শিক্ষা দুর্নীতি মামলায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থা লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের আটটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টকে এই তথ্য দিয়েছে ইডি। বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে এবিষয়ে সংক্রান্ত মামলা ছিল মঙ্গলবার। সেখানেই ইডি এই তথ্য দিয়েছে।
ইডি জানিয়েছে, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের ওই আটটি সম্পত্তি সরাসরি শিক্ষা দুর্নীতি মামলার সঙ্গে জড়িত। উল্লেখ্য, লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস সংস্থাটি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকও বটে। আবার এই সংস্থার সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র ওরফে কালীঘাটের কাকু। বেশ কিছুদিন আগেই ইডি তাকে গ্রেপ্তার করেছে। সুজয়কৃষ্ণের কাছ থেকে ইডি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পেয়েছে বলে আগেই আদালতকে তাদের আইনজীবী জানিয়েছিলেন।
বিক্ষোভকারী কমেছে, তাও প্রতিবাদ চলছে
কলকাতায় শহিদ মিনারের কাছে একধিক প্রতিবাদ চলছে। একটি তো প্রায় নয়শ দিন ধরে। এখন কেমন সেই প্রতিবাদের চেহারা?
ছবি: Subrata Goswami/DW
সবচেয়ে বেশিদিনের প্রতিবাদ
২০১৬ সালে তারা শিক্ষক হওয়ার পরীক্ষায় সফল হয়েছিলেন। তারপরেও চাকরি পাননি। কারণ, নিয়োগ-দুর্নীতি। অভিযোগ, পয়সা দিয়ে অযোগ্য প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেছেন। প্রায় ৮৮০ দিন ধরে তারা প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। আগে এই বিক্ষোভে প্রচুর মানুষ আসতেন। এখন দেখা যাচ্ছে মাত্র একজনকে। কোনো দিন আরো কিছু বিক্ষোভকারী আসেন। কিন্তু আগের মতো প্রতিদিন এক-দেড়শ মানুষের বিক্ষোভ হয় না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডিএ আদায়ের দাবিতে
একই হাল বকেয়া মহার্ঘভাতা বা ডিএ আদায়ের জন্য গঠিত সংগ্রামী যৌঘ মঞ্চের। সেখানে কয়েকজন বসে-শুয়ে আছেন। একটা সময় এই মঞ্চও গমগম করত। প্রচুর মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে আসতেন। উৎসাহ-উদ্দীপনা তুঙ্গে ছিল। এখন আর সেই ছবি নেই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সিসিটিভি ক্যামেরা
যৌথ সংগ্রামী মঞ্চে সিসিটিভি ক্যামেরা বসেছে। কারা আসছেন, কী করছেন, তার উপর নজর রাখার জন্য। বিশেষ করে বহিরাগতরা যাতে ঢুকে কিছু করতে না পারে, তার জন্য বেশি করে এই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্থ চাই
এই আন্দোলন টিকিয়ে রাখার জন্য অর্থের আবেদনও জানানো হয়েছে। রাখা হয়েছে ইউপিআইয়ের কিউআর কোড। যা স্ক্যান করে মানুষ পয়সা দিতে পারবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
টেট-বিক্ষোভের একই হাল
যারা টেট পরীক্ষায় পাস করেও চাকরি পাননি, তারা আলাদা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। টেট মানে টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট। যা পাস করলে প্রাথমিক থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য শিক্ষকের চাকরি পাওয়া যায়। এখানেও বিক্ষোভকারীর সংখ্যা কমেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন এই অবস্থা?
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, শিক্ষকরাই তাদের মঞ্চে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় আসতেন। এখন স্কুল খুলে গেছে। পরীক্ষা চলছে। প্রশ্নপত্র থেকে খাতা দেখার কাজ আছে। তাই শিক্ষকরা সেভাবে আসতে পারছেন না। অন্য অনেকে ব্যস্ততার জন্য আসতে পারছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি
অনিরুদ্ধের দাবি, দীর্ঘ আন্দোলনের প্রস্তুতি তারা নিয়েছেন। অগাস্টে তারা দুইটি কর্মসূচি হাতে নিচ্ছেন। ১৪ অগাস্ট তাদের বিক্ষোভের দুইশ দিন পূর্ণ হবে। তখন একটা কর্মসূচি হবে। অগাস্টের প্রথম সপ্তাহেও একটা কর্মসূচি নেয়া হবে। তিনি স্বীকার করেছেন, সকলের একইরকমভাবে লেগে থাকার মানসিকতা থাকে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসাহ কমছে
মধ্যমগ্রামের অভিষেক সেন স্বীকার করে নিয়েছেন, মানুষের উৎসাহ কমেছে। আগের মতো তাই বিক্ষোভকারী আসছেন না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
এভাবে কতদিন?
কল্যানীর তনয়া বিশ্বাস বললেন, এভাবে আর কতদিন চলা যায়? পেট তো চালাতে হবে। কিছু না কিছু কাজ করতে হচ্ছে। তাই আন্দোলনে আর প্রতিদিন আসা যায় না। সবকিছু ছেড়ে যারা আন্দোলনে ঝাঁপিযে পড়েছিলেন, তারা এখন এই কঠোর বাস্তবের সামনে পড়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তবু প্রতিবাদ চলছে
মানুষ আগের মতো আসতে পারছেন না। তা সত্ত্বেও প্রতিবাদ থেমে যায়নি। চলছে। প্রতিটি প্রতিবাদমঞ্চে অল্প হলেও মানুষ আসছেন। আগের মতো রোজ প্রত্যেকে আসতে পারেন না। কিন্তু প্রতিবাদের আগুন নিভে যায়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
10 ছবি1 | 10
মঙ্গলবার ইডি আটটি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কথা বলেছে। এই আটটি সম্পত্তির আনুমানিক মূল্য সাত কোটি টাকা বলে ইডি সূত্র জানিয়েছে। বস্তুত, আগেই লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস এবং অভিষেকের সমস্ত সম্পত্তির তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা। তারই ভিত্তিতে এদিন আদালতকে এই তথ্য দিয়েছে ইডি।
ইডি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৪ ডিসেম্বর মুখবন্ধ খামে আদালতের হাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিস্তারিত তথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে। কারণ বিচারপতি সিনহা সেই সমস্ত তথ্য চেয়েছিলেন। বস্তুত, অভিষেকের কাছেও তার আয়ের উৎস সংক্রান্ত বেশ কিছু তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছিল ইডি। অভিষেক তা ইডি-র কাছে জমা দিয়েছেন বলে ইডি সূত্র জানিয়েছে।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি অভিষেকের সংস্থার সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সরাসরি সংযোগ খুঁজে পেয়েছে ইডি? তারই জেরে সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা শুরু হলো? তাহলে কি এবার অভিষেকের গায়েও হাত লাগতে পারে?
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এজেন্সিগুলিকে আরো বেশি সক্রিয় করবে। এটাই তাদের সংকীর্ণ রাজনীতি। কিন্তু আমরা তাতে দমে যাচ্ছি না।'' বস্তুত, মঙ্গলবারের বিষয়টি নিয়ে তৃণমূল আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি।