1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যজার্মানি

অর্থনীতির শাঁখের করাতে জার্মানি

১৫ জুলাই ২০২২

২০ বছর পর ইউরোর দর ডলারের নীচে নেমে গেছে৷ ২৫ বছরের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ কিন্তু মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের এমন ফল কি এড়ানোর উপায় ছিল?

জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে জার্মানিতে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম কয়েকগুণ বেড়েছেছবি: Martin Wagner/imago images

অর্থনীতির নিম্নমুখী প্রবণতার এই ধাক্কা বিশ্বের সবদেশেই আঘাত হেনেছে৷ কিন্তু সব দেশের জন্য এটি সমান ফল বয়ে আনেনি৷

জার্মানিতে জ্বালানির জন্য রাশিয়ার ওপর অতি নির্ভরশীলতা নিয়ে আলোচনা কয়েক দশকের৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানি পুঁজিবাদী এবং সমাজতন্ত্রী এই দুই ভাগে ভাগ হয়ে পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত হয়৷ কিন্তু ১৯৯১ সালে বার্লিন দেয়াল পতনের পর থেকে একদিকে যেমন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টা ছিল প্রতিটি সরকারের, অন্যদিকে জার্মানদের এক অংশের মধ্যে রাশিয়ার প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিও ছিল বরাবরাই৷

সবসময়ই এমন আশঙ্কা ছিল, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর জার্মানদের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা যে-কোনো বিপর্যয়ের সময় ভোগান্তির কারণ হয়ে দেখা দেবে৷ কিন্তু তারপরও সেই নির্ভরশীলতা কমানো হয়নি, বিকল্প কোনো ব্যবস্থার চিন্তাও মাথায় রাখা হয়নি৷ ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রাইমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রাশিয়া৷ এরও আগে ২০০৮ সালে জর্জিয়ার দুটো অংশ আবখাজিয়া এবং সাউথ ওশেটিয়াকে একই ভাবে বিচ্ছিন্ন করে রাশিয়া৷ কিন্তু তারপরও আরো বড় কিছু হওয়ার সম্ভাবনা বা আশঙ্কা থেকে জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি৷

২০২১ সালেও জার্মানিতে আসা গ্যাসের ৫৫ শতাংশই ছিল রাশিয়া থেকে৷ জার্মান অর্থ মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, এখন তা ৩৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷ কিন্তু গ্যাসের এই ঘাটতি পূরণ করতে যেমন টালমাটাল অবস্থায় পড়তে হচ্ছে জার্মানিকে, অন্যদিকে যে-কোনো সময় ৩৫ শতাংশ গ্যাসও রাশিয়া বন্ধ করে দিতে পারে, এমন শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

ইউরোপ, বিশেষ করে জার্মানির অবস্থা এখন শাঁখের করাতের মতো৷ একদিকে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং ইউরোপে পশ্চিমা অংশীদার রাষ্ট্রগুলোকে নিয়মিত হুমকিধামকি দেয়াটা জার্মানির নীতিগত অবস্থানের কারণেই প্রতিবাদ করতে হচ্ছে৷ অন্যদিকে, রাশিয়ার ওপর জ্বালানি ছাড়াও অন্য নানা নির্ভরতার কারণে চাইলেই কড়া পদক্ষেপ নিয়ে রাশিয়াকে একঘরেও করে দেয়া যাচ্ছে না৷

মুখে কড়া কথা বললেও আদতে কড়া অর্থনৈতিক, সামরিক বা কূটনৈতিক কোনো পদক্ষেপই নিতে পারছে না জার্মানি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ শুরু থেকেই ইউক্রেন ইস্যুতে জার্মানির অপেক্ষাকৃত নরম অবস্থানের ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে৷ অস্ত্র বা ভারি সামরিক সরঞ্জাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় বেশ দেরিতে নিয়েছে৷

কিন্তু জার্মানি নরমই থাক বা গরম, এককভাবে এখন আর অর্থনীতিকে সামলে রাখার কোনো উপায় নেই৷ রাশিয়ায় গণতন্ত্র নেই৷ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের কথাই শেষ কথা৷ ফলে রুবলের দাম কতটা কমলো, রুশ অর্থনীতি কতটা নিম্নগামী হলো, তাতে আসলে পুটিনের তেমন একটা মাথাব্যথা থাকার কথাও না৷ কিন্তু ইউরোপের ক্ষেত্রে ঘটনাটা ভিন্ন৷ জার্মানি-ফ্রান্সের মতো গণতান্ত্রিক দেশে অর্থনীতি নিম্নগামী হতে থাকলে তার প্রভাব সমাজ এবং রাজনীতিতে পড়তে বাধ্য৷

