জার্মানির বিশেষ করে নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের পুলিশরা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন৷ অনেকেরই বয়স হয়েছে৷ সবসময় কাজ করতে পারেন না৷ তরুণরাও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কাজ করতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না৷
বিজ্ঞাপন
নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের পুলিশ ট্রেড ইউনিয়নের প্রধান এরিখ রেটিংহাউস সতর্ক করে বলেন, ‘‘আনাচে কানাচে শুধু নেই আর নেই৷ দৈনন্দিন কাজকর্ম, ক্লারিক্যাল কাজে বা অপরাধ দমনে, সবখানে একই অবস্থা৷''
বড় বড় মিটিং মিছিল বা অশান্ত এলাকায় পাঠাবার মতো উপযুক্ত কর্মীরও অভাব প্রকট৷ কেননা সবাইকে দিয়ে তো সব কাজ করানো যায় না৷
অসুস্থতার সংখ্যা অনেক বেশি
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে অসুস্থতার সংখ্যা অনেক বেশি৷ নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যে ৪০ শতাংশ কর্মীর বয়সই পঞ্চাশোর্ধ৷ শীতকালে বাড়িঘরে চুরি ডাকাতি বেড়ে যায়৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপীয় গ্যাঙদের আয়ত্তে আনার মতো শক্তপোক্ত কর্মীর অভাব অনুভূত হয়৷ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাল্ফ ইয়্যাগার পুলিশে কর্মী সমস্যার সমাধান করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন৷ বছরে অন্তত ১,৫০০ স্কুল ফাইনাল অর্থাৎ ‘আবিট্যুর' পাস করা ছেলেমেয়েকে পুলিশ বাহিনীতে আনতে চেষ্টা করা হবে৷
পুলিশের ইন্টারনেট সাইটে বিশেষ করে তরুণ অভিবাসীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে৷ ‘‘তবে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া সহজ নয়,'' বলেন, রেটিংহাউস৷
গত বছর বিদেশি বংশোদ্ভূত ১,৭৫৭ জন পুলিশ বাহিনীতে আবেদন করেছিল৷ এর মধ্যে ১৬১ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়৷ অন্যান্যদের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ছিল না৷
একারণে ‘রেয়ালশুলে' বা মধ্যমানের স্কুল থেকে পাস করা ছেলেমেয়েদের জন্য পুলিশ পেশার দ্বার খুলে দেওয়ার প্রস্তাব করেন ট্রেড ইউনিয়নের কর্মকর্তা৷ বিষয়টি নিয়ে আগামী বছরের প্রথম দিকে রাজ্যসভায় আলোচনা করা হবে৷
তরুণ অভিবাসীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা
কোলনেও তরুণ অভিবাসীদের পুলিশের চাকরির প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে৷ শহরের পুলিশ প্রধান ভল্ফগাং আলবার্স এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমি আনন্দিত যে, আমাদের বিদেশি বংশোদ্ভূত সহকর্মী রয়েছেন৷''
জার্মানিতে সফল কয়েকজন তুর্কি
১৯৮২ সালে জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল বলেছিলেন, তিনি জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের সংখ্যা কমিয়ে অর্ধেকে নিয়ে আসতে চান৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানির কয়েকজন সফল মানুষের কথা, যাদের শেকড় তুরস্কে৷
ছবি: Keystone/Getty Images
চিত্র পরিচালক ফাতিহ আকিন
ফাতিহ আকিন জার্মানির চিত্রজগতের সুপারস্টারদের মধ্যে একজন, যার আন্তর্জাতিক পরিচিতি রয়েছে৷ তাঁর অভিনীত ছবি ‘গেগেন ডি ভান্ড’ (দেয়ালের বিপরীতে) ছবির জন্য তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কারও পেয়েছেন৷ সেগুলোর মধ্যে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব বার্লিনালের ‘গ্লোডেন বেয়ার’ও রয়েছে৷ তাঁর বাবা, মা দুজনই তুরস্ক থেকে এসেছেন৷ ফাতিহ আকিনের জন্ম ১৯৭৩ সালে জার্মানির হামবুর্গ শহরে৷
ছবি: dapd
রাঁধুনি আলি গ্যুনগোরমুস
গ্যুনগোরমুস ২০০৬ সালে একটি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সেরা রাঁধুনির পুরস্কার লাভ করেন৷ তাঁর ‘ল্য কানার নুভো’ নামের রেস্তোরাঁটি নামকরা রেস্তোরাঁর মধ্যে একটি৷ আলি ১০ বছর বয়সে তুরস্ক থেকে এসেছেন৷ ৩৭ বছর বয়সি আলি বলেন, তিনি যে একটি দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছেন সেটাই তাঁকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা যুগিয়েছে৷
ব্যবসায়ী ভুরাল ওয়গার
