1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিবাসী যখন সেবিকা

ভুল্ফ বিল্ডে/এসিবি১৩ মার্চ ২০১৪

নাম ‘পোলিশ মুক্তা'৷ তবে আসলে তাঁদের অনেকেই জীবন থেকে মুক্তি চান৷ কে দেবে মুক্তি? একাকী জীবন থেকে অর্থকষ্ট দূর করতে এসেছেন জার্মানিতে৷ অন্যের সেবায় নিয়োজিত করেছেন প্রাণ৷ তারপরও সঙ্গী একাকিত্ব আর বঞ্চনার বেদনা!

Die Altenpfleger vom Mekong im Seniorenzentrum Pfostenwäldle
ছবি: DW/V.Kern

জার্মানিতে নতুন এক শ্রেণির পেশাজীবীদের এখন খুব চাহিদা৷ বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির তো অভাব নেই৷ বৃদ্ধাশ্রমে পাঠালে একাকিত্ব, পরিবার থেকে দূরে থাকার যন্ত্রণা কুঁড়ে কুঁড়ে খায় তাঁদের৷ তাই আপনজনেরা নিজেদের ব্যস্ত জীবনের সীমাবদ্ধতা মেনে খোঁজেন এমন কাউকে, যিনি কিনা সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে অসহায় স্বজনের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হতে পারবেন৷ এই সঙ্গীদেরই নাম দেয়া হয়েছে ‘পোলিশ মুক্তা', ‘২৪ ঘণ্টার পোলিশ সেবিকা' কিংবা ‘অভিবাসী সেবিকা'৷ সেবিকারা আসেন পূর্ব ইউরোপের দেশ পোল্যান্ড, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া বা ইউক্রেন থেকে৷ বেশিরভাগই পোল্যান্ডের, তাই নামকরণেও কোথাও কোথাও তাঁদের ‘পোলিশ' পরিচয়টা গুরুত্ব পায়৷

গুরুত্ব তাঁদের আসলেই অনেক৷ অনেকটা ‘কাজের বেলায় কাজি, কাজ ফুরোলেই পাজি'-র মতো৷ বড় নিষ্ঠুর এক সত্যকে তুলে ধরে বাংলায় প্রচলিত এই প্রবাদ৷ বার্লিনে অভিবাসী সেবিকাদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে এক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে আগনিয়েস্কা সাটোলা এমন কিছু তথ্য দিয়েছেন যেসব শোনার পর মনে হবে, জার্মানিতে এই সেবিকাদেরও এখন একই অবস্থা৷ নিজেদের প্রয়োজনে অর্থের বিনিময়ে তাঁদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য কিনে নিলেও সেবা করতে গিয়ে তাঁদেরও যে সংকট হয়, তা নিয়ে কেউ ভাবে না৷ নিজের কাজ হলেই হলো, সেবিকার ভালোমন্দের কথা কে ভাববে!

সাধারণ ধারণা অনুযায়ী, জার্মানিতে এ মুহূর্তে এক থেকে দেড় লক্ষ অভিবাসী নারী প্রবীণ এবং শারীরিকভাবে অক্ষমদের সার্বক্ষণিক সেবা দানের কাজে নিয়োজিত আছেন৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আগনিয়েস্কা সাটোলা অবশ্য জানালেন, বার্লিনে শেষ হওয়া সম্মেলনে কোনো কোনো বক্তা সংখ্যাটা ৫ লক্ষ বলেও উল্লেখ করেছেন৷ অভিবাসী সেবিকাদের বিষয়ে আগনিয়েস্কাও কম জানেন না৷ তাঁদের নিয়েই তাঁর লেখাপড়া৷ এ বিষয়ে পিএইচডি করেছেন তিনি ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ নিজের পড়াশোনা, ‘পোলিশ মুক্তা' খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা এবং এ দুয়ের সমন্বয়ে আরো তীব্র হওয়া মানবিক মূল্যবোধ থেকে তিনি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন এমন কিছু কথা যা জানার পর মানতেই হবে যে, অভিবাসী এই সেবিকাদেরই এখন বিশেষ সেবা প্রয়োজন৷

