বাংলাদেশে চাকরিতে ঢুকতে গেলে যে ধরনের রাজনৈতিক যোগাযোগ ও লাখ লাখ টাকা ঘুস দিতে হয়, অনেকেই সেই টাকা দিয়ে চাকরিতে না ঢুকে ভাল জীবিকার আশায় অবৈধভাবে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী৷
তার মতে, বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে তারা যে দেশে যাচ্ছেন, তাদের ধারণা সেখানে থাকতে পারলে কয়েক মাসের মধ্যে এই টাকা উঠে যায়৷ সঙ্গে একটা বেটার লাইফও মেলে৷
ডয়চে ভেলে : বসনিয়ার জঙ্গলে কয়েকশ' বাংলাদেশি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন৷ ডয়চে ভেলের দুইজন সাংবাদিক সরেজমিনে সেখানে গিয়ে তাদের করুণ অবস্থার চিত্র দেখেছেন৷ সাগর পথেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধভাবে যাওয়ার কথা আমরা জানি৷ এই প্রবণতা কেন?
অধ্যাপক ড. তাসনিম সিদ্দিকী : একটা দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশিরা বিভিন্ন দেশে অভিবাসন করে আসছে৷ যারা মধ্যপ্রাচ্যে গেছেন তাদের অনেকেই কাজ শেষ করে দেশে ফেরার সময়ে চেষ্টা করেন ইউরোপে ঢুকে যেতে৷ আবার আমাদের মফস্বল শহরগুলোর অনেক স্নাতক অভিবাসন করতে চান৷ কারণ তারা ‘ছোট’ চাকরি করতে চান না৷ এদের অনেকেরই ইউরোপে কানেকশন আছে৷ সেখানে থাকা আত্মীয়রা বলেন, কোনভাবে এখানে এসে পড়তে পারলে পরবর্তী কাজের সুযোগগুলো তারা করে দেবেন৷ এই পরিস্থিতিতে তারা খানিকটা জেনে, খানিকটা না জেনে এই পথে পা বাড়ান৷ আর এই সুযোগটা নেয় দালাল বা সাব এজেন্টরা৷ আগে আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ থেকে সরাসরি প্লেনে সিরিয়া নেমে সেখান থেকে ইউরোপ যেতেন৷ পরে দেখেছি, ভারত হয়ে তারা যাচ্ছেন৷ সম্প্রতি আমরা দেখছি, তারা বসনিয়ার পথ ধরে যাচ্ছেন এবং সেখানে গিয়ে আটকে আছেন৷ এই মানুষগুলো অভিবাসনের ফলাফল জানেন৷ যদি তারা একবার পৌঁছে যেতে পারেন তাহলে লুকিয়ে থেকে কাজ করার সুযোগ পান বা অনেক সময় ক্ষমাও প্রদর্শন করা হয়৷ এইসব চিন্তা থেকেই তারা এই পথে যাচ্ছেন৷
মফস্বলের অনেক স্নাতক ‘ছোট’ চাকরি করতে চান না: ড. তাসনিম সিদ্দিকী
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর কি পরিমাণ মানুষ অবৈধভাবে বিদেশে যান?
তেমন হিসেব নেই৷ তবে আইওএমের কতগুলো হিসাব আছে৷ গত বছর তারা ৭০০ এর মতো কেস পেয়েছেন যারা অবৈধ অভিবাসনের জন্য লিবিয়া গেছেন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আইওএমের কাছ থেকে এমন কিছু পরিসংখ্যান মাঝে মধ্যে পাওয়া যায়৷ এমন কথাও বলা হচ্ছে, বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ অভিবাসনের জন্য যারা আটকে আছেন তাদের একটা অংশ বাংলাদেশি৷
এই অবৈধ মানুষগুলো যে টাকা পাঠান সেটা কি রেমিটেন্স হিসেবে আসে? না অবৈধভাবে আসে?
