1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অর্থনীতিতে প্রাণপ্রবাহ না ফিরলে মধ্যবিত্তরা টিকতে পারবে না'

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩ জুলাই ২০২০

কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সংকটে পড়েছে মধ্যবিত্তরা৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে করোনা সংকটে এ বিষয়েই কথা বলেছেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা (বিআইডিএস)-এর গবেষণা পরিচালক, অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন৷

Bangladesch Dhaka Mittelschicht leidet unter Corona-Pandemie
ছবি: DW/Sazzad Hossain

ডয়চে ভেলে :  আমরা মধ্যবিত্ত কাদের বলছি? মধ্যবিত্তের সংজ্ঞার মধ্যে কারা পড়েন?

ড. বিনায়ক সেন : মধ্যবিত্ত বলতে আমরা আসলে বুঝি যারা দারিদ্র্য রেখার উপর আছেন৷ দারিদ্র্য রেখার উপরে তো ধনীরাও আছেন, ঝুঁকিতে থাকা অস্বচ্ছল পরিবারও আছে৷ দারিদ্র্য রেখা যদি ১ ডলার ধরেন, তাহলে ঝুঁকিতে থাকা অস্বচ্ছল পরিবারের মাথাপিছু আয় দৈনিক এক থেকে দুই ডলার৷ আর ২ থেকে ৪ ডলারের মধ্যে যারা, তারা হচ্ছে মধ্যবিত্ত৷ এই হিসেবে ১ থেকে ২ ডলারের মধ্যে যারা, এই সংখ্যাটা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ৷ আর ২ থেকে ৪ ডলারের মধ্যে যারা, অর্থাৎ, মধ্যবিত্ত যাদের আমরা বলছি, তারা ১৯৯১ সালে ছিল ১০ শতাংশ৷ কালক্রমে এটা বেড়েছে৷ কোভিড পরিস্থিতির আগে সেটা প্রায় ৩০ শতাংশে উন্নীত হয়েছিল৷

করোনায় মধ্যবিত্তরা কতটা চাপে পড়েছেন?

আমাদের হিসেবে দেখেছি, অস্বচ্ছল ঝুঁকিপূর্ণ পরিবারের প্রায় অধিকাংশই দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে গেছে৷ জুন পর্যন্ত তাই অবস্থা৷ প্রথম কোয়ার্টার, কিন্তু কোভিডমুক্ত ছিল৷ দ্বিতীয় কোয়ার্টার, অর্থাৎ, এপ্রিল থেকে জুন পুরোটাই কোভিডের মধ্যে ছিল৷ অধিকাংশ সময়ই লকডাউন ছিল৷ মাঝে মধ্যে খুললেও প্রায় বন্ধই ছিল৷ ফলে মানুষের কোনো কাজকর্ম ছিল না৷ এতে অস্বচ্ছল ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে গেছে৷ এই সংখ্যাটা হবে দেড় কোটি থেকে আড়াই কোটির মতো৷

বাংলাদেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা কত? কী পরিমাণ মধ্যবিত্ত এই পরিস্থিতিতে দরিদ্রের কাতারে নেমেছে?

কি পরিমাণ মধ্যবিত্ত দরিদ্রের কাতারে নেমেছে সে হিসেব আমাদের নেই৷ তবে আমাদের কাছে দারিদ্র্য সীমার নীচে কত মানুষ নেমে গেছে সেই হিসেব আছে৷ সেই হিসাবটি হলো, দেড় থেকে আড়াই কোটির মতো৷ আমার মতে, এই নতুন দরিদ্রদের অধিকাংশই অস্বচ্ছল ঝুঁকিপূর্ণ পরিবার৷ কারণ, এই সময় তাদের মজুরি শ্রমের কোনো সুযোগ ছিল না৷ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও কোনো ব্যবসা ছিল না৷ মধ্যবিত্তের হিসাবটা একটু জটিল৷ তাদের মূল আশ্রয়স্থল হলো তারা মাসিক বেতনের ভিত্তিতে চাকরি করে৷ মধ্যবিত্তদের ব্যাংকের সঙ্গে একটা লেনদেন আছে৷ তাদের মোটামুটি একটা সঞ্চয় আছে৷ এখন আপনি যদি প্রশ্ন করেন, এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দেড় থেকে আড়াই কোটি যে দারিদ্র্যসীমার নীচে নেমে গেল তার মধ্যে কি মধ্যবিত্ত নেই? হয়তো আছে৷ কিন্তু এটা সংখ্যাতাত্বিকভাবে বলা যাবে না৷ আমি আশঙ্কা করি, অর্থনীতির যে স্থবির অবস্থা, সেটা যদি জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে থাকে, তাহলে ৩০ শতাংশ মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশ দারিদ্র্য সীমার নীচে নেমে যাবে৷

এটা বৈশ্বিক, নাকি বাংলাদেশের সমস্যা?

এটা শুধু আমাদের না, এটা বৈশ্বিক সমস্যা৷ এই সময়টাতে যারা চাকরি করতে পারছেন না, তারা সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন৷ আমি উদাহরণ দেই, শিক্ষার সঙ্গে জড়িত অনেক কোচিং একাডেমি ছিল সেগুলো এখন বন্ধ৷ ফলে তাদের কোনো উপার্জন নেই৷ এখন তারা আগের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে৷ এদের উপর মূল চাপটা কতটা পড়বে তা নির্ভর করবে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থনীতি কতটা ঘুরে দাঁড়ায় তার উপর৷ বাজেটে একটা প্রাক্কলন করা হয়েছে যে, দ্বিতীয় কোয়ার্টারের থেকে তৃতীয় কোয়ার্টারে অর্থনীতি ৫০ শতাংশ ঘুরে দাঁড়াবে৷ সেটা হলেও কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে৷ আর যদি ঘুরে না দাঁড়ায় তাহলে মধ্যবিত্তের উপর একটা বড় ধ্বস নামবে৷

‘মধ্যবিত্তের একটা বড় অংশ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে যাবে’: ড. বিনায়ক সেন

This browser does not support the audio element.

