বিমানকে নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই৷ যাত্রীসেবার মান নিয়ে প্রশ্নটা অনেক দিনের, রয়েছে অব্যবস্থানার অভিযোগও৷ বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন মনে করেন, পর্যাপ্ত অর্থায়ন না হবার কারণেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ বিমান৷
বিজ্ঞাপন
ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী অবশ্য তারপরও বিমানের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন৷ তাঁর সময়ে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে – এমনটি দাবি করে রাশেদ খান মেনন, বলেন, ‘‘আমি আসার পরে এ পর্যন্ত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বেশ কয়েকটি প্লেন কিনেছে৷ বেশ কয়েকটি রুটও চালু করা হয়েছে৷ আমি আশা করি, ভবিষ্যতে বিমান শক্তভাবে উঠে দাঁড়াবে৷''
ডয়চে ভেলে: বিমানের রক্ষণাবেক্ষণতো নিয়মিতই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে৷ এটা কেন?
রাশেদ খান মেনন: আপনারা জানেন যে, বিমানের অনেক সমস্যা এবং সেটা বহুদিন থেকেই আছে৷ এর মধ্যে বেশ কিছু সমস্যা অতিক্রম করা গেছে৷ কিন্তু তারপরও শুধু রক্ষণাবেক্ষণ নয়, অনেকক্ষেত্রেই এখনো সমস্যা রয়ে গেছে৷
দীর্ঘদিন ধরে তো বিমান একটি লোকশানি প্রতিষ্ঠান৷ আচ্ছা, বিমান আসলে কেন লাভ করতে পারে না?
বাংলাদেশে যেসব এয়ারলাইন্স সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে
বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৫ হাজার যাত্রী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়েন৷ প্রায় একই সংখ্যক যাত্রী দেশে প্রবেশ করেন৷ বাংলাদেশ বিমান-এর দেয়া বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/K. Doherty
বাংলাদেশ বিমান
বাংলাদেশে মোট যাত্রীর ২০ থেকে ২১ ভাগ পরিবহন করে বাংলাদেশ বিমান৷ ফলে প্রতিদিন ৩ হাজারের মতো যাত্রী বাংলাদেশ বিমানের মাধ্যমে অন্য দেশে যায়৷ প্রতিদিন ৬ থেকে ৭টি ফ্লাইট পরিচালনা করে বাংলাদেশ বিমান৷ ১৬টি রুটে বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট চলাচল করে৷ এর মধ্যে লন্ডনসহ কয়েকটি রুটে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট যায়৷ অন্য রুটগুলোতে সপ্তাহে অন্তত দু’টি ফ্লাইট চলাচল করে৷
ছবি: picture alliance/Asian News Network
এমিরেটস এয়ারলাইন্স
বাংলাদেশ বিমানের পরই এমিরেটস এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করে৷ সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করে তারা৷ প্রতিদিন এ সব ফ্লাইট ১২শ’ থেকে সাড়ে ১২শ’ যাত্রী পরিবহন করে৷
ছবি: C. Furlong/Getty Images
সৌদিয়া
এমিরেটস-এর পরেই রয়েছে সৌদিয়া এয়ারলাইন্স৷ তারা সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন আটশ’ থেকে সাড়ে আটশ’ যাত্রী পরিবহন করে এসব ফ্লাইট৷
ছবি: Reuters/S. Perez
