জাতিসংঘের প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া অভিবাসী শিশুরা যথাযথ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে৷ ইউরোপের দেশগুলো আছে সেই তালিকায়৷ অভিবাসী শিশুদের জন্য এ মুহূর্তে জার্মানিতেই প্রয়োজন অন্তত ৪২ হাজার শিক্ষক৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনো মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বহু অভিবাসী শিশু৷ ‘২০১৯ গ্লোবাল এডুকেশন মনিটারিং রিপোর্ট' শিরোনামের এই প্রতিবেদন বলছে, প্রশিক্ষিত শিক্ষক ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাবেই দেখা দিয়েছে এই সমস্যা৷
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বর্তমান বিশ্বের ঘর ছাড়তে বাধ্য হওয়া মানুষদের অর্ধেকের বয়সই আঠারোর কম৷যে দেশগুলিতে আশ্রয় চাইছেন তারা, সেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা জুটছে না তাদের৷
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে, উগান্ডা, চাড ও ইথিওপিয়া'র মতো নিম্ন আয়ের দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় অভিবাসী শিশুদের অংশগ্রহণ চোখে পড়বার মতো৷ এছাড়া সর্বব্যাপী শিক্ষানীতির কারণে ক্যানাডা ও আয়ারল্যান্ডও জাতিসংঘের প্রতিবেদনে প্রশংসা কুড়িয়েছে৷
‘এতিম’ শিশু শরণার্থীরা ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার
ইউরোপে আশ্রয় মিলছে শরণার্থীদের৷ খারাপ খবরও আসছে তাদের নিয়ে৷ সপ্তাহে একটি দেশেই অন্তত ৭০০ এমন শিশু আসছে যাদের বাবা-মা সঙ্গে নেই৷ ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অনেকেই৷ গ্রিসে শুরু হয়েছে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M.Djurica
বছরে ৫ লাখ শরণার্থী নেবে জার্মানি
কয়েক হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী নিরাপদ এবং উন্নত জীবনের আশা নিয়ে প্রবেশ করেছে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায়৷ জার্মানির ডেপুটি চ্যান্সেলর সিগমার গাব্রিয়েল জানিয়েছেন, আগামী কয়েক বছর জার্মানি বছরে ৫ লক্ষ করে অভিবাসনপ্রত্যাশী নিতে পারবে৷ তিনি আরো জানান, এত শরণার্থী নিলেও সরকার জনগণের ওপর বাড়তি করারোপ করবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাড়িতে শরণার্থী রাখতে আগ্রহী ব্রিটিশরা, সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ
শিশু আয়লানের লাশের ছবি নিয়ে আলোড়নের পর বছরে ২০ হাজার শরণার্থী নিতে রাজি হয়েছে ব্রিটেন৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের এই ঘোষণায় ব্রিটিশরাই সন্তুষ্ট নয়৷ এখনো অনেক ব্রিটিশ ইন্টারনেটে নিজের বাড়িতে শরণার্থী রাখার আগ্রহ প্রকাশ করে সরকারের প্রতি আরো উদার হবার আহ্বান জানাচ্ছেন৷ প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টিও একই দাবি তুলেছে৷ ব্রিটেন আরো বেশি শরণার্থী নেবে কিনা এ নিয়ে আলোচনা হবে সংসদে৷
ছবি: Reuters/T. Melville
গ্রিসে শরণার্থী-পুলিশ সংঘর্ষ, শঙ্কিত ইইউ সভাপতি
শরণার্থী আর পুলিশের মধ্যে আবার সংঘর্ষ শুরু হয়েছে গ্রিসের লেসবস দ্বীপে৷ আড়াই হাজারের মতো অভিবাসনপ্রত্যাশী এথেন্সে যাওয়ার জন্য জোর করে জাহাজে উঠতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়৷ তারপরই শুরু হয় সংঘর্ষ৷ এদিকে তুরস্কের কাছাকাছি দেশ হওয়ায় গ্রিসে সিরীয় শরণার্থীর ঢল অব্যাহত রয়েছে৷ ইইউ সভাপতি ডোনাল্ড টাস্ক এ নিয়ে শঙ্কিত৷ তিনি মনে করেন, সিরিয়া থেকে অবাধে লোক আসার এই ধারা আগামী কয়েক বছর ধরে চলতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/AA/A. Mehmet
সুইডেনে ‘এতিম’ শিশু শরণার্থী
তাদের বাবা-মা বেঁচে আছে কিনা, বেঁচে থাকলে কোথায় আছে- শিশুরা তা বলতে পারেনা৷ প্রাণ বাঁচাতে একা একাই দেশ ছেড়ে তারা চলে এসেছে ইউরোপে৷ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে শুধু সুইডেনেই ৭০০-র মতো এমন শিশু আসছে৷ ওপরের ছবিটি হাঙ্গেরির৷
ছবি: Reuters/L. Balogh
পথে পথে শিশুনির্যাতন
শুধু সিরিয়া নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চল থেকেও আসছে শিশু শরণার্থী৷ ডেনমার্কের ওরেসুন্ড ব্রিজ হয়ে তারা ঢুকে পড়ছে সুইডেনে৷ শিশুদের অনেকেই আহত, শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনে বিপর্যস্ত৷ চলন্ত ট্রাক থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে আহত হচ্ছে অনেকে৷ অনেকে আবার ধর্ষণ, নির্যাতনের শিকার৷ মানবপাচারকারীরাই করছে ধর্ষণ, নির্যাতন৷
‘‘অভিবাসীদের শিক্ষাকে গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে তার প্রভাব সবার ওপরে এসে পড়বে,'' এমনটাই মনে করেন জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো'র প্রধান অড্রে আজুলে৷
জার্মানির উন্নয়ন মন্ত্রী গের্ড ম্যুলারও এই বিষয়ে সহমত পোষণ করে বলেন, ‘‘বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে উঠে আসা অভিবাসী শিশুদের শিক্ষাখাতে জার্মানি ভবিষ্যতে বিনিয়োগ আরো বাড়াবে৷ বর্তমানে এই খাতে ১৬ মিলিয়ন ইউরো খরচ করা হয়, কিন্তু শীঘ্রই তা বাড়িয়ে ৩১ মিলিয়ন ইউরো করা হবে৷''
বিশ্বের সাড়ে সাত কোটি শিশু বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে বাস করে৷ ফলে এখনই সময় এই শিশুদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় তৎপর হওয়ার, মনে করেন গের্ড ম্যুলার৷