প্রত্যাখ্যাত রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আরো তাড়াতাড়ি বহিষ্কার করা থেকে শুরু করে, সন্ত্রাসের বিপদ থাকলে ডাক্তাররা যাতে রোগীদের গোপন তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন, এ সবই থাকছে নতুন অ্যাজেন্ডায়৷
বিজ্ঞাপন
খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী ইউনিয়ন বা সিডিইউ রাজনীতিক টোমাস ডেমেজিয়ের ঠান্ডা মাথার ও ঠান্ডা মেজাজের মানুষ বলে পরিচিত; তিনি চটজলদি কিছু করে বসেন না৷ ইতিপূর্বে ডেমেজিয়েরকে একাধিকবার বলতে শোনা গেছে, শতকরা একশ' ভাগ নিরাপত্তা বলে কিছু নেই এবং তিনি নতুন আইন প্রণয়নেরও কোনো প্রয়োজন দেখেন না৷
কিন্তু দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যে একটিমাত্র ‘‘রক্তাক্ত সপ্তাহে'' একের পর এক সহিংস ঘটনা – ভ্যুর্ৎসবুর্গে কুড়ুল নিয়ে আক্রমণ, মিউনিখে গুলিচালনা, আন্সবাখে আত্মঘাতী বোমাবাজি – ডেমেজিয়েরের ধৈর্যে দৃশ্যত ফাটল ধরিয়েছে৷ আরো বড় কথা, ঝানু রাজনীতিক হিসেবে ডেমেজিয়ের উপলব্ধি করেছেন যে, এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একাধিক রাজ্য নির্বাচন ও আগামী বছরের চ্যান্সেলর নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা একটি প্রধান বিষয় হয়ে উঠবে৷
বিষয়টি যে রাজনৈতিক, তা বোঝা যায় এ থেকে যে, ডেমেজিয়ার ও অপরাপর রাজ্যের সিডিইউ-সিএসইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা মিলে আগামী ১৮ই আগস্ট একটি ‘‘বার্লিন ঘোষণা'' প্রকাশ করতে চলেছেন, যাতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বৃদ্ধির নানা প্রস্তাব থাকবে৷ ডেমেজিয়ার ও তাঁর সতীর্থরা বিভিন্ন টেলি-কনফারেন্সের মাধ্যমে এই নির্ঘণ্ট তৈরি করেছেন৷ অবশ্য জার্মান সংসদের উচ্চকক্ষ, অর্থাৎ রাজ্যসভার অনুমোদন ছাড়া এই কর্মসূচির বাস্তবে পরিণত হবার সম্ভাবনা কম৷
মিউনিখ হামলার কিছু ছবি
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ জার্মানির মিউনিখের অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে হামলা চালায় সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীরা৷ শুরু করে গুলিবর্ষণ৷ ছবিঘরে থাকছে হামলার বিশেষ কিছু ছবি৷
ছবি: Reuters/dedinac/M. Müller
ঘটনার শুরু
বিপণিবিতানের ম্যাকডোনাল্ড’স-এ ৬টার দিকে প্রথম গুলিবর্ষণ হয় বলে জানা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Widmann
হেলিকপ্টার টহল
অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে সম্ভবত এখনো অনেক কর্মী আটকা পড়ে আছে৷ তবে পুলিশ জানিয়েছে, যে মিউনিখের আকাশে একটি মহড়ার আওতায় অনেক হেলিকপ্টার উড়তে দেখা গেছে।
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
সবাইকে ঘরে থাকার ডাক
ঘটনার পরপরই মিউনিখ কর্তৃপক্ষ শহরবাসীকে ঘর থেকে বের না হওয়ার ডাক দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
আহত ও নিহত
স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে জার্মানির অনেক গণমাধ্যম জানিয়েছে, অনেকে নিহত ও আহত হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe
ঘটনাস্থলের আশপাশের রাস্তা বন্ধ
অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারের আশপাশ ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ আশপাশের সব সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এই এলাকায় যাতে জনসাধারণ না আসে সেজন্য বার বার অনুরোধ করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
বন্ধ রেল ও বাস সার্ভিস
ঘটনার পর মিউনিখে ট্রেন, ট্রাম ও বাসের একাধিক লাইন বন্ধ করে দিয়েছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ৷ এতে ট্রেন স্টেশনে আটকা পড়েছে অনেক মানুষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
লাইভ ফুটেজ না দেখানোর অনুরোধ
পুলিশের অভিযানের কোন লাইভ ভিডিও ফুটেজ না দেখাতে গণমাধ্যমে অনুরোধ জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Balk
আততায়ী তিন জন
পুলিশ জানিয়েছে, অস্ত্রধারী তিনজনকে গুলি চালাতে দেখা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
নিখোঁজদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
মিউনিখ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি নোটিস জারি করা হয়েছে৷ কারো স্বজনের খোঁজ পাওয়া না গেলে +৪৯৮০০৭৭৬৬৩৫০ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Gebert
ব্রিটেনের সতর্কতা
হামলার পর যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জার্মানিতে অবস্থানরত নাগরিকদের মিউনিখের ওই এলাকা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে৷
ছবি: Reuters/dedinac/M. Müller
10 ছবি1 | 10