দু'টোই৷ রেমিটেন্স হিসেবেও আসে৷ অবৈধ পথেও আসে৷ কারণ তারা যখন টাকাটা পাঠাচ্ছেন তখন বৈধ কাগজপত্র থাকলেই যে শুধু রেমিটেন্স পাঠাতে পারবে বিষয়টা কিন্তু তেমন না৷ অন্যদিকে ভাই বোন বা যে আত্মীয় সেখানে আছেন, তারা যদি বৈধ হন তাদের মাধ্যমেও কিন্তু বৈধভাবে তারা টাকা পাঠাচ্ছেন৷ ফলে যারা বৈধভাবে যাননি তাদের অনেকের টাকাও বৈধপথে আসে৷
‘টাকা দিয়ে বিপদ কিনেছি’
এভাবেই নিজের হতাশার কথা ডয়চে ভেলের কাছে জানিয়েছেন বসনিয়ায় আটকে পড়া ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশী বাংলাদেশিরা৷ পানির সংকট, শীতের সমস্যা তো আছেই, অভিযোগ রয়েছে ক্রোয়েশিয়া পুলিশের নির্মম নির্যাতনেরও৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
‘পাঁচ লাখ টাকা লস দিয়েও ফেরত যাবো’
সিলেট থেকে বসনিয়া আসা সাইফুর রহমানের এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে৷ ওমান-দুবাই সাগর পাড়ি দিয়ে আসার পর আর ফেরত যাওয়ার চিন্তা করা সম্ভব না বলেও জানান তিনি৷ তবে যেভাবে কষ্ট করে জঙ্গলে থাকতে হচ্ছে, নির্যাতন সহ্য করে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করতে হচ্ছে, তাতে এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন তিনি৷ এখন কেউ যদি কেউ ১০ লাখ টাকাও তাকে দিতে চায়, তাহলে পাঁচ লাখ টাকা লস দিয়েও দেশে ফেরত যেতে চান তিনি৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
ওমানে ছয় মাস বেতন মেলেনি
ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে এখন বসনিয়ার জঙ্গলে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মাদারিপুরের ইয়াসিন খান৷ ওমানে ফ্লাইবোর্ডের কারখানায় দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তিনি৷ কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে বেতন পাননি ছয় মাস৷ ফলে ইউরোপে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্নে ওমান থেকে ইরান, তুরস্ক, গ্রিস, ম্যাসিডোনিয়া, সার্বিয়া হয়ে বসনিয়া আসেন তিনি৷ এই রাস্তা অতিক্রম করতে তার লেগেছে দুই বছর৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
বিজনেস ভিসায় তুরস্ক, তারপর বসনিয়া
মেরাজ শেখের বাড়ি গোপালগঞ্জ৷ বিজনেস ভিসায় তুরস্ক এসে সেখান থেকে অবৈধভাবে গ্রিসে আসেন তিনি৷ বসনিয়ার জঙ্গলে অতি কষ্টে থাকলেও এখনও বাঙালি খাবারের মায়া ছাড়তে পারেননি৷ কষ্ট করে জল, চাল ও লাকড়ি সংগ্রহ করে জঙ্গলেই চলছে ভাত রান্নার আয়োজন৷ এরই মধ্যে বসনিয়ায় তার এক বছর হয়ে গেছে৷ তিনবার সীমান্ত পাড়ির চেষ্টা চালিয়েছেন তিনি৷ খরচ হয়ে গেছে ১৩ লাখ টাকা, আরো অন্তত চার লাখ টাকা লাগবে বলে মনে করছেন মিরাজ৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
বড় পরিবার চালাতে নিরুপায় হয়ে...
