বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে, এ তথ্য সত্য নয়৷ লোকসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ কথাই বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে, ভারতের দেয়া এ তথ্য সত্য নয়৷ ভারতের লোকসভায় নাগরিকত্বসংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এ কথাই বলেছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন৷
লোকসভায় পাস হওয়ার পর বুধবার ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়ও বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি পাস হয়৷
তার একদিনের মাথায় জরুরি সফরে দিল্লি যাচ্ছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন৷
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোমেনের দিল্লি পৌঁছানোর কথা৷ সেখানে তিন দিনের সফরে তিনি কয়েকটি অধিবেশনে যোগ দেওয়া ছাড়াও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্ক কেন
ভারতের সংসদে পেশ হলো নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। পেশ করলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। উত্তাল সংসদ। প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি এই বিল সংবিধান সম্মত? দেখে নেব কেন এই বিতর্ক?
ছবি: REUTERS/A. Hazarika
নাগরিকত্ব আইন
১৯৫৫ সালে ভারতের সংসদে পাশ হয় নাগরিকত্ব বিল। সেখানে বলা হয়, বিদেশিরা যদি এ দেশের নাগরিক হতে চান, তা হলে অন্তত ১১ বছর এ দেশে বসবাস করতে হবে। নাগরিকত্ব আইনে ধর্মের কোনো উল্লেখ ছিল না।
ছবি: DW/P. Mani Tiwari
সংশোধনী বিল
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনের প্রসঙ্গটি তোলে। ২০১৬ সালে তারা প্রথম নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল তৈরি করে। সেখানে পুরোনো আইনে বেশ কিছু সংশোধনের কথা বলা হয়।
ছবি: Reuters
সংশোধনে ধর্ম
নরেন্দ্র মোদী সরকার সংসদে যে বিল পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আগত হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টান, চাকমা, জৈনদের এ দেশে শরণার্থীর মর্যাদা দেওয়া হবে। এবং তাঁদের নাগরিকত্বের অধিকার দেওয়া হবে।
ছবি: PIB Govt. of India
বিজেপির ব্যাখ্যা
বিজেপি-র বক্তব্য হল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে অত্যাচারিত হয়ে সে দেশের সংখ্যালঘুরা ভারতে আসেন। তাই তাঁদের দ্রুত এ দেশে নাগরিকত্ব দিতে চায় সরকার। ১১ বছর নয়, ৫ বছর তাঁরা এ দেশে থাকলেই নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ছবি: DW/P. Mani
ধর্ম কেন
বিরোধীদের প্রশ্ন, ভারতের মতো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে এভাবে ধর্মের উল্লেখ করে আইন তৈরি কি আদৌ সম্ভব? প্রতিবেশী দেশ থেকে কেউ এ দেশে নাগরিকত্ব চাইলে ভারত অবশ্য়ই তাঁকে সাহায্য় করবে। কিন্তু তার সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই।
ছবি: DW/Sirsho Bandopadhyay
সংসদ উত্তাল
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পেশ করার পরেই সরব হয় বিরোধী পক্ষ। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, ধর্মের ভিত্তিতে এ ভাবে আইন সংশোধন বিরোধীরা মেনে নেবে না। এর ফলে মুসলিম এবং অমুসলিমদের মধ্যে বিভাজন তৈরি হচ্ছে। যা ভারতের সংবিধান বিরোধী।
ছবি: Getty Images/AFP/M. Kiran
এরপর কি এনআরসি
বিরোধীদের প্রশ্ন, এরপর কি গোটা দেশে আসামের মতো জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি করবে সরকার? গোটা দেশ জুড়ে তৈরি হবে অসংখ্য ডিটেনশন ক্যাম্প?
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Nath
7 ছবি1 | 7
গত সোমবার লোকসভায় বিপুল ভোটে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর অমিত শাহ বাংলাদেশসহ তিন প্রতিবেশী দেশের সংবিধানকে উদ্ধৃত করে বলেছিলেন, ওই দেশগুলোর রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলেই সেখানে অন্য ধর্মের মানুষরা নিপীড়িত হচ্ছেন।
যার বিরোধিতা করে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের আবদুল মোমেন বলেন, ‘‘আমাদের দেশে সংখ্যালঘু বা ধর্মের নামে নির্যাতন হয় না৷ আমাদের দেশে ধর্ম যার যার, কিন্তু উৎসব সবার৷''
‘‘যারা আমাদের এখানে সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন হওয়ার তথ্য দিয়েছেন তারা সত্য বলেননি৷ আমি আশা করব, আমাদের দেশে যারা সংখ্যালঘু নেতৃত্বে রয়েছেন তারাই এই বিষয়ে কথা বলবেন।''
ভারত ঐতিহাসিকভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। নাগরিকত্ব সংশোধনীর নামে বিভেদ হলে দেশটির পদস্খলন হবে এবং তাদের ঐতিহাসিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে বলেও মনে করেন মোমেন।