযোগ করেছে, গ্রিসই তাদের স্থল ও জলসীমা থেকে অভিবাসীদের জোর করে তুরস্কে পাঠাচ্ছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারছি, নেদারল্যান্ডসে রাজনীতিকদের প্রতি সরাসরি প্রশ্ন করার সংস্কৃতি আছে। আমি এটাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আপনি এখানে বসে আমাকে ও গ্রিসের মানুষকে অপমান করবেন, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’
ডাচ সাংবাদিক তখন বলেন, গ্রিসে অভিবাসীদের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রধানমন্ত্রী জবাব দেন, গ্রিস খুব কড়া কিন্তু ন্যায্য অভিবাসন নীতি নিয়ে চলে।