একদিন আগেই ‘গেমে’ গিয়ে স্লোভেনিয়ার পুলিশের হাতে আটকা পড়েন মৌলভীবাজারের শেখ লাকী৷ বসনিয়ায় ফেরত পাঠানোর আগে সীমান্তে তাকে ক্রোয়েশিয়া পুলিশ মারধরও করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি৷ ওমানে পাঁচ বছর কাটিয়েও দেশে পরিবারকে তেমন একটা আর্থিক সাহায্য করতে পারেননি তিনি৷ ফলে পরিবারের কথা চিন্তা করেই ফ্রান্সে যাওয়ার লক্ষ্যে রওয়ানা হয়েছেন লাকী৷ খরচ হয়ে গেছে ১৭ লাখ টাকা৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
সাগরে মৃত্যুর ঝুঁকি
মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনেকেই সাগর পথে ইরান, তুরস্ক বা গ্রিস আসেন৷ এ পথে মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানান রেহান আহমেদ৷ এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করেছেন তিনি৷ প্রতিবারই ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
ক্রোয়েশিয়া পুলিশের অত্যাচার
ক্রোয়েশিয়া সীমান্ত পাড়ি দেয়ার সময় পুলিশের নির্মম নির্যাতনের চিত্র ডয়চে ভেলেকে দেখাচ্ছেন সুনামগঞ্জের নিখিল৷ জাতিসংঘের অভিবাসী বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইওএম তাকে সীমান্ত থেকে নিয়ে এসেছে৷ এখন মিরাল ক্যাম্পে স্থান পেয়েছেন তিনি৷ নিখিলের সারা গায়ে পুলিশের লাঠির বাড়ির দাগ৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
রাজনৈতিক কারণে বিদেশ পাড়ি
সিলেটে রাজনৈতিক আক্রোশের শিকার হয়ে এখন বসনিয়ার মিরাল ক্যাম্পে আছেন বলে দাবি শায়েল আহমেদের৷ গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হলেও সেখান থেকে অন্য দেশে যাওয়া বেশ কষ্টকর৷ এজন্য বাধ্য হয়ে এখন বসনিয়ায় এসে সেখান থেকে ইটালি বা ফ্রান্স যাওয়ার চেষ্টা করছেন শায়েল৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
কুকুরের কামড়, ১৪ সেলাই
ডান হাতে ১৪টি সেলাই, একটি রগ কেটে গেছে একেবারেই৷ হাতে এখন আর শক্তিও পান না সিলেটের শফিক মিয়া৷ তার অভিযোগ, পুলিশের কুকুর কামড়ে তার এই অবস্থা করেছে৷ এখন চার মাস ধরে মিরাল ক্যাম্পে আছেন শফিক৷ তবে এরই মধ্যে তার কয়েক লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে৷ ফলে দেশে ফেরার সুযোগও আর দেখছেন না তিনি৷ সুস্থ হয়ে উঠলেই আবার সীমান্ত পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করবেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন শফিক৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
8 ছবি1 | 8
বসনিয়ার জঙ্গলে যারা আটকে আছেন তাদের অনেকের সঙ্গেই কথা বলেছেন ডয়চে ভেলের সাংবাদিকেরা৷তারা বলেছেন, কারো কারো ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকাও খরচ করতে হয়েছে বসনিয়া পর্যন্ত পৌঁছতে৷ এই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করে এই অনিশ্চয়তা বেছে নেওয়া কেন?
বিদেশে যাওয়ার পর ওখানে যে বেতনটা পাওয়া যাবে সেটার কারণে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় করা যায় বলেই তারা মনে করেন৷ আমি দেখেছি, জাস্ট সেলার থেকে মদের বোতল উপরে তুলে এই অবৈধ অভিবাসীরা যে টাকা আয় করেন তাতে কয়েক মাসের মধ্যে ১৫ লাখ টাকা তারা তুলে ফেলতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে এই রিস্ক তো তারা নেবেনই৷তাছাড়া সাধারণ ক্ষমা প্রদর্শন করা হলে তো তারা দীর্ঘ সময় সেখানে থেকে যেতে পারবেন৷ এই কারণে তারা জীবন বাজি রেখে সেখানে যান৷
বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বেশ ভালো৷ তাহলে এভাবে কেন ঝুঁকি নিয়ে মানুষ বিদেশে যাচ্ছেন?
অভিবাসনের তত্ত্ব বলে অর্থনৈতিক অবস্থা যত ভালো হবে অভিবাসন তত বেশি বাড়বে৷ মানুষের বড় হবার উচ্চাকাঙ্খা বাড়বে৷ অভিবাসনের থিওরি বলে অর্থনীতি ভালো হলে অভিবাসন বাড়বে৷ উল্টোদিক থেকে আমরা যদি দেখি,বিশ্বায়নের ভেতরে আমরা ঢুকে গেছি৷ আমাদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক অবস্থায় যে কোন কর্মক্ষেত্রে ঢুকতে গেলে যে ধরনের রাজনৈতিক যোগাযোগের প্রয়োজন পড়ে, দলীয়করণের শিকার হতে হয় সেই সব জায়গায় এই দেশে অনেকে কোন ভবিষ্যত দেখেন না৷ সুতরাং তারা এমন একটা জায়গায় যেতে চান যেখানে আইনের শাসন আছে এবং যে কাজটা করবেন তার নায্য পারিশ্রমিক পাবেন৷ এখানে আমাকে একটা সরকারি চাকরি পেতে গেলে লাখ লাখ টাকা ঘুস দিতে হয়, সেই ঘুসটা না দিয়ে তারা একটা বেটার সিস্টেমের দিকে যেতে চান৷
এভাবে লোক পাঠিয়ে আরও রেমিট্যান্স আনার প্রয়োজন আছে কিনা?
