অলিন্দ-নিলয় সমৃদ্ধ হৃদযন্ত্রের বিগড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় বলে হৃদরোগ
১৯ মে ২০১০এই যন্ত্রই পাম্প করে রক্তের প্রবাহকে দেহের প্রত্যন্ততম অংশে পাঠিয়ে দেয়৷ তাই অলিন্দ-নিলয় সমৃদ্ধ এই হৃদযন্ত্রের বিগড়ে যাওয়াকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় হৃদরোগ৷ যাতে মুহূর্তের মধ্যে বিকল হয়ে যেতে পারে মানুষের হৃদযন্ত্র৷ বহুল আলোচিত, তথাকথিত ভালোবাসার এই আধার৷ ভয় পেলে, হাঁপিয়ে গেলে এভাবেই ধক্ ধক্ করে ওঠে আমাদের হৃদযন্ত্র৷ হৃৎস্পন্দনও চড় চড় করে ওপরে উঠে যায়৷ আর তার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে রক্তচাপও৷ কিন্তু এরপরও, যতক্ষণ জীবন আছে, ততক্ষণ, হৃৎপিণ্ডের সেই ধুকপুক আওয়াজই প্রতিনিয়ত মনে করিয়ে দেয় – বেঁচে আছি !
হৃদযন্ত্র খারাপ হলে আজকাল, খুব সহজেই বদলে ফেলা যায় এ যন্ত্র৷ হার্টবিট অনিয়মিত হলে বসিয়ে ফেলা যায় ‘পেস-মেকার'৷ এই কৃত্রিম যন্ত্র হৃদযন্ত্রের স্পন্দনকে সুনিয়ন্ত্রিত রাখে৷ আর ‘হার্ট অ্যাটাক' বা স্ট্রোক'এর ঘটনা তো সব দেশেই আখছার ঘটছে৷
কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় হৃদযন্ত্রের বিকল হয়ে যাওয়ার সংখ্যা এতো বেশি কেন ? কলকাতাবাসী ড. অঞ্জন লাল দত্ত জানান, ‘‘আসলে হার্ট-অ্যাটাক বলতে আমরা যেটা বুঝি, সেটা হচ্ছে বড়দের এ ধরনের রোগ৷ যাকে আমরা ইস্কিমিক হার্ট ডিজিজ বলি৷ দেখা গেছে যে, এই অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে ডায়াবেটিসের সংখ্যা খুব বেশি৷ সে যাই হোক, আমাদের একটা সুন্দর বা অসুন্দর যাই বলি - এটা বৈশিষ্ট্য আছে ওজন হওয়ার৷ সেটা হচ্ছে, আমাদের পেটের দিকটা একটু বেড়ে যায়৷ যেটাকে আমরা বলি ‘অ্যাপেল লাইক ওবিসিটি' বা ‘সেন্ট্রাল ওবিসিটি'৷ এবং সেটাই হার্টের রোগের একটা প্রধান কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে৷''
তাহলে হৃদরোগ থেকে প্রতিকার কীভাবে সম্ভব ? কি ধরণের সাবধানতা আমরা অবলম্বন করতে পারি ? ড. অঞ্জন লাল দত্ত-এর কথায়, ‘‘প্রথম কথা হচ্ছে আমাদের সচেতনতা৷ আমাদের বুঝতে হবে যে, আমার যদি আজকে ডায়াবেটিস থাকে, তাহলে যাদের ডায়াবেটিস নেই - তাদের থেকে আমার হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা তিন থেকে চারগুণ বেশি৷ কোলেস্টরল যদি ব্লাডে বেশি থাকে, তাহলে আমার হৃদরোগের সম্ভাবনা তিন-চারগুণ বেশি৷ আমাকে জানতে হবে, আমার যদি কোলেস্টরলও বেশি থাকে, ডায়বেটিসও বেশি থাকে, তাহলে আমার হৃদরোগের সম্ভাবনা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গেল৷ এবং তার ওপর আমি যদি ধূমপান করি, তাহলে তো আর কথাই নেই৷ একেবারে সোনায় সোহাগা৷ এটা একটা খুব আশ্চর্যজনক ব্যাপার যে, আগে কিন্তু এই হার্ট অ্যাটাকটা বেশিরভাগই ধনী দেশে দেখা যেত৷ অথচ পাশ্চাত্য জগতে তারা এই হার্ট অ্যাটাকের প্রিভেনশনের যথার্থ স্টেপ নেওয়ার ফলে, সেখানে কিন্তু আজকে হার্ট অ্যাটাক অনেক কমে গেছে৷ এবং এটা যে যথার্থভাবে পরিশ্রম করলে, সঠিক মাত্রায় খাওয়া-দাওয়া করলে যে হার্ট অ্যাটাকটা কমানো যায়, তার একটা সুন্দর পরিসংখ্যান আছে৷ আমরা জেনেটিক ফ্যাক্টর বলি অথবা যাই বলি, ভারতবর্ষে বা দক্ষিণ এশিয়ায় কিন্তু শহর অঞ্চলে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা হচ্ছে শতকরা ১১ জন পুরুষদের মধ্যে - অর্থাৎ, অ্যাডাল্ট পপুলেশনের মধ্যে৷ আর সেইটাই কিন্তু গ্রামের মানুষদের মধ্যে মাত্র তিন থেকে চার ভাগ৷ এটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আমরা যদি জীবনযাত্রাটাকে ঠিক রাখতে পারি, তাহলে আমরাও হৃদরোগ থেকে নিজেদের প্রিভেন্ট করতে পারি৷''
এখানেই শেষ নয়৷ কাজের প্রচণ্ড চাপও কিন্তু হৃদরোগের কারণ হতে পারে৷ যেমন, কেউ যদি নিয়মিত ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা কাজ করেন, তাহলে যাঁরা ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা কাজ করেন - তাঁদের থেকে বেশি কাজ করা ব্যক্তিদের হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ সম্প্রতি রোজ ১১ ঘণ্টা কাজ করেন এমন প্রায় ছয় হাজার ব্রিটিশ সরকারি কর্মচারীর ওপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়৷ তবে শুধু কাজের মাত্রাতিরিক্ত চাপ বা ‘স্ট্রেস'-ই নয়, হৃদরোগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বায়ু এবং শব্দ দূষণও৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন