1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অমর্ত্য সেন ‘বিশ্বাসঘাতক'!

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৩১ জানুয়ারি ২০১৮

কুকথা ও বিতর্কিত মন্তব্যে ভারতে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর জুড়ি মেলা ভার৷ এর আগেও তিনি অমর্ত্য সেনকে ‘‌টার্গেট'‌ করেছেন৷ কিন্তু এবার সব সীমা ছাড়িয়ে গেলেন৷ বিরোধী কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গিয়ে টেনে নামালেন ভারতরত্ন অমর্ত্য সেনকে৷

অমর্ত্য সেন
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Mukherjee

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ঘনিষ্ঠ ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর শেষতম উক্তি, ‘‌‘‌নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে লুট করা ছাড়া আর কী করেছেন উনি? শুধুমাত্র বামপন্থী হওয়ার কারণে ও সোনিয়া গান্ধীর চাপে ওঁকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে৷'‌'‌ স্বামীর এই মন্তব্যে স্তম্ভিত শিক্ষা জগৎ থেকে সমগ্র রাজনৈতিক মহল৷ ক্ষোভ ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও৷ নিছক রাজনৈতিক মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে একজন রাজনৈতিক নেতা এহেন কুরুচিকর ও নিন্দনীয় ভাষায় একজন নোবেলজয়ী মানুষকে আক্রমণ কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা৷

বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ তথা ভারতীয় সংসদের প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‌‘‌উনি কেমন মানুষ সেটা কারও অজানা নয়৷ কুৎসা রটানো আর কুকথা বলায় ওঁর বিকল্প নেই৷ অমর্ত্য সেনের গুণ বিচারের সাধ্য নেই ওঁর৷ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী যত শীঘ্র সংসদ এবং রাজনীতির আঙিনা থেকে বিদায় নেন ততই দেশের মঙ্গল৷

বস্তুত, ১৯৯৯-তে অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন সরকার ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার ‘ভারতরত্ন' অমর্ত্য সেনের হাতে তুলে দেন৷ সেই প্রসঙ্গত টেনেই এবার অমর্ত্য সেনকে তীব্র বাক্যবাণে বিঁধেছে স্বামী৷ একজন অর্থনীতিবিদ হিসেবে অর্মত্য সেনের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত স্বামী, এমনটাই অভিমত বেশিরভাগ মানুষের৷

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের রাগের বহিঃপ্রকাশ এই প্রথম নয়৷ ভারতে নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাননি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন৷ তিনি জানিয়েছিলেন, ‘‌‘‌এ শুধু ভুল সিদ্ধান্ত নয়, কত বড় ভুল সিদ্ধান্ত তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে৷'‌'‌ যে রাজনীতিকরা নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদের কাছে মস্ত হাতিয়ার ছিল অমর্ত্যের ওই মন্তব্য৷ তাঁর ওই বক্তব্যের বিরুদ্ধে নাম না করে সরব হন খোদ প্রধানমন্ত্রী৷ উত্তরপ্রদেশের এক সভা থেকে তিনি জানিয়ে দেন, ‘‌‘‌হার্ভার্ডের থেকে কঠোর শ্রমের শক্তি অনেক বেশি৷'‌'‌

এছাড়াও মোদী বিরোধী হওয়ার জন্যই অমর্ত্য সেনকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রকে ছাড়পত্র দেয়নি সেন্সর বোর্ড৷ বোর্ডের আপত্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও৷ তিনি বলেছেন, ‘‘সমস্ত বিরোধী কন্ঠকে দমিয়ে রাখা হচ্ছে৷''

অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের গড় হিসেবে পরিচিত দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন অধ্যাপক ইতিমধ্যেই তোড়জোড় শুরু করেছেন শিক্ষক সমিতির জরুরি সভা ডেকে স্বামীর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনার৷ আর বামপন্থিদের দুর্গ বলে পরিচিত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ঝড় উঠেছে স্বামীর মন্তব্যে৷ পিছিয়ে নেই হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও৷ সেখানেও পড়ুয়ারা প্রতিবাদে মুখর৷ প্রতিবাদ ছড়াচ্ছে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও৷ সকলেই বলছেন, স্বামীর এমন মন্তব্যে শুধু অমর্ত্য সেনকে অপমান করা হয়নি৷ অপমান করা হয়েছে বাঙালি তথা গোটা দেশকেই৷ ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার সঙ্ঘ পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছেন, ‘‘‘‌অবিলম্বে স্বামীকে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো হোক৷'‌'‌ কানহাইয়ার মতে, মানসিক ভাবে মোটেই সুস্থ নন এই বিজেপি নেতা৷

