1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অর্থনীতির সূচক যা বলছে

১৯ মে ২০২৪

বাংলাদেশের অর্থনীতির সূচকগুলো ইতিবাচক অবস্থায় নেই। এই সূচকগুলো সামষ্টিক অর্থনীতিতে একটির সঙ্গে আরেকটি সম্পর্কিত। ফলে এটা পুরো অর্থনীতিরই খারাপ চিত্র প্রকাশ করে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

বাংলাদেশে চট্টগ্রাম বন্দর
গত ১৪ মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.৫০-এর আশেপাশে আছে। সর্বশেষ এপ্রিলে এই হার ছিলো  ৯.৭৪ শতাংশ। ছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images

তাদের কথায়, এর ফলাফল হলো কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না হওয়া। আর অর্থনীতি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আনতে সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তারও একটি ধাক্কা অর্থনীতিতে পড়ছে। ফলে সামনের দিনগুলোতে ঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন না করলে অর্থনীতির অবস্থা আরো খারাপ হতে পারে বলে তারা মনে করেন।

অর্থনীতিকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আনার জন্য ডলারের দাম ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে ১১৮ টাকা করা হয়েছে। আর ব্যাংক সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এখন সর্বোচচ সুদের হার ১৪ শতাংশ।

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা আছে ৭.৫ শতাংশ।কিন্তু বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস হলে সর্বোচ্চ ৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। গত অর্থ বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিলো ৫.৭৮ শতাংশ। তার আগের অর্থবছর ২০২১-২২ সালে প্রবৃদ্ধি হয়েছিলো ৭.১০ শতাংশ। এরপর থেকেই আসলে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় পতন শুরু হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিলো ৩.৫১। বাংলাদেশে  আগামীতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা আরো নিম্নগামী হতে পারে। এটা অর্থনীতির খারাপ পরিস্থিতির সম্মিলিত ফলাফল বলে মনে করছেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. মইনুল ইসলাম।

'বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক কমে গেছে'

This browser does not support the audio element.

আর সিরডাপের পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হেলালউদ্দিন বলেন," সমষ্টিক অর্থনীতিতে একটি সূচকের সঙ্গে আরেকটি সূচক সম্পর্কিত। একটি খারাপ হলে আরেকটি খারাপ হয়। এবং তাই হচ্ছে।”

সূচকগুলোর পরিস্থিতি:

সাধারণভাবে অর্থনীতির পরিস্থিতি বোঝার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি-রপ্তানি, রাজস্ব আদায়, বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অবস্থা, বিনিয়োগ এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নেয়া হয়।

চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাত শতাংশ কম হয়েছে। আয় হয়েছে চার হাজার ৭৪৭ কোটি ডলার। যদিও এটা আগের বছরের চেয়ে চার শতাংশ বেশি।

এদিকে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এখনো পর্যন্ত গত বছরের তুলনায় ইতিবাচক ধারায় আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন এক হাজার ৯১০ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে এটা ছিল এক হাজার ৫৭ কোটি ডলার। তবে গত বছর  সময়ে যে পরিমাণ নতুন কর্মী প্রবাসে গিয়েছেন সেইভাবে রেমিট্যান্স বাড়েনি। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা বাড়ছেনা।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল চার হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি। আর বর্তমানে সেই রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩৭৭ কোটি ডলারে। তবে আইএমএফের হিসাবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন এক হাজার ৩০০ কোটি ডলারের নিচে।

গত ১৪ মাস ধরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯.৫০ আশেপাশে আছে। সর্বশেষ এপ্রিলে এ হার ছিলো  ৯.৭৪ শতাংশ। তবে এই সময়ে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১০.২২ শতাংশ। যা সাধারণ মানুষকে আরো চাপে ফেলেছে।

দেশি ও বিদেশি দুই ধরনের বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই স্থবিরতা বিরাজ করছে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২৪ শতাংশের কাছাকাছি আটকে আছে। চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) এই হার ২৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা সম্ভব হবেনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।  আর  বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ২০২৩ সালে ১৬ শতাংশ কমেছে।

বাংলাদেশের এখন বিদেশি ঋণের পরিমাণ দশ হাজার কোটি ডলারের বেশি। আর গত অর্থবছর শেষে মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৭৬ কোটি ডলার, যা আগের এক যুগের মধ্যে তিন গুণ বেড়েছে। অন্যদিকে গত অর্থবছরে সব মিলিয়ে ৪৭০ কোটি ডলার শোধ করতে হয়েছে। শুধু এক বছরের ব্যবধানেই এই ঋণ পরিশোধ ১১০ কোটি ডলার বেড়েছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বলছে, গত জুলাই ডিসেম্বরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বেড়েছে প্রায় ৪৯ ভাগ। ওই ছয় মাসে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে ১৫৬ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) একই সময়ে যা ছিল ১০৫ কোটি ডলার।  চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৪৮.৮২ ভাগ। আগামী অর্থবছরে এটা ৬৩ শতাংশ বাড়তে পারে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থ বছরে(২০২৩-২৪) মোট আসল ও সুদ পরিশোধ করতে হবে ৩২৮ কোটি ডলার। আগামী অর্থ বছরে যার পরিমাণ  হবে ৪০০ কোটি ডলার। ডলারের দাম বাড়ার কারণে স্বাভাবিক কারণেই এখন ঋণ ও সুদ পরিশোধের জন্য বেশি টাকা খরচ করতে হবে। কারণ এই ডলার তো দেশীয় মুদ্রায় সরকারকে অর্থ পরিশোধ  করতে হবে।

