অরগ্যানিক খাবারের দিকে ঝুঁকছে কেনিয়া
১৬ মার্চ ২০২২ইউরোপের ক্রেতারা শীতকালেও সবুজ শাকসবজি চান বলে খুব দ্রুত উৎপাদন করতে হয়৷ নাইরোবির হিমিলো ফার্মে যে বিনস, মরিচ, জড়িবুটি বা ফলমূল উৎপাদিত হয়, তার বেশিরভাগই রপ্তানি করা হয়৷
ওয়াইক্লিফ ওকুমু রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করে অনেককাল ধরে প্রথাগত ফার্ম চালিয়ে এসেছেন৷ কিন্তু এখন তিনি ধাপে ধাপে মৌলিক পরিবর্তন করছেন৷ পুরোপুরি অরগ্যানিক পদ্ধতির দিকে এগোচ্ছেন তিনি৷ ওয়াইক্লিফ বলেন, ‘‘আমরা আবিষ্কার করলাম যে বিকল্প কৃষিপদ্ধতিও রয়েছে, যা আমাদের ক্রেতাদের জন্য ক্ষতিকর নয়৷ সে কারণে আমরা অরগ্যানিক কৃষিপদ্ধতি চালু করার চেষ্টা করছি৷ ফার্মে আমরা কিছু ফসলের ক্ষেত্রে সেই পথ গ্রহণ করেছি৷ আমরা এর প্রভাব দেখতে চাই৷ তবে এখনো পর্যন্ত আমরা ফার্মের উৎপাদন নিয়ে ভালোই ফল করছি৷''
রোগ বা পরজীবীর কারণে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি৷ তাই তিনি রবিনসন রুনইয়েনজের মতো বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিচ্ছেন৷ তার কোম্পানি রুয়ে অরগ্যানিক্স অরগ্যানিক সার ও কীটনাশক উৎপাদন করে৷ আপাতত সেই কোম্পানি ভুট্টার পোকা মোকাবিলার চেষ্টা করছে৷ রবিনসন বলেন, ‘‘হিমিলো স্টপজেলের মতো অরগ্যানিক পণ্য কাজে লাগাচ্ছে৷ সেটি এক ফোলিয়ার ফার্টিলাইজার৷ কীটনাশক না হয়েও সেটি দম বন্ধ করিয়ে কীটপতঙ্গ মেরে ফেলে৷ আমার হাতে পোকা ধরা ভুট্টা দেখছেন৷ পরীক্ষা চালিয়ে দেখলাম সব পোকা মরে গেছে৷''
রাসায়নিক ব্যবহার না করেই এমনটা সম্ভব হচ্ছে৷ ‘ফল আর্মিওয়ার্ম' পোকার মোকাবিলা করতে খরগোসের গাঁজানো প্রস্রাব, ঘনিভূত ভেষজ তেল ও নারিকেলের নির্যাস ব্যবহার করা হচ্ছে৷ সব উপাদান মেশালেই প্রয়োগ করা সম্ভব৷
বেড়ে চলা চাহিদার কারণে কেনিয়ায় অরগ্যানিক চাষাবাদের রমরমা দেখা যাচ্ছে৷ কেনিয়া অরগ্যানিক এগ্রিকালচারাল নেটওয়ার্কের সূত্র অনুযায়ী ১৭৩,০০০ হেক্টর কৃষিজমি ইতোমধ্যেই অরগ্যানিক মানদণ্ডের স্বীকৃতি পেয়েছে৷
যাবতীয় চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও কেনিয়ায় কৃষিকাজে পরিবর্তন আসছে৷ একের পর এক খামার, বিশেষ করে ছোট আকারের ফার্মগুলি অরগ্যানিক পদ্ধতি গ্রহণ করছে৷ অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা তাদের সহায়তা করছেন৷ অরগ্যানিক চাষি হিসেবে জাস্টিন গিদেনজি বলেন, ‘‘অরগ্যানিক চাষি ও প্রশিক্ষকরা আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন৷ ব্যবসা মোটেই খারাপ হচ্ছে না, কারণ আমি নিজের বাসা এবং এমন এক বাজারের জন্যও উৎপাদন করতে পারছি৷''
নাইরোবির কিকুইয়ু ফার্মার্স মার্কেট এখনো ছোট হলেও এবং সপ্তাহে মাত্র একবার বসলেও সেখানকার রাসায়নিক-মুক্ত শাকসবজির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ছে৷ ফলে আরও বেশি ক্রেতা সেখানে আসছেন৷ মোয়াউরা গাচুংগা তাদেরই একজন৷ তিনি মনে করেন, ‘‘এখানে তারা অনেক কিছু উৎপাদন করে এবং ভালোই কাজ করছে৷ আমি বন্ধুদেরও এখানে আসার পরামর্শ দেই৷ প্রতি শনিবার তাদের আসতে বলি এবং তারা সত্যি আসে৷''
হিমিলো ফার্ম যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে এই প্রবণতার উপর নজর রাখছে৷ বাসার কাছেই আয়ের নতুন উৎস খুলে যেতে পারে৷ ওয়াইক্লিফ ওকুমু বলেন, ‘‘আমরা শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি অরগ্যানিক চাষাবাদ গ্রহণ করতে পারি, কারণ বুঝতে পারছি যে অরগ্যানিক পণ্যের বিশাল বাজার আছে৷''
কেনিয়া সেই পথে এগিয়ে ক্ষতিকর কীটনাশক নিষিদ্ধ ঘোষণা করলে দেশজুড়ে অরগ্যানিক চাষের ক্ষেত্রের বিশাল বৃদ্ধি হতে পারে৷
মেরেডিট জোনস/এসবি