একেবারেই না৷ সরকারকে আমরা দায়বদ্ধ করতে চায় যে, বৈধ পথে অভিবাসনের সুযোগ সৃষ্টি করলে অবৈধ পথে অভিবাসনের চেষ্টা কমে যাবে৷ বৈধ পথে যাওয়ার প্রক্রিয়াটা শুরু করতে গেলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়ে স্কুল থেকে অভিবাসনবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে৷ ভকেশনাল ট্রেনিংকে গুরুত্ব দিতে হবে৷ মানুষ যখন তার স্কিল দিয়েই বিদেশে যেতে পারবেন তখন তাকে এই অবৈধ পথ বেছে নিতে হবে না৷ এই ট্রেনিং এর দিকে দৃষ্টি দেওয়া হচ্ছে না৷
ইউরোপের স্বপ্ন বন্দি বসনিয়ার জঙ্গলে
ইউরোপে অভিবাসনের প্রত্যাশায় এসে বসনিয়ায় আটকা পড়েছেন কয়েকশো বাংলাদেশি৷ ডয়চে ভেলের আরাফাতুল ইসলাম ও অনুপম দেব কানুনজ্ঞ তুলে ধরেছেন তাদের মানবেতর জীবনের দিনলিপি৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
জঙ্গলে বসবাস
এটি বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়ার সীমান্তবর্তী শহর ভেলিকা ক্লাদুসার একটি জঙ্গল৷ সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েকশো বাংলাদেশি৷ মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন তারা৷ লক্ষ্য ক্রোয়েশিয়া হয়ে ইউরোপে প্রবেশ করা৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
পলিথিনের তাঁবু
সেখানে কোন স্থাপনা নেই৷ স্থানীয় সুপার মার্কেট থেকে পলিথিন কিনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাত কাটানোর সাময়িক ব্যবস্থা করেছেন তারা৷ এক একটি তাঁবুতে ১০ থেকে ১২ জন থাকেন৷ সোমবার সকালে সেখানে তাপমাত্রা ছিল দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ ঠাণ্ডা বা বৃষ্টি কোনটি থেকেই রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই এই আচ্ছাদনে৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
‘পুলিশ সবকিছু কেড়ে নেয়’
ইয়াসিন নামে একজন জানান, ওমান থেকে স্পিড বোটে করে তিনি ইরান থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে আসেন৷ তারপর গ্রিস থেকে আসেন বসনিয়াতে৷ ‘‘সর্বশেষ গত তিনদিন আগে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের চেষ্টা করি৷ সে সময় কিছুটা (ক্রোয়েশিয়ার) ভিতরে ঢুকেছিলাম৷ কিন্তু পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যাই৷ পুলিশ আমার সবকিছু কেড়ে নেয়৷ শুধু আন্ডারওয়্যার পরা অবস্থায় আমাকে এখানে ফেরত পাঠায়৷’’
ছবি: Arafatul Islam/DW
লাখ টাকা খরচ
মোটা অংকের টাকা খরচ করে দালালদের মাধ্যম ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছেন তারা৷ ‘‘১৮ থেকে ২০ লাখ খরচ করে এখানে এসেছি৷ বিভিন্ন দেশে দালালদের এ টাকা দিতে হয়েছে আমাদের৷ এ মুহূর্তে দেশে গেলে নিঃস্ব হয়ে যাব আমরা,’’ জানালেন একজন৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
গোসলের সুযোগ
আশেপাশে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা৷ বৃষ্টিতে নীচু জমিতে পানি জমেছে, যা গোসল আর কাপড় ধোয়ার সুযোগ করে দিয়েছে অভিবাসন প্রতাশীদের৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
মিরাল ক্যাম্প
কাছেই আছে জাতিসংঘের ‘আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা’ আইওএম পরিচালিত মিরাল ক্যাম্প৷ ক্যাম্পে মোট সাতশ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে৷ এদের মধ্যে ৫০ শতাংশ পাকিস্তানি অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ বাংলাদেশিদের হার ২৮ শতাংশ৷ এছাড়া মরক্কো, আফগানিস্তান, সিরিয়া, আলজেরিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশের অভিবাসনপ্রত্যাশীরাও আছেন সেখানে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ক্যাম্পের সুযোগ-সুবিধা
