অর্থমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান লিন্ডনারকে বরখাস্ত করেছেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। এফডিপি সব মন্ত্রীকে তুলে নিয়েছে। জানুয়ারিতে আস্থাভোট। মার্চে নির্বাচন হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এফডিপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার পর গ্রিন পার্টিকে নিয়ে সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন শলৎস। বাজেট পাস করার জন্য তিনি সিডিইউ-র সমর্থন চেয়েছেন। রক্ষণশীল নেতা মেরজ এই বিষয়ে দলের সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন।
আগামী ১৫ জানুয়ারি তিনি আস্থাভোট নেবেন। তারপর মার্চে নির্বাচন হতে পারে।
শলৎস যা বলেছেন
সাংবাদিক সম্মেলন করতে আসার সময় শলৎসকে শান্ত দেখাচ্ছিল। শলৎসকে প্রায়ই এই সমালোচনার মুখে পড়তে হয় যে তিনি টেকনোক্র্যাটদের মতো ক্লান্তিকরভাবে কথা বলেন। এদিন তিনি যখন তার অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার কথা ঘোষণা করছেন, তখন তাকে খুবই আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ লাগছিল।
এই ঘোষণা করতে গিয়ে গলাটা একটু কেঁপে গেছিল। তবে তিনি শান্তভাবেই বোমাটা ফাটান।
তিনি এফডিপি নেতা লিন্ডনারের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তিনি খুবই ক্ষুদ্র রাজনৈতিক নীতি নিয়ে চলছিলেন। এটা একেবারেই মেনে নেয়া যায় না।
শলৎস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের বাজেটে এক হাজার কোটি ইউরোর ঘাটতির মোকাবিলা করার জন্য একটা পরিকল্পনা অর্থমন্ত্রীকে দিয়েছিলেন। এই পরিকল্পনা নিয়ে মতবিরোধের জেরেই জোটে ভাঙন ধরলো।
গত সপ্তাহে লিন্ডনার একটি নথি প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি আর্থিক প্রস্তাবের একটা তালিকা দেন, যা অন্য দলগুলি মানেনি। তার মধ্যে ছিল, জবকল্যাণে খরচ ছাঁটাই করা, পরিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে খরচ ছাঁটাই করা, কোম্পানিগুলির কর কম করার প্রস্তাব কার্যকর করা নিয়ে দলগুলির মধ্যে মতৈক্য হয়নি।
শলৎসের বক্তব্য, এফডিপি নেতা তার নতুন প্রস্তাব কার্যকর করার কোনো ইচ্ছেপ্রকাশ করেননি। অথচ, ওই প্রস্তাবগুলি ছিল দেশের জন্য জরুরি ও ভালো। দেশের ক্ষতি হোক এটা তিনি চাননি।
জার্মানির ১৭ শতাংশ মানুষ বাস করছেন দারিদ্র্যে
02:59
শলৎস বলেছেন, তিনি প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিদ্যুতের দাম কমাবার জন্য. কোম্পানিগুলিকে সাহায্য করার জন্য, গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিতে কর্মরতদের চাকরি বাঁচাতে বাড়তি ঋণ নেয়া হোক। তিনি বিনিয়োগ করার জন্য কোম্পানিগুলিকে কর ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। ইউক্রেনকে বাড়তি সাহায্য করার কথা বলেছিলেন।
শলৎস জানিয়েছেন, তিনি গ্রিন পার্টির সঙ্গে মিলে সংখ্যালঘু সরকার চালাবেন। আস্থাভোট নেবেন ১৫ জানুয়ারি।
তিনি সম্ভবত আস্থাভোটে হারবেন। সেক্ষেত্রে মার্চে নির্বাচন হবে। শলৎস জানিয়েছেন, তিনি সিডিইউ ও সিএসইউ-এর সঙ্গে কথা বলবেন।
২০ মিনিট ধরে নিজের কথা বলার পর শলৎস কোনো প্রশ্নের জবাব না দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে চলে যান।
অতি-ডানপন্থি এএফডির প্রতিক্রিয়া
বিরোধী অতি-ডানপন্থি এএফডি জানিয়েছে, তারা শলৎসের জোট সরকারে ভাঙনকে স্বাগত জানাচ্ছে। অনেক আগেই এটা হওয়া উচিত ছিল। তাদের হাত থেকে জার্মানির মুক্তি পাওয়া দরকার ছিল।
এএফডি নেতাদের অভিযোগ, এই জোট দেশকে আর্থিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। বর্তমান সংকট থেকে দেশকে বের করে আনার জন্য নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ দরকার।
এএফডির দাবি, শলৎস অবিলম্বে আস্থাভোট নিন।
জার্মানির জন্য কী নিয়ে এলো ২০২৪?
