মার্কিন সেনেট বিবৃতি দিয়ে এই কথা জানিয়েছে। চীনের আগ্রাসনের কড়া নিন্দা করেছে।
ছবি: MONEY SHARMA/AFP
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার মার্কিন সেনেটে একটি বাইপার্টিসান সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকায় চীন চরম আগ্রাসনের নীতি নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অ্যামেরিকা তার বন্ধুদের পাশে আছে এবং তাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালাবে। অ্যামেরিকা ভারতকে এই এলাকার গুরুত্বপূর্ণ দেশ মনে করে এবং তার পাশে আছে।
এই বিবৃতিতেই অ্যামেরিকা বলেছে, ভারতের অরুণাচল সীমান্তে চীন দীর্ঘদিন ধরে সমস্যা তৈরি করছে। বার বার সীমান্তে সেনা পাঠিয়ে, সামরিক কাঠামো তৈরি করে শান্তিভঙ্গের চেষ্টা চালাচ্ছে। অ্যামেরিকা এর তীব্র নিন্দা করে। অ্যামেরিকা ম্যাকমোহন লাইনকে স্বীকৃতি দেয় এবং মনে করে, অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
একদিকে লাদাখ এবং অন্যদিকে অরুণাচল, তিব্বতের সঙ্গে ভারতের এই দুই সীমান্ত নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের দীর্ঘদিনের সংঘাত। একাধিকবার এই দুই এলাকায় স্ট্যান্ড অফ হয়েছে।
অরুণাচল সীমান্তে ভারত-চীন সংঘর্ষ
ফের ভারত-চীন সেনার মধ্যে সংঘর্ষ অরুণাচল সীমান্তে। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অ্যামেরিকা। একটি ভিডিও নিয়ে বিভ্রান্তি।
ছবি: MONEY SHARMA/AFP
সংঘর্ষের দিন
ভারতীয় সেনা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ৯ ডিসেম্বর ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের অরুণাচল প্রদেশে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ভারত এবং চীনের সেনা। ঘটনায় দুই দেশের বেশ কিছু সেনা সামান্য আহত হয়েছেন বলে ভারতীয় সেনা সূত্রে জানানো হয়েছে।
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
সংঘর্ষের কারণ
ভারতীয় সেনা সূত্র জানিয়েছে, ওই দিন চীনের সেনা আচমকাই ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে। ভারতীয় সেনা বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে ২০-২২ মিনিটের বেশি সংঘর্ষ চলেনি বলে দাবি।
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি
মঙ্গলবার সংসদে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ভারত নিজের জমি অক্ষত রেখেছে। কূটনৈতিকভাবে এই সমস্যা সমাধানের চেষ্টা শুরু হয়েছে।
ছবি: MONEY SHARMA/AFP
চীনের প্রতিক্রিয়া
চীন সরাসরি কোনো সংঘাতের কথা স্বীকার করেনি। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দুই দেশের সীমান্ত 'সাধারণভাবে স্বাভাবিক' আছে। সংঘাতে তাদের কত সৈন্য আহত হয়েছে, সে বিষয়েও কোনো তথ্য দেয়নি চীন।
ছবি: MONEY SHARMA/AFP
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলি সেনাসূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে, সংঘাতে বেশ কিছু চীনের সেনা আহত হয়েছে। ভারতের থেকে চীনের সেনার আহত হওয়ার সংখ্যা বেশি বলে দাবি করা হয়েছে।
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
অ্যামেরিকার বিবৃতি
অ্যামেরিকা জানিয়েছে, বিষয়টির উপর নজর রাখা হচ্ছে। দুই দেশকেই দ্রুত সংঘর্ষ থামিয়ে পিছিয়ে আসতে বলা হয়েছে। ভারত এবং চীন দুই দেশই জানিয়েছে, সীমান্তের পরিস্থিতি স্বাভাবিক। ভারত জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে একাধিক ফ্ল্যাগ মিটিংও শুরু হয়েছে।
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
নতুন ভিডিও প্রকাশ
এরই মধ্যে সম্প্রতি একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, চীনের সেনা ভারতের সীমান্তে ঢোকার চেষ্টা করছে এবং ভারতীয় সেনা তাদের উপর চড়াও হয়েছে এবং হাত ও ব্যাটন দিয়ে মারছে। ভিডিওতে শোনা যাচ্ছে, পাঞ্জাবি ভাষায় বলা হচ্ছে, মেরে মাথা ভেঙে দেওয়া উচিত, যাতে তারা আর ঢুকতে না পারে। তবে সেনা এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি ৯ ডিসেম্বরের ভিডিও নয়।
ছবি: Prabhakar Mani Tewari
ঐতিহাসিক সংঘাত
ভারত এবং চীনের মধ্যে তিন হাজার ৪৮৮ কিলোমিটারের সীমান্ত আছে। তার মধ্যে ২৫টি বিতর্কিত এলাকা আছে। এবারের সংঘাত হয়েছে তাওয়াংয়ে। ইয়াংসে সীমান্তে এর আগেও সংঘর্ষ হয়েছে। বস্তুত, সম্প্রতি অরুণাচলের সীমান্তে উত্তেজনা বেড়েছে।
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
8 ছবি1 | 8
চীন অরুণাচল তাদের অংশ বলে দাবি করে। তারা ম্যাকমোহন লাইন মানে না। ১৯৫০ সালে ভারতের সঙ্গে তিব্বতের চুক্তিও মানতে চায় না চীন। ফলে অ্যাকচুয়াল লাইন অফ কন্ট্রোল বা এলএসি-তে সংঘাত লেগেই থাকে। আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারত এই বিষয়ে বার বার অভিযোগ করেছে।
এবার অ্যামেরিকা বিবৃতি দিয়ে ভারতের পাশে দাঁড়ালো। বস্তুত, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং যুক্তরাজ্য সম্প্রতি ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে কড়া অবস্থানের কথা জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার উপকূলে পরমাণু অস্ত্রের সাবমেরিন রাখা হবে বলে জানানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কোয়াড সদস্যভুক্ত দেশগুলির জোটবদ্ধ অবস্থানের কথাও বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অরুণাচল নিয়ে অ্যামেরিকা যেভাবে ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে কূটনীতি বিশেষজ্ঞেরা।