জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি বা ডাব্লিউএফপি বলেছে, অর্থাভাবের কারণে এ সপ্তাহে ইথিওপিয়ায় অপুষ্টিতে আক্রান্ত সাড়ে ছয় লাখ নারী ও শিশুকে খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ করতে পারেনি।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্যমতে, ইথিওপিয়ায় ১ কোটিরও বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছেনছবি: Eudardo Soteras/AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
সংস্থাটির বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরো লক্ষাধিক মানুষ সহায়তা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে।
সংস্থাটির ইথিওপিয়া কার্যালয়ের প্রধান জ্লাটান মিলিসিচ রয়টার্সকে জানান, সংস্থাটি যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৫-২০টি দাতার কাছ থেকে অর্থ সহায়তা পায়। কিন্তু এ বছর অনেকেই তহবিল কমিয়ে দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সহায়তা স্থগিত করার পর সব ধরনের সহায়তা কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়। তবে সেখান থেকে ডাব্লিউএফপিকে ছাড় দেয়া হয়। তবে মিলিসিচ জানিয়েছেন, তা সত্ত্বেও ২০২৫ সালের জন্য এখনো খুব সামান্যই অর্থ এসেছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, ইথিওপিয়ায় ১ কোটিরও বেশি মানুষ চরম খাদ্যসংকটে ভুগছেন। এর মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ সংঘাত ও চরম আবহাওয়ার কারণে বাস্তুচ্যুত। এছাড়া প্রতিবেশী সুদান থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীরাও রয়েছেন।
মিলিসিচ বলেন, "আমরা ইতিমধ্যেই গত কয়েক মাসে রেশন কমিয়েছি। কিন্তু এখন কর্মসূচি কার্যত ভেঙে পড়ার মুখে। আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না। তাই এই সপ্তাহে আমরা সাড়ে ছয় লাখ অপুষ্ট শিশু ও নারীর চিকিৎসা বন্ধ করেছি। কারণ, আমাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী বা অর্থ নেই।”
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির একজন মুখপাত্র পরে জানান, যাদের চিকিৎসা বন্ধ হয়েছে, তারা বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, উত্তরাঞ্চলের টিগ্রে ও আফার অঞ্চল। সংস্থাটি চিকিৎসা পুনরায় চালু করতে তহবিল সংগ্রহে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
ডাব্লিউএফপি বলছে, যদি জুন মাসের মধ্যে নতুন তহবিল না আসে তাহলে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ খাদ্য সহায়তা হারাতে পারেন। এদের অনেকেই অপুষ্টিতে ভুগছেন।
মিলিসিচ বলেন, "আমি আশা করি আমরা প্রয়োজনীয় সহায়তা পাব এবং যথাসাধ্য চেষ্টা করব। কিন্তু যদি তারা কোনো সহায়তা না পান, তাহলে এর মারাত্মক পরিণতি হবে।”
২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে টিগ্রে অঞ্চলে গৃহযুদ্ধ এবং ২০২২ সালে দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ খরা ইথিওপিয়ার খাদ্যসংকটকে প্রচণ্ড জটিল করে তোলে। এ বছর আবারও ‘হর্ন অফ আফ্রিকা' অঞ্চলে খরার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা আগেই সতর্ক করেছে।
জেডএ/এসিবি (রয়টার্স)
পৃথিবীতে যেখানে নেই প্রাণের অস্তিত্ব
ভাবতে পারেন পৃথিবীর এমন কোনো জায়গার কথা যেখানে কখনও বৃষ্টি হয় না, তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে, নেই কোনো প্রাণের অস্তিত্ব! চলুন ঘুরে আসি পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম অঞ্চল থেকে৷
