দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে জামিন দিলো সুপ্রিম কোর্ট। প্রায় ছয় মাস পরে জেল থেকে ছাড়া পাবেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তবে জামিনের আদেশে শর্ত দেয়া হয়েছে, কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর অফিস বা সচিবালয়ে যেতে পারবেন না, তিনি এই মামলা নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবেন না, তিনি ফাইলেও সই করতে পারবেন না।
ফলে কেজরিওয়ালকে আগে যে জামিনের শর্ত দেয়া হয়েছিল, সেটাই বহাল রাখা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সুপ্রিম কোর্ট কেজরিওয়ালকে প্রচার করার জন্য জামিন দিয়েছিল। কেজরিওয়ালকে প্রথমে ইডি গ্রেপ্তার করে। সেখানেও তিনি জামিন পান। তখন জামিনের কিছু শর্ত দেয়া হয়েছিল। পরে সিবিআই-ও তাকে গ্রেপ্তার করে।
তবে জামিনের এই শর্ত নিয়ে দুই বিচারপতির মধ্যে মতপার্থক্য আছে। বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেছেন, তিনি আগের শর্ত এক্ষেত্রেও বহাল রাখতে চান।
কিন্তু বিচারপতি ভুয়ান বলেছেন, ''কেজরিওয়ালকে সচিবালয়ে যেতে মানা করা এবং ফাইলে সই করা নিয়ে যে সব শর্ত দেয়া হয়েছে, তা নিয়ে আমার সিরিয়াস রিজার্ভেশন আছে। তবে আমি এই মুহূর্তে এর থেকে বেশি কিছু বলছি না।''
যেহেতু দুই বিচারপতি কেজরিওয়ালকে জামিন দেয়া নিয়ে একমত হয়েছেন, তাই তিনি জামিন পাচ্ছেন। তবে শর্ত বহাল থাকছে।
গ্রেপ্তারি নিয়ে দুই বিচারপতি ভিন্নমত
ইডির করা মামলায় কেজরিওয়াল জামিন পাওয়ার পর সিবিআই যেভাবে তড়িঘড়ি করে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে তা নিয়ে দুই বিচারপতি একমত হতে পারেননি।
বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেছেন, ''সিবিআই পদ্ধতিগত দিক থেকে কোনো বেআইনি কাজ করেনি।''
কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করার পরই দিল্লিতে আপ কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। গভীর রাত পর্যন্ত তারা দিল্লির রাস্তায় বসে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আপ নেতৃত্ব জানিয়েছে, শুক্রবার সারা দেশে তারা বিক্ষোভ দেখাবেন। দিল্লিতে সবচেয়ে জোরালো বিক্ষোভ হবে।
ছবি: AP Photo/picture alliance
রাহুল গান্ধীর প্রতিক্রিয়া
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স-এ লিখেছেন, ''শাহেনশাহ ভয় পেয়ে গেছেন। তিনি একটা মৃত গণতন্ত্র চান। মিডিয়া-সহ সব সংস্থাকে কব্জা করার পর, দলগুলিকে ভাঙা হচ্ছে, কোম্পানিগুলি থেকে হপ্তা-উসুলি করা হচ্ছে, প্রধান বিরোধী দলের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হচ্ছে। তারপরেও অসুর-শক্তি থামেনি। এখন তারা নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করছে।'' প্রিয়ংকা গান্ধী বলেছেন, কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারি অন্যায় ও অসাংবিধানিক।
ছবি: Anuwar Hazarika/NurPhoto/picture alliance
অখিলেশের বক্তব্য
সমাজবাদী পার্টি নেতা রাহুল গান্ধীর টুইটের জবাবে বলেছেন, ''বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও।''
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ''বিজেপি অনেকদিন ধরে পরিকল্পনা করছিল। সুঘোগ পেলেই তারা যে গ্রেপ্তার করবে তা বোঝা যাচ্ছিল। বিজেপি বুঝতে পারছিল, আপ তাদের পক্ষে যাবে না। আপকে নিয়ে তাদের সুবিধা হচ্ছে না। তাই এইভাবে তাকে গ্রেপ্তার করলো। যারা বিজেপি-কে সাহায্য করছে, তাদের জন্য সব ঠিক আছে। সাহায্য না করলে এটাই করছে।''
ছবি: DW/P. Samanta
তৃণমূলের বক্তব্য
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ওব্রায়েন বলেছেন, ''আমরা কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের নিন্দা করছি। তিনি একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী। এখন নির্বাচন কমিশনই প্রশাসনের দায়িত্বে এবং আদর্শ আচরণবিধি চলু আছে।'' তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন,“লোকসভা নির্বাচন হার হবে জেনে বিজেপি এখন মরিয়া হয়ে কামড় দিচ্ছে। এজেন্সি দিয়ে অ-বিজেপি নেতাদের গ্রেপ্তার করা, তাঁদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরির চক্রান্ত চলছে।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপি যা বলেছে
বিজেপি নেতা রবিশংকর প্রসাদ বলেছেন, ''উপযুক্ত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তাদের আদালতও কোনো রেহাই দিচ্ছে না। আমরা একটা কথাই বলব, আইনকে নিজের কাজ করতে দেয়া উচিত। এটা শুধুমাত্র দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ছাড়া আর কিছু নয়।''
ছবি: UNI Photo
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি সভাপতির ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য বিজেপি-র মুখপাত্র সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘‘যতই করো কান্নাকাটি, মাফলারের পর হাওয়াই চটি।’’ কেজরিওয়াল মাফলার ম্যান বলে পরিচিত। আর মমতা বন্দোপাধ্যায়কে হাওয়াই চটি নিয়ে নিয়মিত কটাক্ষ করে বিজেপি। এরপর কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''বোঝা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে বিজেপি-ই চালাচ্ছে। সুকান্তবাবু এসব না ভেবে বালুরঘাট আগে সামলান।''
ছবি: Satyajit Shaw/DW
7 ছবি1 | 7
কিন্তু বিচারপতি ভুয়ান বলেছেন, ''সিবিআই ২০২৩ সালের মার্চে কেজরিওয়ালকে জেরা করলো, কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করলো না। যখন ইডি তাকে গ্রেপ্তার করলো এবং তার উপর স্থগিতাদেশ দেয়া হলো, তখন তারা কেজরিওয়ালকে তড়িঘড়ি করে গ্রেপ্তার করলো। ২২ মাস তারা কেজরিওয়ালকে হেফাজতে নিতে চায়নি। ইডি-র মামলায় জামিনের পর তারা সক্রিয় হয়ে উঠলো।''
বিচারপতি ভুয়ান সিবিআইয়ের প্রবল সমালোচনা করেছেন। তাদের কাজ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি আবার সিবিআই প্রসঙ্গে 'খাঁচায় বন্দি তোতাপাখি'র প্রসঙ্গ তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ''তাদের এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।''
তিনি জানিয়েছেন, ''এই ধারণার গুরুত্ব আছে। সিবিআইকে দেখাতে হবে, তারা খাঁচাবন্দি তোতা নয়। সিবিআইয়ের উচিত যাবতীয় সন্দেহের উপরে ওঠা।''