ফরাসি গায়ানা-র কুরু-তে রয়েছে ইএসএ অর্থাৎ ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র৷ আরিয়ান ৫ অথবা এটিভি লঞ্চ করা হয় এখান থেকে৷ এখন স্বপ্ন দেখা হচ্ছে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য মালবাহী – এমনকি মানুষবাহী রকেটের৷
বিজ্ঞাপন
গভীর জঙ্গলের মধ্যে হাইটেক: কুরু-তে ইউরোপের মহাকাশযাত্রা কেন্দ্র৷ তিন দশকের বেশি সময় ধরে এখানে থেকে রকেট পাঠানো হচ্ছে মহাকাশে৷ এলাকাটি বিষুবরেখা থেকে মাত্র ৫০০ কিলোমিটার দূরে৷ যার ফলে এটি রকেট উৎক্ষেপণের পক্ষে একটি আদর্শ স্থান৷ প্রতিটি রকেট এখানে অতিরিক্ত ‘প্রোপালশন' বা প্রচালনাশক্তি পায়৷ কারণ পৃথিবীর অক্ষদণ্ড থেকে উপরিভাগের দূরত্ব বিষুবরেখাতেই সর্বোচ্চ৷ যে কারণে কুরু থেকে উড়লে রকেটগুলির অপেক্ষাকৃত কম জ্বালানি লাগে৷
ভারতের মঙ্গল অভিযান উদযাপন
এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মঙ্গল অভিযানে সফল হয়েছে ভারত৷ ৩০০ দিন আগে শুরু হয়েছিল এই অভিযান৷ এরপর ২৪শে সেপ্টেম্বর প্রথম চেষ্টাতেই মঙ্গলগ্রহে মহাকাশযান পৌঁছানোর খবরে আনন্দে নেচে ওঠে ভারত৷ এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
খুশির জোয়ার
কর্নাটকের শ্রীহরিকোটা থেকে পিএসএলভি রকেটে চড়ে ২০১৩ সালের ৬ই নভেম্বর শুরু হয়েছিল মঙ্গলযানের যাত্রা৷ বুধবার ভারতীয় সময় সকাল ৭টা ৪১ মিনিটে আসে সুখবর৷ মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে প্রবেশ করে মঙ্গলযান মার্স অরবিটার মিশন, সংক্ষেপে ‘মম’৷ টেলিভিশনে এ দৃশ্য দেখে ভারতীয়রা আনন্দে ফেটে পড়েন৷ ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরাও আবেগ ধরে রাখতে পারেননি৷
ছবি: Reuters/Abhishek N. Chinnappa
বিজয় উদযাপন
ঐতিহাসিক এই সাফল্যের মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও ছিলেন ইসরো-তে৷ মহাকাশ বিজ্ঞানীদের এনে দেয়া এ সাফল্যকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘এ অর্জন ভারতের সব নাগরিকের৷ আমরা অজানার দেশে পৌঁছানোর সাহস দেখিয়েছি এবং অবশেষে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করেছি৷’’
ছবি: Reuters/India's Press Information Bureau
উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ
‘মঙ্গলযান’ আগামী ছয় মাস মঙ্গলগ্রহের আবহাওয়া ও পরিবেশ পরীক্ষা করে দেখবেন বিজ্ঞানীরা, দেখবেন কোনো জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক মিথেন গ্যাস সেখানে আদৌ আছে কিনা৷ ভারত এখন মঙ্গল এবং চাঁদে আরো অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে৷ পরবর্তী অভিযানটি ২০১৮ সালে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: AFP/Getty Images/Manjunath Kiran
যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীনও পেছনে...
মহাকাশ বিজ্ঞানে ভারতের এই সাফল্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর চীনের মতো দেশগুলোর জন্যও বিশেষ বার্তা৷ এ পর্যন্ত মঙ্গল অভিযানের চেষ্টা হয়েছে ৫১ বার, সফল হয়েছে মাত্র ২১টি প্রয়াস৷ ভারত সেখানে প্রথম চেষ্টাতেই সফল৷ যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা বিষয়ক সংস্থা নাসা-ও টুইটারে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো-কে অভিনন্দন জানিয়েছে৷
ছবি: Twitter
কম খরচে সেরা সাফল্য
সবচেয়ে কম খরচে সফলভাবে মঙ্গল অভিযান শুরু করল ভারত৷ ‘ম্যাভেন’ মহাকাশযান পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র যেখানে ৬৭০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিল, সেখানে মঙ্গলযানের পেছনে ভারতের খরচ মাত্র ৭৪ মিলিয়ন ডলার!