ব্যবসায়ী ভুরাল ওয়গার ১৯৬০ সালে তুরস্ক থেকে জার্মানিতে এসেছেন৷ তিনি পড়াশোনা শেষ করার পর একটি আন্তর্জাতিক ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করেন৷ যেটা জার্মানির বৃহত্তম ট্রাভেল এজেন্সি হিসেবে গড়ে উঠে৷ তিনি ২০০৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এসপিডি দলের হয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সংসদ সদস্য ছিলেন৷ তাঁর আন্ত:সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য তাঁকে জার্মানির সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘জার্মান সেবা পদক’ দেয়া হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাজনীতিক: সেম ওসডেমিয়ার
তুর্কি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সেমি ওসডেমিয়ারই প্রথম যিনি ১৯৯৪ সালে সবুজ দলের সদস্য হিসেবে জার্মানির সংসদ সদস্য হন৷ শুধু তাই নয়, পরে তিনি সবুজ দলের চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন৷ তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নে তুরস্কের অন্তর্ভুক্তির একজন সমর্থক৷ ওসডেমিয়ার জার্মান স্কুলে তুর্কি ভাষা শিক্ষা দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
উপস্থাপিকা নাজান একেস
হাসি মুখে যিনি বসার ঘরের টিভিতে উপস্থিত হন তিনি হচ্ছেন নাজান একেস৷ তিনি জার্মানির একজন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপিকা৷ অভিবাসী তুর্কি বাবা-ময়ের সন্তান নাজান ছোট বড় অনেক টিভি অনুষ্ঠানেই উপস্থাপনা করেন৷ ২০১০ সালে নাজানের পরিবারের গল্প নিয়ে তাঁর লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়েছে৷ তিনি সামাজিক কর্মকান্ডের সাথেও জড়িত৷ ২০১১ সাল থেকে তিনি জার্মান সরকারের ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিল-এ আছেন৷
ছবি: Getty Images
জার্মান ফুটবল দলের খেলোয়াড় মেসুত ওজিল
মেসুত ওজিল জার্মান ফুটবল তারকাদের একজন৷ তুর্কি বাবা মায়ের সন্তান ওজিল জার্মান নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০০৯ সালে জার্মান জাতীয় ফুটবল দলে খেলার সুযোগ লাভ করেন৷ ২০১০ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় ফুটবল প্রেমীদের হৃদয় জয় করায় তাঁকে বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের তালিকায় মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল৷ মেসুত ওজিল জার্মানির সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হেলমুট কোলের বিতর্কিত বিবৃতি
জার্মানির সাবেক চ্যান্সেলর হেলমুট কোল ১৯৮২ সালে ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারকে বলেছিলেন, তিনি জার্মানিতে বসবাসরত তুর্কিদের সংখ্যা অর্ধেকে কমিয়ে ফেলতে চান৷ কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, তুর্কিরা জার্মান সমাজের সঙ্গে নিজেদের ভালভাবে খাপ খাওয়াতে পারছেন না৷ ছবিঘরে থাকছে জার্মানির কয়েকজন সফল তুর্কি বংশোদ্ভূত নাগরিকের কথা৷
ছবি: Keystone/Getty Images
7 ছবি1 | 7
পুলিশরা তো সমাজেরই প্রতিচ্ছবি, বলেন রেটিংহাউস৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমরা আন্তঃসাংস্কৃতিক সমাজে বাস করছি৷ আমরা বহু সংস্কৃতি ও অভিবাসীর এক দেশ৷ যার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে পুলিশ বাহিনীতেও৷''
কোনো অপরাধ দমন ও সমস্যার সমাধান করতে হলে আন্তঃসাংস্কৃতিক দক্ষতাও থাকা প্রয়োজন৷ পুলিশ বাহিনীতে আরো বেশি অভিবাসীর অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন৷ বিশেষ করে যেসব এলাকায় বিদেশির সংখ্যা বেশি সেখানে বিদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশরা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন৷
তবে এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে পুলিশ বিভাগ নিজেদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ব্যাপারে কতটা প্রস্তুত? তাদের ক্যান্টিনে কী মুসলিম ধর্মসম্মত খাবার পরিবেশন করা হয়? আর কোনো সহকর্মী যদি হিজাব পরে কাজে আসেন তখন কী হবে?
আন্তঃসংস্কৃতির জন্য প্রস্তুতি
কোলনের পুলিশ সদর দপ্তরের ক্যান্টিনটি চালায় বাইরের এক প্রতিষ্ঠান৷ তাই খাবারের ব্যাপারে কিছু করার সুযোগ খুব সীমিত৷ রোজার সময় বিশেষ রীতিনীতির ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেই৷ প্রয়োজনে একেক দপ্তরে একেক ভাবে কাজ চালানো হয়৷
কোলনের পুলিশ সদর দপ্তরে একটি আন্তঃধর্মীয় কক্ষ ঠিক করা হয়েছে৷ তরুণ মুসলিম সহকর্মীরা ট্রেনিং এর জন্য এলে এই কক্ষটিতে (উপাসনা) নামাজ পড়তে পারেন৷
তবে একদিন কোনো নারী সহকর্মী মাথায় হেজাব ও পুলিশের টুপি পরে কোলনের যানবাহন সামলানোর কাজ করবেন, বিষয়টি এখনও কষ্টকল্পনা মাত্র৷