অভয়ার বাবাকে আইনি নোটিশ কুণাল ঘোষের, অনড় অভিভাবকরা
২১ আগস্ট ২০২৫
গত বছরের ৯ আগস্ট আরজি করে ধর্ষণ ও খুন করা হয় এক কর্তব্যরত চিকিৎসককে। এই ঘটনার তদন্তভার কয়েক দিনের মধ্যেই চলে যায় সিবিআই- এর হাতে। তাদের তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন নিহত চিকিৎসকের অভিভাবকরা। এ ব্যাপারে তারা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব সামনে হাজির করেছিলেন। এই তত্ত্ব ঘিরে চলেছে বিতর্ক।
চিকিৎসকের বাবার দাবি
নিহত চিকিৎসকের বাবা ও মা পথে নেমে তাদের মেয়ের হত্যার বিচার চাইছেন। সিবিআইয়ের চার্জশিটের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত সাজা দিয়েছে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। কিন্তু চিকিৎসকের অভিভাবকদের দাবি, শুধু সঞ্জয় নয়, আরো অনেকে তাদের মেয়ের ধর্ষণ ও খুনের নেপথ্যে রয়েছেন।
এই সুবিচারের দাবিতে গত ৯ অগাস্ট আরজি করের ঘটনার বর্ষপূর্তিতে নবান্ন অভিযান করেছেন চিকিৎসকের মা-বাবা। তারা প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের গতিপ্রকৃতি নিয়ে। চিকিৎসকের বাবা এজন্য আঙ্গুল তুলেছেন রাজ্য সরকার ও শাসক দলের দিকে। তার মতে, সিবিআইকে রাজ্য সরকার টাকা দিয়ে তদন্ত ধামাচাপা দিতে চাইছে। এই দুই পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।
শাসক দলের নেতা কুণাল চিকিৎসকের বাবার অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দেন। বলেন, "অভয়ার মা-বাবার প্রতি আমার পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। কিন্তু ওরা যা মুখে আসছে, তাই বলছেন। ওদের যা বলতে বলা হচ্ছে, সেটাই ওদের কাঁধে বন্দুক রেখে বলাচ্ছেন রাজনৈতিক নেতারা। তাই আমি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছি। আদালতে দেখা হবে।"
আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি
কুণাল ঘোষের আইনজীবী মানহানির মামলা করার কথা বলে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন চিকিৎসকের বাবাকে। একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিঠির জবাব দেয়া না হলে মানহানির মামলা দায়ের করা হবে। বৃহস্পতিবার সকালে ডিডাব্লিউকে চিকিৎসকের মা জানিয়েছেন, তাদের কাছে আইনি নোটিশ পৌঁছেছে। নিজেদের দাবিতে এখনো অনড় রয়েছেন তারা।
নির্যাতিতা চিকিৎসকের মা ডিডাব্লিউকে বলেন, "সিবিআই-এর তদন্তে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। সন্তুষ্ট হওয়ার মতো কোনো কাজ সিবিআই করেনি। চারদিনে কলকাতা পুলিশ যে কাজ করেছিল, সিবিআই সেখানেই থমকে আছে।"
সিবিআই-এর সঙ্গে কি রাজ্য সরকারের বোঝাপড়ার অভিযোগ কেন করছেন? চিকিৎসকের মা বলেন, "বোঝাপড়া তো নিশ্চয়ই আছে, নইলে এত ক্লু থাকা সত্ত্বেও সিবিআই কেন এক সঞ্জয় রায়তে আটকে থাকল? কেন তদন্ত করে দেখতে চাইল না? যে ঘটনা একটি প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ষণ ও খুন, সেখানে প্রতিষ্ঠানেই তদন্ত হল না কেন? সেই রাতে যে ডাক্তার, নার্স, গ্রুপ ডি কর্মীরা ডিউটিতে ছিলেন, তারা কেন আমাদের সামনে এসে জানাচ্ছেন না, সেদিন কী ঘটেছিল।"
কী বলছেন সাবেক পুলিশ কর্তা
রাজ্যের সাবেক পুলিশ কর্তা নজরুল ইসলাম চিকিৎসকের মা-বাবার দাবিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি ডিডাব্লিউকে বলেন, "সিবিআই তদন্ত ঠিকভাবে করছে না, এটা সন্দেহ করার কারণ আছে। থানার ওসি ও কলেজের অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করেছিল সিবিআই। কোনো প্রমাণ ছাড়া তারা নিশ্চয় গ্রেপ্তার করেনি। যদি প্রমাণ থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হল না কেন? সিবিআই এভাবে তদন্ত করায় বোঝাপড়ার সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। আর যে মা-বাবা তার মেয়েকে হারিয়েছেন, তারা বিচারের জন্য সবার কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা বিচার পাবেন বলে আমার মনে হয় না।"
'অদলীয় আন্দোলন'
কুণাল সংক্রান্ত দাবিতে অনড় থেকে চিকিৎসকের মা বলেন, "এই বিষয়টা তদন্ত করে দেখা হোক, আমরা সত্যি বলছি কিনা। আমাদের আইনজীবীরা বিষয়টা দেখবেন। এ নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আমাদের নেই। ২৭ তারিখ হাইকোর্টে আমাদের মামলার ডেট আছে। আমরা সেটা নিয়ে ব্যস্ত।"
আর জি করের ঘটনার পরে অভূতপূর্ব এক গণআন্দোলন দেখা গিয়েছিল রাজ্যে। তা ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের অন্যত্র। এই আন্দোলন কি ক্রমশ রাজনৈতিক দলের হাতে চলে যেতে পারে?
অভয়া মঞ্চের আহবায়ক, চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুণ ডিডাব্লিউকে বলেন, "এটা অরাজনৈতিক আন্দোলন নয়। আমরা যখন নারী এবং প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের স্বাধীনতা, অধিকার এবং সুরক্ষার কথা বলছি, আমরা যখন ভয়ের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি, রাজনীতির কথাই তো আমরা বলছি। কিন্তু আমরা অদলীয়। বিভিন্ন দলের সঙ্গে এই আন্দোলনটা করছি।"
তিনি বলেন, "রাস্তার এবং আইনের লড়াইয়ে আমরা অভয়ার বাবা-মার পাশে আছি। থানায় ডেকে ডেকে ডাক্তারদের যে হেনস্থা করা হচ্ছে, সেখানেও তার বাবা-মা উপস্থিত থাকছেন। সুতরাং তারা যে কোনো একটা পক্ষকে বেছে নিয়েছেন, এমনটা নয়। তারা এমন একটা অবস্থার মধ্যে আছেন, যখন মানুষ খড়কুটো পেলেও ধরে বাঁচতে চায়। বিষয়টাকে আমরা সেইভাবে দেখছি।"