1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অলরাউন্ডার মিরাজে ভর করে আফগানদের সহজেই হারাল বাংলাদেশ

সামীউর রহমান
৭ অক্টোবর ২০২৩

মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ওয়ানডে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ৷ টসে জিতে আফগানদের ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মাত্র ১৫৬ রানেই অলআউট করে দেয় সাকিবরা৷ জবাবে ৯২ বল হাতে রেখে জয় পায় টাইগাররা৷

বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই অর্ধশতক পেলেন সহ-অধিনায়ক শান্ত, থাকলেন অপরাজিতছবি: Arun Sankar/AFP via Getty Images

‘নদীর জলে আগুন ছিল, আগুন ছিল বৃষ্টিতে৷' সদ্য প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরির ‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম' কবিতার বিখ্যাত দুটি পঙক্তি লাইন৷ ক্যানাডার একটি হাসপাতালে দিন দুয়েক আগে মারা গেছেন কবি আসাদ চৌধুরি, বেঁচে থাকলে ধর্মশালায় শনিবারের সাকিব আল হাসানকে দেখলে হয়তো লিখতেন ‘আগুন ছিল তার দৃষ্টিতে৷'

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ, দেশ ছাড়ার আগে এই ম্যাচকে ঘিরে অনেক বিতর্ক, কারণ তামিম ইকবাল দলের বাইরে৷ সাকিব জানেন, একটা ভুল সিদ্ধান্ত মানেই ধেয়ে আসবে হাজারও সমালোচনা৷  বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে আফগানিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্তটা তখন মনে হচ্ছিল ভুল৷

শরীফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ আর মোস্তাফিজুর রহমানকে যে স্বাচ্ছ্যন্দেই খেলছিলেন আফগানিস্তানের দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রহমানউল্লাহ গুরবাজ আর ইব্রাহিম জাদরান৷ বিশেষ করে গুরবাজ যেভাবে অষ্টম ওভারের প্রথম বলেই ডাউন দ্যা উইকেটে এসে সোজা ছক্কা মারলেন, তাতে ঠিকরে বের হচ্ছিল আত্মবিশ্বাস৷

বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে অভিজ্ঞ মুশফিকের সঙ্গে আনন্দ উদযাপন করছেন শান্তছবি: ARUN SANKAR/AFP/Getty Images

পরের ওভারেই বোলিংয়ে সাকিব, ম্যাচে তার দ্বিতীয় ওভার৷ দ্বিতীয় বলটা একটু ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন আর তাতেই প্রলুব্ধ হয়ে সুইপ করতে গেলেন ২২ রান করা ইব্রাহিম জাদরান৷ ব্যাটে বলে ঠিকঠাক হয়নি, ক্যাচ উঠল আর ডিপ স্কয়ার লেগে সেটা লুফে নিলেন তানজিদ তামিম৷

ওয়ান ডাউনে নামা রহমত শাহ রান করতে একটু সময় নিচ্ছিলেন, বলের সঙ্গে রানের তফাৎটা বাড়ছিল৷ সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে তিনিও বল তুলে দিয়েছিলেন আকাশে, লিটন দাস ক্যাচ নিতে ভুল করেননি৷ ৪৭ রানে প্রথম উইকেটের পতন, এরপর ৮৩ রানে দ্বিতীয়টি৷ ছুটতে থাকা আফগানিস্তান আচমকা খেই হারায়৷ উইকেট হারানোর যে শুরু হলো, প্রায় ১৩ ওভার খেলা বাকি থাকতেই ১৫৬ রানে অলআউট আফগানিস্তান৷

সাকিব শুরুর ছন্দটা ধরিয়ে দিয়েছেন, এরপর একই সুর ধরেছেন মেহেদি হাসান মিরাজও৷ মিডল অর্ডারটা ভেঙে দিয়েছেন মিরাজ, ৯ ওভারে ৩ মেডেন দিয়ে ২৫ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট৷ তাসকিন আহমেদ ২০১৫ বিশ্বকাপের পর ফের বিশ্বকাপে খেলতে এসে নিয়েছেন মোহাম্মদ নবীর উইকেট, তার স্টাম্প ভেঙে লুটোপুটি খেয়েছে তাসকিনের বলে৷

