রাশিয়ার বিপর্যয়
৭ আগস্ট ২০১২অবশ্য বিপর্যয় যে শুধু রাশিয়ার ঘটেছে, এমন নয়৷ জার্মানি কাজাখস্তানের নীচে নবম স্থানে, বিশেষ করে তাদের সাঁতারুদের ভরাডুবি ঘটেছে৷ ওদিকে বিপর্যয়ের ঠিক উল্টোটা দেখাচ্ছে ব্রিটেন৷ পদকের তালিকায় তারা যে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পর তৃতীয় স্থানে থাকবে, এটা কি কেউ ভাবতে পেরেছিল?
যুক্তরাজ্যকে খুব ভালো করে চেনেন, এমন এক জার্মান ভাষ্যকার বলছিলেন, ব্রিটিশরা যেন শুধু অলিম্পিকের আনুষ্ঠানিক আয়োজনই নয়, মেডেল জেতার জন্যও ঠিক সেইরকমই ব্যবস্থা নিয়েছে: যে সব বিভাগে তাদের জেতার সম্ভাবনা আছে, সে সব বিভাগের অ্যাথলিটরা স্বদেশে অলিম্পিকের দিকে চোখ রেখে জোরদার প্রস্তুতি নিয়েছে৷ জানে, গোটা স্টেডিয়াম, গোটা দেশ তাদের পিছনে থাকবে৷ সেটাও তো অলিম্পিক স্পিরিট৷ বলতে কি, চীনও বেইজিং অলিম্পিকে তাই করেছিল৷ শুধু ভালো স্টেডিয়াম বানানো, কি চমকদার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য তো আর কেউ সোনা পায় না৷
তাহলে সোভিয়েত আমলের স্পোর্টস পরাশক্তি রাশিয়ার কী হল? ক্রীড়া মন্ত্রী ভিটালি মুটকো এবার বলে বসেছেন, ‘‘আমরা তো একেবারে যুদ্ধের পরিস্থিতিতে! এখন স্বদেশকে বাঁচানোই হল সবচেয়ে বড় কাজ৷'' অর্থাৎ দেশের মান গেল, এবার বুক বেঁধে লড়ো৷ লন্ডনে রাশিয়ার এবার বিশ-ত্রিশটা সোনা পাবার কথা, অন্তত মস্কোয় তাই ভাবা হয়েছিল৷ এবং সঙ্গত কারণেই, কেননা বেইজিং অলিম্পিকে রাশিয়া পায় ২৩টি সোনা৷
বরফের দেশ রাশিয়া শীতকালীন অলিম্পিকেও চিরকাল প্রথম সারিতে৷ কিন্তু ২০১০ সালে ক্যানাডার উইন্টার অলিম্পিক্সে শোচনীয় ফলাফল করে রাশিয়া৷ তার পর পরই এই লন্ডন বিপর্যয়৷ ওদিকে ২০১৪ সালের শীতকালীন অলিম্পিক হবে রাশিয়ার সোচিতে, যার জন্য নাকি রাশিয়া ১০ বিলিয়ন ইউরো খরচ করছে৷
লন্ডনে এখনও রাশিয়ার কিছু সাফল্যের প্রত্যাশা থেকে যাচ্ছে৷ যেমন ওয়াকার ওলগা কানিস্কিনা কিংবা রিদমিক জিমন্যাস্ট এভগেনিয়া কানায়েভা'র মতো সোনারুপোর বাঁধা খদ্দেররা এখনও মাঠে নামেননি৷ ওদিকে রুশ কর্মকর্তারা ব্যর্থতার নানা কারণ দর্শাতে শুরু করেছেন৷ যেমন রুশ অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার ঝুকভ বলেছেন, ‘‘আমাদের প্রাক্তন স্বদেশবাসীরা আমাদের কাছ থেকে পদক ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে৷'' এই যেমন প্রাক্তন সোভিয়েত গণরাজ্য কাজাখস্তান৷ আবার মিডিয়া বলছে লন্ডনের রাশিয়া হাউসে জোর খানা-পিনা, নাচনা-গাওনা, কিংবা সাম্প্রতিক ডোপিং প্রতিরোধী কড়াকড়ির কথা৷
আগামীতে কি করতে হবে, তা নিয়েও বিতর্ক চলেছে৷ ঝুকভ চান বিশ্বের সেরা কোচদের রাশিয়ায় নিয়ে আসতে৷ ওদিকে অতীতে তিনবার অলিম্পিক ফিগার স্কেটিং চ্যাম্পিয়ন ইরিনা রদনিনা বলেছেন, সোভিয়েত আমলে তরুণ অ্যাথলিটদের জন্য কর্মসূচি এবং কোচদের প্রায় সামরিক কুচকাওয়াজের মতো ট্রেনিং সত্ত্বেও তাদের প্রতি অ্যাথলিটদের শ্রদ্ধা ও আনুগত্য ছিল৷ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এখন আর সে সবের বালাই নেই৷
তাই সোনাও নেই৷ আবার আছেও বটে, যেমন জুডোয়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের নিজের খেলা৷ তাঁর উপস্থিতিতেই তো লন্ডনে জুডোয় সোনা জেতে রাশিয়া৷
এসি / ডিজি (ডিপিএ, এএফপি)