1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অর্থের জন্য মানুষ এখন ভিউ লাইকের দিকে বেশি ছুটছে'

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৫ আগস্ট ২০২৩

সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক

ফাহমিদুল হকের কথায়, ''চটকদার কিছু হলেই সেটাতে ক্লিক করি। এখানে ব্যবহারকারী হিসেবেও আমার একটা দায়িত্ব আছে''
ফাহমিদুল হকের কথায়, ''চটকদার কিছু হলেই সেটাতে ক্লিক করি। এখানে ব্যবহারকারী হিসেবেও আমার একটা দায়িত্ব আছে''ছবি: Dr. Fahmidul Haq

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন বাংলাদেশের বহু মানুষের উপার্জনের একটা ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। আর এই উপার্জন করতে লাইক, ভিউ বেশি লাগে। বেশি ভিউ বা লাইক পেতে দ্রুত জনপ্রিয় হয় এমন সব কনটেন্ট তৈরি করছে তরুণেরা। পাশাপাশি নিজেকেও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে জাহির করার একটা চেষ্টা আছে। এই কাজ করতে গিয়ে তারা এমন সব কনটেন্ট তৈরি করছে যা বাংলাদেশে আইনে অপরাধ। তরুণেরা কেন এই ধরনের ভিডিও বানাচ্ছে? তাদের কী এই কাজের পরিণতি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই, নাকি অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকেই এমন ভিডিও? এসব বিষয় নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বার্ড কলেজের ভিজিটিং প্রফেসর ড. ফাহমিদুল হক।

ডয়চে ভেলে : সম্প্রতি কুমিল্লায় স্কুল ছাত্রীদের গালাগাল করে টিকটকের ভিডিও বানানো হয়েছে। দ্রুতই সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও পুলিশ অভিযুক্ত দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। হঠাৎ করে কেন এত সস্তা জনপ্রিয়তার প্রবণতা তৈরি হল?

প্রফেসর ড. ফাহমিদুল হক :সস্তা জনপ্রিয়তার বিষয়টিসমাজে নতুন করে দেখা দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া আসার পরই এটা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট তৈরি করে তারা বেশি লাইক বেশি ভিউ মাথায় রাখে। এটার দুটো দিক আছে। একটা সরাসরি অর্থনৈতিক দিক, আরেকটি হল সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে জাহির করা। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উপস্থাপন করা। অর্থনৈতিক দিকটা হল, কারও পেজে যদি অনেক লাইক বা কনটেন্টে অনেক ভিউ হয় সেটা ফেসবুক বা ইউটিউবে বা অন্য কোন মিডিয়ায় তাহলে সেটা মনিটাইজ করা সম্ভব। সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করাও সম্ভব। এই অপশনটার কারণে মানুষ এখন ভিউ, লাইকের পেছনে বেশিকরে ছুটছে। এই বিষয়গুলো সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবহারকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এখানে যতটা না অর্থনৈতিক তার চেয়ে বেশি মনস্তাত্ত্বিক। কারণ তারা নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে জাহির করতে চান।

যে ছেলেগুলো এই ভিডিও বানিয়েছে, তাদের কী এই কাজের পরিণতি সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না? নাকি অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা থেকেই এমন ভিডিও?

অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা তো আছেই। সত্যিকার অর্থেই সমাজে ন্যায়বিচারের পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অর্থাৎ প্রশাসন সব ক্ষেত্রেই। অনেক সময় রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে থাকলে পার পেয়ে যাওয়া যায়। সেটা তো আমরা বিভিন্ন ঘটনায় দেখছি। ধরা যাক, যে এই কাজটি করেছে তার অসচেতনতার বিষয় থাকতে পারে। উঠতি তারুণ্যের অস্থিরতার জায়গা থেকে  বা যৌনতাড়িত হয়ে করতে পারে। পাশাপাশি সে এটাও জানে সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকলে অপরাধ করলেও শাস্তির মধ্য দিয়ে যেতে হবে না। বা গেলেও সহজে পার পাওয়া যাবে।

স্কুল-কলেজে যাওয়া নারী শিক্ষার্থীরা তো অনেক আগে থেকেই ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এই অপরাধ কী সেই ইভটিজিংয়ের প্রবণতা থেকে? নাকি সস্তা জনপ্রিয়তার জায়গা থেকে?

ডিজিটাল যুগ শুরু হওয়ার আগে তো ইভটিজিং ছিল। সেটা যে চলে গেছে, তা তো না। সেটাও তো আছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমি যেটা করছি সেটার প্রদর্শনের বা দৃষ্টি আকর্ষণের জায়গা। আর সোশ্যাল মিডিয়া সিস্টেমটা এমনভাবে কাজ করে, তারা বুঝতে পারে কোন ধরনের কনটেন্ট বেশি মানুষ দেখছে বা ভাইরাল হচ্ছে। ফলে সেই কনটেন্টগুলো তারা সামনে নিয়ে আসে। ফলে সেটা বেশি মানুষ দেখে। আরেকটা বিষয় হল, সস্তা জিনিসের প্রতি মানুষের আগ্রহ। সেটাই এখানে বেশি দেখা যায়। এটা শুধু ব্যবহারকারীদের কাছে নয়, সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর সেটিংও সেভাবে তৈরি করা। যাতে এই কনটেন্টগুলো বেশি ভিউ পায়। এর ফলে তারা বিজ্ঞাপনও বেশি পাচ্ছে।

সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে কী আমাদের তরুণেরা বিপথে চলে যাচ্ছে? সমাজ বা পরিবার এই অবক্ষয়ের জন্য কতোটা দায়ী?

এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। পারিবারিক শিক্ষা তো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জানা যাচ্ছে, একটা ভালো উদার, জ্ঞানচর্চা এবং সংস্কৃতিমনষ্ক পরিবারে যে সন্তানরা বড় হয়ে উঠে, তারা একটু কম অপরাধপ্রবণ হয়। বা পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হলে সন্তানরা এই ধরনের অপরাধ কম করে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে মানুষ একাকী হয়ে যাচ্ছে। যে যার মতো মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ড্রয়িং রুমে বসে সবাই একসঙ্গে টিভি দেখা বা একসঙ্গে সিনেমা দেখা এই জিনিসগুলো আগের তুলনায় কমে গেছে। ব্যক্তিগত ব্যস্ততার প্রবণতা বেড়ে গেছে। এটা পরিবারে যেমন আছে, সামাজিকভাবেও আছে। আগে ছেলেরা খেলার মাঠে খেলত, সেই মাঠগুলোও দখল হয়ে গেছে। আগে খেলাধুলা, বইপড়ার মাধ্যমে ছেলেদের সময় কাটত। এখন সেই জিনিসগুলো আসলেই কমেছে।

এর আগেও আমরা দেখেছি, টিকটকের ভিডিও বানাতে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। আবার অনেক বখাটে তরুণ এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। যারা রাস্তা ঘাটে এই ভিডিও বানাচ্ছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না?

'সামাজিক মাধ্যমকে বোঝার ব্যাপারে একটু ঘাটতি আছে'

This browser does not support the audio element.

এটা তো নতুন মিডিয়া। তরুণ সমাজ এর সঙ্গে কতটুকু কীভাবে যুক্ত সেই বিষয়গুলো দেখার আছে। পাশাপাশি এর ইতিবাচক দিকও তো আছে। আমাদের যারা নীতিনির্ধারক অনেক সময় তাদেরও বোঝাপড়ায় ঘাটতি থাকে। তারা ক্রিটিক্যালভাবেই বিষয়টা দেখে। ধরা যাক, টিকটকের কথা। সবাই মনে করে, বখাটেরাই এটা ব্যবহার করে। এটা কোন ভদ্র মানুষের কাজ না। টিকটককে যে ধরনের কনটেন্টের মধ্যে ফ্রেমিং করা হয়, টিকটক কিন্তু সেই ধরনের কনটেন্টের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। সেখানে কিন্তু ভালো কনটেন্টও থাকতে পারে। অনেকে ভালো কনটেন্টও বানাচ্ছে। সেটা মজার হতে পারে, শিক্ষামূলক হতে পারে, বিনোদনমূলক হতে পারে। সেই সুস্থ্য বিষয়টা এখানে অনেক ক্ষেত্রেই মিসিং হয়ে যায়। খারাপের দিকেই মানুষের আগ্রহ বেশি।

সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে কী তরুণরা অপরাধমূলক কাজে উৎসাহিত হচ্ছে?

সোশ্যাল মিডিয়া হল বিজনেস মডারেট সামাজিক নেটওয়ার্ক। প্রথমে বিষয়টা এমনই ছিল। উৎসাহিত করার বিষয়ে সরাসরি তাদের দায়ী করতে পারবেন না। ওরা চায় যে কোনো প্রকারে মানুষ এটাতে যুক্ত থাকবে। যত ব্যবহারকারী বাড়বে তত তাদের লাভ। সেজন্য তারা সিস্টেমটাকে সেভাবে সেট করে। যে কনটেন্টগুলো মানুষ বেশি দেখে সেগুলোকে তারা সামনে এনে দেয়। পরোক্ষভাবে দায়ী হলেও সরাসরি বলা যাবে না। এখানে ব্যক্তির দায় যেমন আছে, তেমনি সমাজের অপরাপর মানুষেরও দায় আছে। একটা খারাপ ভিডিও এত ভাইরাল হবে কেন? এখানে সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ে শিক্ষারও একটা দিক আছে। ঠিকমতো বোঝার একটা বিষয় আছে। চটকদার কিছু হলেই আমরা সেটাতে ক্লিক করি। এখানে ব্যবহারকারী হিসেবেও আমার একটা দায়িত্ব আছে এবং বোঝার ব্যাপার আছে। আমি কিন্তু একটা জিনিস দেখলাম আর সেটা শেষ হয়ে গেল, তেমন না। এখানে আমারও কিন্তু দায় আছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক অবক্ষয়ে টিকটক কতোটা ভূমিকা পালন করছে? টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া কী বন্ধ করে দেওয়া উচিত?

না, আমি এটা বন্ধের পক্ষে না। আমি মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে আগেও ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকব। মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা থাকতে হবে। টিকটককে যেভাবে ক্রিমিনালাইজ করা হয়, কেবলমাত্র অপরাধীরাই এটা ব্যবহার করে, বখাটেরাই ব্যবহার করে, আমি এই বিষয়টিরও বিরোধী।

অন্য সোশ্যাল মিডিয়ার মতো টিকটকও ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সামাজিক মাধ্যমকে বোঝার ব্যাপারে একটু ঘাটতি আছে।

শুধুমাত্র বখাটেরা কেন টিকটক ব্যবহার করবে? ভালো মানুষ কেন ব্যবহার করে না? যেটা এত জনপ্রিয় হয়ে গেছে। এখানে যদি ভালো কনটেন্ট দেওয়া হয় তাহলে তো মন্দ কনটেন্টের সঙ্গে একটা প্রতিযোগিতা হবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