‘অর্থনীতিকে ঠিক রাখতে এই মুহূর্তে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে’
১৩ মে ২০২২
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে চাপ তৈরি হচ্ছে তা সামলাতে এখনই জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান৷
বিজ্ঞাপন
অন্যদিকে পরিকল্পনা গ্রহণে সঠিক পরিসংখ্যানের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু৷ ‘ডয়চে ভেলে খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’ ইউটিউব টকশোতে যোগ দিয়ে তারা এমন মত দেন৷ অনুষ্ঠানে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, প্রবৃদ্ধি, বাণিজ্য ঘাটতি, ঋণ ব্যবস্থাপনাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করেন অতিথিরা৷
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘‘বাংলাদেশে কৃষি, শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে এখন শ্রমিকের অভাব রয়েছে৷ তবে বেকারত্বের মূল সমস্যাটি স্নাতকদের ক্ষেত্রে৷’’ এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার প্রয়োজন বলে মত দেন তিনি৷
ইউক্রেন যুদ্ধের সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়তে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে লাফিয়ে৷ এই বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘‘এই সমস্যা এখন বিশ্বব্যাপী৷ আমি বলব বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সমস্যাটা অনেক কম৷’’
তার মতে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় মাথাব্যাথার কারণ এখন জ্বালানির মূল্য৷ যার কারণে বৈদিশক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়েতে শুরু করেছে৷ তার জন্য এরইমধ্যে সরকার পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে বলে জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের আগে থেকে আমদানি রপ্তানির চেয়ে বেশি ছিল৷ রেমিট্যান্স আসার পরও এই ঘাটতিটা ছিল৷ এখন ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে এই ঘাটতি আরো বেড়ে যাচ্ছে৷ আমরা ড্রাসটিক অ্যাকশন নেয়া শুরু করে দিয়েছি৷ যুদ্ধ কতদিন চলে আমাদের দেখতে হবে৷ জ্বালানি মূল্য স্থিতিশীল হবে কি হবে না এটা আমাদের দেখতে হবে৷ ...ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের ড্রাসটিক অ্যাকশন নিতে হবে কেননা আমাদের জ্বালানি মূল্য বিশেষ করে এলএনজির চারগুণ দাম বেড়ে গেছে৷ এটা নিয়ে সরকার খুবই সচেতন এবং যা যা করা প্রয়োজন তারা সেটা করবে৷’’
এক্ষেত্রে ক্রমাগতভাবে বিদেশি ঋণ নেয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু৷ তার মতে বৈদেশিক লেনদেনে ঘাটতি বাড়ছে ও রিজার্ভের উপর চাপ পড়ছে তাতে সামনের দিনে ঋণ পরিশোধ কঠিন হয়ে উঠবে সরকারের জন্য৷ তিনি বলেন, ‘‘২০১৪-১৫ সালে আমরা নিট বিদেশি ঋণ নিয়েছে পাঁচ হাজার কোটি ডলার, আর ২০২১-২২ সালে নিয়েছে প্রায় এক লাখ কোটি ডলার৷ রপ্তানি আয় আমাদের ৩৩ শতাংশ বেড়েছে গত ৯ মাসে, কিন্তু আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫০ শতাংশ৷ একদিক দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি আছে তার সঙ্গে রেমিট্যান্স কমে যাওয়াতে আমাদের চলতি হিসাবে ঘাটতি এখন বেড়েই চলছে৷ সেই সঙ্গে যদি বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে হয় আমি মনে করি আগামী দুই থেকে তিন বছর পর ঋণ পরিশোধ করা খুব কঠিন হয়ে যাবে৷’’
বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সঠিক পরিসংখ্যানের উপর জোর দেন এই ব্যবসায়ী৷ এক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো যে তথ্য প্রকাশ করে সেগুলো বিভ্রান্তিমূলক বলে উল্লেখ করেন তিনি৷
এফএস/এআই
মার্চের ছবিঘর দেখুন...
বিভিন্ন দেশের অর্থনীতিতে ইউক্রেনে রুশ হামলার প্রভাব
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর বেশিরভাগ দেশে খাবার এবং ভোজ্য তেলের দাম বেড়েছে৷ বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে অনেক দেশে৷ একটা হামলা সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে কীভাবে প্রভাব বিস্তার করছে, দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: Dong Jianghui/dpa/XinHua/picture alliance
জিনিসপত্রের দাম মারাত্মক বেশি
রুশ হামলার ফলে জার্মানির মানুষরা খুব ভুগছেন৷ জিনিসপত্রের দাম আচমকা অনেকটা বেড়ে গেছে৷ ১৯৮১ সালের পর চলতি বছরের মার্চে এত বেশি পরিমাণে মূল্যবৃদ্ধির সাক্ষী রইলো জার্মানি৷ দেশটি এখনো রাশিয়ার গ্যাস এবং তেলের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল৷
ছবি: Moritz Frankenberg/dpa/picture alliance
প্রভাব পড়েছে সুদূর কেনিয়ায়
নাইরোবির একটি পেট্রল পাম্পের ছবি৷ সারি বেঁধে গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ জ্বালানির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সারা বিশ্বজুড়ে৷ খাবারের দাম বেড়েছে, খাবারের জোগানও কমেছে৷ কেনিয়ায় জাতিসংঘের দূত মার্টিন কিমানি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: SIMON MAINA/AFP via Getty Images
তুরস্কে কে সরবরাহ করবে?