বৃদ্ধাশ্রম বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশে তো বটেই, এমনকি অর্থনৈতিকভাবে আরো পিছিয়ে থাকা বিশ্বের অনেক দেশেই আছে৷ উন্নত দেশের সেবাব্যবস্থাও উন্নত৷ জার্মানিতে প্রবীণদের জন্য বিশেষ এক সেবাব্যবস্থার নাম ‘হোমকেয়ার' বা ‘গৃহসেবা'৷ এ সেবার মূল কথা হলো, ভুক্তভোগীকে বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হবেনা, তাঁদের গৃহেই আসবেন সেবিকা, এসে সেবা দেবেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত৷

নিয়ম অনুযায়ী সেবিকারা মাসে সব মিলিয়ে বড় জোর ৩০০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন৷ ফলে প্রতিদিন দশ ঘণ্টার বেশি কাজ করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়৷ এ নিয়ম মানলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বা শারীরিকভাবে অক্ষমদের বাকি সময়টা নিঃসঙ্গ এবং সেবাবঞ্চিত থাকতে হবে৷ আবার গৃহসেবা কার্যক্রমের অধীনে থেকে যদি কেউ তাঁর প্রিয়জনকে এই সেবা দিতে চান তাহলে মাসে ৪ হাজার ৮০০ থেকে ১০ হাজার ইউরো পর্যন্ত খরচ হবে৷ এত টাকা অনেকের পক্ষেই খরচ করা সম্ভব নয়৷ তাই জার্মানির অনেকে ধরছেন সরকার এবং আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর পথ৷

তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসছে এমন কিছু বেসরকারি সংস্থা যাদের কাজই হলো পোল্যান্ড, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া বা ইউক্রেনের মতো পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে সেবিকা নিয়ে আসা৷ প্রতিমাসে ৯০০ থেকে ১,৫০০ ইউরো হাতে তুলে দিলেই সেবিকা হাজির৷ জার্মান ভাষা এবং সেবায় দক্ষতা থাকলে যে কোনো নারী যোগ দিতে পারেন এই কাজে৷ সাধারণত মুখে মুখেই হয় চুক্তি৷ কাগুজে সনদ বা চুক্তিপত্রের বালাই নেই৷ ফলে ৪ হাজার ৮০০ থেকে ১০ হাজার ইউরো নয়, সর্বোচ্চ দেড় হাজার ইউরো খরচ করলেই পাওয়া যায় বার্ধক্য কিংবা শারীরিক অক্ষমতার কারণে গুরুত্ব হারানো আপনজনের একজন সার্বক্ষণিক সঙ্গী এবং সেবিকা৷

অনেক সেবিকাকে ২৪ ঘণ্টাই থাকতে হয় শারীরিকভাবে অক্ষমদের বাড়িতেছবি: picture-alliance/dpa

আগনিয়েস্কা সাটোলা জানালেন, আইনকে ফাঁকি দিয়ে প্রিয়জনদের ভালো রাখতে গিয়ে অনেকে সেবিকাদের প্রতি একই অন্যায় করছেন যা নিজের প্রিয়জনের সঙ্গে তাঁরা করতে চান না৷ এই বিশেষ সেবিকাদের অনেকের বয়সই নাকি ৫০ থেকে ৬০ বছর৷ আর্থিক স্বচ্ছলতা থাকলে তাঁরাও নিশ্চয়ই অন্য কারো সাহচর্য এবং সেবায় বাকি জীবন আরাম-আয়েশেই কাটাতেন৷ আগনিয়েস্কা সাটোলা জানালেন, বাধ্য হয়ে সেবা করতে এসে অভিবাসী সেবিকারাই পড়ছেন চরম সংকটে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘অনেক সেবিকাকে ২৪ ঘণ্টাই থাকতে হয় শারীরিকভাবে অক্ষমদের বাড়িতে৷ কখনো কখনো তাঁদের কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাসও একা থাকতে হয় এমন কারো সঙ্গে, ভাষার তারতম্যের কারণে কিংবা সেই ব্যক্তি চলৎশক্তিহীন বলে যাঁর সঙ্গে মনের কোনো যোগাযোগ গড়ে ওঠে না৷ এ বিষয়টি তাঁদের (সেবিকা) মনের ওপরও খুব বিরূপ প্রভাব ফেলে৷''

প্রশ্ন হলো, দেশ এবং পরিবার-পরিজন ছেড়ে আসা এই সেবিকাদের সেবা দেবে কে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