সোচির শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনে কার্পণ্য নেই এতটুকু৷ যেদিকেই তাকান চোখে পড়বে চাকচিক্যের বাহুল্য৷ আর এতে ব্যয়ও হওয়ার কথা অনেক৷ কিন্তু শ্রমিকদের বেতন না দেয়ায় আয়োজকদের লাভের অঙ্কটা বিশাল৷
বিজ্ঞাপন
সোচিতে শীতকালীন অলিম্পিক শুরু হচ্ছে ৭ ফেব্রুয়ারি, যা শেষ হবে এ মাসের ২৩ তারিখে৷ এ উপলক্ষ্যে নির্মাণ করা হয়েছে চকচকে কাঁচ আর ইস্পাতের অনেক ভবন৷ এই ভবনগুলো যাঁদের বদৌলতে দাঁড়িয়ে, সেই শ্রমিকদের কিন্তু আশেপাশে খুঁজে পাবেন না আপনি৷ কেননা মধ্য এশিয়া থেকে আসা এসব শ্রমিক ফিরে গেছেন নিজ দেশে, কিন্তু পারিশ্রমিক নিয়ে নয়, তাঁদের ফিরতে হয়েছে খালি হাতে৷
এই শ্রমিকদের কয়েকজনকে সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছে মানবাধিকার সংস্থার সেমইয়োন সিমোনোভ৷ অন্তত দেড় হাজার শ্রমিককে সহায়তা দিয়েছেন তিনি৷ তাই শ্রমিকদের দুর্ভাগ্যের কথাটা তিনি ভালোই জানেন৷ সিমোনোভ জানালেন, যে শ্রমিকদের কারণে অলিম্পিক আয়োজন সফল হচ্ছে, তাঁদেরই পারিশ্রমিক দেয়া হয়নি৷
শীতকালীন অলিম্পিকের ইভেন্ট পরিচিতি
বাংলাদেশে অলিম্পিক বলতে সবাই গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকই বোঝেন৷ তাই পাঠকদের শীতকালীন অলিম্পিকের কয়েকটি খেলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতেই এই ছবিঘর৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলপাইন স্কিয়িং
এর অপর নাম ‘ডাউনহিল স্কিয়িং’৷ নামটি শোনার পর হয়ত পাঠক খেলাটার একটা চিত্র মনে আঁকতে পারছেন৷ বরফে ঢাকা উঁচু পাহাড় থেকে স্কি করে নীচে নেমে যাওয়া – এটাই মূল কথা৷ এক্ষেত্রে পায়ের নীচে যে স্কি, অর্থাৎ কাঠের লম্বা সরু পাত থাকে, তার সঙ্গে পা পুরোপুরি আটকে থাকে৷ বিষয়টা আরেকটু সহজে বোঝার জন্য পরের ছবিটি দেখতে হবে৷
ছবি: Reuters
ক্রস-কান্ট্রি স্কিয়িং
আলপাইন স্কিয়িং এর ক্ষেত্রে যেমন পুরো পা-টাই স্কির সঙ্গে আটকে থাকে, ক্রস-কান্ট্রির ক্ষেত্রে সেটা হয় না৷ এক্ষেত্রে পায়ের গোড়ালিটা মুক্ত থাকে৷ ফলে স্কি করার সময় পায়ের এই অংশটা নড়াচড়া করা যায়৷ ক্রস-কান্ট্রি স্কিয়িংকে অনেকটা ম্যারাথনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে৷ কারণ এক্ষেত্রে প্রতিযোগীকে ১০ থেকে ৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত পাড়ি দিতে হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রিস্টাইল স্কিয়িং
ছবিটা দেখেই বুঝতে পারছেন শূন্যে ভাসছেন এক প্রতিযোগী৷ টেলিভিশনে হয়ত দেখে থাকবেন, কেউ একজন একটা জায়গা থেকে নেমে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি উঁচু জায়গায় উঠতে গিয়ে শূন্যে ভেসে থাকা অবস্থায় নানান কসরত করে থাকে৷ এটা ফ্রিস্টাইল স্কিয়িং-এর কয়েক ধরণের মধ্যে একটা খেলা, যাকে বলে ‘হাফ-পাইপ’ প্রতিযোগিতা৷ আরও জানা যাবে এই লিংকে http://en.wikipedia.org/wiki/Half-pipe৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্নোবোর্ড
এক্ষেত্রে বরফে ঢাকা পথ বেয়ে নামতে দুটো পা-ই একটা বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত থাকে৷ মনে আছে নিশ্চয়, আলপাইন স্কিয়িং-এর ক্ষেত্রে দু’পা বাধা থাকে দুটো স্কির সঙ্গে৷ ছবিতে ফ্রিস্টাইল স্নোবোর্ডিং করতে দেখা যাচ্ছে৷ এক্ষেত্রেও প্রতিযোগী শূন্যে ভেসে বিভিন্ন ক্রীড়াশৈলী দেখাতে পারে৷