মোস্তাফিজও প্রতিশোধ নিয়েছেন গুরবাজকে হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত করে, ৪৭ রানে গুরবাজ ধরা খেয়েছেন মোস্তাফিজের স্লোয়ারে, তানজিদ তামিমের হাতে৷ ৩ উইকেট করে নিয়েছেন সাকিব ও মিরাজ৷ ৮ ওভারে ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সাকিব থামিয়েছিলেন আফগান আগ্রাসন৷ ৯ ওভারে ৩ মেডেনসহ ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে মিরাজ ভেঙেছেন আফগান ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড৷ লেজটা ছেঁটেছেন শরিফুল ইসলাম, যুব বিশ্বকাপ জয়ের পর বড়দের বিশ্বকাপ খেলতে এসে প্রথম ম্যাচেই তার জোড়া শিকার৷

ভিসা জটিলতা, ঢাকা থেকে দিল্লি হয়ে ধরমশালার দীর্ঘ রাস্তা; অনেক বাধা ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক যখন প্রেসবক্সে ঢুকছেন ততক্ষণে আফগানিস্তানের ব্যাটিং শেষ৷ মধ্যাহ্ন বিরতির নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক ঘন্টা আগেই শেষ হয় তাদের ইনিংস৷ শুরুর দিকের দুই ব্যাটসম্যান বাদে বাকিরা ব্যস্ত ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে৷ গুরবাজের ৪৭, ইব্রাহিম জাদরান ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই এর ২২ রানই ইনিংসের সর্বোচ্চ৷

মাত্র ১৫৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটাও ভাল ছিল না৷ এই উদ্বোধন নিয়েই ছিল যত যল্পনা-কল্পনা, তামিম ইকবালের কাছে প্রস্তাব এসেছিল নিচে নেমে খেলার কিংবা না খেলার৷ অথচ বাস্তবে এমন পরিস্থিতি হল যে সেসব দুশ্চিন্তাও করতে হয়নি৷ যদিও লিটন দাসকে নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে৷ সবশেষ পাঁচ ওয়ানডেতে তার ইনিংস থেকে আসা রানের সংখ্যা হচ্ছে ১৫, ১৫, ০, ৬, ১৩৷ ধরমশালায় সুযোগ ছিল পুরো সময় ব্যাট করে দলকে জিতিয়ে আসার, এগিয়ে এসে বলে খোঁচা দিয়ে প্লেইড অন হয়ে সেটা হারালেন৷ ৫ রান করা তানজিদ তামিম রান আউট হয়েছেন খুব সম্ভবত অতি উত্তেজনায়৷ স্ট্রাইক পেতে লিটনের ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন বেশি, সরাসরি থ্রোতে স্টাম্প ভেঙে তার বিশ্বকাপে প্রথম ইনিংসটা ৫ রানে থামিয়ে দিয়েছেন নজিবুল্লাহ জাদরান৷

দারুণ থ্রো করে রানআউট করার পর স্কয়ার পয়েন্টে মেহেদি হাসান মিরাজের সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন নজিবুল্লাহ, মিরাজের রান তখন ১৬৷ ২৩ রানে থাকার সময় আপার-কাট খেলে ডিপ থার্ড ম্যানে ক্যাচ দিয়েও মুজিব-উর-রহমানের উদারতায় আরো এক দফা বেঁচে যান মিরাজ৷

দুটো প্রস্তুতি ম্যাচে হাফসেঞ্চুরির পর বিশ্বকাপের মূল পর্বেও হাফসেঞ্চুরি মিরাজের৷ যদিও তার আগে একবার রানআউট হতে হতে বেঁচে গেছেন রশিদ খানের চেষ্টা বিফলে যাওয়াতে, হাফসেঞ্চুরির পর মাঠের আম্পায়ার লেগ বিফোর উইকেটের আউট দিলেও শেষ মুহূর্তে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেছেন৷ কারণ বলটি ব্যাটে লেগেছিল আগে, তারপর প্যাডে আঘাত করে৷ শেষ পর্যন্ত রহমত শাহের দারুণ এক ক্যাচের শিকার হয়ে ৫৭ রান করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান মিরাজ৷ সাহস করে ওয়ান ডাউনে নেমেছিলেন, আর ভাগ্য তো শেষ পর্যন্ত সাহসীদেরই সঙ্গী হয়, সেটাই যেন প্রমাণ হলো আরেকবার৷

