হামবুর্গ ও বার্লিন শহর অলিম্পিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের দৌড়ে অংশ নেবে কি না, তা নির্ভর করবে দুই শহরের মানুষের রায়ের উপর৷ সংশয়বাদীরা আশা করছেন, মানুষ এমন বিশাল কর্মযজ্ঞের বিরোধিতা করবে৷
ছবি: Getty Images
বিজ্ঞাপন
একটা সময় ছিল, যখন অলিম্পিক বা বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেলে দেশের মানুষ গর্বে-আনন্দে আত্মহারা হয়ে যেতেন৷ চলতি বছর ব্রাজিলের বিশ্বকাপের সময় দেখা গেছে অনেক মানুষের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ৷ প্রশ্ন উঠছে, বড় ক্রীড়া প্রতিযোগিতা উপলক্ষ্যে অবকাঠামো নির্মাণের পেছনে যে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করা হয়, তা কি দেশের মানুষের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে অন্য খাতে ব্যয় করা উচিত নয়?
জার্মানির মতো শিল্পোন্নত দেশে সরাসরি এমন প্রশ্ন হয়তো উঠবে না৷ তা সত্ত্বেও অলিম্পিকের মতো প্রতিযোগিতা আয়োজনের দায়িত্ব নেবার প্রচেষ্টার আগে সাধারণ মানুষের সমর্থন চান উদ্যোক্তারা৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, জার্মানিতে অলিম্পিক আয়োজনের ব্যয় দাঁড়াবে ২০০ কোটি ইউরো৷ সেই সঙ্গে শুধু আয়োজনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চাই আরও ৫ কোটি ইউরো৷
আনন্দে ভাসছে টোকিও
২০২০ সালের অলিম্পিক আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে জাপান৷ ৪৮ বছর পর আবার ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আয়োজনটি এলো টোকিওতে৷ জাপানের রাজধানী তাই ভাসছে আনন্দের বন্যায়৷
ছবি: Getty Images
‘আমরা পেরেছি, আমরা পেরেছি!’
আয়োজক হওয়ার লড়াই খুব কষ্টে জিততে হয়েছে টোকিওকে৷ সবাইকে অবাক করে গোপন ভোটাভুটির প্রথম পর্বে বাদ পড়ে যায় মাদ্রিদ৷ স্পেনের তখনই স্বপ্নভঙ্গ হলেও তুরস্ক টিকে ছিল৷ কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে ইস্তানবুল পেয়েছে মাত্র ৩৬ ভোট আর টোকিও ৬০ ভোট৷ ফলে তুরস্কে নেমে আসে হতাশা আর টোকিওবাসি ভাসে আনন্দ-উল্লাসে৷
ছবি: picture alliance/AP Photo
সুখেও কেঁদে ওঠে মন...
অলিম্পিক-লড়াই জিততে জি-টোয়েন্টি সম্মেলন থেকে শিনজো আবে সরাসরি চলে গিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেসে৷ রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবুর্গ থেকে সেখানে গিয়ে অবশ্য মন খারাপ করে ফিরতে হয়নি জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে৷ টোকিওর আয়োজক হবার দাবি আদায় করেই ফিরেছেন৷ আনন্দে সবাই যেখানে হাসে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তখন অনেকটা কাঁদতে কাঁদতেই বলেছেন, ‘‘২০২০ অলিম্পিকের আয়োজক হয়ে আমরা নতুন আশার জন্ম দেবো৷ ’’
ছবি: picture alliance/dpa
‘আগামীকে আবিষ্কার করো’
২০২০ অলিম্পিকের স্লোগানটা কিন্তু দারুণ – আগামীকে আবিষ্কার করো৷ টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ডিজাইনেও রয়েছে ভবিষ্যৎ ভাবনার ছাপ৷ ডিজাইনার কিন্তু জাপানি নন৷ ইরাকি-ব্রিটিশ স্থপতি নারীর নাম জাহা হাদিদ৷ স্টেডিয়াম তৈরির কাজ এখনো শুরু হয়নি৷ জাহা হাদিদের ডিজাইনের বাস্তবায়ন শুরু হবে শিগগিরই৷
ছবি: Tokyo.jp
১৭ হাজার শয্যা
স্টেডিয়ামের মতো অলিম্পিক ভিলেজও থেমে আছে ডিজাইনারের কাগজে৷ তবে ছবির গ্রাফিক্স দেখেই অনুমান করা যায় ক্রীড়াবিদদের জন্য কী এলাহি কাণ্ড হতে চলেছে৷ আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নিয়ে ক্রীড়াপল্লিটি তৈরি হবে ৪৪ হেক্টর জমির ওপর৷ সেখানে বিছানাই থাকবে ১৭,০০০টি৷
ছবি: tokyo2020.jp
ভয় নেই!