২৬ জানুয়ারি রাতে এ বছরের পদ্মশ্রী প্রাপকদের নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্র৷ এ নিয়ে সরকারকে বিঁধেছে কংগ্রেস৷ তাদের দাবি, পদ্মশ্রী প্রাপকদের তালিকায় এবার বেশ কয়েকজন আরএসএস নেতা রয়েছেন৷ তার পালটা দিতে গিয়ে গিয়েই অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করেন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী৷ স্বামী যখন এই অভিযোগ করছেন তার ঠিক ২৪ ঘণ্টা আগেই এক ভিডিও প্রকাশ করে বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের ইতিহাস বদলানোর অভিযোগ এনেছিল কংগ্রেস৷ যার তীব্র প্রতিবাদ করা হয়েছিল গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে৷ সংযুক্ত জনতা দলের নেতা কে সি ত্যাগী স্বামীর মন্তব্যকে ‘‌দুর্ভাগ্যজনক'‌ বলে পাশ কাটালেও, আরজেডি-‌‌র রঘুবংশ প্রতাপ সিং কিন্তু তা করেননি৷ বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‌‘‌হয় প্রমাণ করুন অমর্ত্য সেন নালন্দা বিশ্বাবিদ্যালয়কে লুঠ করেছেন, না হয় বিজেপি-‌‌র সঙ্গ ছাড়ুন৷'‌'

তাঁর মতে, ‌নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকেই অমর্ত্য সেন এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন৷ অনেকবারই প্রকাশ্যে সেনের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন নীতীশ৷ তাই অর্মত্য সেনের উদ্দেশে যে কাদা ছোঁড়া হয়েছে তার বিরুদ্ধে নীতীশ প্রতিবাদ না করলেই অবাক হতে হবে৷ বিজেপি অবশ্য স্বামীর মন্তব্যের সমর্থন অথবা খন্ডন কোনওদিকেই পা-‌বাড়ায়নি৷

‌কিন্তু এই বিজেপি নেতা কেন এমন কুরুচিকর ভাষায় আক্রমণ করলেন অমর্ত্য সেনকে? ঘটনার সূত্রপাত রবিবার৷ বিজেপি সরকার বেছে বেছে আরএসএস নেতাদের ‘পদ্ম' পুরস্কার দিচ্ছে, এমনই অভিযোগে সরব হয় কংগ্রেস৷ কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা একটি টুইটে পাঁচজন আরএসএস সদস্যের নাম করে প্রশ্ন তুলেছিলেন, এঁদের পদ্ম সম্মান দেওয়া হলো কেন? এর জবাবে আজ সকালেই মন কি বাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দাবি করেছিলেন যে তাঁর সরকার পদ্ম সম্মান প্রাপকদের বেছে নেওয়ার বিষয়ে স্বচ্ছতা এনেছে৷ সকলেই যখন মনে করছিলেন যে পদ্ম সম্মান নিয়ে বিতর্কের সেখানেই অবসান ঘটেছে তখন হঠাৎই আসরে নেমে পড়েন স্বামী৷

সুরজেওয়ালার টুইটের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে স্বামী বলেন, ‘‌‘‌আরএসএস-এর সঙ্গে জড়িত অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে নিঃস্বার্থভাবে সমাজসেবা করে আসছেন৷ কোনো কিছুর প্রত্যাশা না করেই৷ তাই তাঁদের পদ্ম সম্মানে ভূষিত করার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই৷'‌'‌ কিন্তু এখানেই না থেমে স্বামী আরও যোগ করেন, ‘‌‘‌এর আগে এনডিএ সরকারই অমর্ত্য সেনকে সম্মানিত করেছিল৷ কিন্তু তিনি কী করেছেন ভারতের জন্য? নালন্দাকে লুঠ করা ছাড়া? অমর্ত্য সেন বামঘেঁষা হওয়ার কারণে এবং সোনিয়া গান্ধী চাপ দিয়েছিলেন বলেই তিনি এটা পেয়েছিলেন৷''‌‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