কাতার এয়ারলাইন্স
চতুর্থ অবস্থানে আছে কাতার এয়ারলাইন্স৷ এরা সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন প্রায় আটশ’ যাত্রী পরিবহন করে এই এয়ারলাইন্স৷
ছবি: AP
ইতিহাদ এয়ারওয়েজ
ঢাকা থেকে ইতিহাদ প্রতিদিন একটা করে ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ প্রতিদিন তারা প্রায় পাঁচশ’ যাত্রী পরিবহন করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/K. Jebreili
জেট এয়ারওয়েজ
জেট এয়াররওয়েজ প্রতিদিন তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করে৷ তবে তাদের ফ্লাইটগুলো ছোট হওয়ায় যাত্রী পরিবহন হয় প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Jet-Airways
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বড়৷ তবে তারাও প্রতিদিন ঢাকা থেকে প্রায় পাঁচশ’ যাত্রী পরিবহন করে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Ena
7 ছবি1 | 7
বিমান কিন্তু গত দু'বছর লাভের মুখ দেখেছে৷ বিমানের বহরে এতদিন পুরনো বিমান ছিল৷ তাই যে এয়ারবাসগুলো ছিল, সেগুলো প্রচণ্ড পরিমাণ তেল খেত৷ এগুলো শর্ট হল ছাড়া লং হলে যেতে পারত না৷ ফলে বিমানের অনেক রুট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ বেশি জ্বালানি খাওয়ার কারণে বিমান লসে ছিল, মানে লোকশান করছিল৷ এখন সেটা অতিক্রম করে আমরা ইতিমধ্যে সেই লস কাভার করে লাভের জায়গায় পৌঁছে গেছি৷ আমি আশা করি, আগামী দিনে বিমান আরো ভালো করে লাভের মুখ দেখতে পারবে৷
এয়ারলাইন্স মার্কেটের অধিকাংশই এখন বিদেশিদের দখলে৷ তা বিমান কেন এটা দখলে নিতে পারছে না?
বিমানের যে অর্থনৈতিক ভিত্তি, তার মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটাকে কর্পোরেশন থেকে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি করে ফেলা হলো৷ অথচ এটা অর্থায়ন করার জন্য যে পুঁজির প্রয়োজন, সেই পুঁজি পাওয়া যায়নি৷ ফলে অন্য এয়ারলাইন্সগুলো যেভাবে ব্যবসা করতে পারে, বিমান সেভাবে পারে না৷ যেমন ধরুন এমিরেটস৷ এরা শেখদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা পায়, সেটা তো পায়ই, পাশাপাশি জ্বালানি তেল কিনতে তাদের যদি দু'টাকা লাগে, তাহলে বিমানের লাগে ১০ টাকা৷ আবার বিমানগুলো পুরোনো হওয়ার কারণে জ্বালানিও লাগে বেশি৷ এ কারণে বিমানে এটা হয়নি৷ আমি আসার পর এ পর্যন্ত বিমানে কয়েকটি প্লেন কেনা হয়েছে, বেশ কয়েকটি রুট চালু করা হয়েছে৷ আমি আশা করি, ভবিষ্যতে এটার সমাধান করা সম্ভব হবে৷
বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চাইলেই দেয়া হয়৷ আগে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বিদেশি কোনো এয়ারলাইন্সকে অনুমতি দেয়ার আগে বিমানের সঙ্গে আলোচনা করত৷ কিন্তু এখন আর সেটা করে না৷ এই আলোচনা না করা কি দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব , নাকি অন্য কিছু?
বিমানযাত্রা কতটা নিরাপদ?
