লাদাখ, উত্তরাখণ্ডের পর এবার অরুণাচল প্রদেশে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকলো চীনের সেনা। গত সপ্তহে তারা অরুণাচলের তাওয়াংয়ের কাছে লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়ে। প্রায় দুইশ চীনা সেনা ঢুকেছিল বলে ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রের খবর। চীনের সেনা একটি বাঙ্কার ভাঙার চেষ্টায় ছিল।
ভারতীয় সেনা দ্রুত সেখানে যায়। কয়েকজন চীনা সেনাকে তারা ধরে ফেলে। এরপর ওখানে দুই দেশের সেনা কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। সমস্যা মেটে। দুই দেশের সেনাই তাদের আগের অবস্থানে ফিরে গেছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা ধরে ভারতীয় ও চীনা সেনা সেখানে মুখোমুখি ছিল। কিঞ্চিত শারীরীক বলপ্রয়োগও হয়। তবে কোনো পক্ষের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কেউ গুরুতর আহত হননি বা মারা যাননি।
বারবার অনুপ্রবেশের অভিযোগ
গত বছর পাঁচ মে লাদাখে দুই দেশের সেনার মধ্যে প্রবল সংঘর্ষ হয়। ভারতের অভিযোগ ছিল, চীনের সেনা ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে ও এলাকা দখল করে। আর চীন অভিযোগ করেছিল, ভারতীয় সেনা তাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে। ভারতের বেশ কিছু সেনার প্রাণ যায়। চীনের সেনাও মারা যায়। লাদাখের উত্তেজনা দীর্ঘদিন ধরে চলে। তারপর ছোটখাট সীমান্ত পার হওয়ার ঘটনা চলছেই।
প্যাংগং থেকে সরে গেল ভারত-চীনের সেনা
দীর্ঘ আট মাস পরে প্যাংগংয়ের বিতর্কিত এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নিল ভারত ও চীন। কিন্তু গালওয়ানের সমস্যা এখনো কাটেনি।
ছবি: Reuters/Maxar Technologies
প্যাংগং বিতর্ক
গত বছর মে-জুন মাস থেকে লাদাখ সীমান্তে প্যাংগং লেক ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ভারত এবং চীনের সেনার। ফিঙ্গার পয়েন্ট তিন থেকে ফিঙ্গার পয়েন্ট আট পর্যন্ত এলাকা কার দখলে তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Manish
প্যাংগংয়ের দক্ষিণে ভারতের শক্তি
বিতর্কের মধ্যেই প্যাংগং লেকের দক্ষিণে দুইটি পাহাড়ের দখল নেয় ভারতীয় সেনা। যা নিয়ে তীব্র আপত্তি জানায় চীন। কিন্তু ভারতীয় সেনা এলাকা ছাড়তে রাজি হয়নি।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Swarup
লাগাতার বৈঠক
সীমান্তে প্রবল উত্তেজনার মধ্যেই একের পর এক বৈঠক করে দুই দেশের সেনা। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীরাও একাধিক বৈঠক করেন। অবশেষে সেনাদের বৈঠকে সমাধানসূত্র মেলে।
ছবি: Eesha Kheny
সেনা প্রত্যাহার
দুই দেশের সেনাই এপ্রিলের পূর্ববর্তী সময়ে নিজেদের অবস্থানে ফিরে যেতে সম্মত হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি দুই দেশের সেনা যৌথ বিবৃতি দিয়ে জানায়, প্যাংগং থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ছবি: AFP/X. Galiana
স্থায়ী কাঠামো ভাঙা হলো
প্যাংগংয়ের ধারে চীন যে স্থায়ী সেনা কাঠামো তৈরি করেছিল, বুলডোজার দিয়ে তা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধের অন্যান্য সরঞ্জামও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
ছবি: AFP/X. Galiana
গালওয়ান বিতর্ক
প্যাংগং থেকে সেনা সরলেও, গালওয়ান বিতর্ক নিয়ে এখনো সমাধানসূত্র মেলেনি। এই গালওয়ানেই গত বছর জুনে ভারত এবং চীনের সেনার মধ্যে লড়াই হয়েছিল। বহু ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছিল।
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/I. Abbas
চীনের স্বীকারোক্তি
গালওয়ান সংঘর্ষের পরে চীন নিজেদের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। ভারতীয় সেনা দাবি করেছিল, চীনের সেনারও মৃত্যু হয়েছে। এবছর ফেব্রুয়ারি মাসে চীন জানিয়েছে, সংঘর্ষে তাদেরও চার সেনা জওয়ান এবং একজন অফিসারের মৃত্যু হয়েছিল।
ছবি: Yawar Nazir/Getty Images
চীনের ভিডিও প্রকাশ
গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে চীন একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে গালওয়ান সংঘর্ষ নিয়ে চীন যে বিবৃতি দিয়েছে, তা নিয়ে ফের বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ছবি: Reuters/PLANET LABS INC
লাদাখ সংঘাতের ভবিষ্যত
প্যাংগং অঞ্চল থেকে সৈন্য সরলেও লাদাখ সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে, এমনটা এখনই বলা যাবে না। কারণ, প্যাংগং থেকে সৈন্য সরলেও বাকি এলাকায় এখনো সেনা মোতায়েন করে রেখেছে দুই দেশেরই সেনা। এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, পিটিআই)
ছবি: Reuters/Maxar Technologies
9 ছবি1 | 9
সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, গত ৩০ অগাস্ট নন্দাদেবীর উত্তরে বারহোতি অঞ্চলে চীনের একশ জন সেনা ভারতীয় সীমানার পাঁচ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে যায়। যেহেতু ভারত-চীন সীমান্তের ক্ষেত্রে বহু জায়গায় অস্পষ্টতা আছে, তাই ছোটখাট দল টহল দেয়ার সময় মাঝেমধ্যে একে অপরের এলাকায় ঢুকে পড়ে। কিন্তু একশ জন সেনার ঢুকে পড়াটা ছিল ব্যতিক্রমী।
তারপর এবার অরুণাচলের বুম লা ও ইয়ংসে এলাকায় এই ঘটনা ঘটল।
কেন এই ঘটনা?
ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য অরুণাচলের ওই সেক্টরে আগে কাজ করেছেন। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, ''অরুণাচলে যা হয়েছে, তার সঙ্গে লাদাখের ঘটনার কোনো তুলনা চলে না। যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই বুম লা সেক্টর তাওয়াংয়ের কাছে। এখানে সীমানা নিয়ে দুই দেশের ধারণার মধ্যে ফারাক আছে। তাই ওদের পেট্রল পার্টি ভারতীয় সীমানায় ঢুকে পড়ে। তখন তাদের চলে যেতে বলা হয়। আবার ভারতের সীমান্তরক্ষীরা ওদের এলাকায় ঢুকলে ওরা চলে যেতে বলে।''
উৎপল ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ''আমরা মনে করি, ওটা আমাদের এলাকা। ওরা বলে ওটা ওদের এলাকা। এবার চীনা সেনা যখন ঢোকে, তখন ভারত কঠোরভাবে পরিস্থিতির মোকবিলা করেছে। কয়েকজনকে ধরাও হয়েছে। সাধারণত ওখানে কর্নেল পর্যায়ের ফ্ল্যাগ মিটিং হয়। সেই ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের পর সমস্যা মেটে।''
চীন-ভারত: সামরিক শক্তিতে কে কত এগিয়ে
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সেনাবাহিনীকে বলেছেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকতে৷ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী ভারতও প্রস্তুত৷ যুদ্ধ কখনো কাম্য নয়৷ তবু দেখে নেয়া যাক সামরিক শক্তিতে চীন আর ভারতের বর্তমান অবস্থা৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
পিডাব্লিউআর ব়্যাঙ্কিং
সামরিক শক্তির এই ব়্যাঙ্কিংয়ে ভারতের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে আছে চীন৷ যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়ার ঠিক পরে, অর্থাৎ তিন নাম্বারে আছে চীন আর ভারত আছে চার নাম্বারে৷
ছবি: APTN
সক্রিয় সেনাসদস্য
১৩৮ টি দেশের মধ্যে পিআরডাব্লিউ ইনডেক্সে তৃতীয় স্থানে থাকা চীনের মোট ২১ লক্ষ ২৩ হাজার সেনাসদস্য রয়েছে, ভারতের রয়েছে ১৪ লক্ষ ৪৪ হাজার সেনাসদস্য৷ তবে রিজার্ভ সৈন্যর সংখ্যায় ভারত এগিয়ে৷ চীনের পাঁচ লাখ ১০ হাজারের বিপরীতে তাদের রয়েছে ২১ লাখ রিজার্ভ সৈন্য৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
প্রতিরক্ষা বাজেট
প্রতিরক্ষা খাতে চীনের বাজেট ২৩৭০ কোটি ডলারের এবং ভারতের ৬১০ কোটি ডলারের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Goya
এয়ারক্রাফট
এখানেও চীন এগিয়ে৷ চীনের ৩২১০টির বিপরীতে ভারতের রয়েছে ২১২৩টি এয়ারক্রাফট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Li Jianshu
যুদ্ধজাহাজ
চীনের ৭৭৭টি আর ভারতের রয়েছে ২৮৫টি যুদ্ধজাহাজ৷
ছবি: Getty Images/AFP
যুদ্ধবিমান
চীনের যুদ্ধবিমান ভারতের দ্বিগুণেরও বেশি৷ চীনের ১২৩২টি আর ভারতের ৫৩৮টি৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Imago-Images/StockTrek Images
হেলিকপ্টার
চীনের আছে ৯১১টি হেলিকপ্টার আর ভারতের ৭২২টি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/J. Singh
ট্যাঙ্ক