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
ক্ষমতার খেলায় বড় অগ্রগতি
চীন আর জাপানের মঙ্গল অভিযান এখনো পর্যন্ত ব্যর্থ৷ ভারতের সাফল্য তাদের জন্য এক ধরণের ধাক্কা৷ ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজগোপালন মনে করেন, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যেসব ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা চলছে, তার মধ্যে মহাকাশ বিজ্ঞানের স্থান নিঃসন্দেহে ওপরের দিকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সমালোচনা এবং জবাব
ভারতের মতো দেশ, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত, সেখানে মঙ্গল অভিযান কতটা প্রয়োজন? কোনো কোনো সমালোচক এভাবে ভারতের অর্জনকে ছোট করতে চাইলেও, বিশ্লেষকদের মতে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির এ যুগে এই সাফল্য যে কোনো বিবেচনাতেই খুব বড় অর্জন৷ এ সাফল্য ভবিষ্যতে দারিদ্র্যসহ ভারতের অন্য অনেক সমস্যা সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করেন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Indian Space Research Organisation
7 ছবি1 | 7
‘আরিয়ান ৫' রকেটটি ভারি বস্তু বহণ করতে পারে – যেমন একসঙ্গে দু'টি কৃত্রিম উপগ্রহ কিংবা অন্যান্য ভারি সাজসরঞ্জাম৷ এ ধরনের পরিবহন রকেটকে বলে অটোমেটেড ট্রান্সফার ভেহিকেল বা এটিভি৷ এটিভি-তে কোনো মানুষ থাকে না এবং এগুলি পুনরায় ব্যবহার করারও কোনো উপায় নেই৷ এটিভি-র জন্য একটি আলাদা রকেট সৃষ্টি করা হয়েছে, যা ২১ টন মাল পৃথিবীর নিকটবর্তী কোনো কক্ষপথে পৌঁছে দিতে পারে৷
রুশ প্রোগ্রেস ক্যাপসিউল ছাড়া ইউরোপীয় এটিভি হলো ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন আইএসএস-এ মালপত্র পাঠানোর একমাত্র যান, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আইএসএস-এর সঙ্গে ‘ডক' করতে পারে৷ স্পেস শাটল বা মহাকাশফেরি বন্ধ করে দেওয়ার পর আর আইএসএস থেকে কোনো ভারি মাল ভূপৃষ্ঠে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি – যদিও তার পরিকল্পনা ছিল৷ এবার স্পেস শাটল-এর অভাব পূরণ করে দিয়েছে এটিভি৷ ব্রেমেন-এ ইতিমধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে, মহাকাশযানটিকে কী ভাবে আইএসএস থেকে মালপত্র ফেরৎ আনার উপযোগী করে তোলা যায়৷
বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ: কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
মহাকাশে বাংলাদেশের একটি নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর কথা প্রথম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে৷ অনেক ধাপ পেরিয়ে ২০১৮ সালের ১২ মে ভোর ০২:১৪ তে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এটি৷ ছবিগুলো সব ফাইল থেকে নেয়া৷
সার্কভুক্ত ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা আগেই নিজেদের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে৷ বাংলাদেশও সে তালিকায় নাম তুলতে চাইছে৷ ২০১৮ সালের ১২ মে বাংলাদেশ মান সময় ভোর ০২:১৪ তে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় এটি৷
ছবি: NASA
প্রকল্প অনুমোদন
এতে ব্যয় হয়েছে ২,৯৬৮ কোটি টাকা৷
ছবি: NASA/dpa
নতুন সময়সীমা
প্রথম পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের জুনে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপিত হওয়ার কথা ছিল৷ পরে সেটা এক দফায় বাড়িয়ে ২০১৬ সালের জুন করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নকশা তৈরি হচ্ছে
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসাবে উপগ্রহের নকশা তৈরির কাজ শুরু করে৷
ছবি: ESA/ATG medialab
বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচবে
সরকার বলছে, দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করতে পারবে৷ এছাড়া এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবাও দেয়া সম্ভব হবে৷ এতে বছরে ১১০ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চল্লিশটি ট্রান্সপন্ডার
বঙ্গবন্ধু কৃত্রিম উপগ্রহে ট্রান্সপন্ডার মোট ৪০টি থাকবে৷ এর মধ্যে বাংলাদেশ ১২টি ব্যবহার করবে৷ বাকিগুলো ভাড়া দেয়া হবে৷ এ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে সরকার৷
ছবি: ESA/NASA via Getty Images
দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন
উপগ্রহটি নিয়ন্ত্রণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ায় দুটি ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ নির্মাণ করে হবে৷
ছবি: ESA–J. Huart, 2013
নতুন কোম্পানি গঠন
স্যাটেলাইটটি একবার উৎক্ষেপণ হয়ে যাওয়ার পর সেটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা একটি কোম্পানি চালু করবে সরকার৷
ছবি: ESA/Mixed-Reality Communication GmbH
8 ছবি1 | 8
সেজন্য এটিভি মহাকাশযানের সর্বাগ্রে যে বস্তুটির প্রয়োজন পড়বে, সেটা হলো একটি উত্তাপ-প্রতিরোধী আস্তরণ, যা তাকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় ঘর্ষণে জ্বলে-পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে৷ আর চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যেই তা করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷ তার প্রযুক্তি এখনই হাতে এসে গেছে৷ ‘অ্যাটমস্ফেরিক রিএন্ট্রি ডেমনস্ট্রেটর' বা এআরডি নামধারী তাপ-প্রতিরোধী ক্যাপসিউলটিকে নব্বইয়ের দশকের শেষেই মহাকাশে পরীক্ষা করা হয়েছিল৷
সফলভাবে ভূপৃষ্ঠে প্রত্যাবর্তনের পরেও যে স্বপ্নটি থেকে যায়, তা হলো, চালক সহ, মানুষ সহ, যাত্রী সহ মহাকশযাত্রা৷ আরিয়ান ৫ এবং এটিভি, উভয় যানই এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যে, তাতে মানুষ পাঠানো সম্ভব৷ তবে তার জন্য মহাকাশযানের ব্যাপক রদবদলের প্রয়োজন পড়বে, যা কিনা ব্যয়সাপেক্ষ৷ কাজেই স্বপ্ন সফল হতে হতে আরো কিছু বছর সময় লেগে যাবে৷