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, দক্ষ অভিবাসন, গাঁজা বৈধকরণসহ বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে নতুন বছরে। জার্মানির অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনেও এই সব নতুন ইস্যু বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ছবি: Ales Utouka/CHROMORANGE/picture alliance
বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে কার্বন শুল্ক প্রতি টনে ৩০ ইউরো থেকে বাড়িয়ে ৪৫ ইউরো করা হবে। এর ফলে পাম্পে ডিজেল এবং পেট্রোলের দামও বাড়বে। গ্যাস প্রতি লিটারে প্রায় পাঁচ শতাংশ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের দামে করছাড়ের মেয়াদও মার্চ মাসে শেষ হবে। ঘর গরম করার জন্য ব্যবহার করা প্রাকৃতিক গ্যাসের কর সাত শতাংশ থেকে আবার করোনা পূর্ববর্তী ১৯ শতাংশে উন্নীত হবে।
ছবি: Wolfgang Maria Weber/IMAGO
ভ্রমণ হবে ব্যয়বহুল
২০২৪ সালে বিমান ভ্রমণ আরো ব্যয়বহুল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জার্মান সরকার টিকেট কর বাড়িয়েছে। জার্মান বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়ন করা সকল যাত্রীবাহী বিমানের জন্য এই কর ৫০ শতাংশ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ আগে জার্মান মোটরওয়েতে টোল শুধুমাত্র সাড়ে সাত টন বা তার বেশি ওজনের যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য ছিল। এখন এই টোলের আওতায় সাড়ে তিন টনের ট্রাকও নিয়ে আসার চিন্তা করা হচ্ছে।
ছবি: Sven Hoppe/dpa/picture alliance
রেস্তোরাঁয় খাবারের দাম বাড়বে
রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য ক্যাটারিং প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় কর সাত শতাংশ থেকে আবার করোনার পূর্বের ১৯ শতাংশে ফিরে যাবে। কোভিড ১৯ মহামারির সময় বিভিন্ন খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এই কর কমানো হয়েছিল। এর ফলে খাবারের দাম অনেক বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ছবি: Bernd Juergens/CHROMORANGE/picture alliance
দক্ষ বিদেশি কর্মীদের জন্য নতুন নিয়ম
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে দক্ষ অভিবাসন আইন কার্যকর হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে এই আইনে দেয়া সুযোগ আরো বাড়ানো হবে। জার্মানিতে আসতে চাওয়া দক্ষ কর্মীরা চাকরির প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার জন্য ১২ মাসের পরিবর্তে ২৪ মাসের জন্য জার্মানিতে থাকার অনুমতি পাবেন৷ তিন বছর পর্যন্ত এই অনুমতির মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব। যোগ্যতা পরিমাপের পাশাপাশি তারা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন কাজের অনুমতিও পাবেন।
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
বিতর্কিত 'হিটিং আইন'
এই আইনে বলা আছে, ঘর গরম রাখার জন্য ব্যবহৃত জ্বালানির অন্তত ৬৫ শতাংশ পুনর্নবায়নযোগ্য শক্তি দ্বারা চালিত হতে হবে। প্রাথমিকভাবে এটি শুধুমাত্র নতুন গড়ে তোলা আবাসিক এলাকার ভবনগুলোতে প্রযোজ্য হবে। তবে এই বিল্ডিং এনার্জি অ্যাক্টের প্রাথমিক খসড়ার লক্ষ্য ধীরে ধীরে তেল এবং গ্যাস গরম করার ব্যবস্থাগুলোকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে।
ছবি: David Inderlied/Kirchner/IMAGO
দলীয় রাজনীতিতে অস্থিরতা