ক্যাম্পের ব্যবস্থাপক আইওএম কর্মকর্তা মিতে চিলকোভস্কি জানান, ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দিনে তিন বেলা খাবার দেয়া হয়৷ পাশাপাশি তাদের অন্য সামগ্রীও দেয়া হয়৷ এছাড়া স্থানীয় ডাক্তারদের দিয়ে ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে থাকা আহত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের চিকিৎসা দেয়া হয়৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
নির্যাতন
বসনিয়া সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে ক্রোয়েশিয়ার পুলিশের বাধা ও তাদের হাতে নির্যাতিত হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন ক্যাম্পে বাস করা বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ যেমন সিলেট থেকে আসা শফিক মিয়া তার ডানহাতে থাকা কুকুরের কামড়ের ক্ষত দেখিয়েছেন৷ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ কুকুর ছেড়ে দিয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি৷ ছবিতে নির্যাতনের চিহ্ন দেখাচ্ছেন মিরাল ক্যাম্পে থাকা আরেক বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
পরিত্যাক্ত কারখানা
বেশিরভাগেরই ঠাই মেলেনি মিরাল ক্যাম্পে৷ তাদের বড় একটি অংশই আশ্রয় নিয়েছেন জঙ্গলে৷ সেখানেও এখন থাকার জায়গা নেই৷ বাকিরা তাই বেছে নিয়েছেন পাশের একটি পরিত্যাঙ্ক কারখানা ভবন৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
শতাধিক
এই কারখানা ভবনেও শতাধিক বাংলাদেশির দেখা পেয়েছেন ডয়চে ভেলের দুই সংবাদকর্মী৷ বাংলাদেশির পাশাপাশি আফ্রিকা বা মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে আসা শরণার্থীরাও আছেন সেখানে৷
ছবি: DW
দেয়াল, ছাদবিহীন ভবন
কারখানা ভবনটির চারপাশের একটি বড় অংশেই দেয়াল নেই৷ এমনকি ছাদের অনেকটা অংশই ফাঁকা৷ যার কারণে অনায়াসে বৃষ্টির পানি ঢুকছে সেখানে৷ আছে শীতের প্রকোপও৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
পুলিশের তাড়া
অভিবাসীদের অভিযোগ কারখানাতে অনেক সময় পুলিশ আসে৷ সেসময় তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে যেতে হয় সেখান থেকে৷ পরে আবারো এসে আশ্রয় নেন তারা৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
ভবনটির মেঝেতে জমে আছে পানি৷ পাশেই ময়লার স্তূপ৷ এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন ইউরোপের স্বপ্নে বিভোর মানুষগুলো৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
এক জায়গায় সব
অস্বাস্থ্যকর সেই পরিবেশে রান্না, খাওয়া আর থাকার ব্যবস্থা৷ খাবার কিনতে হয় স্থানীয় সুপার মার্কেট থেকে৷ তবে সেজন্যেও বহু কাঠখড় পোহাতে হয়৷ অনেকের কাছে নেই পর্যাপ্ত টাকাও৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ছিনতাইয়ের ভয়
মানবেতর এই পরিস্থিতিতে আরেক বিপদ ছিনতাই৷ রাতের বেলা বাইরে বের হয়ে ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন কেউ কেউ৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
স্থানীয়দের সহযোগিতা
তবে অনেক সময় স্থানীয়দের কেউ কেউ সহযোগিতাও করেন৷ ছবির ব্যক্তির সামনে রাখা চুলাটি সেভাবেই মিলেছে৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
অবশেষে সহায়তার দেখা
