নিউজিল্যান্ডের লরেল হুবার্ডই হবেন অলিম্পিকের প্রথম রূপান্তরকামী ভারোত্তোলক।
বিজ্ঞাপন
হুবার্ড মেয়েদের ৮৭ কেজি সুপার হেভিওয়েট বিভাগে নামবেন। তার বয়স এখন ৪৩ বছর। তিনিই হবেন টোকিও অলিম্পিকের সব চেয়ে বেশি বয়সী প্রতিদ্বন্দ্বী।
সোমবারই অলিম্পিকে যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র পেয়েছেন হুবার্ড। তারপর তিনি জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের এত মানুষ তাকে সমর্থন করেছেন দেখে তিনি কৃতজ্ঞ ও আপ্লুত। এই রূপান্তরকামী অ্যাথলিট বলেছেন, তিন বছর আগে কমনওয়েলথ গেমসে যখন তার হাত ভেঙেছিল, তখন অনেকেই বলেছিলেন, তার কেরিয়ার শেষ হয়ে গেল। কিন্তু মানুষের সমর্থনে তিনি আবার ফিরে আসতে পেরেছেন।
রূপান্তরকামী অ্যাথলিটদের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কিছু শর্ত আছে। হুবার্ড সেই সব শর্ত পূরণ করছেন। তিনি ২০১৩ সালে ৩৫ বছর বয়সে লিঙ্গ পরিবর্তন করেন।
বেলজিয়ান ভারোত্তোলকের সমালোচনা
নিউজিল্যান্ড অলিম্পিক কমিটির সিইও কেরেয়ন স্মিথ বলেছেন, হুবার্ড অলিম্পিক ও ইন্টারন্যাশনাল ওয়েটলিফটিং ফেডারেশনের সব শর্ত পূরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ''আমরা স্বীকার করি যে, জেন্ডার আইডেনটিটি হলো খুব জটিল ও স্পর্শকাতর বিষয়। এর সঙ্গে মানবাধিকার, সকলের জন্য সমান সুযোগের বিষয়টিও জড়িত। আর নিউজিল্যান্ড টিমে সকলকে নিয়ে চলার, সকলকে শ্রদ্ধা করার ঐতিহ্য আছে।''
ইন্দোনেশিয়ায় বাধার পাহাড় পেরোনো এক ট্রান্সজেন্ডার নারী
ছোট একটা গ্রামের প্রধান হেন্ড্রিকা কেলান৷ মাসিক বেতন মাত্র ৭৫.৩ ডলার৷ তবে মুসলিম অধ্যুষিত সবচেয়ে বড় দেশ ইন্দোনেশিয়ার রক্ষণশীল সমাজে তার উঠে আসার গল্প অনেক সুপারস্টারের জীবনের গল্পের চেয়ে অসাধারণ৷
ছবি: Privat
মনে নারী, দেহে পুরুষ
জন্ম ১৯৮৬ সালে৷ তখন ছেলের নামে নাম ছিল হেন্ড্রিকাস৷ কিন্তু শরীরে ছেলে হলেও মনে যে তার পুরোদস্তুর এক নারীর বাস, তা টের পেয়েছিলেন খুব কম বয়সেই৷ প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময় পুতুল তো খেলতেনই, এমনকি মেয়েদের মতো সাজতেনও শখ করে৷ মেয়ে হয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করতো খুব৷ কিন্তু পরিবারের চাপে পারতেন না৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: picture-alliance/AP/R. Blackwell
গির্জার জীবন
হেন্ড্রিকাস ছোট থাকতেই তার পরিবার সিক্কা জেলার হাবি গ্রাম ছেড়ে পাপুয়া দ্বীপে চলে যায়৷ সেখানে এক ক্যাথলিক সেমিনারি স্কুলে পড়ার সুবাদে ক্যাথলিক চার্চে ‘ব্রাদার’ হিসেবে কাজ করার সুযোগ মেলে৷ মানুষের জন্য কিছু করতে পারায় কাজটা ভালোই লাগছিল৷
ছবি: Reuters/Antara Foto/I. Mulyadi
ছাড়তে হলো গির্জা
