1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অমানবিক কলকাতার পতাকা বইছেন করোনা যোদ্ধারাই

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩০ জুলাই ২০২০

করোনা সঙ্কটে সামনে আসছে কলকাতা শহরের দু'টি চেহারা৷ কোথাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকছে মৃতদেহ৷ কখনো ডায়ালিসিস করাতে হয়রান হচ্ছেন বৃদ্ধ৷ আবার কলকাতাতেই গরিবের চিকিৎসা করে চলা চিকিৎসক নিজেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন৷

Indien Westbengalen Coronavirus
ছবি: DW/P. Samanta

দিন দুয়েক আগের ঘটনা৷ দক্ষিণ কলকাতার বেহালায় ‘হোম আইসোলেশন' থাকা এক বৃদ্ধ হঠাৎ তীব্র শ্বাসকষ্ট অনুভব করেন৷ ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তার মৃত্যু হয়৷ পরিবারের বাকিরাও যেহেতু করোনা পজিটিভ ও কোয়ারান্টিনে, তাই তারা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি৷ কাউকে পাননি মরণাপন্ন বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে৷ চোখের সামনেই মারা যান ৬৮ বছরের বৃদ্ধ৷ সেই মৃতদেহ আগলে পরিবারটিকে বসে থাকতে হয়েছে ১৫ ঘণ্টা৷ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে স্বাস্থ্য ভবন কিংবা থানা, বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও কেউ আসেনি বলে অভিযোগ৷ ডেথ সার্টিফিকেট জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যায় মৃতের পরিবারের৷ এ মাসেরই আরেকটি ঘটনা আরো হৃদয়বিদারক৷ উত্তর কলকাতার নাগেরবাজারে রাস্তার উপর পড়েছিলেন এক বৃদ্ধ৷ দিন দুয়েক তিনি একটি বাসস্টপের সামনে পড়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেননি চিকিৎসার জন্য৷ শেষমেষ তার মৃত্যুর পর দেহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়৷ আদৌ তিনি করোনা আক্রান্ত কি না, কেউ জানতেন না! 

কোভিডে মৃত্যু দূরের কথা, সাধারণ অসুখের ক্ষেত্রেও সমাজ এখন বাঁকা চোখে দেখছে রোগীকে৷ প্রতিনিয়ত হয়রানির মুখে পড়ছে মানুষ৷ জ্বর হয়েছে শুনলে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে না, হাসপাতালে যেতে না পেরে বাড়িতেই অসহায় অবস্থায় মৃত্যু হচ্ছে রোগীর৷ দিন তিনেক আগে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা রাজেন সমাদ্দার এমনই এক অভিজ্ঞতার মুখে পড়েন৷ প্রবীণ রাজেনের দৃষ্টিশক্তি প্রায় নেই৷ কিডনি বিকল হওয়ায় সপ্তাহে তিনবার ডায়ালিসিস করাতে হয়৷ তাঁর বাড়ি থেকে আধঘণ্টার দূরত্বে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতাল৷

সেই হাসপাতালে স্টপেজ দিতে রাজি হচ্ছে না বাস৷ হাসপাতালের সামনে নামাতে রাজি নয় ট্যাক্সি বা অটো৷ কারণ কী? এটা কোভিড চিকিৎসার কেন্দ্র৷ এর ফলে অনেকটা দূরে নেমে হেঁটে হাসপাতালে হচ্ছে রাজেনের মতো রোগীকে৷ এই ঘটনার কথা শুনে কবি সুবোধ সরকার ডয়চে ভেলেকে জানান, এক চিকিৎসক যিনি আদৌ করোনা রোগীর চিকিৎসা করছেন না, তাকে আবাসন ছেড়ে চলে যেতে বলেছেন অন্যান্য আবাসিকরা!

এই উদ্যোগে বিভিন্ন বর্গের মানুষ যুক্ত হয়েছেন: কৌশিক

This browser does not support the audio element.

তবু আশাবাদী সুবোধের বক্তব্য, ‘‘অমানবিকতার খবর নেতিবাচক বলে বেশি সামনে আসছে৷ তবে এর বিপরীতে বহু চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষ হৃদয় দিয়ে, সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন৷ কলকাতা মানবিকই থাকবে, আমার সেই ভরসা আছে৷''

সত্যিই কত করোনা যোদ্ধা মারণ ভাইরাসের সঙ্গে সম্মুখসমরে নেমেছেন৷ তাঁদেরই অন্যতম মুখ চিকিৎসক ফুয়াদ হালিম৷ তিনি এখন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ-এ ভর্তি৷ ১২ বছর আগে মূলত ডা. হালিমের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল কলকাতা স্বাস্থ্য সংকল্প৷ এই প্রকল্পের অধীনে নিয়মিত অত্যন্ত অল্প খরচে গরিব পরিবারের রোগীদের ডায়ালিসিস করানো হয়৷ এ বিষয়ে স্বাস্থ্য সংকল্পের সাবেক সহ-সভাপতি চিকিৎসক কৌশিক দাস বলেন, ‘‘ফুয়াদের নেতৃত্বে এই প্রকল্প শুরু হয়েছিল৷ আজও তিনি এর সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি৷ আমাদের এই উদ্যোগের সঙ্গে শুধু চিকিৎসক নন, বিভিন্ন বর্গের মানুষ যুক্ত হয়েছেন৷''

পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়া সত্ত্বেও গত কয়েকমাস সিপিএম নেতা ফুয়াদ উদয়াস্ত গরিব রোগীদের সেবা দিয়ে গিয়েছেন৷ এর মধ্যেই অসুস্থ বোধ করেন দিনকয়েক আগে৷ আপাতত তার করোনা পরীক্ষার দু'টি রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে, যদিও জ্বর থাকায় সবাই তার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ অমানবিকতার সব নিদর্শন ছাপিয়ে ফুয়াদের মতো করোনা যোদ্ধারাই মুখ উজ্জ্বল করবেন, এই ভরসায় আছে কলকাতা৷

গত মাসের ছবিঘরটি দেখুন:

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