বিমানে সন্ত্রাসী হামলা, বিমান ছিনতাই থেকে শুরু করে বিমানবন্দরে হামলার একাধিক ঘটনার জের ধরে গোটা বিশ্বেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ধারাবাহিকভাবে জোরদার করা হচ্ছে৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও অঘটন ঘটছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ
যাত্রীর পোশাকে ধাতু অথবা বিপজ্জনক বস্তু শনাক্ত করতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে চলেছে৷ তবে যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীরা সেই কাজ করছেন, তারাও মানুষ৷ ফলে কিছু ক্ষেত্রে তাদের নজর এড়িয়ে দুষ্কৃতি বিমানে প্রবেশ করতে পারেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Klose
গাফিলতির দৃষ্টান্ত
ইউরোপের অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর ফ্রাংকফুর্ট৷ কিন্তু সেখানেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্মীদের নজর ফাঁকি দিয়ে বিপজ্জনক বস্তু পাচার করার ঘটনা বিরল নয়৷ চলতি দশকের শুরুতে ইইউ কমিশনের প্রতিনিধিরা গোপনে পরীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, যে অস্ত্র সহ বিপজ্জনক বস্তু নিয়ে সিকিউরিটি চেক পেরিয়ে যাওয়া মোটেই কঠিন নয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/U. Anspach
বডি-স্ক্যানার
নিরাপত্তা কর্মীদের ভুল এড়াতে অনেক বড় বিমানবন্দরে চালু হয়েছে বডি-স্ক্যানার৷ ব্যয়বহুল এই প্রযুক্তি নিয়ে বিতর্ক কম নয়৷ কারণ এ ক্ষেত্রে মনিটারের পর্দায় যাত্রীদের শরীর অনেকটাই উন্মোচিত হয়৷ তাই অনেক বিমানবন্দরে যাত্রীদের স্বেচ্ছায় এই প্রক্রিয়া বেছে নেবার সুযোগ দেওয়া হয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/Fotografia
মালপত্রের উপর নজরদারি
যে সব ছোট আকারের মালপত্র সঙ্গে নিয়ে যাত্রীরা বিমানে উঠতে পারেন, সেগুলিও বিপদের উৎস হতে পারে৷ তাই স্ক্যানারের মাধ্যমে সেগুলি পরীক্ষা করাও জরুরি৷ তবে শুধু বিমানবন্দর নয়, মালপত্রের স্ক্যানারের ব্যবহার অন্যান্য জায়গায়ও ছড়িয়ে পড়ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Spata
বিপজ্জনক বস্তুর সংজ্ঞা
প্রায় প্রত্যেক বড় মাপের হামলার জের ধরে বিপজ্জনক বস্তুর তালিকা দীর্ঘ হতে থাকে৷ জুতার মধ্যে বিস্ফোরক পাচারের প্রচেষ্টার পর যাত্রীদের জুতা খুলে স্ক্যানারে দিতে হয়৷ তরল বা মলম জাতীয় দ্রব্য দিয়ে বিমানেই বিস্ফোরক তৈরির ঝুঁকি এড়াতে এমন দ্রব্যের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ ২০১৪ সাল থেকে অবশ্য ইউরোপে এই নিয়ম আবার কিছুটা শিথিল করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেলজিয়ামে বিমানবন্দরে হামলা
সাম্প্রতিক কালে শুধু বিমান নয়, বিমানবন্দরও বার বার সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে৷ ২০১৬ সালের ২২শে মার্চ ব্রাসেলস বিমানবন্দরে আত্মঘাতী হামলার ঘটনার পর সার্বিকভাবে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে৷ উল্লেখ্য, ইউরোপে সাধারণত বিমানবন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ থাকে না৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
ইস্তানবুলে হামলা
