৩০ বছর বয়সি নুর জাহি সালমানকে গ্র্যান্ড জুরির সামনে পেশ করার তোড়জোড় চলেছে৷ আর চলেছে হত্যাকারী ওমর মতিন-এর অভিপ্রায় বোঝার চেষ্টা৷ মতিনের কি সত্যিই সমকামী প্রবণতা ছিল?
বিজ্ঞাপন
নুর সালমানের বিরুদ্ধে ৪৯ জনকে হত্যা ও আরো ৫৩ জনকে হত্যার প্রচেষ্টায় সহযোগী থাকার অভিযোগ আনতে চলেছেন সরকারি কৌঁসুলি ; সেই সঙ্গে থাকছে পুলিশকে সম্ভাব্য আক্রমণ সম্পর্কে না জানানো ও ফেডারাল এজেন্টদের প্রতি মিথ্যাভাষণের অভিযোগ৷ নুর নিজে তদন্তকারীদের বলেছেন যে, তিনি মতিনের সঙ্গে কথা বলে তাকে আক্রমণ চালানো থেকে বিরত করার চেষ্টা করেছিলেন৷
নুর এফবিআই এজেন্টদের আরো বলেন যে, তিনি মতিনকে একাধিকবার গাড়ি চালিয়ে ‘পালস' নাইটক্লাবে নিয়ে গেছেন, কেননা মতিন জায়গাটা চিনে রাখতে চেয়েছিলেন৷ নয়ত নুর আর ২৯ বছর বয়সি মতিনের একটি তিন বছর বয়সি পুত্রসন্তান আছে৷ নুর ক্যালিফর্নিয়ার মেয়ে, রোডিও নামের একটি ছোট্ট জায়গায় মানুষ হয়েছেন; ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত; সম্বন্ধ করে দেওয়া বিয়ে ছেড়ে মতিনকে বিয়ে করেন প্রেমে পড়ে৷ তবে সেই প্রেম শুরু হয়েছিল অনলাইনে, বলে জানিয়েছেন এক প্রতিবেশী৷ ওমার মতিন ছিলেন সিকিউরিটি গার্ড, বডিবিল্ডার ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান৷ উভয়ের বিয়ে হয় ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷
সারা বিশ্ব যখন অরল্যান্ডোর এলজিবিটি ডিসকোয় হত্যাকাণ্ডে নিহতদের প্রতি সংহতি জানাচ্ছে, তখন তদন্তকারীদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, ওমার মতিন এই হত্যাকাণ্ড চালালেন কেন? মতিন নিজে তাণ্ডব চলার সময়েই ৯১১-য় টেলিফোন করে দাবি করেছিলেন যে, তিনি ইসলামিক স্টেটের সমর্থক৷ মতিনের প্রাক্তন স্ত্রী সিতোরা ইউসুফি ইতিপূর্বে বলেছেন যে, মতিন মানসিকভাবে অসুস্থ, কর্তৃত্বপূর্ণ ও বদরাগী ছিলেন; অপরদিকে মতিন নাকি নাইটক্লাবে যেতে ও নৈশজীবন উপভোগ করতে ভালোবাসতেন৷
পালস-এর কিছু নিয়মিত অতিথিরাও মতিনের এই এলজিবিটি নাইটক্লাবে একাধিকবার আসার কথা বলেছেন; এমনকি মতিন নাকি অনলাইনেও সমকামী সঙ্গির খোঁজ করেছেন৷ সব মিলিয়ে কিছু মনোবিজ্ঞানীর ধারণা যে, মতিন হয়ত নিজের সমকামিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ভুগছিলেন – যদিও তিনি যে সমকামী ছিলেন, মতিনের পিতা সেদ্দিক মতিন সে-কথা অস্বীকার করেছেন৷
ওদিকে হিলারি ক্লিন্টন ডেমোক্র্যাটদের শেষ প্রাইমারিতে বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন এখন ট্রাম্প ও ক্লিন্টনের লড়াইতে পরিণত হয়েছে, যে লড়াইতে ওবামা স্পষ্ট ও সোচ্চারভাবে হিলারির দিকে৷ তাই ট্রাম্পের মন্তব্য: ওবামা অরল্যান্ডো হত্যাকারীর উপর যতটা না বিরূপ, তার চেয়ে বেশি বিরূপ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি৷
এসি/ডিজি (এপি, এএফপি)
আইএস কী, কোথায় এবং কেন?