ছবি: Getty Images
বিয়াথলন
ক্রস-কান্ট্রি স্কিয়িং-এর সঙ্গে শ্যুটিং৷ মোটামুটি এই হলো বিয়াথলন৷
ছবি: Robert Michael/AFP/Getty Images
স্কি জাম্পিং
কখনো ৯০ মিটার, কখনোবা ১২০ মিটার উঁচু পাহাড় থেকে দ্রুতগতিতে নেমে আসার পর শূন্যে ভাসমানরত অবস্থায় একজন প্রতিযোগী কতখানি পথ পাড়ি দিতে পারে সেটাই এই খেলার মূল কথা৷ ভিডিও: http://www.youtube.com/watch?v=fcE1pPit-7Q৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ববস্লেড
ছবির এই বস্তুটি একটি বাহন৷ বরফের ওপর দিয়ে চলে৷ খেলাটা এমন – একজন প্রতিযোগী এই বাহনটি নিয়ে দৌ়ড় শুরু করার পর একটি নির্দিষ্ট পথ পেরিয়ে গাড়িতে উঠে পড়ে৷ এরপর গাড়িতে করেই চূড়ান্ত লাইন অতিক্রম করে৷ কে, কত দ্রুত সেটা করতে পারে সেই বিজয়ী হয়৷ খেলাটায় এক দলে কখনো কখনো দুজন বা চারজনও থাকতে দেখা যায়৷ ভিডিও: http://www.youtube.com/watch?v=nIn9vmzWWSE৷
ছবি: Leon Neal/AFP/Getty Images
লুজ
ছবির এই দুজন একটি ‘স্লেড’ বা স্লেজ (বরফের দেশে কুকুরে টানা গাড়ি) এর উপর বসে রওয়ানা দিয়েছেন৷ ববস্লেডের মতোই এক্ষেত্রেও দু’জনকে শুরুতে স্লেড নিয়ে যত জোরে সম্ভব দৌড়াতে হয়েছে৷ ভিডিও: http://www.youtube.com/watch?v=ZvmiaRwGc1I৷
ছবি: picture-alliance/dpa
স্কেলেটন
খেলাটা লুজ-এর মতোই৷ তবে এক্ষেত্রে প্রতিযোগীকে পুরো শরীরটা ভূমির দিকে রাখতে হয়৷ ভিডিও: http://www.youtube.com/watch?v=xSDpFg6GzOM৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফিগার স্কেটিং
এই খেলার সঙ্গে বোধ হয় অনেকের পরিচয় আছে৷ ছবিতে জার্মানির এক যুগলকে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আইস হকি
নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে খেলাটা হকি হলেও মাঠটা ঢাকা থাকে বরফে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
11 ছবি1 | 11
মধ্য এশিয়া থেকে আসা অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক সোচিতে এসে তাঁদের কাজ শেষ করে অনেক আগেই দেশে ফিরে গেছে৷ তাই এখন আর তাঁদের নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না৷ এঁদের বেশিরভাগেরই বাস তাজিকিস্তানে৷
এই শ্রমিকদের একটি দলের নেতা ছিলেন ৬২ বছর বয়সি গোলিপ ইউনুসভ, যাঁর তত্ত্বাবধানে ছিল ২৩ জন শ্রমিক৷ তিনি এবং তাঁর সহকর্মীদের কাজ শেষে ১০ হাজার ইউরো দেয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁরা কেউই কোনো অর্থ পাননি৷ নিজেদের পরিস্থিতিকে সভ্য যুগের দাসত্ব উল্লেখ করে গোলিপ বলেন, তাঁদের একটানা কাজ করতে হতো, কোনো ছুটি ছিল না, এমনকি অসুস্থ হলেও কাজ থেকে ছুটি পাওয়া যেত না৷
তাজিকিস্তানে গিয়ে জার্মান সাংবাদিকরা শ্রমিকদের সাথে কথা বলেছেন, যাঁরা সোচি অলিম্পিকের স্থাপনাগুলোতে কাজ করেছিলেন৷ তাঁরা সবাই একই কথা জানিয়েছেন৷ অর্থাৎ কেউই বেতন পাননি৷ সব কাজ শেষ হওয়ার পর তাঁদের বলা হয়েছিল যে, তাঁদের নথিপত্র অবৈধ৷ এই কারণে জোর করে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷
তবে কেবল বাইরের দেশের শ্রমিক নয়, রাশিয়ার শ্রমিকদেরও একই অবস্থা৷ এ সম্পর্কে সোচি অলিম্পিক গেমস-এর আয়োজক কমিটির সাথে জার্মান সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে, তাঁরা কথা বলতে রাজি হননি৷