২০১৬ সালের ১লা জুলাই তুরস্কের ইস্তানবুল শহরের আতাতুর্ক বিমানবন্দরে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় ৪৪ জন নিহত হয়৷ আত্মঘাতী হামলাকারীরা অনেক মানুষকে জিম্মি করারও ষড়যন্ত্র করেছিল বলে তুরস্কের সংবাদমাধ্যম দাবি করে৷ এত বড় আকারে হামলার জের ধরে গোটা বিশ্বে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/O. Kose
7 ছবি1 | 7
সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এখনো বিদেশি কোনো এয়ারলাইন্সকে ফ্রিকোয়েন্সি দিতে গেলে বাংলাদেশ বিমানের সঙ্গে আলোচনা করে৷ আর ফ্রিকোয়েন্সির বিষয়টি তো বিমানের কিছু না, এগুলো অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত৷ এখানে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো এ সব ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করতে পারলেও, বিমান সেটা পারে না৷ সব জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে যে পরিমাণ উড়োজাহাজ বিমানের দরকার, সেটা তাদের নেই৷ তবে এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন যে, বিমান পারছে না বলে তো আর অন্যদের আটকে রাখা যাবে না৷ তাছাড়া এই ফ্রিকোয়েন্সি দেয়া হয় সরকারের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে৷ বাংলাদেশে তো যাত্রী বাড়ছে, কার্গো বাড়ছে, এটাকে পূরণ করতে গেলে তো কোনো না কোনো এয়ারলাইন্সকে ব্যবহার করতেই হবে, তাই না? আসলে সেই জায়গা পূরণ করতে বিমান পারছে না৷ আর যতদিন তারা সেটা পূরণ করতে না পারবে, ততদিন এই কম্পিটিশনে বিমান পিছিয়েই থাকবে৷
কোনো প্রতিষ্ঠানকে অনুমতি দেয়ার পরে সেই প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ রাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া পড়ে আছে৷ সর্বশেষ ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স বন্ধ হওয়ার পর, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের বিপুল পরিমাণ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানা গেছে...৷
ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান৷ তাদের কাছে যে বকেয়া রয়েছে, সেটা উদ্ধারের জন্য তাদের যে এয়ারক্রাফটগুলো আছে সেগুলো জিম্মায় নিলে আমাদের টাকা আদায় সম্ভব হবে বলে আমার ধারণা৷
অভ্যন্তরীণ রুটে আমাদের দেশে ভাড়া অনেক বেশি৷ অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে খুব অল্প টাকায় অভ্যন্তরীণ রুটে ভ্রমণ করা যায়৷ সরকারিভাবেই সে দেশে ভাড়া কমিয়ে দেয়া হয়েছে৷ তাহলে আমরা কেন ভাড়া কমাতে পারছি না?
পরিবহন ও বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন
এ কথা ঠিক নয় যে, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ রুটে ভাড়া অনেক বেশি৷ এখন সর্বনিম্ন দুই হাজার বা আড়াই হাজার টাকায় ভ্রমণ করা যায়৷ তবে একটা জিনিস সবাই ভুল করেন যে, আন্তর্জাতিকভাবেই একটা জিনিস চালু আছে৷ আপনি যদি ১০ দিন আগে টিকিট কাটেন তাহলে একরকম দাম পাবেন, আপনি যদি পাঁচ দিন আগে কেনেন তাহলে এক রকম দাম পাবেন৷ আর যদি শেষ মুহূর্তে কাটেন তাহলে আপনাকে অনেক বেশি দাম দিতে হবে৷ এটা তো সবাই অনুসরণ করে, তাই বিমানও অনুসরণ করে৷ এটার জন্য বলা যাবে না যে, অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে ভাড়া খুব বেশি৷
আপনি মন্ত্রী হওয়ার পর বিমানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
