অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজোর আগেই সেখানে করোনার হানা। যে পুরোহিতরা ভূমিপুজোর অনুষ্ঠান করবেন, তাঁদেরই একজন করোনায় আক্রান্ত।
বিজ্ঞাপন
রামমন্দিরের ভূমিপুজোর চূড়ান্ত অনুষ্ঠান হবে আগামী ৫ অগাস্ট। ভূমিপুজোর সূচনা অবশ্য হয়ে যাবে ৩ অগাস্ট থেকে। ৪ তারিখ রামের পুজো হবে। কিন্তু সেখানেই করোনার হানা। এই পুজো করার কথা বারাণসী ও অযোধ্যার পুরোহিতদের। অনুষ্ঠানের আগে সকলের করোনা পরীক্ষা হচ্ছে। সেখানেই ধরা পড়েছে, রামলালার মন্দিরের প্রধান পুরোহিত সত্যেন্দ্র দাসের সহকারী পুরোহিত প্রদীপ দাস করোনায় আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। শুধু তিনিই নন, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন নিরাপত্তায় দায়িত্বে থাকা ১৫ জন পুলিশ কর্মী।
আগামী ৫ অগাস্টের অনুষ্ঠানে সত্যেন্দ্র দাসই প্রধান পুরোহিতের ভূমিকায় থাকবেন। তার আগে প্রদীপ দাসের করোনা ধরা পড়ায় রীতিমতো আলোড়ন শুরু হয়ে গিয়েছে অযোধ্যায়। দিন ছয়েক আগে প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ অযোধ্যায় গিয়েছিলেন। তিনি রামলালার পুজো দেন। সেখানেও প্রদীপ ছিলেন।
তবে প্রশাসন জানিয়েছে, প্রদীপের সঙ্গে থাকা বাকিদের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসে গেছে। তাঁরা কেউই করোনায় আক্রান্ত নন। তবে প্রশাসন কোনো ঝুঁকি নিচ্ছে না। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে অনেক ভিভিআইপি থাকবেন, তাই দরকারে আবার করোনা পরীক্ষা করে দেখা হতে পারে।
পরামর্শ মানলে মোদীও যোগ দিতে পারেন না
করোনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর(এসওপি) ঘোষণা করেছে। সেই এসওপি-তে বলা হয়েছে, ‘‘৬৫ বছরের বেশি বয়সের ব্যক্তি, যাঁদের অন্য গুরুতর অসুখ আছে, গর্ভবতী মহিলা এবং ১০ বছরের কম বয়সী বাচ্চারা বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’ ধর্মীয় বিষয় যাঁরা সংগঠন করছেন, তাঁদেরও এই পরামর্শ মাথায় রাখার কথা বলা হয়েছে। আনলক ৩-এর নীতি নির্দেশিকা সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানেও একই পরামর্শ বহাল রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বয়স ৬৯ বছর। লালকৃষ্ণ আডবাণী আর কয়েক মাস পরে ৯৩-এ পা দেবেন। মুরলী মনোহর জোশীর বয়স ৮৬, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের ৬৯, বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কল্যাণ সিং-এর ৮৮, আরএসএস নেতা ভাইয়াজি জোশীর ৭৩ বছর বয়স। তা হলে তো কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এসওপি মানলে তাঁদের বাড়িতে থাকা উচিত। রামমন্দিরের ভূমিপুজোর অনুষ্ঠানে যাওয়া উচিত নয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই এসওপি প্রথম জারি করা হয়, আনলক ১-এর সময়। তারপর থেকে তা এখনও পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছে। গত ১০ জুন সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল বলেছিলেন, ‘‘এসওপি জারির পিছনে আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো করোনার সংক্রমণ রোধ করা। তাই সেখানে সামাজিক দূরত্ব সহ সব বিষয়ই আছে।’’
করোনার মধ্যেই রামমন্দিরের ভূমিপুজো নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। প্রবীণ রাজনীতিক শরদ পাওয়ার বলেছেন, করোনার সংক্রমণ রোধ করাই অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ছিল। এই অবস্থায় সরকারের জারি করা এসওপি বিড়ম্বনায় ফেলেছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বকে।
বাবরি মসজিদ: প্রতিষ্ঠা, ভাঙচুর, মামলা, রায়