গত কয়েক মাসে ক্যাম্পের বাইরে থাকা এই শরণার্থীরা আন্তর্জাতিক কোন সংস্থা থেকে মানবিক সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ৷ তবে ১৯ অক্টোবর আইওএম এর একটি দল সেখানে উপস্থিত হন৷ ছয়শো জনকে তারা কিছু খাবার আর স্লিপিং ব্যাগ দিয়েছেন৷ প্রথমবারের মতো এমন সহায়তা মিলেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশিরা৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
প্রাথমিক চিকিৎসা
সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে অনেকেই আহত হয়েছেন৷ আবার ক্রোয়েশিয়া পুলিশের নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগও করেছেন কেউ কেউ৷ তেমনই একজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছিলেন রেডক্রসের কর্মীরা৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
‘গেম মারা’
আটকা পড়া অভিবাসন প্রত্যাশীরা দালালের মাধ্যমে দল বেঁধে চেষ্টা করেন সীমান্ত অতিক্রমের৷ এটিকে তারা বলে থাকেন ‘গেম মারা’৷ তবে বেশিরভাগই ব্যর্থ হোন৷ ক্রোয়েশিয়া পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আবার ফিরে আসেন জঙ্গলেই৷
ছবি: Arafatul Islam/DW
ইউরোপ কত দূর
এই বাংলাদেশিদের কেউ কেউ মধ্যপ্রাচ্য হয়ে ইউরোপে ঢুকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন দুই-তিন বছর ধরে৷ এর মধ্যে দালালকে দিয়েছেন ১৫-২০ লাখ টাকা করে৷ তবুও দেখা মেলে না প্রত্যাশিত গন্তব্য ফ্রান্স বা ইটালির৷ একজন বলেছেন, ‘‘ওমান, দুবাইর সাগর পাড়ি দেয়ার পর পেছনে যাওয়ার উপায় নাই৷ ইটালি ম্যাপে দেখতে অনেক ছোট লাগে, কিন্তু যেতে অনেক সময় লাগে৷ অনেক কষ্ট৷’’
ছবি: Arafatul Islam/DW
আর যেন কেউ না আসে
বেশিরভাগই জানিয়েছেন তারা এভাবে এসে ভুল করেছেন৷ টাকা দিয়ে বিপদ কিনেছেন৷ এতটা অবর্ণনীয় কষ্টে পড়তে হবে কেউ ভাবেননি৷ তাদের মতো কেউ যেন আর অবৈধপথে পাড়ি না জমায় সেই অনুরোধ জানান৷
ছবি: Anupam Deb Kanunjna/DW
21 ছবি1 | 21
অবৈধভাবে যারা যাচ্ছেন, তারা থিতু হওয়ার পর একইভাবে অন্যদের যেতে উৎসাহিত করেন কি-না?
অবশ্যই৷ অবশ্যই৷ একজন যখন যান তখন তিনি আত্মীয় স্বজনকে নেন৷ এভাবে বিষয়টি ছড়িয়ে পাড়ে৷ দীর্ঘদিন সেখানে থাকার পর নানা প্রক্রিয়ায় তারা সেখানে বৈধ হয়ে যান৷ তা না হলেও কাজের একটা সুযোগ পান৷ এভাবে যারা যাচ্ছেন তারাই আবার অন্যদের যেতে উৎসাহিত করছেন৷ আবার দালাল যে চক্র তারাও কিন্তু উৎসাহিত করেন৷বাইরের র্যাকেটগুলো আমরা ধরতে না পারলেও দেশীয় র্যাকেট তো সরকার চাইলে ধরতে পারে৷ মাঝে মধ্যে দালালদের ধরা হয়৷ কিন্তু যাদের মাধ্যমে দালালরা এটা করছে তাদের কিন্তু ধরা হচ্ছে না৷ তাদের ধরলে এই প্রক্রিয়াটা কমে আসত৷
যেসব দালাল এভাবে মানুষকে বিদেশে পাঠাচ্ছে তাদের গ্রেফতারে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কতটা আন্তরিক?
আপনারা তো দেখেছেন লিবিয়ায় ২৬ জনকে যে হত্যা করা হল, এরপর অন্তত সাত দিন আমাদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা ব্যাপক অভিযান চালিয়ে দালালদের ধরে ফেলল৷ সব দালালই কিন্তু দু'টি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম বারবার বলছে৷ কিন্তু তারপর কি আর আমরা জানতে পেয়েছি কিছু৷ ২০১৪-২০১৫ সালে আমরা দেখেছি, রোহিঙ্গাদের অবৈধপথে পাঠানোর জন্য আমরা কাদের নাম দেখলাম৷ সংসদ সদস্যদের নাম আমরা দেখতে পেলাম৷ তাদের কি আমরা কোনভাবে আইনের আওতায় আনতে পেরেছি৷ আজকে কাতার-কুয়েতে মানব পাচারের দায়ে আমাদের সংসদ সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন৷ আমরা কি পদক্ষেপ নিয়েছি যে, আর কোন সংসদ সদস্য বা কোন ব্যক্তি এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত হবেন না?
