1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতের অর্থনীতি বিপর্যস্ত, মানতে নারাজ মোদী সরকার

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
২৮ আগস্ট ২০১৯

‌ভারতে অর্থনৈতিক মন্দার হাল বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই৷ ধুঁকছে অটোমোবাইল, পোশাক ও নির্মাণ শিল্প৷ বেকারত্ব ও নগদের আকাল রেকর্ড ভেঙেছে৷ এখন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল অর্থ নিচ্ছে সরকার৷ সংশয়ে দেশ৷

ছবি: picture-alliance/Photoshot

দেশের  মন্দামুখী অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ কেউ কেউ ব্যঙ্গের সুরে বলছেন, ‘‘অবস্থা অনেকটা রোমের মতো৷ রোম যখন জ্বলছে, তখন নিরো বাঁশি বাজাচ্ছেন!‌'‌' কটাক্ষ যাঁকে বা যাঁদের দিকে, তাঁরা অবশ্য আর্থিক মন্দার তত্ত্ব স্বীকার করতে চাইছেন না৷ অন্তত প্রকাশ্যে তো নয়ই৷ এতসবের মধ্যে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দিয়েছে যাবতীয় উন্নয়নমূলক প্রকল্পের নিয়ামক সংস্থা ‘‌‌নীতি আয়োগ'৷ সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার বলেছেন, ‘‌‘‌বর্তমানে দেশের অর্থনৈতিক দুর্দশা বিগত সাত দশকের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে৷'‌'‌ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে নীতি আয়োগ-‌কর্তার এই বক্তব্যের পরেও কিন্তু, ‘‌ভাঙব তবে মচকাবো না'‌ গোছের মনোভাব দেখিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ খোদ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ সংবাদ সম্মেলনে একগুচ্ছ ঘোষণা করে হাস্যকর ভাবে জানিয়েছেন, দেশের অর্থনীতি তরতরিয়ে বাড়ছে৷ তা নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের থেকেও ভালো গতিতে৷

এদিকে, দেশের শিল্প ক্ষেত্রে হাহাকার৷ উৎপাদন আছে, চাহিদা নেই৷ ১৯৯১-‌এর পর আর্থিক প্রবৃদ্ধির গতি এখন সবচেয়ে ধীর৷ গত ৪৫ বছরে সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব৷ মুখ থুবড়ে পড়েছে অটোমোবাইল শিল্প, নির্মাণ শিল্প এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের বাজার৷ কিছুদিন আগেই জিডিপি অগ্রগতির হার কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর কথা জানিয়েছিলেন প্রাক্তন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম৷ স্বাধীনতার ৭২ বছর পরে ডলারের বদলে পাওয়া যায় ৭২ রুপি৷ এমনকি, মুকেশ আম্বানির মতো মস্ত শিল্পপতিও বলছেন, বেশকিছু বিনিয়োগ প্রস্তাব স্থগিত রাখতে বাধ্য হচ্ছেন৷ এই অবস্থায় আগামী ৫ বছরে ‌দেশকে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিতরণ করছে কেন্দ্রীয় সরকার৷

‘মন্দা থেকে বাঁচতে এটা দীর্ঘমেয়াদী সমাধান নয়’

This browser does not support the audio element.

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থনীতিবিদ ‌অভিরূপ সরকার জানিয়েছেন, ‘‌‘‌মন্দা পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে সরকার চেষ্টা করবে, সেটা স্বাভাবিক৷ কিন্তু, যে উপায় অবলম্বন করা হচ্ছে, সেটা ভুল৷ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ১.‌৭৬ লাখ কোটি টাকা আদায় করেছে সরকার৷ এটা উপযুক্ত ঔষধি নয়৷ এই পদ্ধতি প্রত্যেক বছর নেয়া যাবে না৷ ফলে এটা দীর্ঘকালীন সমাধান নয়৷'‌'‌ তাঁর মতে, সমাধান হতে পারে গণ-‌ব্যবহারিক পণ্যের চাহিদা তৈরি করে৷ যা একেবারে তলানিতে ঠেকেছে৷ সেইসঙ্গে ধারাবাহিক রোজগারের উপায় নিশ্চিত করা এবং আয় বন্টন করা৷

যদিও ভিন্ন মতও রয়েছে৷ বলা হচ্ছে, শুধু ভারত নয়, ‌বিশ্বের ১০টি বৃহৎ অর্থনীতির দেশও মন্দায় রয়েছে৷ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইটালি, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও সিঙ্গাপুর৷

‘খেয়াল রাখতে হবে এই টাকার যেন সদ্ব্যবহার করা হয়’

This browser does not support the audio element.

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুগত হাজরা ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন, ‘‌‘‌সারা পৃথিবীতেই আর্থিক অগ্রগতির হার নিম্নগামী৷ বিশ্বজুড়ে ডামাডোল চলছে৷ এই অবস্থায় ভারতের মতো বৃহৎ অর্থনীতিতে কিছুটা সমস্যা তো হবেই৷ অন্যান্য দেশের তুলনায় অগ্রগতির হার মোটের ওপর এখনও ভালো৷ মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে তলনা করলে ভয়াবহ কিছু নয়৷ আসলে দুর্নীতির পর্বত জমে ছিল, তারফলে আগে আর্থিক অগ্রগতির যে বুদবুদ দেখা যেত, এখন তা নেই৷ এতেই গেল গেল রব ওঠার কিছু নেই৷ এখন সরকার রেভিনিউ তুলছে৷ আরবিআই তো সরকারি ব্যাঙ্ক৷ খেয়াল রাখতে হবে এই টাকার যেন সদ্ব্যবহার হয়৷'‌'‌‌

গত তিন বছরে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বিধিবহির্ভূত অর্থ ব্যবস্থাকে জোর জবরদস্তি বিধিসম্মত অর্থ ব্যবস্থায় পর্যবসিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ মূল লক্ষ্য, সর্বক্ষেত্র থেকে রাজস্ব আদায় করার ক্ষমতা করায়ত্ত করা৷ কেউ কেউ মনে করছেন, আরবিআই থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা সরকারি কোষাগারে নিয়ে বাজার থেকে ঋণ নেওয়ার ঝুঁকি এড়াতে চাইছে সরকার৷ কারণ সুদের হার না বাড়ানো৷ আসলে সরকার মনে করেছে, সুদের হার কম থাকলে মন্দায় গতি আসতে পারে৷ কিন্তু, এটা ভুল ধারণা৷ প্রকৃষ্ট উদাহরণ, ইউরোপ ও জাপানে সুদের হার প্রায় শূন্য৷ কিন্তু, মন্দায় ডুবছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইটালি, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও সিঙ্গাপুর৷ সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোই একমাত্র উপায়৷ সে জন্য সরকারকে নিজের খরচ বাড়াতে হবে৷ সবার আগে মেনে নিতে হবে, দেশ আর্থিক সংকটে পড়েছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