অরিগামি হলো কাগজ মুড়ে বা ভাঁজ করে ফুল বা জীবজন্তু তৈরি করার আর্ট৷ কিন্তু সুইজারল্যান্ডের সিপো মাবোনা আজ দশ হাজার ইউরো মূল্যের কাগজ ভাঁজ করে লাইফ সাইজ হাতি বানান!
বিজ্ঞাপন
অরিগামি শিল্পী সিপো মাবোনা গত আট বছর ধরে কাগজ ভাঁজ করে আসছেন – পেশা হিসেবে, সুইজারল্যান্ডের লুসার্ন শহরে তাঁর ছোট্ট স্টুডিওটিতে৷ মাবেনা জানালেন, ‘‘যদি আমার ঠিক মনে থাকে, তাহলে আমার যখন পাঁচ বছর বয়স, তখন আমার মা আমাকে কাগজ মুড়ে কাগজের প্লেন তৈরি করতে শিখিয়েছিলেন৷ তখন থেকেই আমার অরিগামির নেশা৷’’
আজ তাঁর শিল্পকর্ম মিউজিয়ামে রাখা থাকে; যেমন আমস্টারডামের ট্রপিক্যাল মিউজিয়ামের জন্য ২১টি সুবিশাল কাগজের পাখি তৈরি করেছেন মাবোনা৷
কাগজ দিয়ে শিল্পকর্ম
03:46
অতিকায় আকারের অরিগামি যে সম্ভব, ৩৭ বছর বয়সি মাবোনা তা প্রমাণ করেছেন একটি কাগজের হাতিটি তৈরি করে – শুধু একটি বড় কাগজের পাত ভাঁজ করে তৈরি হাতি; কাগজের মাপ: ১৫ বাই ১৫ মিটার, যুক্তরাষ্ট্রে স্পেশাল অর্ডার দিয়ে তৈরি করাতে হয়েছে, দাম পড়েছে প্রায় ১০,০০০ ইউরো৷ মাবোনা আর তাঁর তিন সহকর্মী এক মাস ধরে পরিশ্রম করে এই হাতিটি ‘ভাঁজ’ করেছেন৷
মাবোনা জানালেন, ‘‘আমার একটা ধারণা ছিল, একটা চারকোনা কাগজ মুড়ে যে কী করা যায়, তার কোনো সীমা নেই৷ এখন আমি যেরকম বড় কাগজ নিয়ে কাজ করি, তাতে কাগজ কতটা পুরু সেই অনুযায়ী সম্পূর্ণ অন্য ধরনের স্থিতি সৃষ্টি হয়; কাজেই মোড়ার প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ অন্য রকমের হয়৷’’
বহুরূপী কাগজ
04:06
This browser does not support the video element.
কাগজ ছোট হোক বা বড়, শুরুতে পরিস্থিতি সব ক্ষেত্রেই এক: একটা ধারণা আর এক টুকরো কাগজ৷ মাবোনা বলেন, ‘‘নীতিগতভাবে আমি ভাবি, জীবটির শরীরের কোন অংশ কাগজের কোনখানে থাকবে৷ যেমন কাগজটা চারকোনা হলে আমি প্রথমে ভাবি, হাতির লেজটা এখানে রাখব আর দু'টো পা এখানে থাকবে৷ এখানে শরীরটা, হয়ত শুঁড়টা এই মাঝখানে আর কান দু’টো এখানে৷’’
সিপো মাবোনার অরিগামি শিল্পকর্মের কদর বিশ্ব জুড়ে৷ জাপানের এক স্পোর্টস শু নির্মাতার বিজ্ঞাপনে তাঁর কাজ দেখা যায়, অথবা একটি ইলেকট্রনিক কোম্পানির বিজ্ঞাপনে৷ হামবুর্গের একটি বিজ্ঞাপন সংস্থার জন্য মাবোনা কাগজ দিয়ে একটি আস্ত আবাসিক এলাকা তৈরি করেছিলেন৷ সিঙ্গাপুরের একটি হোটেলের জন্য তিনি কাগজের কই মাছ তৈরি করেছেন৷
একটি কাগজের প্লেন দিয়ে ছেলেবেলায় যা শুরু হয়েছিল, সিপো মাবোনার জীবনে আজ তা পেশায় পরিণত হয়েছে: এক টুকরো কাগজ থেকে শিল্প সৃষ্টি করা৷
আনা ফাইস্ট/এসি
গাছের লতা-পাতা আর আবর্জনা থেকে মুখোশ!