অবৈধভাবে প্রাণ হাতে নিয়ে বিদেশ যাওয়া নিরুৎসাহিত করতে সরকারি কোন উদ্যোগ কি আপনার নজরে এসেছে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন গ্রুপ আছে, এছাড়া বিভিন্ন এনজিও তো অবৈধভাবে বিদেশে যেতে বারণ করছেন৷নিয়মিত কথা বলছেন৷ আইওএমের প্রোজেক্ট আছে৷ এমনকি যারা অবৈধভাবে গেছেন তাদের ফেরত এনে পূর্নবাসনের চেষ্টাও তো আছে৷ এসব কিন্তু কোন ফল দিতে পারছে না৷ যারা এগুলো প্রোসেস করছে তাদের যদি শাস্তি দেওয়া যেত তাহলে এটা কমে যেত৷
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কি?
উত্তরণের দু'টো পথ৷ একটা দীর্ঘমেয়াদি, একটা স্বল্পমেয়াদি৷ দীর্ঘমেয়াদি হল আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে৷ স্কিল মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত হল এই দালালদের ধরতে হবে৷ পাশাপাশি যেসব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে এরা যাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আপনারা ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে যাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তাদেরকে কারা পাঠিয়েছেন তাদের খুঁজে বের করে ধরতে হবে৷ এখনই কিন্তু সেই সময়টা৷ এটা করলেই একটা ভালো ফল মিলবে বলে আমি বিশ্বাস করি৷
যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি
প্রতি বছরই বাংলাদেশিরা কাজ নিয়ে পাড়ি জমাচ্ছেন বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে৷ বৈধপথে বিদেশে যাওয়া এসব প্রবাসীর হিসাব রাখে সরকারের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা বিএমইটি৷
ছবি: DW
এক কোটি প্রবাসী
বাংলাদেশের ঠিক কতজন নাগরিক প্রবাসে আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ বিএমইটি-র হিসাবে ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য দেশের বাইরে পাড়ি জমিয়েছেন৷ তবে কতজন ফিরে এসেছেন সেই পরিসংখ্যান নেই সেখানে৷
ছবি: Positive light
১৪ লাখ কোটি টাকা
দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি প্রবাসীদের আয়৷ এর কারণে বাংলাদেশের রিজার্ভের অঙ্কটাও এখন বেশ শক্তিশালী৷ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৭৬ সালে মাত্র ২৪ লাখ ডলার বা প্রায় ৩৬ কোটি টাকার রেমিটেন্স এসেছিল দেশে৷ সেই তুলনায় রেমিটেন্স অনেক বেড়েছে৷ শুধু গত বছরই এসেছে ১৮৩৫ কোটি ডলার বা এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা৷ সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ৭০৫ কোটি ডলার বা ১৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা৷
ছবি: AFP
এক তৃতীয়াংশ সৌদি আরবে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রবাসীর গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে ২০২০ সালের মে পর্যন্ত ৪১ লাখ ৮৪ হাজার বাংলাদেশি পাড়ি জমিয়েছেন৷ ১৯৭৬ সালে মাত্র ২১৭ জন দিয়ে এই শ্রমবাজারের যাত্রা শুরু৷ ২০১৭ সালে সর্বোচ্চ ৫ লাখ ৫১ হাজার কাজ নিয়ে গেছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে৷ আর চলতি মে পর্যন্ত পাড়ি জমিয়েছেন এক লাখ ৩৪ হাজার জন৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
আরব আমিরাতের মন্দা বাজার
শুরুর দিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতই ছিল বাংলাদেশের বড় বাজার৷ ২০০৮ সালে দেশটিতে একবছরে সবচেয়ে বেশি ৪ লাখ ১৯ হাজার জন বাংলাদেশি গেছেন৷ তবে ২০১৩ সালের পর থেকে এই বাজারটিতে মন্দা চলছে৷ গতবছর মাত্র তিন হাজার ৩১৮ জন দেশটিতে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেয়েছেন৷ ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২৩ লাখ ৭২ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্য ছিল আরব আমিরাত, যা মোট জনশক্তি রপ্তানির ১৮ ভাগের কিছু বেশি৷