 সামনের দিনগুলোতে মধ্যবিত্তরা আরো কী ধরনের সংকটে পড়তে পারেন?

মধ্যবিত্তের যে সঞ্চয় আছে, সেটা তো তারা এখন ভেঙে খাচ্ছে৷ তারা যে প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভর করে চলেন সেই প্রতিষ্ঠান যদি এখনো বন্ধ থাকে তাহলে তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া ছাড়া উপায় নেই৷ তবে একটি কাজ সরকার করেছে, কেউ যদি ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে থাকেন, তার ওই ঋণের উপর এই সময় সুদ দিতে হবে না৷ তবে মূল টাকা তাকে দিতে হবে৷ আপনি তো শুধু লোনের উপর নির্ভর করে বাঁচতে পারেন না৷ আমি বুঝতেই পারি, শিল্পখাতের অনেকগুলো শাখা ইতিমধ্যে সঞ্জীবিত হয়েছে৷ গ্রামীণ অর্থনীতিতে যারা মধ্যবিত্ত, তারা আনঅ্যাফেক্টেড ছিল৷ এখন সঞ্চয় ভেঙে কতদিন খাবেন? যদি অর্থনীতি সচল না হয়?

বাংলাদেশে মধ্যবিত্তদের গড় মাথাপিছু আয় কেমন?

আমাদের প্রেক্ষাপটে যে সমস্ত পরিবারের আয় ৪০ থেকে ৮০ হাজারের মধ্যে, তাদের আমরা মধ্যবিত্ত বলতে পারি৷

মধ্যবিত্তদের আয়-ব্যয়ের তফাৎটা কি খুব বেশি?

সেটা তেমন বেশি হওয়ার কথা না৷ কারণ, মধ্যবিত্ত তো সঞ্চয়ী৷ তাদের অনেকেরই পারিবারিক সঞ্চয়পত্র আছে৷ বিভিন্ন জায়গায় তাদের অর্থ লগ্নি করা আছে৷ মধ্যবিত্ত আমরা যাদের বলছি, তারা চাকরিজীবী বা ক্ষুদ্র বা মধ্যম মানের এন্টারপ্রাইজের মালিক৷ এই শ্রেণিটা কতদিন সঞ্চয়ের উপর নির্ভর করে চলতে পারবে? সেই কারণে অর্থনীতিতে প্রাণপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরি, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও৷ তার মানে এই নয় যে, আমি স্বাস্থ্যকে অবহেলা করতে বলছি৷ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই অর্থনীতির চাকাকে সচল করতে হবে৷ তা না হলে মধ্যবিত্তরা টিকে থাকতে পারবে না৷

মধ্যবিত্তদের নিয়েই কেন এত বেশি আলোচনা?

কারণ, আমি-আপনি দু'জনেই মধ্যবিত্ত৷ আমরা আমাদের শ্রেণির দুর্গতি নিয়ে আলোচনা করবো সেটাই তো স্বাভাবিক৷ আমরা তো চরম দরিদ্রের কাতারে যারা, তাদের নিয়ে আলোচনা করছি না৷ কোভিডের আগে যারা দরিদ্রের কাতারে নেমে গেছে তাদের নিয়েও আলোচনা করছি না৷ আমরা তাদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির কথা বলে থাকি৷ আমরাই নেক্সট লাইন৷ যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে আমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবো৷ ২০২০ সালের তৃতীয় কোয়ার্টারের উপরই নির্ভর করবে আমাদের অর্থনীতি কতটা ঘুরে দাঁড়াবে আর মধ্যবিত্ত কতটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে৷

 মধ্যবিত্তদের ভালো রাখতে সরকার কী করতে পারে? সেটা কি করছে?

সেটা খুব একটা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না৷ স্বাস্থ্যখাতে খরচটা কারা মেটাতে পারছে৷ আপনি যদি করোনা আক্রান্ত হন, তাহলে প্রথমে টেস্ট করতে হবে৷ একটি বেসরকারি হাসপাতালে এই টেস্টের মূল্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা৷ এই টাকা একজন গার্মেন্ট শ্রমিকের মাসিক বেতনের প্রায় অর্ধেক৷ ফলে গরিবরা এটা করছে না৷ কারা করছে, যারা দারিদ্র্যসীমার উপরে আছেন৷ ধরুন, আপনি করোনা আক্রান্ত হলে যে ওষুধপত্র ও টেস্ট দেওয়া হবে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিলেও সেটা মোটামুটি ৩০ হাজার টাকার মতো৷ আমরা কয়েকটি কেসস্টাডি নিয়ে হিসেব করেই বলছি৷ আর যদি হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, আইসিইউ লাগে, তাহলে এক লাখ থেকে তিন লাখ টাকা লেগে যাবে৷ মনে রাখতে হবে, মধ্যবিত্তের জন্য প্রথম সংকট হচ্ছে স্বাস্থ্যগত বিপর্যয়৷ বেসরকারি খাত নির্ভর স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় খরচ এত বেশি, এটা সরকারকে দেখতে হবে৷ সবার জন্য যদি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা না করা যায় তাহলে মধ্যবিত্তের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকেই যাবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