নিজের দেশ ঘানাকে সব অর্থেই পরিচ্ছন্ন দেখতে চান তিনি৷ এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া তাই গাছের শুকনো পাতা কুড়ান, গাছের কষ সংগ্রহ করেন আর সংগ্রহ করেন বিশেষ কিছু আবর্জনা৷ সব মিলিয়ে তৈরি করেন খুব সুন্দর সুন্দর মুখোশ৷
ছবি: Ed Franklin Gavua
একটি কণ্ঠই গড়ে দিতে পারে পার্থক্য
এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া একজন জাত শিল্পী৷ তাই হয়ত আবর্জনাতেও তিনি শিল্প খোঁজেন৷ অসংখ্য মুখোশ তৈরি করে তিনি ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে চান একটি বার্তা – ঘানার মানুষদের ময়লা আবর্জনা নিয়ে ভাববার সময় এসেছে৷ শুরুতে প্রয়াসটা ছিল একার, কিন্তু এখন তাঁর কণ্ঠের সঙ্গে ধীরে ধীরে মিলছে অনেক কণ্ঠ৷
ছবি: Ed Franklin Gavua
দীর্ঘস্থায়ী হোক আশা
এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়ার কর্মদর্শনের মূল কথাই হলো ‘আশা’৷ তাঁর আশা, গাছের শুকনো পাতা, গাছের ছাল, গাছের কষ আর নানা ধরনের ফেলে দেয়া শক্ত কাগজ বা বোর্ড দিয়ে তৈরি মুখোশগুলো ধীরে ধীরে সমাজের সবাইকে আবর্জনা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে৷
ছবি: Ed Franklin Gavua
যেভাবে তৈরি হয় অপূর্ব সুন্দর মুখোশ
গাছের পাতা, ছাল এবং কষের সঙ্গে কার্ডবোর্ডের টুকরোগুলো মিশিয়ে প্রথমে সেগুলো দিয়ে মণ্ড তৈরি করেন এড ফ্র্যাংকলিন৷ পরে সেই মণ্ড দিয়েই তৈরি করেন মুখোশ৷ শুনতে সহজ মনে হলেও কাজটা কিন্তু কঠিন৷
ছবি: Ed Franklin Gavua
আবর্জনার সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূরে
সবার ভাবনা যখন ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে রিসাইকেল করার মাঝে আটকে আছে, সেখানে এড ফ্র্যাংকলিন ভাবছেন, মানুষকেও ‘রিসাইকেল’ করার কথা৷ নানান অপরাধে যারা জেল খাটছেন, তাদের সম্পর্কে প্রায়ই ভাবেন তিনি৷ এড মনে করেন, সেই মানুষগুলোকে কারাগার থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সহায়তা করা দরকার৷ এবং তাঁর বিশ্বাস, এ কাজে খুব ভালো সহায়ক উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে মুখোশ৷
ছবি: Ed Franklin Gavua
আর একা নন
শুরুতে মুখোশ তৈরির সব উপাদান নিজেকেই সংগ্রহ করতে হতো৷ এখন ঘরে বসেই পেয়ে যান অনেক কিছু৷ অচেনা-অজানা মানুষরাও শুকনো পাতা, পুরোনো কার্ডবোর্ড বা হার্ডবোর্ড যা-ই পান, নিয়ে এসে তুলে দেন ফ্র্যাংকলিনের হাতে৷ তাঁরা জানেন, এ সব ফেলে না দিয়ে ফ্র্যাংকলিনকে দিলে সবারই উপকার৷
ছবি: Ed Franklin Gavua
স্বপ্নের আকাশ
অনেক বড় স্বপ্ন নিয়ে ‘উইকাকাই’ নামের একটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া৷ আবর্জনা ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি সব আবর্জনা রিসাইকেল করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করাও এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য৷
ছবি: Ed Franklin Gavua
নানা মুখ, নানা মুখোশ
শুধু কোনো রকমে অবয়ব ঢেকে দেয়ার উদ্দেশ্যেই মুখোশ তৈরি করেন না এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া৷ প্রত্যেকটি মুখোশের পেছনে একটি বিশেষ ভাবনা থাকে৷ শিল্পী জানালেন, ‘‘প্রতিটি মুখোশই বহুবিধ মানসিক শক্তি এবং বিশ্বকে দেখার বৈচিত্রপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গির অভিনব প্রকাশ৷’’
ছবি: Ed Franklin Gavua
আবর্জনা অমূল্য রতন
এড ফ্র্যাংকলিন গাভুয়া তাঁর সমস্ত কাজকর্মের মাধ্যমে আর যে কথাটা বোঝাতে চান, তা হলো – আবর্জনা হেলাফেলার জিনিস নয়৷ তাঁর মতে, আবর্জনা যত্রতত্র ফেলা ক্ষতিকর, তবে তা যথাস্থানে রাখা বা রিসাইকেল করার উদ্যোগ অতি জনকল্যাণকর, কেননা, তাতে পরিবেশ রক্ষা হয় এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও বাড়ে৷