ছবি: Carl Court/Getty Images
৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
লবণাক্ত গিরিখাতের কারণে ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলকে সিনেমার পরাবাস্তব দৃশ্যের মতো দেখায়৷ ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার সীমান্তে অবস্থিত ডানাকিল গিরিখাত বিশ্বের উত্তপ্ত ও বৈরি আবহাওয়ার এক স্থান৷ বৃষ্টিহীন এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷
ছবি: MICHELE SPATARI/AFP
দালোলের রহস্যঘেরা প্রকৃতি
এই বৈরি পরিবেশও রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ৷ কয়েক কিলোমিটারজুড়ে ছড়িয়ে থাকা উষ্ণ লবণাক্ত জলের হ্রদ অনেকে জিপ গাড়িতে চেপে ঘুরে দেখেন৷ সেখানে ঘোরা যায় উটের পিঠে চড়েও৷ স্থানীয় আফার জনগোষ্ঠীর ভাষায় দালোল শব্দের অর্থ দ্রবণ৷
ছবি: Norbert Eisele-Hein/picture alliance
সাদা সোনা
ডানাকিল গিরিখাতে রয়েছে প্রচুর লবণের মজুদ৷ স্থানীয় মানুষের কাছে যা সাদা সোনা৷ আফার জনগোষ্ঠীর জন্য এই লবণই বেঁচে থাকার অবলম্বন৷ প্রতি ভোরে তারা যন্ত্রপাতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন লবণ খুঁড়তে৷ সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করেন স্থানীয় বাজারে৷
ছবি: Carl Court/Getty Images
বিষাক্ত ও দুর্গন্ধময় এলাকা
১৯২৬ সালে দালোল আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর সেখানে এমন বিচিত্র ভূমির উদ্ভব ঘটে৷ লবণ, বিষাক্ত গ্যাস, পানির বুদবুদের কারণে অনবরত ভূকম্পন চলে৷ এসিডের কারণে সবখানে পঁচা ডিমের মতো গন্ধ ছড়িয়ে থাকে৷
ছবি: MICHELE SPATARI/AFP
বিচিত্র ভূ-গঠন
নিচ থেকে চাপের কারণ গরম জল পাথরের বিভিন্ন স্তর ভেদ করে উপরে উঠে আসে৷ এই প্রক্রিয়ায় পানির সাথে সালফার, লোহা এবং লবণ উপরে জমা হয়৷ এতে হলুদ, লাল ও সাদার রঙের বিচিত্র এক ভূ-গঠন তৈরি হয়, যেমনটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Gilles Barbier/picture alliance
প্রাণের অস্তিত্ব নেই
২০১৯ সালের অক্টোবরে বিজ্ঞানীরা ‘ন্যাচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভল্যুশন’-এ একটি গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেন৷ সেখানে তারা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, দালোলের লবণাক্ত হ্রদে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব নেই৷ অনেক কম পিএইচ স্তর, উচ্চ লবণের মাত্রা এবং ১০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার কারণে সবচেয়ে বৈরি পরিস্থিতিতে টিকে থাকার মতো অনুজীবেরও অস্তিত্ব সেখানে অসম্ভব৷
ছবি: MICHELE SPATARI/AFP
আগ্নেয়গিরির মুখে হ্রদ
ডানাকিলে অবস্থিত ‘এর্টা আলে’ পৃথিবীর ছয়টি আগ্নেয়গিরির একটি যার জ্বালামুখে রয়েছে লাভার হৃদ৷ ৬১৩ মিটার উচ্চতার এই আগ্নেয়গিরিটি এই অঞ্চলের সবচেয়ে উঁচু পর্বত৷ সাহসী পর্যটকেরা ঝুঁকি নিয়ে অনেক সময় এর জ্বালামুখে কাছেও চলে যান৷
ছবি: Gilles Barbier/picture alliance
পৃথিবীর উষ্মতম অঞ্চল
কারো যদি গরম এলাকায় ঘুরতে ভালো লাগে তাহলে আদর্শ গন্তব্য হতে পারে এই আফার অঞ্চল৷ সেখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ৩৫ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা পৃথিবীর উষ্ণতম অঞ্চল৷ এর বড় একটি অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১২৫ মিটার নিচে অবস্থিত৷