আমরা বহর বাড়াচ্ছি৷ সরকারের তরফ থেকে বেশ কিছু বিমান কেনা হচ্ছে৷ এক্ষেত্রে রেগুলার পেমেন্ট যাতে হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে৷ অভ্যন্তরীণ রুটে যেখানে বিমান ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই আমরা রুটগুলো চালু করেছি৷ আগে যেখানে বিমান যেতই না, এখন সেখানে একটি- দু'টি বা তিনটি ফ্লাইট যাচ্ছে৷ কিন্তু আমাদের অসুবিধে হচ্ছে, আমাদের বহরে বিমান অনেক কম৷ তবে শিগগিরই অভ্যন্তরীণ রুটে আমরা তিনটি বিমান কিনব৷ অন্যদিকে ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটিকেও আমরা আনার চেষ্টা করছি৷ আশা করি, ২০১৯ সালের মধ্যে বিমানের বহর অনেকটা বৃদ্ধি পাবে৷ তখন এই রুটগুলোকে আমরা বাড়াতে পারব৷ ইতিমধ্যে আমরা ঢাকা-দিল্লি, ঢাকা-শ্রীলংকা, ঢাকা-মালদ্বীপ, ঢাকা-গুয়াংজু রুটে বিমান বাড়ানোর চেষ্টা করছি৷ এর বাইরেও আমরা অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছি৷ অন্য বিমানের সঙ্গে আমরা কোড শেয়ারিং করতে চাই৷ ইত্তেহাদের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে৷ বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গেও আলোচনা চলছে৷ এটা করা গেলে আমাদের ক্ষমতা অনেক বেড়ে যাবে৷ এর সঙ্গে সঙ্গে বিমানের ম্যানেজমেন্টকে আমরা আরো আধুনিক করার চেষ্টা করছি৷
বিমান যাত্রায় যে ১০টি কাজ করবেন না
বিমানে চড়া আজকাল আর খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়৷ কাজের প্রয়োজনে, বেড়াতে কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে অনেকেই যাচ্ছেন অন্য দেশে, বিমানে৷ আর এই যাত্রায় যে দশটি জিনিস করা উচিত নয়, তা থাকছে এখানে৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
বিমানে উঠতে তাড়াহুড়া নয়
একটি বিমানে একসঙ্গে কয়েকশত যাত্রী আরোহণ করেন৷ যাত্রীদের ঠিকভাবে তুলতে তাই বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন গ্রুপ নম্বরে যাত্রীদের ভাগ করে ফেলেন৷ এরপর সেই নম্বর অনুযায়ী যাত্রীদের বিমানে উঠতে বলা হয়৷ সমস্যা হয়, যখন নম্বরের তোয়াক্কা না করেই অনেকে বিমানে উঠতে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন৷ এটা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার৷ অনেক সময় শুধুমাত্র এ জন্য বিমান ছাড়তে দেরি হয়৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
বিমানে ওঠার আগে শেষ টান
বিমানের মধ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ৷ অনেকে তাই বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে সিগারেটে দু’টো টান দিয়ে নেন৷ সমস্যা হচ্ছে, বিমানের ভেতরটা আবদ্ধ৷ তাই সেখানে আপনার সিগারেটের গন্ধ অন্য আরোহীকে বিরক্ত করতে পারে৷ তাই সম্ভব হলে বিমান ওঠার আগ মুহূর্তে ধূমপান পরিহার করুন৷ আর বিমানে ধুমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামনের সিটে ধাক্কা বা লাথি নয়
বিমানের সিটগুলো হয় হালকা ধরনের৷ মূলত তেল খরচ বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা৷ তাই এসব সিটে পেছন দিক দিয়ে ধাক্কা দিলে, তা সিটে বসা আরোহীকে আঘাত করতে পারে৷ সুতরাং কোনো অবস্থাতেই সামনের সিটে ধাক্কা বা লাথি দেবেন না৷
ছবি: dapd
হাতল দখলের লড়াই
বিমানের সিটগুলোতে খুব বেশি জায়গা থাকে না৷ একটি সিটের সঙ্গে আরেকটি সিট লাগানো থাকে এবং হাতল থাকে একটা৷ কেউ কেউ তাই কনুই দিয়ে অপর যাত্রীকে গুতা দিয়ে কিংবা হাত শক্ত করে হাতলে রেখে সেটা দখলে রাখার চেষ্টা করে৷ এমনটা করা মোটেই উচিত নয়৷
ছবি: dapd