ছবি: picture-alliance/J. Schwenkenbecher
পড়তিতে ওমান
প্রবাসীদের গন্তব্যের দিক থেকে তৃতীয় অবস্থানে আছে পারস্য উপসাগরের দেশ ওমান৷ ১৫ লাখ ১৮ হাজার বাংলাদেশি কাজ নিয়ে গেছেন সেখানে৷ তবে গত ৩ বছর ধরে এই বাজারটিতেও প্রবাসী যাওয়ার সংখ্যা কমছে৷ ২০১৬ সালে যেখানে এক লাখ ৮৮ হাজার জন ওমানে পাড়ি জমিয়েছেন, গেল বছর তা নেমে এসেছে ৭২ হাজার ৬৫৪ জনে৷ আর চলতি বছর মে পর্যন্ত গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৪০০ জন৷
ছবি: picture-alliance/A. Farnsworth
আকর্ষণীয় মালয়েশিয়া
বাংলাদেশিদের কাছে মালয়েশিয়া আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে শুরু করে মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে৷ ২০০৭ সালে সেখানে সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ৭৩ হাজার জনের বেশি শ্রমিক কাজের জন্যে গেছেন এশিয়ার দেশটিতে৷ মাঝে এই প্রবণতা কমলেও সম্প্রতি আবার বেড়েছে৷ ২০১৮ সালে দেশটিতে গেছেন প্রায় এক লাখ ৭৬ হাজার জন আর ২০১৯ এ মাত্র ৫৪৫ জন৷ সব মিলিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে পাড়ি জমিয়েছেন সাড়ে ১০ লাখ ৫৭ হাজারের বেশি বাংলাদেশি৷
ছবি: picture-alliance/FOTOGRAMMA/M. Alberico
সম্ভাবনার কাতার
২০০৬ সাল পর্যন্তও কাতারের বাজার বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানিতে ততটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ তবে মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ এই দেশটিও এখন বিদেশ গমনেচ্ছুদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷ কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন সেখানে অনেক বাংলাদেশির জন্যেই কাজের সুযোগ তৈরি করেছে৷ এখন পর্যন্ত আট লাখ ১১ হাজার বাংলাদেশি দেশটিতে কাজ নিয়ে গেছেন৷
ছবি: picture-alliance
দক্ষ শ্রমিকের বাজার সিঙ্গাপুর
দেশের দক্ষ শ্রমিকদের জন্য পছন্দের এক গন্তব্য সিঙ্গাপুর৷ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনীতির দেশটিতে এখন পর্যন্ত চাকরি নিয়ে ৭ লাখ ৯২ হাজার বাংলাদেশি পা রেখেছেন, যা মোট প্রবাসীর ছয় ভাগের কিছু বেশি৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬০ হাজার জন গেছেন ২০১৩ সালে৷
ছবি: picture-alliance/Global Travel Images
কুয়েতে ৫ ভাগ
বাংলাদেশিদের জন্য কুয়েতের মতো গুরুত্বপূর্ণ এক শ্রমবাজার প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বলা চলে৷ ২০০৮ থেকে ২০১৩— এই সময়ে মাত্র ৪১৪ জন দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ ২০১৪ সাল থেকে তা বাড়তে শুরু করলেও গত দুই বছর ধরে আবার পড়তির দিকে৷ সব মিলিয়ে ছয় লাখ ৩০ হাজার বাংলাদেশি গেছেন কুয়েতে, যা মোট প্রবাসীর প্রায় ৫ ভাগ৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/G. Hellier
পারস্য উপসাগরের দ্বীপে
চার লাখ ১০ হাজার বাংলাদেশির গন্তব্যের দেশ বাহরাইন৷ ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ৭২ হাজার মানুষ কাজ নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন পারস্য উপসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্রটিতে৷ তবে ২০১৯ সালে গেছেন মাত্র ১৩৩ জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/M.Al-Shaikh
ইউরোপে সর্বোচ্চ ইটালিতে
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি রয়েছে ইটালিতে৷ ২০০২ সাল থেকে সেখানে পাড়ি জমানোর তথ্য আছে বিএমইটির কাছে৷ সে অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সাড়ে ৫৫ হাজার বাংলাদেশি বৈধ পথে গেছেন পশ্চিম ইউরোপের দেশটিতে৷