অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হলো। করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
বিজ্ঞাপন
কালচে সবুজ রংয়ের মূর্তি। মাথায় সোনার মুকুট। গলায় সোনার অলংকার। প্রচুর ফুল-মালা। অযোধ্যায় যে রামমন্দিরের উদ্বোধন হলো সোমবার, তাতে কিশোর রামের মূর্তি এরকমই।
রামমন্দিরের গর্ভগৃহে শ্রীরামের এই মূর্তিই প্রতিষ্ঠিত হলো, তার প্রাণপ্রতিষ্ঠা হলো। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাশে ছিলেন মোহন ভাগবত, ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর পাশাপাশি তারাও মন্ত্র পড়লেন। আরতি করলেন। ছিলেন রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেলও। রামমন্দির উদ্বোধনের ক্ষেত্রে, প্রাণপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এই তিনজনের নামই থাকলো।
এরপরই রামমন্দিরের উপর থেকে হেলিকপ্টার থেকে ফুল ছড়িয়ে দেয়া হলো। হাজার আটেক আমন্ত্রিত অতিথি ও নির্মীয়মান রামমন্দিরের উপর পড়লো সেই ফুল।
মন্ত্রপাঠ হলো, আরতি হলো, এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদী সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করলেন মূর্তিকে। উদ্বোধনপর্ব শেষ হলো।
সোমবার রামমন্দিরের ভিতরে ঢুকে মূর্তি দর্শন করতে পেরেছেন কেবলমাত্র আমন্ত্রিতরা। মঙ্গলবার থেকে তা সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেয়া হবে। এক হাজার আটশ কোটি টাকা দিয়ে তৈরি হচ্ছে এই রামমন্দির।
রামমন্দিরের অযোধ্যায়
অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হবে ২২ জানুয়ারি। প্রস্তুত অযোধ্যা। জনকপুরে সীতার বাড়ি থেকেও জিনিস এসে গেছে।
ছবি: Goutam Hore/DW
অযোধ্যা রামময়
অযোধ্যার রাস্তায় এখন শ্রীরামের ছবির বন্যা, ফ্লাইওভার, রাস্তার ধারে, বিভিন্ন বাড়িতে, পোস্টার, গ্রাফিটিতে ছেয়ে আছেন শ্রীরাম ও রামায়ণের কিহিনি। তবে শ্রীরামের পরই যার ছবি সবচেয়ে বেশি শোভা পাচ্ছে, তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ২২ জানুয়ারি মোদীই রামমন্দিরের উদ্বোধন করবেন।
ছবি: Goutam Hore/DW
সীতার বাড়ি থেকে
এই যে কলসিগুলো দেখছেন, সেগুলি এসেছে জনকপুর থেকে। সীতার দেশ থেকে অযোধ্যায় এসে পৌঁছেছে ঘি, বিভিন্ন কুণ্ডের জল এবং আরো অনেক কিছু। রামমন্দিরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এগুলি ব্যবহৃত হবে।
ছবি: Goutam Hore/DW
দুই হাজার চারশ কিলোর ঘণ্টা
অষ্টধাতুর তৈরি এই ঘণ্টার ওজন দুই হাজার চারশ কিলোগ্রাম। এসেছে বিজনোর থেকে। এভাবেই ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসছে নানান জিনিস। পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছে সুন্দবরনের মধু। এই ঘণ্টা মন্দির চত্বরে লাগানো হবে।
ছবি: Goutam Hore/DW
নারী ভক্ত
অযোধ্যার রাস্তায় চোখে পড়বে এই নারী ভক্তদের। কপালে শ্রীরাম লেখা। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা এসেছেন এবং আসছেন।
ছবি: Goutam Hore/DW
মহারাষ্ট্র থেকে আসা নারীরা
এই নারীরা মহারাষ্ট্র থেকে এসেছেন। উদ্দেশ্য রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সামিল হওয়া। কাজ করা। তাদের যে কাজ দেয়া হবে, সেটাই তারা করবেন। তবে কবে তারা মন্দিরে ঢুকতে পারবেন তা জানেন না। কারণ, ২২ তারিখ মন্দিরে ঢোকার ক্ষেত্রে খুবই কড়াকড়ি তাকবে।
ছবি: Goutam Hore/DW
সাইকেল করে
উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সাইকেলে করে প্রচুর মানুষ এসেছেন অযোধ্যায়। ছবিতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে, তিনি এসেছেন কানপুর থেকে। সঙ্গে ছোট একটা ব্যাগ। তাছাড়া আছে পতাকা ও ফুল।