৩ উইকেট আর হাফসেঞ্চুরি, ম্যাচসেরার পুরষ্কারের দাবিদার হিসেবে মিরাজের ধারেকাছেও কেউ নেই৷

নাজমুল হোসেন শান্তর এটাই প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপ৷ ২০১৬ সালের যুব বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন মিরাজের ডেপুটি, এবার সাকিবের৷ মাঝে অনেকটা সময় নিয়মিত রান না করায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রূপের শিকার হয়েছিলেন৷ এখন নিয়মিত রান করে পাচ্ছেন অকুন্ঠ ভালবাসা আর প্রশংসা৷

বিশ্বকাপেও প্রথম ম্যাচটা স্মরণীয় করে রাখলেন হাফসেঞ্চুরি করে৷ নিজের সবশেষ ৪ ইনিংসেই কমপক্ষে ৫০ রান করেছেন শান্ত৷ লাহোরে এশিয়া কাপের ম্যাচে আফগানদের বিপক্ষে আগে ব্যাট করে ৩৩৪ রান করেছিল বাংলাদেশ, সেই ম্যাচে শতরান করেছিলেন মিরাজ ও শান্ত৷ আর আজ ১৫৭ রান তাড়ায় দুজনেরই অর্ধ-শতক৷

বল হাতে ৩ উইকেট শিকারের পর, অধিনায়ক সাকিব ব্যাট হাতে করেছেন ১৯ বলে ১৪ রানছবি: ARUN SANKAR/AFP/Getty Images

সাকিব রান রেটটা বাড়িয়ে নেয়ার জন্য দ্রুত শেষ করতে চেয়েছিলেন ম্যাচটা, আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ১৯ বলে ১৪ রান করে বিদায় নেন চার মারার পরের বলেই ছয় মারতে গিয়ে৷ শান্ত চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় থাকতে চেয়েছেন শেষ পর্যন্ত৷ নাভিন-উল-হকের বলে পরপর দুটো চার মেরে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন নিজের খেলা প্রথম ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে৷ ৮৩ বলে ৫৯ রানে অপরাজিত শান্ত, অন্যপ্রান্তে মুশফিকুর রহিম ছিলেন ২ রানে অপরাজিত৷

৩৪.৪ ওভারে জয়ের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলল বাংলাদেশ, ৯২ বল হাতে রেখে৷ বল হাতে রেখে জয়ের হিসেবে এটি বাংলাদেশের বৃহত্তম জয় বিশ্বকাপে৷ এর আগেরটি ছিল ২০১১ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে৷ সেবার ৫২ বল হাতে রেখে জয় পায় টাইগাররা৷

নিঃসন্দেহে দারুণ শুরু, রান রেটটাও বাড়িয়ে রাখা গেছে এই বড় জয়ে৷ মঙ্গলবারে পরের ম্যাচে ধরমশালাতেই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড৷ নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যাবার পর যারা জেতার জন্য তারা মুখিয়ে তো আছেই, সঙ্গে আছে রান রেট বাড়িয়ে নেয়ারও পাঁয়তারা৷ তাই হিমালয়ের কোলে পরের ম্যাচটাতে উত্তাপ ছড়াবে নিঃসন্দেহে৷

স্কোরকার্ড:

আফগানিস্তান: ৩৭.২ ওভারে ১৫৬, গুরবাজ ৪৭, জাদরান ২২, ওমরজাই ২২; মিরাজ ৩/২৫, সাকিব ৩/৩০

বাংলাদেশ: ৩৪.৪ ওভারে ১৫৮/৪, শান্ত ৫৯*, মিরাজ ৫৭; ফারুকি ১/১৯

বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী

ম্যাচ সেরা: মেহেদি হাসান মিরাজ

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