বিশ্বে বৃহত্তম গম উৎপাদনকারী দেশ রাশিয়া৷ রাশিয়া থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করায় অনেক দেশে রুটির দাম বেড়ে গেছে৷ তুরস্কে সরবরাহে ঘাটতি দেখা গিয়েছে৷ ইউক্রেন সারা বিশ্বে প্রথম পাঁচটি গম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় রয়েছে, কিন্তু যুদ্ধের ফলে কৃষ্ণসাগর সংলগ্ন বন্দর দিয়ে শস্য আমদানি করা তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব৷
ছবি: Burak Kara/Getty Images
ইরাকে বাড়ছে দাম
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাগদাদের জামিলা মার্কেটে এক কর্মী বস্তা বস্তা আটা সাজিয়ে রাখছেন৷ ইউক্রেনে রুশ হামলার পর ইরাকের বাজারে গমের দাম আকাশছোঁয়া৷ সারা পৃথিবীর গম ব্যবসার প্রায় ৩০ শতাংশই রাশিয়া এবং ইউক্রেনের দখলে৷ ইরাক এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে৷ তবে পুটিনের সমর্থনে পোস্টারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি এবং বিদ্যুতের দামেও প্রভাব পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতে৷
ছবি: Ameer Al Mohammedaw/dpa/picture alliance
লিমায় প্রতিবাদ
সম্প্রতি পেরুর রাজধানী লিমায় পুলিশের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সংঘর্ষ হয়েছে৷ খাবারের দাম বৃদ্ধির কারণে বিক্ষোভ দেখান তারা৷ ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরই খাবারের দাম অনেকটা বেড়ে গিয়েছে৷
ছবি: ERNESTO BENAVIDES/AFP via Getty Images
শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা
চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা৷ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পেট্রোল, ডিজেলের মূল্য ২৫ শতাংশ বেড়ে যায় দেশটিতে৷ বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি, হাসপাতালে অপ্রতুল ওষুধ– সবমিলিয়ে রাজধানী কলম্বোয় রাষ্ট্রপতির দপ্তরের সামনে প্রতিবাদে অংশ নেন অসংখ্য মানুষ৷ জরুরি অবস্থা জারি করেন প্রেসিডেন্ট৷ এই পরিস্থিতিতে ভারত ও চীনের কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়েছে শ্রীলঙ্কা৷
ছবি: Pradeep Dambarage/Zumapress/picture alliance
প্রভাব পড়েছে স্কটল্যান্ডেও
যুদ্ধের ফলে খাবার এবং তেলের দাম বেড়েছে স্কটল্যান্ডেও৷ ব্রিটেনজুড়েও শ্রমিক সংগঠনগুলি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানাচ্ছে৷ ব্রেক্সিটের ফলে এমনিতেই ব্রিটেনে থাকা-খাওয়ার খরচ অনেকটা বেড়ে গিয়েছিল৷ ইউক্রেনে রুশ হামলার ফলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে৷
ছবি: Jeff J Mitchell/Getty Images
মাছের দাম কেমন?
নিজেদের জাতীয় খাবার নিয়ে যথেষ্ট চিন্তায় পড়েছে যুক্তরাজ্য৷ পরিসংখ্যান বলছে, বছরে প্রায় ৩৮ কোটি ‘ফিস অ্যান্ড চিপস’ খায় ব্রিটিশরা৷ কিন্তু রাশিয়া এবং ইউক্রেনের এই টালমাটাল পরিস্থিতির ফলে জোগানে টান পড়েছে৷ কঠোর নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়া থেকে মাছ, ভোজ্য তেল, জ্বালানি ইত্যাদি আসছে না, ফলে সবকিছুর দামই বাড়ছে৷ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাজ্যে মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল ৬.২ শতাংশ৷এখন তা আরো বেড়েছে৷
ছবি: ADRIAN DENNIS/AFP via Getty Images
নাইজেরিয়ার পরিস্থিতি
নাইজেরিয়ার ইফাবো এলাকার একজন বিক্রেতা বস্তায় আটা ভরছেন৷ দীর্ঘদিন ধরে আমদানি করা খাদ্যের উপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে আফ্রিকার দেশটি৷ অন্য ক্ষেত্রেও অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে৷ ইউক্রেন রুশ যুদ্ধের ফলে কি নাইজেরিয়ার সুবিধা হবে? নাইজেরিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি সম্প্রতি দেশের সবচেয়ে বড় সার কারখানা খুলেছেন৷ তিনি প্রচুর ক্রেতা পাবেন বলেই মনে করছেন৷