অরল্যান্ডোর নাইটক্লাবে হত্যাকাণ্ডের পর প্যারিসের উপকণ্ঠে একই পরিবারের দুই সদস্যকে হত্যা করছে এক আততায়ী৷ দু'টি ক্ষেত্রেই আততায়ী জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস-এর প্রতি আনুগত্য দেখিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ঘটে চলেছে৷ প্রথমে অরল্যান্ডো, তারপর প্যারিসের উপকণ্ঠে হামলা ঘটলো৷ দু'টি ক্ষেত্রেই একজন করে আততায়ী, দু'জনেই আইসিস-এর দোহাই দিয়ে হিংসার আশ্রয় নিয়েছে৷
প্যারিসের উপকণ্ঠে মানিয়ঁভিল শহরে লারোসি আবালা নামের ২৫ বছরের এক আততায়ী প্রথমে এক পুলিশ কমান্ডারকে তাঁর বাড়ির সামনে বেশ কয়েকবার ছুরি চালিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে৷ তারপর বাড়ির ভেতর ঢুকে তাঁর সঙ্গিনী ও তাঁদের ৩ বছরের ছেলেকে জিম্মি করে৷ সঙ্গিনীও পুলিশ বিভাগেই চাকরি করতেন৷ তাঁকেও পরে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়৷ ছেলেটি বেঁচে যায়৷ পুলিশ আততায়ীর সঙ্গে একটা বোঝাপড়ার চেষ্টা করেও সফল হয়নি৷ শেষ পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে তার মৃত্যু হয়৷
ফ্রান্সের সরকার এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে দেখছে৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ এই ‘কাপুরোষিত' হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন৷ তিনি বলেন, ইউরোপীয় ফুটবল প্রতিযোগিতা চলাকালীন সন্ত্রাসী হুমকির মুখে রয়েছে৷
এই সন্ত্রাসী হামলার বিশ্লেষণের প্রক্রিয়া চলছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনা চলছে৷
অরল্যান্ডো ও প্যারিস হামলার পর প্রশ্ন উঠছে, আইসিস কি সত্যি এ সব হামলার সঙ্গে জড়িত? অরল্যোন্ডো হামলার আততায়ীকে আইএস নিজস্ব ‘সৈন্য' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে৷ তারা সরাসরি এমন ‘স্বতঃপ্রণোদিত হামলা' চালানোর উৎসাহ দিয়ে থাকে৷
ইউরোপ জুড়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা
ব্রাসেলসে একাধিক সন্ত্রাসী হামলার পর ইউরোপ জুড়ে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন, সীমান্ত এবং বিভিন্ন শহরের রাস্তায় পুলিশের বাড়তি উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/P. Golovkin
‘যুদ্ধে ইউরোপ’
ফরাসি প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিলেন, ইউরোপ এখন ‘যুদ্ধে আছে’৷ ব্রাসেলসের ঘটনার পর ইউরোপীয় নেতারা জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক করেছেন এবং সর্বত্র নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়িয়েছেন৷ তাদের সঙ্গে রয়েছেন বোমা বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষিত কুকুর এবং সাদা পোশাকের গোয়েন্দারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
সব বড় বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে
লন্ডন, প্রাগ, অ্যামস্টারডাম, ভিয়েনাসহ ইউরোপের সব বিমানবন্দরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ লন্ডনের প্রধান বিমানবন্দর, হিথ্রোতে, পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে৷ পাশাপাশি, লন্ডনসহ বিভিন্ন শহরেও বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Rain
ডাচ পুলিশের সতর্ক অবস্থান
নেদারল্যান্ডসের অ্যামস্টারডাম বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দিচ্ছে ডাচ মিলিটারি পুলিশ৷ ব্রাসেলস বিমানবন্দরে হামলার পরপরই সেখানকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়৷ ব্রাসেলসে মঙ্গলবার একাধিক বিস্ফোরণে বেশ কয়েকজন নিহত এবং প্রায় দুই শত মানুষ আহত হয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Elzinga
ব্রিটেনে সতর্কতা
লন্ডনের বিমানবন্দরে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/J. Mansfield
ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে বাড়তি পুলিশ
জার্মান কর্তৃপক্ষও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় নিরাপত্তা বাড়িয়েছে৷ বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন আর বেলজিয়াম, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গ সীমান্তে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে৷ তবে পুলিশের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি চোখে পড়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট বিমানবন্দরে৷ শহরটির ট্রেন স্টেশনেও পুলিশ অবস্থান নিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Stache
রেল যোগাযোগ সাময়িক বন্ধ
বেলজিয়ামে হামলার পর জার্মানির জাতীয় ট্রেন ব্যবস্থা, ডয়চে বান, ব্রাসেলসের সঙ্গে তাদের উচ্চগতির ট্রেন সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়৷ ব্রাসেলসের বদলে জার্মানির সীমান্তের শহর আখেনে ট্রেনগুলো থামানো হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. A. Gekiere
প্যারিসে আবারো উচ্চ সতর্কর্তা
প্যারিসে গত নভেম্বর সন্ত্রাসী হামলায় অনেকে প্রাণ হারান৷ মঙ্গলবার ব্রাসেলসে হামলার পরপরই তাই সেখানকার নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হয়৷ প্যারিসের মূল বিমানবন্দর এবং সংশ্লিষ্ট ট্রেন স্টেশন দু’টিতে নিরাপত্তা বাহিনীর পুরো দল নিয়োগ করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/epa/E. Laurent
রাশিয়ার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুর্নমূল্যায়ন
রাশিয়ার যোগাযোগমন্ত্রী মাক্সিম সকোলভ জানিয়েছেন, ব্রাসেলসের ঘটনার পর সেদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও পুর্নমূল্যায়ন করা হবে৷ যদিও রাশিয়া আগে থেকেই বেশ সতর্ক৷