হিন্দু দেবতা রামচন্দ্রের জন্মস্থান, রাম মন্দির, নাকি মোগল সম্রাট বাবরের আমলে নির্মিত একটি মসজিদ? বিষয়টি নিয়ে ১৮৫৩ সাল থেকে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ চলেছে, যা চরমে ওঠে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বরে৷
ছবি: dpa - Bildarchiv
১৫২৮ সালে নির্মাণ
রামায়ণ-খ্যাত অযোধ্যা শহর ভারতের উত্তর প্রদেশ রাজ্যের ফৈজাবাদ জেলায় অবস্থিত৷ তারই কাছে রামকোট পর্বত৷ ১৫২৮ সালে সেখানে সম্রাট বাবরের আদেশে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়, যে কারণে জনমুখে মসজিদটির নামও হয়ে যায় বাবরি মসজিদ৷ আবার এ-ও শোনা যায়, গত শতাব্দীর চল্লিশের দশকের আগে এই মসজিদ ‘মসজিদ-ই-জন্মস্থান' বলেও পরিচিত ছিল৷
ছবি: DW/S. Waheed
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি
বাবরি মসজিদ নিয়ে সংঘাত ঘটেছে বার বার৷ অথচ ফৈজাবাদ জেলার ১৯০৫ সালের গ্যাজেটিয়ার অনুযায়ী, ১৮৫২ সাল পর্যন্ত হিন্দু এবং মুসলমান, দুই সম্প্রদায়ই সংশ্লিষ্ট ভবনটিতে প্রার্থনা ও পূজা করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. E. Curran
সংঘাতের সূত্রপাত
প্রথমবারের মতো হিন্দু মুসলমানের মধ্যে সংঘাতের সূত্রপাত৷১৮৫৯ সালে ব্রিটিশ সরকার দেয়াল দিয়ে হিন্দু আর মুসলমানদের প্রার্থনার স্থান আলাদা করে দেয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/D .E. Curran
হিন্দুদের দাবি
আওয়াধ অঞ্চলের বাবর-নিযুক্ত প্রশাসক ছিলেন মির বকশি৷ তিনি একটি প্রাচীনতর রাম মন্দির বিনষ্ট করে তার জায়গায় মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে হিন্দুদের দাবি৷
ছবি: AP
বেআইনিভাবে মূর্তি স্থাপন
১৯৪৯ সালের ২৩শে ডিসেম্বর – বেআইনিভাবে বাবরি মসজিদের অভ্যন্তরে রাম-সীতার মূর্তি স্থাপন করা হয়৷
ছবি: DW/S. Waheed
নেহরুর ঐতিহাসিক পদক্ষেপ
রাম-সীতার মূর্তি স্থাপনের পর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী গোবিন্দ বল্লভ পন্থকে চিঠি লিখে হিন্দু দেব-দেবীদের মূর্তি অপসারণ করার নির্দেশ দেন, তিনি বলেন ‘‘ওখানে একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা হচ্ছে’’৷
ছবি: Getty Images
মসজিদের তালা খোলার আন্দোলন
১৯৮৪ সালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মসজিদের তালা খুলে দেওয়ার দাবিতে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে৷ ১৯৮৫ সালে রাজীব গান্ধীর সরকার ঠিক সেই নির্দেশই দেন৷
ছবি: AFP/Getty Images
দুই সম্প্রদায় মুখোমুখি অবস্থানে
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ রাম মন্দির নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে৷ ১৯৮৬ সালে মসজিদের তালা খুলে সেখানে পূজা করার অনুমতি প্রার্থনা করে হিন্দু পরিষদ৷ অন্যদিকে, মুসলমানরা বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করেন৷
ছবি: AP
‘রাম রথযাত্রা'’
১৯৮৯ সালের নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে ভিএইচপি বিতর্কিত স্থলটিতে (মন্দিরের) ‘শিলান্যাস'-এর অনুমতি পায়৷ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রবীণ নেতা লাল কৃষ্ণ আডভানি ভারতের দক্ষিণতম প্রান্ত থেকে দশ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের ‘রাম রথযাত্রা'’ শুরু করেন৷
ছবি: AP
১৯৯২
১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর এল কে আডভানি, মুরলি মনোহর যোশি, বিনয় কাটিয়াসহ অন্যান্য হিন্দুবাদী নেতারা মসজিদ প্রাঙ্গনে পৌঁছান৷ ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি, শিব সেনা আর বিজেপি নেতাদের আহ্বানে প্রায় দেড় লাখ মানুষ বাবারি মসজিদে হামলা চালায়৷ ছড়িয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা৷
