জার্মানির ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ডয়চে ব্যাংকের সদরদপ্তরে শুক্রবারও তল্লাশি চালানো হয়েছে৷ জানা গেছে, অর্থপাচারে জড়িত সন্দেহে ব্যাংকের দু'জন কর্মীর কার্যক্রম তদন্তের অংশ হিসেবেই এই তল্লাশি৷
বিজ্ঞাপন
ফ্রাংকফুর্টে ডয়চে ব্যাংকের সদর দপ্তরে বৃহস্পতিবার তল্লাশি শুরু হয়৷ প্রায় ১৭০ জন পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী ও কর পরিদর্শক এতে অংশ নেন৷ এই সময় তাঁরা কাগজ ও ইলেকট্রনিক বিভিন্ন নথি জব্দ করেন৷ ব্যাংক পরিচালকদের অফিসেও তল্লাশি চালানো হয় বলে জানা গেছে৷
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার তদন্তকারীদের কাজে সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানায়৷ তবে শুক্রবার তারা কোনো মন্তব্য করেনি৷ শুক্রবার অবশ্য ডয়চে ব্যাংকের সদর দপ্তরের বাইরে মাত্র একটি পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে৷
ফ্রাংকফুর্টের প্রসিকিউটর কার্যালয় বলছে, ডয়চে ব্যাংকের দু'জন কর্মীর (নাম প্রকাশ করা হয়নি) বিরুদ্ধে মক্কেলদের অর্থপাচারে সহায়তা করার অভিযোগ রয়েছে৷
২০১৬ সালে ‘পানামা পেপার্স’ কেলেংকারিতে ফাঁস হওয়া অর্থ পাচারের অভিযোগ নিয়ে এই তদন্ত চলছে৷ জার্মানির স্যুডডয়চে সাইটুং পত্রিকা ২০১৬ সালে পানামা পেপার্সের খবর প্রথম ফাঁস করে৷ ফাঁস করা নথিপত্র থেকে দেখা যায় যে, পানামার আইনি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা ‘মোসাক ফনসেকা’ তাদের মক্কেলদের জন্য প্রায় দুই লাখ অফশোর ‘শেল' কোম্পানি সৃষ্টি করেছিল৷
এমনিতেই গত তিন বছর ধরে ক্ষতির মুখ দেখছে ডয়চে ব্যাংক৷ এছাড়া বিভিন্ন সময়ে নানান কেলেংকারিতেও ব্যাংকের নাম জড়িয়েছে৷
পরিস্থিতির উন্নতি করতে গত এপ্রিলে একজন নতুন প্রধান নির্বাহী নিয়োগ দেয়া হয়েছিল৷ তিনি কিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরও রাজস্ব আয় বাড়েনি৷
জেডএইচ/এসিবি (রয়টার্স)
২০১৬ সালের এপ্রিলের ছবিঘরটি দেখুন...
‘পানামা পেপার্স’ সম্পর্কে আপনার যা জানা প্রয়োজন
কে, কী, কোথায় এবং কখন: তথাকথিত ‘পানামা পেপার্স’ ফাঁসের পর এ সব প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে৷ আর বিপদে আছেন অনেক রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ যাদের এতকাল সৎ ভাবা হতো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Warmuth
‘পানামা পেপার্স’ আসলে কী?
পানামা পেপার্স হচ্ছে এগারো দশমিক পাঁচ মিলিয়ন ডকুমেন্ট এবং দুই দশমিক ছয় টেরাবাইট তথ্য যা ই-মেল, আর্থিক বিবরণী, পাসপোর্ট এবং কর্পোরেট নথি আকারে আছে৷ আইন বিষয়ক সংস্থা মোসাক ফনসেকার কাছে এ সব তথ্য ছিল৷ রবিবার প্রকাশিত এই তথ্যে অনেক কাগুজে প্রতিষ্ঠানের খদ্দেরদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা গেছে, যারা ১৯৭৭ থেকে ২০১৬ অবধি নিজেদের আয়ের সঠিক তথ্য গোপন করেছেন৷
ছবি: picture-alliance/maxppp/J. Pelaez
মোসাক ফনসেকা কী?
দ্য ইকোনোমিস্ট পত্রিকা ২০১২ সালে মোসাক ফনসেকাকে ‘অফসোর ফাইনান্সের’ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল, যারা নিজেদের সম্পর্কে কোনো তথ্যই প্রকাশ করতো না৷ শেল কোম্পানিদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর অন্যতম বড় প্রতিষ্ঠান পানামাভিত্তিক এই আইন বিষয়ক সংস্থাটি৷ ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডের মতো ‘ট্যাক্স হেভেন’ বলে পরিচিত প্রায় সব জায়গাতেই তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজ আছে৷
ছবি: Reuters/B. Yip
আইসিআইজে কে?
ওয়াশিংটনভিত্তিক অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম আইসিআইজে ফাঁস হওয়া দলিলদস্তাবেজ পরীক্ষা করে দেখেছে৷ বিশ্বের ৬৫টি দেশের ১৯০ জনের মতো সাংবাদিক এই কনসোর্টিয়ামের সদস্য, যা প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৭৭ সালে৷
ছবি: ICIJ
জড়িত কারা?
ট্যাক্স ফাঁকি দিতে মোসাক ফনসেকার সহায়তা নেয়াদের মধ্যে বিশ্বের অনেক নামি-দামি রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, তারকা এবং ক্রীড়াবিদরা রয়েছেন৷ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের ঘনিষ্ঠদের অর্থের হদিশ পাওয়া গেছে ‘ফাঁস’ হওয়া তালিকায়৷ রয়েছে ভারতের অমিতাভ বচ্চন এবং আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসির নামও৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/India Today
‘শেল কোম্পানি’ কী?
‘শেল কোম্পানি’ আইনগতভাবে বৈধ এমন এক ধরনের প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কোনো ব্যবসা নেই৷ তারা শুধু অন্যকে নানান নামে অর্থ খাটানোর সুযোগ করে দেয়৷ এসব প্রতিষ্ঠান গড়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে কার অর্থ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করা হয়েছে তা যাতে কোনোভাবে বের করা না যায়৷
ছবি: Fotolia/Trueffelpix
‘অফশোর ট্যাক্স হেভেন’ ব্যবহার কি অবৈধ?
যেসব দেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ খুব কম এবং আয়ের উপর কর প্রদানের পরিমান দফারফার মাধ্যমে অনেক কমিয়ে আনার সুযোগ রয়েছে, সেসব দেশকে ‘অফশোর ট্যাক্স হেভেন’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ সেসব দেশে অর্থ লগ্নি অপরাধ নয়, কিন্তু লগ্নিকারী ব্যক্তিটি যে দেশের সেদেশের কর কর্তৃপক্ষের কাছে সেটা অবৈধ হতে পারে, যদি তিনি সেই বিনিয়োগের কথা না জানিয়ে থাকেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে এটা অবৈধ৷