প্রতিদিনই খবরে আইএস৷ কোনোদিন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের জন্য, কোনোদিন হয়তো ইরাক বা সিরিয়ায় কোনো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য৷ আইএস বলছে, ইসলামি খেলাফত কায়েম করার জন্য যুদ্ধে নেমেছে তারা৷ ছবিঘরে আইএস সম্পর্কে কিছু তথ্য....
ইসলামিক স্টেট বা আইএস আসলে কী?
আল কায়েদা থেকে তৈরি হওয়া সুন্নি মুসলমানদের জঙ্গি সংগঠন আইএস৷ সাদ্দাম পরবর্তী সময়ে ইরাকে এবং বাশার আল আসাদের আমলে সিরিয়ায় সুন্নিদের হতাশা থেকেই জন্ম সংগঠনটির৷ আইএস-এর পতাকায় লেখা থাকে, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর নবী’ এবং ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোনো সৃষ্টিকর্তা নেই৷’
ছবি: AP
আইএস কোথায় সক্রিয়?
শরিয়া আইন অনুযায়ী পরিচালিত হবে এমন রাষ্ট্র, বা ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায় আইএস৷ সিরিয়া এবং ইরাকেই প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় তারা৷ দুটি দেশেই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বেশ বড় অঞ্চল দখল করে নিয়েছে আইএস৷
আইএস কেন আলাদা?
মূলত নিষ্ঠুরতার জন্য৷ শত্রুপক্ষ এবং নিরীহ মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াতে তারা এমন বর্বরতা এবং নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে যা আগে কেউ করেনি৷ জবাই করে ভিডিও প্রচার, পুড়িয়ে মারা, বাবার সামনে মেয়েকে জবাই করা এবং তার তার ভিডিও প্রচার, মেয়েদের যৌনদাসী বানানো আর পণ্যের মতো বিক্রি করা – এসব নিয়মিতভাবেই করছে আইএস৷ কোনো অঞ্চল দখলে নেয়ার পর সেখানে শাসন প্রতিষ্ঠায় মন দেয় আইএস৷
ছবি: gebphotography - Fotolia.com
অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক
আইএস যদিও শুধু সিরিয়া এবং ইরাকেই সক্রিয়, তবে বিশ্বের অন্যান্য ইসলামি জঙ্গি সংগঠনগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন নয়৷ নাইজেরিয়ার জঙ্গি সংগঠন বোকো হারাম কয়েকদিন আগেই জানিয়েছে, আইএস-কে তারা সমর্থন করে৷ দুটি সংগঠনের মধ্যে একটি জায়গায় মিলও আছে৷ আইএস-এর মতো বোকো হারামও নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার প্রতিভূ হয়ে উঠেছে৷ অন্য ধর্মের নারীদের প্রতি দুটি সংগঠনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং আচরণই মধ্যযুগীয়৷
ছবি: Getty Images/A. Katib
আইএস-এর অনুসারী কারা?
অনুসারী সংগ্রহের সাফল্যেও আইএস অন্য সব জঙ্গি সংগঠনের চেয়ে আলাদা৷ এ পর্যন্ত অন্তত ২০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা আইএস-এ যোগ দিয়েছে৷ তাদের মধ্যে ৪ হাজারই পশ্চিম ইউরোপ এবং উত্তর অ্যামেরিকার৷
আইএস-কে রুখতে অন্য দেশগুলো কী করছে?
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বেশ কিছু পশ্চিমা এবং আরব দেশ সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ঘাঁটির ওপর বিমান থেকে বোমা হামলা চালাচ্ছে৷ বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সিরিয়ায় ১৪২২ এবং ইরাকে ২২৪২ বার হামলা হয়েছে৷ কোনো কোনো সরকার দেশের অভ্যন্তরেও কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে৷ সিরিয়া ফেরত অন্তত ৩০ জন সন্দেহভাজন জঙ্গির বিচার শুরু করবে জার্মানি৷ গত মাসে সৌদি পুলিশও ৯৩ জন সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে৷