ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শুরু করা অভিশংসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবেন না ট্রাম্প৷ প্রক্রিয়াটিকে ‘অবৈধ’ হিসেবে উল্লেখ করে হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে তাতে সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ রাখা হবে৷
বিজ্ঞাপন
ডনাল্ড ট্রাম্প টেলিফোনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিয়ের জেলেনস্কিকে জো বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন- এই অভিযোগ তুলে গত সপ্তাহে ডেমোক্র্যাটরা অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট তারপর চীনের প্রতিও প্রকাশ্যে একই আহ্বান জানান৷ গত বৃহস্পতিবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘বাইডেনদের বিরুদ্ধে চীনের তদন্ত শুরু করা উচিত৷'' তিনি আরো জানান, বাইডেন ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে তদন্ত করার জন্য আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে অনুরোধ করেননি, তবে এখন তা-ও বিবেচনায় নেবেন৷
নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে তিনি আরো দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে-কোনো দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করার অধিকার তাঁর আছে৷ সেরকম তদন্তে অন্য দেশের সহযোগিতা চাওয়ার মাঝে কোনো অন্যায় দেখেন না বলেও জানান তিনি৷
‘বিদায় হোন’ – ট্রাম্প প্রশাসনে উইকেট পতন
ট্রাম্প প্রশাসনে যত দ্রুত একের পর এক উইকেট পড়ছে, ততটা আর কখনো কোথাও হয়নি৷ চলুন দেখা যাক, এ যাবৎ কার কার বিদায় ঘণ্টা বেজেছে৷
সিরিয়া ও আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন জিম ম্যাটিস৷
ছবি: picture-alliance/AP/C. Kaster
রেক্স টিলারসন
১৩ই মার্চ, ২০১৮৷ টুইটারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ থেকে টিলারসনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন৷ ট্রাম্প বলেছেন, টিলারসনের সঙ্গে তার মতভিন্নতা ব্যক্তিগত পর্যায়ে চলে এসেছিল৷ টিলারসনের সঙ্গে আলোচনা না করেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সম্মতি জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Harnik
অ্যান্টনি স্কারামুচি
‘দ্য মুচ’ বলে পরিচিত ৫৩ বছর বয়সি সাবেক এই পুঁজিবাজার ব্যবসায়ী ট্রাম্প প্রশাসনে টিকতে পেরেছেন মাত্র দশদিন৷ ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ তাঁর যোগ দেয়ার আগে দীর্ঘদিন এই পদটি খালি ছিল৷ চিফ অফ স্টাফ পদে সাবেক মেরিন প্রধান জেনারেল জন কেলির যোগ দেয়ার দিনেই বিদায় হন অ্যান্টনি৷ প্রশাসনের অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে চাকরি হারান তিনি৷
ট্রাম্পের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে বরাবরই আপত্তি ছিল গভর্নমেন্ট এথিক্স ডিপার্টমেন্টের পরিচালক ওয়াল্টার শাওবের৷ এরই জের ধরে গেল এই জুলাইতে পদত্যাগ করেন৷ তিনি প্রায়ই ট্রাম্প প্রশাসনকে ‘হাস্যকর পুঁজিবাজার’ বলে ডাকতেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.S. Applewhite
রিন্স প্রাইবাস
যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক অ্যান্টনি স্কারামুচির সঙ্গে প্রকাশ্যে ঝগড়া করে চাকরি হারিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক চিফ অফ স্টাফ রিন্স প্রাইবাস৷ মাত্র ছয় মাসে তাঁর উইকেট পতন হয়৷ প্রাইবাস সেই সব ডানপন্থি কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন যাঁরা স্কারামুচির নিয়োগের বিরোধিতা করেছিলেন৷
ছবি: Reuters/M. Segar
শন স্পাইসার
এবারও সেই স্কারামুচিই বিবাদের কারণ৷ প্রেসিডেন্ট ভবনের সাবেক প্রেস সচিব শন স্পাইসার বিবাদে জড়িয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ও প্রেসের সঙ্গেও৷ পদত্যাগের আগে স্কারামুচির নিয়োগের চরম বিরোধিতা করেছিলেন স্পাইসার৷
ছবি: Reuters/K.Lamarque
মাইকেল ডুবকে
স্কারামুচির আগে মাইকেল ডুবকে ছিলেন হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ বিভাগের প্রধান৷ গেল মে মাসে তাঁকে সরিয়ে দেয়া হয়, কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার জড়িত থাকার অভিযোগটি ঠিকমত সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Walsh
জেমস কোমি
হিলারি ক্লিনটনের ইমেইল কেলেঙ্কারির তদন্ত ‘ঠিকমত করতে পারেননি’ এই অভিযোগে এফবিআই-এর এই পরিচালককে অব্যাহতি দেন ট্রাম্প৷ নিন্দুকেরা অবশ্য বলেন যে, ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচারণার সঙ্গে ‘রাশিয়ার সম্পর্ক’ তদন্তের মুখে পড়ার শঙ্কায় তাকে বহিষ্কার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. S. Applewhite
মাইকেল ফ্লিন
গেল ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন পদত্যাগে বাধ্য হন৷ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ট্রাম্প দায়িত্ব নেবার আগেই রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে রুশ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ‘আলাপ’ করা এবং এ বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে ভুল তথ্য দেয়া৷
ছবি: Reuters/C. Barria
9 ছবি1 | 9
এবার অভিশংসন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধেও অনড় অবস্থান প্রকাশ করল ট্রাম্প প্রশাসন৷ এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার সম্ভাবনা খারিজ করে হাউজের নেতাদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়, এ তদন্তের কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই আর তাই এতে অংশ নেয়া নির্বাহী শাখার পক্ষে সম্ভব নয়৷
হোয়াইট হাউজের আপত্তি কোনো ভোট ছাড়া অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করা নিয়ে৷
অভিসংশন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা না করার ঘোষণায় ট্রাম্পের বিরোধী শিবির ক্ষুব্ধ৷ হাউজের ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ ক্ষোভ প্রকাশ করে টুইটারে লিখেছেন, এতে বোঝানো হলে ‘‘ প্রেসিডেন্ট সব আইনের ওপরে, অথচ সংবিধান কিন্তু ভিন্ন কথা বলে৷'' স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, ‘‘মিস্টার প্রেসিডেন্ট্, আপনি আইনের ঊর্ধ্ধে নন৷ আপনাকে জবাবদিহি করতে হবে৷''