বাম দলের প্রাক্তন আইনপ্রণেতা সাহরা ভাগেনক্নেখট জানুয়ারিতে একটি নতুন দল প্রতিষ্ঠা করবেন। জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, তার দল ডানপন্থি ভোটারদেরও আকৃষ্ট করবে। তবে এজন্য প্রস্তুতি রয়েছে কট্টর ডানপন্থি পপুলিস্ট অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি - এএফডি। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং তিনটি পূর্ব জার্মান রাজ্যের নির্বাচনে দলটি জয়লাভের আশা করছে৷
ছবি: Annegret Hilse/REUTERS
কল্যাণ সুবিধা, পেনশন এবং ন্যূনতম মজুরি বাড়বে
জার্মানির কল্যাণ ভাতা 'ব্যুর্গারগেল্ড' বা নাগরিক আয় নামে পরিচিত। অবিবাহিত ব্যক্তিদের জন্য এই ভাতা প্রতি মাসে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, অর্থাৎ ৫৩৬ ইউরো থেকে ভাতা বেড়ে দাঁড়াবে ৬২৫ ইউরোতে। ন্যূনতম মজুরি প্রতি ঘণ্টায় ১২ ইউরো থেকে ১২ ইউরো ৪১ সেন্ট হবে। করমুক্ত চাকরির উচ্চসীমা প্রতি মাসে ৫২০ ইউরো থেকে ৫৩৮ ইউরো পর্যন্ত বাড়ানো হবে। জুলাই মাস থেকে পেনশনও তিন দশমিক পাঁচ শতাংশ বাড়তে পারে।
ছবি: Monika Skolimowska/dpa/picture alliance
গাঁজা বৈধকরণ
কিছু শর্ত বজায় রেখে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য গাঁজা বহন এবং সেবনকে বৈধতা দেয়া হবে ১ এপ্রিল থেকে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য ২৫ গ্রাম পর্যন্ত গাঁজা সঙ্গে রাখার অনুমতি দেওয়া হবে। বাসায় তিনটি গাঁজা গাছের চাষ করা যাবে। এই আইনি কাঠামোর তীব্র বিরোধিতা করেছে মধ্য ডানপন্থি বিরোধীরা। নানা ধরনের ব্যতিক্রম এবং এত বিস্তারিত আইন নিয়ে উপহাসও করেছেন সমালোচকেরা।
ছবি: Matthias Bein/dpa/picture alliance
সেনাবাহিনীর ভূমিকা বাড়ছে
ন্যাটোর পূর্ব সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার প্রতিক্রিয়ায় জার্মান সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন। ২০২৪ সালের শুরু থেকে ন্যাটোর অংশ জার্মান সেনাবাহিনী বুন্ডেসভেয়ার বাল্টিক রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়ায় একটি স্থায়ী ব্রিগেড স্থাপন শুরু করবে।
ছবি: picture-alliance/dpa/B.von Jutrczenka
ইউরো ২০২৪
গ্রীষ্মে জার্মানি আবারও ফুটবলের উৎসবে মেতে উঠবে। পুরুষদের উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ১৭তম সংস্করণের আয়োজক জার্মানি। জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই প্রতিযোগিতায় ২৪টি দেশ ১০টি ভিন্ন শহরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। শহরগুলোর একটি হল লাইপজিশ। সাবেক পূর্ব জার্মানির কোনো মাঠে এবারই প্রথমবারের মতো ইউরো ম্যাচ হবে।
ছবি: Joaquim Ferreira/picture alliance
10 ছবি1 | 10
বামপন্থি দলগুলির বক্তব্য
জার্মানির সমাজবাদী বামপন্থি দলগুলি তাদের নির্বাচনী প্রচার শুরু করে দিয়েছে। বামপন্থি দলগুলি একযোগে ঘোষণা করেছে, তাদের অনুকূলে হাওয়া আছে। শলৎসের জোট দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে এবং অস্থিরতা তৈরি করেছে। তারা তিন বছর ধরে ক্ষমতায় থেকেও দেশ ও মানুষকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।
প্রথম থেকেই সমস্যা
শলৎসের নেতৃত্বাধীন জোটে প্রথম থেকেই সমস্যা ছিল। এসপিডি ও গ্রিন হলো মূলত বাম-ঘেঁষা দল, যারা বিশ্বাস করে রাষ্ট্রকে শক্তিশালী হতে হবে এবং জনকল্যাণ ও পরিবেশ বাঁচাতে প্রচুর অর্থ খরচ করতে হবে।
আর এফডিপি-র অবস্থান ছিল উল্টো মেরুতে। তারা মনে করে, রাষ্ট্র খুব কম বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। আর্থিক ক্ষেত্রে সংযম দেখাবে। জার্মানিতে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে যে কড়াকড়ি আছে তা মেনে চলবে।
তাই জোটের শরিকদের মধ্যে অনেক বিষয় নিয়েই মতবিরোধ হয়েছে।