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধের পরিমাণ বাড়তেই থাকবে। ২০২৯-৩০ সালে যা হবে ৫১৫ কোটি ডলার। ব্যংক খেলাপি ঋণ।

২০২৩ সালে দেশের ব্যাংকগুলোতে এক বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এখন মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকা।

'অর্থনীতির প্রায় সবগুলো সূচকই এখন নিম্নগামী'

This browser does not support the audio element.

বিশ্লেষকেরা যা বলছেন:

ড. মো. হেলালউদ্দিন মনে করেন," রিজার্ভ কমে যাওয়ার পিছনে রপ্তানি কম ও রেমিট্যান্স ঠিকমতো না আসা একটা বড় কারণ। রপ্তানি কম এর পিছনে আছে আমদানি কম। কারণ কাঁচামাল আমদানি কমলে রপ্তানিও কমবে। রিজার্ভ বাড়াতে ডলারে দম বাড়ানো হয়েছে। ফলে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে। একটার সঙ্গে আরেবটার সম্পর্ক আছে। এইসব কারণে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ব্যবহত হওয়ায় প্রবৃদ্ধি কমছে।”

তার কথায়," আমরা যে বিদেশি ঋণ করেছি সেটা আবার সুদে আসলে দেয়ার পালা এসেছে ফলে রিজার্ভের ওপর চাপ আরো বাড়বে। আবার ব্যাংকের সুদের হার বাড়ালেও মূল্যস্ফীতি বাড়ে। সব মিলিয়ে অর্থনীতির প্রায় সবগুলো সূচকই এখন নিচের দিকে।”

তিনি বলেন," আসলে এখন অর্থনীতিকে স্বাভাবিক করার জন্য ডলারের দাম বাড়ানো হলো। সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হলো। এর একটা ধাক্কা আছে। কারণ এতদিন যা করা হয়েছে সেটা কৃত্রিম।”

আর অধ্যাপন ড. মইনুল ইসলাম বলেন," সব সূচক এখনো খারাপ হয়নি। যা খারাপ হয়েছে তার মধ্যে আছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেক কমে গেছে। ডলারের দাম বেড়ে গেছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বিদেশি ঋণের চাপ বাড়ছে। খেলাপি ঋণের নামে ব্যাংকের টাকা লুটপাট হচ্ছে। অন্যদিকে রাজস্ব  আদায় কমে যাচ্ছে। ”

তার মতে," এই সমস্যাগুলো সরকারও জানে। তারপরও তারা অর্থপাচার বন্ধ করতে পারছেনা। পুরো রেমিট্যান্স ব্যাংকিং চ্যানেলে আনতে পারছেনা। হুন্ডি বন্ধ করতে পারছেনা। তারপরও রেমিট্যান্স ২৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। রপ্তানির অবস্থা এখনো ভালো আছে।  এবছরে ৬০ বিলিয়ন ডলার হবে। গত বছর ছিলো ৫৫ বিলিয়ন ডলার। ”

তার বক্তব্য, "তবে সব মিলিয়ে অর্থনীতি ভালো নেই । প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হবে।”

অর্থনীতিবিদরা বলছেন দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে, বেকারত্ব বাড়ছে। অন্যদিকে ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছেনা।  সবল ব্যাংকের সাথে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করতে গিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই তালগোল পাকিয়ে ফেলছে।

'সমস্যা থাকলেও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণে'

This browser does not support the audio element.

কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন," অর্থনীতিতে সমস্যা আছে তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই আছে। এটা নিয়ে গবেষণা হওয়া ভালো কিন্তু আতঙ্কের কিছু নাই।”

তার কথায়," অর্থনীতির যে প্রচলিত সংকট এগুলো স্বাভাবিক বিষয়। অর্থনীতি আপ-ডাউন করে। কিন্তু এটা অত নিচে যায়নি যে সংকট হবে। এটা উপরেও নাই , নিচেও নাই , মাঝামাঝি অবস্থানে আছে। আমাদের এখানে না খেয়ে কেউ থাকেনা। এমন নয় যে রাস্তাঘাটে মানুষ পড়ে আছে। কাজ নাই, দোকানে মাল নাই।  ব্যাংকে চেক দিয়ে টাকা পাচ্ছেনা। এইরকম উদাহরণ এখানে নাই।” তার মতে," অর্থনীতি তার সীমার মধ্যেই আছে। সরকার পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে।''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