ছবি: AFP/Getty Images
সমঝোতার উদ্যোগ
২০০২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী দু’পক্ষের সমঝোতার জন্য বিশেষ সেল গঠন করেন৷ বলিউডের সাবেক অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহাকে হিন্দু ও মুসলমানদের নেতাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করার দায়িত্ব দেয়া হয়৷
ছবি: AP
শিলালিপি কী বলে
পুরাতাতত্বিক বিভাগ জানায়, মসজিদের ধ্বংসাবশেষে যে সব শিলালিপি আবিষ্কৃত হয়, তা থেকে ধারণা করা হয়, মসজিদের নীচে একটি হিন্দু মন্দির ছিল৷ আবার ‘জৈন সমতা বাহিনী'-র মতে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজিদের নীচে যে মন্দিরটির ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, সেটি ষষ্ঠ শতাব্দীর একটি জৈন মন্দির৷
ছবি: CC-BY-SA-Shaid Khan
বিজেপি দোষী
বিশেষ কমিশন ১৭ বছরের তদন্তের পর ২০০৯ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় প্রতিবেদন জমা দেয়৷ প্রতিবেদনে ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপিকে দোষী দাবি করা হয়৷
ছবি: AP
এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়
২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট তার রায়ে জানান, যে স্থান নিয়ে বিবাদ তা হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া উচিত৷ এক তৃতীয়াংশ হিন্দু, এক তৃতীয়াংশ মুসলমান এবং বাকি অংশ নির্মোহী আখড়ায় দেওয়ার রায় দেন৷ রায়ে আরো বলা হয়, মূল যে অংশ নিয়ে বিবাদ তা হিন্দুদের দেয়া হোক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হিন্দু ও মুসলমানদের আবেদন
হিন্দু ও মুসলমানদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১১ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের সেই রায় বাতিল করে৷ দুই বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, বাদী বিবাদী কোনো পক্ষই জমিটি ভাগ করতে চান না৷
ছবি: AP
ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়
ভারতে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের কণ্টকিত ইতিহাসে বাবরি মসজিদে হামলা একটি ‘কলঙ্কিত অধ্যায়’৷ গুটি কয়েক হিন্দু সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দিনটিকে সূর্য দিবস বলে আখ্যায়িত করলেও বেশিরভাগ ভারতীয় দিনটিকে ‘কালো দিন’ বলে উল্লেখ করেন৷ অনেকেই বলেন, এই ঘটনায় দেশের অসাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তি একেবারে ভূলুন্ঠিত হয়েছিল৷
ছবি: AP
মন্দিরের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের রায়
ভারতের অযোধ্যার এক বিতর্কিত জমি নিয়ে কয়েক দশক অপেক্ষার পর ৯ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেছে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত৷ রায়ে ওয়াকাফ বোর্ডের আর্জি এবং নির্মোহী আখড়ার জমির উপর দাবি দুটোই খারিজ করে দেন বিচারকরা৷ বিতর্কিত সেই জমিতে একটি ট্রাস্টের অধীনে মন্দির নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত৷ পাশাপাশি, একটি মসজিদ গড়তে কাছাকাছি অন্য কোথাও মুসলমানদের পাঁচ একর জমি দিতেও বলা হয়েছে রায়ে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Armangue
17 ছবি1 | 17
দৈনিক আক্রান্ত ৫০ হাজার
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। সবমিলিয়ে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৬ লাখ ছাড়াল। স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন জানিয়েছেন, সুস্থ হয়ে ওঠার হার ৬৪ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩৫ হাজার ৭৪৭ জন।