নগ্ন পায়ে ঘোরা নয়
অনেকেই বিমানে উঠে জুতা, এমনকি মোজাও খুলে ফেলেন৷ এটা অনেকের জন্যই বিরক্তিকর৷ আর খালি পায়ে বিমানের টয়লেট ব্যবহার করলে রোগজীবাণু আক্রান্তের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ সুতরাং বিমানে জুতা পরেই থাকুন৷
ছবি: Fotolia/Zeit4men
শব্দ বন্ধ না করেই গেম খেলা
আজকাল স্মার্টফোন, ট্যাবলেটে সহজেই ভিডিও গেম খেলা যায়৷ এতে অবশ্য খারাপ কিছু নেই৷ কিন্তু বিমানে বসে শব্দ বন্ধ না করে গেম খেললে তা অন্য আরোহীদের বিরক্ত করতে পারে৷ তাই শব্দ বন্ধ করে গেম খেলা ভদ্র ব্যাপার৷
ছবি: imago/Westend61
পেছনের লোকের আগে নামার লড়াই
বিমান ল্যান্ড করার পর তার দরজা খোলার আগেই অনেকে নামার জন্য তাড়াহুড়া শুরু করে৷ পারলে সামনের যাত্রীকে ডিঙিয়ে যাওয়ার চেষ্টা৷ এটা খুবই অশোভন আচরণ৷ বিমান যখন অবতরণ করেছে, তখন সব যাত্রীকেই নামাবে৷ তাই নিশ্চিন্তে বসে অপেক্ষা করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘হ্যালো, রানওয়েতে আছি’
বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে ফোন করতে শুরু করেন৷ এমনকি নেটওয়ার্ক না পাওয়া গেলে চলে নিরন্তন চিৎকার: হ্যালো, এইমাত্র ল্যান্ড করলাম, শুনতে পাচ্ছো? আসলে এভাবে তাড়াহুড়া করা ভালো নয়৷ বিমানবন্দরে অপেক্ষারতরা বিভিন্ন ডিসপ্লে ঘোষণার মাধ্যমে এমনিতেই বিমান অবতরণের খবর জানতে পারেন৷ তাই প্রিয়জনকে সেটা জানাতে তাড়াহুড়া না করলেও সমস্যা নেই৷
ছবি: picture alliance / Arco Images GmbH
ভ্রমণ করছেন, কিন্তু নড়ছেন না
বড় বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ ধরনের ‘মুভিং ওয়াকওয়ে’ থাকে৷ এটা অনবরত সামনের দিকে যেতে থাকে৷ ফলে কেউ ‘মুভিং ওয়াকওয়েতে’ দাঁড়ালে এমনিতেই সামনের দিকে যেতে পারবেন৷ তাই অনেকে এতে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ এটা আসলে ঠিক নয়৷ বরং মুভিং ওয়াকওয়েতে আপনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটলে অন্য যাত্রীদের সুবিধা হবে৷
ছবি: Reuters
লাগেজ নেয়ার তাড়া
বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই লাগেজ নেয়ার জন্য বিশেষ জায়গা আছে৷ সেখানে বেল্টের উপরে লাগেজগুলো একের পর এক দেয়া হয়৷ সেই বেল্ট অনবরত ঘুরতে থাকে৷ অনেক সময় বিমান থেকে নেমেই মানুষ সেই বেল্ট ঘিরে বড় জটলা তৈরি করে ফেলেন৷ এটা অনর্থক৷ বরং একটু দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলে আপনার লাগেজ দেখা সহজ হবে৷ এরপর সময়মত সেটি বেল্ট থেকে সরিয়ে নিলেই হলো৷
ছবি: peshkova - Fotolia.com
10 ছবি1 | 10
রক্ষণাবেক্ষণের জায়গায় আপনার গুরুত্ব কতখানি?
স্বাভাবিকভাবেই রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া কোনো বিমান চলতে পারে না৷ এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷
বিমানের যে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে, যেমন ফ্লাইট বিলম্ব হওয়া....তার কি কিছু করছেন আপনারা?
এগুলো আগের তথ্য৷ এখন আন্তর্জাতিক রুটের ৭৯ শতাংশ ক্ষেত্রে বিমান শিডিউল বহাল রেখে চলে৷ এটাই এখন স্ট্যান্ডার্ড৷ আপনি যদি সবচেয়ে ভালো এয়ারলাইন্সের কথাও ধরেন, তারাও ৮০-৮২ শতাংশের বেশি শিডিউল বহাল রাখতে পারে না৷ আমাদের এখানে ঝড়-ঝঞ্জা আছে, কুয়াশা আছে৷ এমন নানা কারণে ফ্লাইটে বিলম্ব ঘটে৷ কিন্তু বিমান শিডিউল রাখতে পারে না, এ কথাটা এখন আর সত্য নয়৷