ফুকুশিমার নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের দুর্ঘটনা টোকিওর আয়োজক হবার পথ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল৷ তেজস্ক্রিয়তার আতঙ্ক একটু হলে দৌড় থেকে ছিটকে দিতো টোকিওকে৷ শিনজো আবে আশ্বস্ত করেছেন বলে রক্ষা৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)-কে জানিয়েছেন, ফুকুশিমার পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে৷ তাছাড়া ফুকুশিমা যে টোকিও থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে – এ কথা জানিয়ে সবাইকে নিশ্চিন্তও করেছেন তিনি৷
ছবি: Reuters/Tokyo Electric Power Co
মেগাসিটি
টোকিও যেনতেন কোনো রাজধানী শহর নয়৷ রীতিমতো মেগাসিটি৷ সর্বশেষ শুমারি অনুযায়ী টোকিওতে এখন ৯০ লাখ মানুষের বাস৷ শহর কেন্দ্রের বাইরের বৃহত্তর এলাকা জুড়ে রয়েছে সাড়ে তিন কোটি মানুষ৷ অসংখ্য সুউচ্চ ভবন রয়েছে টোকিওতে৷ এত লোকের বাস সম্ভব হয়েছে সে কারণেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপান পারে...
পৃথিবীর আর কোনো শহরে সম্ভবত টোকিওর মতো এত লোক এত সুশৃঙ্খলভাবে প্রতিদিন যাতায়াত করেন না৷ যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য টোকিও সবসময়ই বিশেষ প্রশংসিত৷ রাজধানীর শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ প্রতিদিন ট্রেনে চড়েন৷ অটোমেটেড গাইডওয়ে ট্রানজিট ‘ইউরিকামোম’ কী অসাধ্যই না সাধন করে চলেছে!
ছবি: picture-alliance/dpa
স্মরণে ১৯৬৪
টোকিওতে প্রথমবার অলিম্পিক হয়েছিল ১৯৬৪ সালে৷ অথচ তার ২৪ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৪০ সালেই হতে পারতো সেই সৌভাগ্য, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযু্দ্ধের কারণে সুযোগটি সেবার হাতছাড়া হয়ে যায়৷ বিশ্বযু্দ্ধের ধকল কিছুটা সামলে ওঠা জাপানে ১৯৬৪ সালের অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিল ৯৩টি দেশ৷ মোট প্রতিযোগী ছিল পাঁচ হাজার একশ একান্ন জন৷ ২০২০ সালের আসরে অংশগ্রহণকারী দেশ এবং প্রতিযোগী কয়েকগুণ বেড়ে যাওয়ার কথা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাঁর হাতে অলিম্পিক মশাল
ইয়োশিনোরি সাকাই-এর জন্ম ১৯৪০ সালের এক কালো দিনে৷ সেদিন হিরোশিমায় আণবিক বোমা ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র৷ তাই জন্ম তাঁর মৃত্যুর বিভীষিকার মধ্যে৷ তবে এ জনম অনেকটা সার্থক হয় ১৯৬৪ সালে৷ অলিম্পিক মশাল টোকিওতে আসে তাঁর হাত ধরে, সারা বিশ্বের জন্য শান্তির বার্তাও ছিল সঙ্গে৷
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
২০২৪ অথবা ২০২৮ সালে অলিম্পিক প্রতিযোগিতা আয়োজনের কথা ভাবছে বার্লিন ও হামবুর্গ শহর৷ সেই চেষ্টা আদৌ চালানো উচিত কি না, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে জার্মান অলিম্পিক স্পোর্টস ফেডারেশন বা ডিওএসবি৷ তার আগে অর্ধেকের বেশি শহরবাসীর সমর্থন আদায় করতে হবে৷ সোমবার, ১লা সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এক প্রশ্নপত্র জমা দিতে হবে দুই শহরের কর্তৃপক্ষকে৷ তারপর ৬ই ডিসেম্বর ডিওএসবি স্থির করবে, হামবুর্গ ও বার্লিনের মধ্যে কোনো একটি শহর এ বিষয়ে অগ্রসর হতে পারবে কি না৷
জার্মানিতে অলিম্পিকের মতো প্রতিযোগিতার বিপুল ব্যয়ভার নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে৷ সম্প্রতি মিউনিখ শহরের মানুষ ২০২২ সালের শীতকালীন অলিম্পিক আয়োজনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ ফলে অলিম্পিক-বিরোধীরা বিপুল উৎসাহ পেয়ে হামবুর্গ ও বার্লিনের বাসিন্দাদের সতর্ক করে দিতে চান৷ দুই শহর কর্তৃপক্ষই এই প্রশ্নে গণভোট আয়োজন করার অঙ্গীকার করেছে৷ বার্লিনের কোষাগার দুর্বল হলেও অবকাঠামোর দিক থেকে তারা হামবুর্গের তুলনায় এগিয়ে৷ অন্যদিকে হামবুর্গের আর্থিক অবস্থা বার্লিনের তুলনায় ভালো৷