‘ব্রাদার’ হিসেবে কাজ করতে গিয়ে দেখলেন, অনেকে মনে করেন, ধর্ম অনুযায়ী ট্রান্সজেন্ডার হওয়া পাপ৷ তাই দু’ বছর পর গির্জা ছাড়লেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/C. Reyes
‘আত্মপ্রকাশ’
তখন থেকেই নিজের ভেতরের নারী সত্ত্বাকে প্রকাশ করা শুরু৷ নিয়মিত মেয়েদের পোশাক পরা শুরুও তখন থেকে৷
ছবি: Privat
দেহব্যবসায়
বেঁচে থাকার জন্য যোগ্যকর্তার রাস্তায় নেচেছেন৷ তাতেও পর্যাপ্ত আয় হয় না বলে পতিতাবৃত্তিও করেছেন কিছুদিন৷ কখনো পুলিশ ধরে পিটিয়েছে, কখনো টাকা না দিয়ে চলে গেছে খদ্দের৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Manuel Pedreza/AFP/Getty Images
এইডস রোগীদের পাশে
পাপুয়া থেকে একসময় জাভার যোগ্যকর্তা শহরে চলে যান হেন্ড্রিকা কেলান৷ নিজের খরচে এইডস রোগীদের সেবা করেছেন কিছুদিন৷ কিন্তু টাকার অভাবে বেশিদিন তা চালাতে পারেননি৷
ছবি: Privat
নিজের গ্রামে, নিজেদের কাজে
জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠায় যোগ্যকর্তা ছেড়ে জন্মস্থান হাবি গ্রামে ফিরে যান হেন্ড্রিকা কেলান৷ সেখানে আর নিজেকে আড়াল করেননি৷ ‘ফজর সিক্কা’ নামের একটি সংস্থার হয়ে ট্রান্সজেন্ডার নারী হিসেবে কাজ করেছেন অন্য ট্রান্সজেন্ডার এবং সমাজে প্রতিকুলতার মুখোমুখি মানুষদের জন্য৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Reuters/Antara/A.J. Nugroho
গ্রামপ্রধান হেন্ড্রিকা
সেবামূলক কাজের সুবাদে হাবি গ্রামের সবাই এখন শুধু তাকে চেনে না, ভালোও বাসে৷ তাদের ভালোবাসাতেই ছয় বছরের জন্য গ্রাম প্রধানের দায়িত্ব পেয়েছেন হেন্ড্রিকা৷
ছবি: Privat
যেতে চান বহু দূর
কয়েকদিন আগে নিজের কমিউনিটির সবার বাড়িতে শাক-সবজি পাঠিয়ে ৩৪ তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন হেন্ড্রিকা৷ খ্রিস্টান অধ্যুষিত সিক্কা জেলার গ্রাম হাবিতে ভালোই আছেন তিনি৷ ভবিষ্যৎ লক্ষ্য জানতে চাইলে একটা কথাই বলেন হেন্ড্রিকা, ‘‘আমি প্রমাণ করতে চাই ট্রান্সজেন্ডার নারীরা সুযোগ পেলে সব কাজই পারে৷’’ তাই সংসদ সদস্য হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিতে চান না হেন্ড্রিকা কেলান৷
ছবি: Privat
9 ছবি1 | 9
তবে কিছু নারী অ্যাথলিটের মতে, এর ফলে তাদের মেডেল জেতার সুযোগ কমে গেল। বেলজিয়ান ওয়েটলিফটার অ্যানা বলেছেন, হুবার্ডকে টোকিওতে সুযোগ দেয়া নারী অ্যাথলিটদের কাছে একটা বড় প্রহসনের মতো।
তার মতে, ''রূপান্তরকামীদের জন্য গাইডলাইন তৈরি করাটা কঠিন। কিন্তু যারা এই সর্বোচ্চ পর্যায়ের জন্য নিজেকে তৈরি করেছে, তারা জানেন, হুবার্ডের অন্তর্ভুক্তি কতটা অন্যায়।''
এর আগে হুবার্ড বলেছিলেন, ''আমি জানি, সকলে আমাকে সমর্থন করবেন না। কন্তু আমি আশা করি, মানুষ খোলা মনে বিচার করবেন। আমার এই জায়গায় আসতে অনেক সময় লেগেছে।''