1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অর্থনীতি: শ্রীলঙ্কার মতো আশঙ্কা নেই, তবে সতর্ক থাকতে হবে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ এপ্রিল ২০২২

বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার পরিণতি বরণ করবে, এই ধারণাকে অমূলক মনে করছেন বাংলাদেশের দুই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ৷ তাদের কথা, বাংলাদেশকে বরং সতর্কভাবে শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্ব অর্থনীতি পর্যবেক্ষণে রেখে এগোতে হবে৷

ছবি: Md Manik/ZUMA Wire/imago images

বাংলাদেশের দুই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মনে করেন ‘শ্রীলঙ্কার মতো হবে' এই কথা বলে আতঙ্ক ছড়ানো ঠিক হবে না৷ বরং এই ধরনের কথার জন্য অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে৷ অর্থনীতি নিয়ে সাধারণ মানুষ ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হতে পারে৷ 

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, ইউএনডিপির কান্ট্রি ইকোনমিস্ট ড. নাজনীন আহমেদ শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন৷ তারপর তারা বলেছেন, শ্রীলঙ্কা বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় কারণ তাদের বিদেশি ঋণ৷ আর এই ক্ষেত্রে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো জিডিপি ও ঋণের অনুপাত৷ তারা বলেন, শ্রীলঙ্কার ঋণ জিডিপির ৯০ ভাগের বেশি৷ আর বাংলাদেশের তা ৩৪-৩৫ ভাগ৷ বাংলাদেশ নিয়মিত ঋণ শোধও করছে৷

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘আইএমএফও মনে করে বাংলাদেশের জিডিপি ঋণ অনুপাত ঠিক আছে৷ তারা বাংলাদেশকে বরং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ না দিয়ে বিদেশি ঋণ নিতে বলছে৷ কারণ অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ অনেক বেশি৷''

‘‘ভর্তুকি দিয়ে আর বিদ্যুৎ প্রকল্প করা ঠিক হবে না’’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশের এখন মোট বিদেশি ঋণের পরিমাণ ৪৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার৷ শ্রীলঙ্কার ৩৩ বিলিয়ন ডলার৷ বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিবিএস-এর হিসেবে ১৬ কোটি ৯৩ লাখ৷ শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা দুই কোটি৷ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু ঋণ ২৯২.২১ ডলার৷ আর শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ঋণ এক হাজার ৬৫০ ডলার৷ ২০২০-২১ অর্থ বছরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্স পেয়েছে ২৪.৭৮ বিলিয়ন ডলার৷ শ্রীলঙ্কা রেমিট্যান্স পেয়েছে আট বিলিয়ন ডলার৷ ওই সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩৮.৭৫ বিলিয়ন ডলার, শ্রীলঙ্কার ৮.৫ বিলিয়ন ডলার৷ বাংলাদেশের এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি৷ শ্রীলঙ্কার দুই বিলিয়ন ডলার৷

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের ঋণ বেড়েছে৷ কিন্তু ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাও আছে৷ তবে এখন আমদানি বেড়ে যাওয়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে৷ আবার নানা কারণে মেগা প্রকল্পের খরচ বেড়েছে৷ সব মিলিয়ে একটা চাপ আছে৷ সে কারণেই বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বে যুদ্ধ পরিস্থিতি ও করোনার অভিঘাত মাথায় রেখে সতর্ক হতে হবে৷ প্রয়োজনে অর্থনীতির পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে৷ সেটা করতে পারলে বাংলাদেশের জন্য আতঙ্কের তেমন কোনো কারণ নেই৷''

বাংলাদেশের ঋণ বেড়েছে: খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম

This browser does not support the audio element.

তার মতে, শ্রীলঙ্কা করোনার সময় স্বাস্থ্যখাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে পর্যটন শিল্প প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে৷ ঋণ নিয়ে অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প করেছে, যার রিটার্ন আসেনি৷ অর্গানিক কৃষি খাত বসে গেছে৷ আর জনকল্যাণে ট্যাক্স ব্যাপকভাবে কমিয়ে দিয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনীতি কোভিডের মধ্যেও সচল ছিল৷ রাজস্ব আদায়ে জোর দেয়া হয়েছে৷ আর বাংলাদেশের কৃষিখাত অত্যন্ত শক্তিশালী৷

 তার কথা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিটেন্স এবং রপ্তানি আয়ে বাংলাদেশ ইতিবাচক অবস্থানে আছে৷ কিন্তু মেগা প্রকল্পের রিটার্ন কতটা আসবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ৷ এইসব প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধির কারণে রিপেমেন্টের চাপ এবং দুর্নীতি বেড়েছে, যা ভাবা দরকার৷

বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং দ্রব্যমূল্য এই ইস্যুগুলো নতুন চাপ সৃষ্টি করতে পারে৷ রপ্তানি, রেমিটেন্স প্রবাহ একই গতিতে না থাকলে চাপ বাড়বে৷ তাই এইসব সেক্টরে নজর দেয়া দরকার৷

বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে হচ্ছে৷ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য মতে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ হচ্ছে এক লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে রাশিয়ার ঋণ ৯১ হাজার ৪০ কোটি টাকা৷ বাকি টাকার জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ৷

মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে খরচ হচ্ছে ৫১ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা৷ তাতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণের পরিমাণ ৪৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা৷

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৭০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণে হচ্ছে ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা৷ চীনের ঋণ ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা৷

যানজট কমাতে ঢাকায় ছয়টি মেট্রোরেল লাইনের উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত প্রথম লাইনে ঋণ দিচ্ছে জাইকা৷ লাইনটি নির্মাণে খরচ হচ্ছে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা৷ এর মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা জাইকার ঋণ৷ এ ছাড়া আরো বড় বড় প্রকল্পে বিদেশি ঋণ আছে৷

ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘‘শ্রীলঙ্কার মতো ঢালাওভাবে বলা যাবে না যে আমাদের এই মেগা প্রকল্পগুলো অপ্রয়োজনীয়৷ তবে প্রকল্প থেকে আমরা সুফল কীভাবে পাবো তা নিশ্চিত করতে হবে৷ প্রকল্পের খরচ ভবিষ্যতে কমিয়ে আনতে হবে৷ আর নতুন কোনো বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যাপারে ভিন্নভাবে ভাবতে হবে৷ আমাদের উৎপাদন আছে, কিন্তু ডিস্ট্রিবিউশনের সংকট৷ তাহলে তো আমরা বিদ্যুৎ কাজে লাগাতে পারছি না৷ ভর্তুকি দিয়ে আর বিদ্যুৎ প্রকল্প করা ঠিক হবে না৷ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷''

তার কথা, বাংলাদেশকে বিশ্ব বাজারের দিকে নজর রাখতে হবে৷ দ্রব্যমূল্য অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে৷ অর্থনীতির বণ্টন প্রক্রিয়ায় নজর দিতে হবে৷ তা না হলে সবার উন্নয়ন হয় না৷ বাংলাদেশকে সতর্ক থাকতে হবে, তবে আতঙ্ক ছড়ানো যাবে না৷ তিনি বলেন, ‘‘আতঙ্ক ছড়ালে অর্থনীতির ক্ষতি হয়৷ বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়৷ এটা রিসেশনস এক্সপেকটেশন তৈরি করে৷ এটা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়৷''

আর খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে দুর্নীতি ও অপচয় কমাতে হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