ভারতের ট্যাঙ্ক চীনের চেয়ে অনেক বেশি৷ চীনের আছে ৩৫০০টি ট্যাঙ্ক আর ভারতের ৪২৯২টি৷ ওপরে চীন, রাশিয়া ও ইরানের যৌথ মহড়ার ছবি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/S. Grits
সাঁজোয়া যান
চীনের সাঁজোয়া যানবাহনের সংখ্যা ৩৩ হাজার, ভারতের আট হাজার ৬৮৬৷
ছবি: picture-alliance/Xinhua/Z. Hesong
স্বয়ংক্রিয় আর্টিলারি
এখানে দু দেশের তুলনাই হয় না৷ চীনের আছে ৩৮০০, ভারতের মাত্র ২৩৫৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
ফিল্ড আর্টিলারি
এখানে ভারত কিছুটা এগিয়ে৷ চীনের ৩৮০০-র বিপরীতে তাদের রয়েছে ৪০৬০টি ফিল্ড আর্টিলারি৷
ছবি: picture-alliance/AP/A. Rahi
রকেট প্রজেক্টর
চীনের ২৬৫০, ভারতের ২৬৬৷ সুতরাং এখানে চীন প্রায় দশগুণ এগিয়ে৷
ছবি: Reuters/F. Mascarenhas
সাবমেরিন
সাবমেরিনের সংখ্যার দিক থেকেও ভারত অনেক পিছিয়ে৷ চীনের ৭৪টির বিপরীতে ভারতের আছে ১৬টি সাবমেরিন৷
ছবি: Reuters/S. Andrade
বিমানবাহী জাহাজ
চীনের ২টি, ভারতের ১টি৷
ছবি: picture-alliance/newscom/S. Shaver
ডেস্ট্রয়ার
চীনের ৩৬টি, অন্যদিকে ভারতের ১০টি৷
ছবি: picture-alliance/Imagechina
ফ্রিগেট
চীনের ৫২, ভারতের তার ঠিক চার ভাগের এক ভাগ, অর্থাৎ ১৩টি৷
ছবি: AFP/Iranian Army office
রণতরি
রণতরি চীনের ৫০টি, ভারতের ১৯টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Asfouri
উপকূলীয় টহল
চীনের ২২০, ভারতের ১৩৯৷
ছবি: picture-alliance/Imaginechina/Meng Zhongde
বিমানবন্দর
চীনের আছে মোট ৫০৭টি বিমানবন্দর আর ভারতের ৩৪৭টি৷
ছবি: Getty Images/AFP/G. Baker
নৌবন্দর এবং টার্মিনাল
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীন প্রায় সব জায়গার মতো এখানেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জনসংখ্যার দেশের চেয়ে এগিয়ে৷ চীনের২২টির বিপরীতে তাদের রয়েছে মোট ১৩টি বন্দর ও টার্মিনাল৷
ছবি: picture-alliance/Costfoto/Yu Fangping
ভারতের বহরে রাফাল
২০১৬ সালে ফ্রান্সে গিয়ে রাফাল যুদ্ধ বিমান চুক্তিতে সই করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মোট ৩৬টি বিমান ফ্রান্সের থেকে কেনার চুক্তি হয়েছিল। এরমধ্যে বুধবার ভারতে পৌঁছেছে নতুন পাঁচটি যুদ্ধ বিমান। সেগুলোকে লাদাখে পাঠানোর কথা রয়েছে৷ চীন-ভারত সংঘাতের কারণে আপাতত সেখানেই রাখা হবে বিমানগুলিকে। এরপর আসবে হ্যামার মিসাইলও।
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Indian Air Force
21 ছবি1 | 21
লেফটন্যান্ট জেনারেল ভট্টচার্যের মতে, ''চীন আসলে একটা ওয়ান আপম্যানশিপ দেখাতে চায়। সেখানেই সমস্যা দেখা দেয়।'' তিনি বলেছেন, ''৬২-র পর চীনের পিএলএ কোনো যুদ্ধে জিততে পারেনি। চীনের নৌবহিনী খুবই শক্তিশালী এবং অ্যামেরিকাকে টক্কর দিতে পারে। কিন্তু তাদের সেনাবাহিনী সম্পর্কে সেকথা বলা যায় না। এই বুম লা সেক্টরেই ১৯৬৭ সালে তারা ভারতীয় সেনার হাতে মার খেয়েছিল।''
তার মতে, ''শি জিনপিং মনে করেন, পিএলএ বাহিনী এখন কিছুটা চকোলেট সোলজার হয়ে পড়েছে। তাই সম্ভবত তাদের দিয়ে এরকম করানো হচ্ছে।''