ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচ ইসলামি জঙ্গির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ৷ চলতি বছর খুন হওয়া চার ব্লগার হত্যা মামলায় অভিযোগ দায়েরের এটিই প্রথম ঘটনা৷
বিজ্ঞাপন
‘কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট' সিপিজে-এর সুমিত গালহোত্রা একটি ব্লগে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকার যে ব্লগারদের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে, তা প্রমাণের এটি একটি সুযোগ৷'' গত কয়েক সপ্তাহে চার ব্লগার হত্যায় জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি উল্লেখ করে গালহোত্রা বলেন, ‘‘এরপরও এসব মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিনা, তা নিয়ে সমালোচকরা এখনও সন্দিহান৷'' আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের আর আদালতে গ্রহণযোগ্য সাজা প্রদানের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক রয়েছে সেটাও তিনি তাঁর ব্লগে উল্লেখ করেছেন৷
নিলয় হত্যারহস্যও একই পথে?
আবারও ব্লগার হত্যার ঘটনা ঘটল বাংলাদেশে৷ এবার বাড়িতে ঢুকে জবাই করা হলো ব্লগার নীলয় নীলকে৷ বরাবরের মতো হত্যাকাণ্ডের পরই পুলিশ অপরাধীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও, নিহতের পরিবার এ আশ্বাসে আস্থা রাখতে পারছে না৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
ঘরে ঢুকে জবাই
গত ৭ আগস্ট ঢাকার উত্তর গোড়ান এলাকার বাসায় ঢুকে নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ওরফে নিলয় নীলকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে৷ ব্লগার ও গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী নিলয়ের বয়স হয়েছিল ৪০ বছর৷ ভাড়া নেয়ার জন্য বাসা দেখতে চেয়ে ঢুকে পড়া চার দুর্বৃত্ত প্রথমে নিলয়ের স্ত্রী ও তাঁর ছোট বোনকে বারান্দায় বের করে ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়, তারপর জবাই করে নিলয়কে৷
ছবি: Twitter
পুলিশকে পাশে পাননি নিলয়
কিছুদিন ধরেই তাঁর ওপর হামলার আশঙ্কা করছিলেন নিলয়৷ তিন মাস আগে তিনি লক্ষ্য করেছিলেন, অচেনা কয়েকজন লোক তাঁকে অনুসরণ করছে৷ বিষয়টি জানিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার জন্য থানায় গিয়েছিলেন৷ পুলিশ বিষয়টিকে আমলে না নিয়ে তাঁকে বরং দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেয়৷ তাঁকে অনুসরণ করা এবং পুলিশের দেশ ছাড়ার পরামর্শের কথা ফেসবুকে নিলয় নিজেই লিখেছিলেন নিলয়৷
ছবি: Twitter
নিন্দার ঝড়, গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবি
নিলয় নীল নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার পর দেশ-বিদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে৷ জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেছে৷ নিলয়ের স্ত্রী আশামনি (ওপরের ছবিতে, বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়) এখনো কেউ গ্রেপ্তার না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
প্রতিবাদ
নিলয় হত্যার পর রাজধানী ঢাকাসহ কয়েকটি শহরে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে৷ নিলয়সহ সব ব্লগার হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করার পাশাপাশি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং ব্যর্থতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, ‘‘এতদিন ব্লগারদের রাস্তায় হত্যা করা হতো, এখন বাসায় ঢুকে জবাই করা শুরু হলো৷ এই সরকার ব্লগার হত্যায় পৃষ্ঠপোষকতা করছে৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও বিচারহীনতার জন্যই হত্যাকাণ্ড চলছে
গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ব্লগার ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷ ৩০শে মার্চ তেজগাঁও এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে হত্যা করা হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবুকে৷ মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির মুখে দেশ ছাড়া লেখিকা তসলিমা নাসরীন ধারবাহিকভাবে ব্লগার হত্যার জন্য শেখ হাসিনার সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করেছেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
আল-কায়েদার দায়িত্ব স্বীকার
শুক্রবারই নিলয় হত্যার দায় স্বীকার করে আল-কায়েদা৷ আল-কায়েদার ভারতীয় উপ-মহাদেশের (একিউআইএস) বাংলাদেশ শাখা, আনসার আল-ইসলামের নামে সংবাদমাধ্যমে ই-মেল পাঠিয়ে ইসলামি জঙ্গি সংগঠনটি এ হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে৷
ছবি: Fotolia/Oleg Zabielin
‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস চলতে দেবো না’
এদিকে ঢাকার এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধর্মরক্ষার কথা বলে মানুষ হত্যাকে ‘ধর্মের নামে সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে এটা চলতে দেওয়া যাবে না৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘ইসলাম ধর্ম শান্তির ধর্ম৷ যারা ধর্মকেও কলুষিত করে যাচ্ছে, তারা কখনোই ধর্মে বিশ্বাস করে বলে মনে হয় না৷ তারা নিজেদের মুসলমান হিসেবে কীভাবে ঘোষণা দেবে?’’
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘সীমা লঙ্ঘন করবেন না’
পুলিশের আইজি একেএম শহিদুল হক বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া দণ্ডনীয় অপরাধ জানিয়ে ব্লগারদের প্রতি সীমা লঙ্ঘন না করার অনুরোধ জানিয়েছেন৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ‘‘কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া উচিত নয়৷ কেউ তা করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’ ব্লগার হত্যাকারীদের ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ হিসেবে অভিহিত করে তাদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
জামায়াতের ‘ভুল’
যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন নিলয় নীল৷ বিচারাধীন, সাজাপ্রাপ্ত এবং অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের অধিকাংশই জামায়াতে ইসলামীর নেতা৷ নিলয় নিহত হওয়ার পর হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় জামায়াত৷ তবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান আযাদের পাঠানো বিবৃতিতে নিলয় নীল নামে পরিচিতি নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়ের নাম লেখা হয় নীলয় হোসেন ওরফে নীল৷
ছবি: Getty Images/AFP/Uz Zaman
9 ছবি1 | 9
সুমিত গালহোত্রার ব্লগে বাংলাদেশের ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিনের মন্তব্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ সাম্প্রতিক সময়ে যেসব গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের মুখ রক্ষার চেষ্টা বলে মনে করেন বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসরত মহিউদ্দিন৷ সিপিজি-কে তিনি বলেন, ব্লগারদের রক্ষায় ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই সরকার এসব করতে বাধ্য হয়েছে৷ ‘‘এই গ্রেপ্তারগুলো কেবলমাত্র আই ওয়াশ,'' মন্তব্য আসিফ মহিউদ্দিনের৷ তাঁর আশঙ্কা, এখন যারা কারাগারে বন্দি আছে, পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে এমন দুর্বল চার্জশিট গঠন করবে যে, যার ভিত্তিতে বন্দিরা পরবর্তীতে ছাড়া পেয়ে যাবে৷
ডেভিড রহমানও মনে করেন যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে তাদের কোনো বিচার হবে না৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘কোনো বিচার হবে না৷ আসামি জামিনে মুক্তি পাবে৷ এই হলো আমাদের বিচার ব্যবস্থা৷''