ছবি: Goutam Hore/DW
অযোধ্যার পেড়া ও লাড্ডু
মন্দিরের আশপাশের এলাকা তো বটেই, গোটা অযোধ্যা জুড়ে এখন অসংখ্য পেড়া ও লাড্ডুর দোকান। ২২ তারিখের পর থেকে মানুষের ঢল নামবে মনে করে, প্রতিটি দোকানে প্রচুর পেড়া ও লাড্ডু বানিয়ে রাখা হচ্ছে। এই দেশি ঘিয়ে তৈরি বেসনের লাড্ডু থাকেও অনেকদিন।
ছবি: Goutam Hore/DW
রঘুপতি রাঘব
তখন সবে সন্ধ্যা নেমেছে। সেই সময় অযোধ্যা মন্দিরের দরজার কাছ থেকে শুরু হলো এই নাচ ও গান। রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিত পবন সীতারাম-- গান্ধীজির অতি প্রিয় এই গান গাইতে গাইতে এবং নাচতে নাচতে এগিয়ে চললো দলটি। আর নাচে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন নেপাল থেকে আগত এই অতিথি।
ছবি: Goutam Hore/DW
সামিল কিন্নররা
অযোধ্যার এই অনুষ্ঠানে সামিল কিন্নররাও। শুক্রবার বিকেলে তাদের একটি বড় দল অযোধ্যায় ঘুরলেন। তাদের কপালেও লেখা ছিল শ্রীরাম। তারা বললেন, রামমন্দিরের এই উৎসবে তারাও সামিল হয়েছেন। তারা তাদের আনন্দের কথা জানাচ্ছেন।
ছবি: Goutam Hore/DW
কড়া নিরাপত্তা
অযোধ্যায় এখন কড়া নিরাপত্তা। শহর মুড়ে পালা হয়েছে নিরাপত্তার বেড়াজালে। দাঙ্গাবিরোধী পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বিভিন্ন স্থানে। তাছাড়া আছে প্রচুর কেন্দ্রীয় বাহিনী, রাজ্য়ের সশস্ত্র পুলিশ ও লাঠিধারী পুলিশের দল। বিভিন্ন রাস্তায় ব্যারিকেড লাগানো আছে।
ছবি: Goutam Hore/DW
বদলের অযোধ্যা
এই রাস্তাই চলে গেছে রামমন্দিরের দিকে। দুইপাশের দোকান নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। তাতে নতুন রং লাগানো হয়েছে। রাজদ্বার মন্দিরের উপর থেকে তোলা ছবিতে ধরা পড়লো সেই বদলে যাওয়া অযোধ্যার একটুকরো ছবি।
ছবি: Goutam Hore/DW
দুই পতাকার মাঝখানে
দুই পতাকার মাঝখানে দেখা যাচ্ছে তাকে। মাঝেমধ্য়ে এই পতাকার ডাণ্ডায় কাম়ড়ও বসাচ্ছেন তিনি। তবে তার দুষ্টুমিতে কেউ বিরক্ত হয় না অযোধ্যায়।
ছবি: Goutam Hore/DW
অযোধ্যা-জুড়ে
অযোধ্যা-জুড়ে দেখা যাচ্ছে নানান ধরনের, নানান সম্প্রদায়ের সাধুদের।
ছবি: Goutam Hore/DW
পতাকায় পতাকায়
অযোধ্যা-জুড়ে ছড়িয়ে আছে এই পতাকা। প্রচুর দোকানেও তা বিক্রি হচ্ছে। মন্দির উদ্বোধনের আগে এই পতাকার চাহিদা তুঙ্গে।
ছবি: Goutam Hore/DW
14 ছবি1 | 14
তবে মন্দিরের কাজ এখনো পুরো শেষ হয়নি। একতলার কাজ হয়েছে। এরপর আরেকটি তলা তৈরি হবে। তাতে অবশ্য সাধারণ মানুষের দর্শনের কোনো ব্যাঘাত হবে না বলে রামমন্দির ট্রাস্ট জানিয়েছে। একদিকে মন্দির তৈরির কাজ চলবে, অন্যদিকে দর্শনও চলবে।
মোদীর বক্তব্য
উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর মোদী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘‘অতীতে নিশ্চয়ই আমাদের কিছু খামতি ছিল। তাই রামমন্দির হয়নি। আজ সেই খামতি দূর হয়েছে বলে রামমন্দির হয়েছে।’’ এটা রাষ্ট্রচেতনার মন্দির। তিনি বলেছেন, ‘‘এটাই সময়, ঠিক সময়। ভারতে এখন দেশে হতাশার কোনো স্থান নেই।’’
মোদী বলেছেন, ‘‘রামই হলেন ভারতের ভিত্তি, ভারতের আস্থা।’’
বিরোধীরা কী করলেন?
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এখন ন্যায় যাত্রা করছেন। তিনি এখন উত্তরপূর্বে সেই যাত্রা করে যাচ্ছেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় সংহতি যাত্রা করেছেন। তিনি কালীঘাটে পুজো দিয়ে স্কুটিতে করে গুরুদ্বার, গির্জা, মসজিদ যাবেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রীরামকে নিয়ে স্লোগান ওঠার পরই বাম-ছাত্ররা আওয়াজ দিয়েছেন, ইনকিলাব জিন্দাবাদ।