ডেমেজিয়েরের পরিকল্পনার একটি মূল সূত্র হবে, জার্মান নাগরিকত্ব বিহীন ব্যক্তিরা যদি ‘‘জনগণের নিরাপত্তার পক্ষে ঝুঁকি'' হয়ে ওঠেন, তবে তা বহিষ্কারের কারণ হিসেবে গণ্য হবে; যেমন যে সব বিদেশি ধর্মীয় নেতারা জার্মানিতে প্ররোচনামূলক ভাষণ দিয়ে থাকেন, দণ্ড হিসেবে তাদের শীঘ্র বহিষ্কার করা সম্ভব হবে৷ প্রশাসনিক দিকে রয়েছে আরো ১৫,০০০ নতুন পুলিশ নিয়োগ, এবং সেই পুলিশদের আরো ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করা৷ পুলিশকর্মীদের ব্যাপকভাবে বডিক্যামে সজ্জিত করা হবে৷ পরিবহণ ও প্রকাশ্য স্থানে ভিডিও নজরদারি বাড়ানো হবে৷ বোরখা ধারণ আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করার কথা ভাবছেন রক্ষণশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা৷ সেই সঙ্গে দ্বিবিধ নাগরিকত্বের অন্ত ঘটানোর কথাও ভাবা হচ্ছে৷
অপরদিকে ডেমেজিয়েরের মন্ত্রণালয়ের সদ্য প্রকাশিত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে যে, চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ‘‘মুক্ত দুয়ার নীতি'' সত্ত্বেও জার্মানির সীমান্ত থেকে ক্রমেই আরো বেশি প্রবেশপ্রার্থীকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ ২০১৫ সালে সীমান্ত কর্মকর্তারা প্রায় ন'হাজার মানুষকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন; ২০১৬ সালের প্রথম ছ'মাসেই তেরো হাজারের বেশি মানুষকে সীমান্ত থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ডিপোর্টেশন, অর্থাৎ বহিষ্কারের ক্ষেত্রেও, ২০১৫ সালে যেখানে মেট ২০,৮৮৮ জন মানুষকে জার্মানি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল, ২০১৬-র প্রথম ছ'মাসে বহিষ্কার করা হয়েছে ১৩,৭৪৩ জনকে৷
বন্ধু, জার্মানি থেকে শরণার্থীদের বহিষ্কার করাকে কি আপনি সমর্থন করেন? লিখুন নীচের ঘরে৷
ইউরোপ জুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
ব্রাসেলসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ইউরোপ জুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন, সীমান্ত এবং বিভিন্ন শহরের রাস্তায় পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Golovkin
‘যুদ্ধে ইউরোপ’
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিলেন, ইউরোপ এখন ‘যুদ্ধে আছে’৷ ব্রাসেলসের ঘটনার পর ইউরোপীয় নেতারা জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন এবং সর্বত্র নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়েছেন৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন বোমা বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষিত কুকুর এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
সব বড় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে
লন্ডন, প্রাগ, অ্যামস্টারডাম, ভিয়েনাসহ ইউরোপের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ লন্ডনের প্রধান বিমানবন্দর, হিথ্রোতে, পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে৷ পাশাপাশি, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরেও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Rain
ডাচ পুলিশের সতর্ক অবস্থান
নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দিচ্ছে ডাচ মিলিটারি পুলিশ৷ ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলার পরপরই সেখানকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়৷ ব্রাসেলসে মঙ্গলবার একাধিক বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন নিহত এবং প্রায় দুই শত মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Elzinga
ব্রিটেনে সতর্কতা
লন্ডনের বিমানবন্দরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে বাড়তি পুলিশ
জার্মান কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন আর বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ সীমান্তে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে৷ তবে পুলিশের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি চোখে পড়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে৷ শহরটির ট্রেন স্টেশনেও পুলিশ অবস্থান নিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ
বেলজিয়ামে হামলার পর জার্মানির জাতীয় ট্রেন ব্যবস্থা, ডয়চে বান, ব্রাসেলসের সঙ্গে তাদের উচ্চগতির ট্রেন সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়৷ ব্রাসেলসের বদলে জার্মানির সীমান্তের শহর আখেনে ট্রেনগুলো থামানো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. A. Gekiere
প্যারিসে আবারো উচ্চ সতর্কর্তা
প্যারিসে গত নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় অনেকে প্রাণ হারান৷ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে হামলার পরপরই তাই সেখানকার নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়৷ প্যারিসের মূল বিমানবন্দর এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেন স্টেশন দু’টিতে নিরাপত্তা বাহিনীর পুরো দল নিয়োগ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Laurent
রাশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুর্নমূল্যায়ন
রাশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী মাক্সিম সকোলভ জানিয়েছেন, ব্রাসেলসের ঘটনার পর সেদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পুর্নমূল্যায়ন করা হবে৷ যদিও রাশিয়া আগে থেকেই বেশ সতর্ক৷