করোনার মহামারিতে এরই মধ্যে বিপর্যস্ত অর্থনীতি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরো সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে৷ যুদ্ধ শুরুর মাসখানেক পরই জার্মানির বাজারে গম ও সূর্যমুখী তেলসহ নানা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট দেখা দেয়৷ ডোমিনো ইফেক্টের মতো এইসব পণ্যের বিকল্প পণ্য যেমন চাল, জলপাই বা অন্য উদ্ভিজ্জ তেলের দামও বাড়তে থাকে৷

জ্বালানির দাম বাড়তে থাকায় এখন প্রায় প্রতিটি পণ্য ও সেবার খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে৷ তারচেয়ে বড় ভয়ের কারণ সামনে শীতকাল৷ ঘর গরম রাখার জন্য পর্যাপ্ত গ্যাস বা তেল না পেলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে৷

এখনই বাসায় চিঠি আসছে, শিগগিরই ঘর উষ্ণ করার খরচ বাড়তে পারে৷ বার্লিনের একটি প্রতিষ্ঠান গ্যাস বা তেলে ঘর উষ্ণ রাখার খরচ দ্বিগুণ করে দিয়েছে৷ জার্মানির তিন হাজার হাউজিং প্রতিষ্ঠানের সংগঠন জিডিডাব্লিউ জানিয়েছে, আগামী বছরে প্রতিটি বসতবাড়িকে জ্বালানির জন্য তিন হাজার ৮০০ ইউরো বাড়তি খরচ করতে হতে পারে৷ ফেডারেল নেটওয়ার্ক এজেন্সি জানিয়েছে, ঘর উষ্ণ রাখার মাসিক খরচ আগামি বছর অন্তত তিন গুণ হতে পারে৷

উচ্চবিত্তরা কোনোভাবে এ খরচ সামাল দিলেও, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য করোনার পর এই বাড়তি খরচ হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা৷ কিভাবে এই পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছেন জার্মান রাজনীতিবিদরা? সম্ভবত, পরিস্থিতি তাদের হাতে খুব একটা নেই৷ শীতকালে বাঁচতে এখন থেকেই সবাইকে বিদ্যুৎ বাঁচানোর চেষ্টা করার আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক৷

আর নির্বাচনে জিতেই একীভূত জার্মানির সবচেয়ে বড় সংকট মোকাবিলার দায়িত্ব পাওয়া চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস কী বলছেন? জানিয়েছেন, বিশ্বের কোনো দেশই দামবৃদ্ধির সংকট এড়াতে পারবে না৷ ফলে, ‘‘সবকিছুতে আমরা ভর্তুকি দিতে পারবো না৷’’

অনুপম দেব কানুনজ্ঞ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Böll

তাহলে ভবিষ্যৎ কী? অচিরেই যদি পুটিনকে ঠেকিয়ে ইউক্রেন পরিস্থিতি শান্ত করার মাধ্যমে বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যের চাকা জোরেসোরে চালু না করা যায়, তাহলে ভয়াবহ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার শঙ্কা রয়েছে৷

রাশিয়ার সরবরাহ করা গ্যাস পুরোপুরি বন্ধ হলে ঠিক কী ঘটতে পারে, এ নিয়ে জুনে এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রোগনোস৷ সেখানে দেখা গেছে, চার সপ্তাহ পরই সবার জন্য গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না৷ আইন অনুযায়ী, বসতবাড়ি, সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান এবং হিটিং সরবরাহকারীদের গ্যাস দিতেই হবে৷ ফলে গ্যাস বন্ধের প্রথম প্রভাব পড়বে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উপর৷ ইস্পাত, অপরিশোধিত লোহা, রাসায়নিক এবং কাচের কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে৷

সমগ্র অর্থনীতিই এর ফলে সংকটে পড়বে৷ প্রোগনোস ধারণা করেছে, রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে বছরের শেষে জার্মানির অর্থনীতি ১২ দশমিক সাত শতাংশ সংকুচিত হতে পারে৷

গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে জার্মানিতে৷ কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম রপ্তানির চেয়ে বেশি আমদানি করছে জার্মানি৷

মানুষের না খেয়ে-পরে থাকলে পুটিনের কিছু যায় আসে কিনা জানি না৷ কিন্তু জার্মানি এবং ইউরোপকে নৈতিক কারণে নিজের জনগণের পাশাপাশি বিশ্বের কথাও ভাবতে হবে৷ এই কথাটা পুটিন জানেন বলেই জ্বালানি ও খাদ্যকে প্রয়োজনে‘যুদ্ধের অস্ত্র’ হিসাবেও তিনি ব্যবহার করতে প্রস্তুত

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